Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বড় একটা অসুখের নাম খিদে || Desha Mishra

বড় একটা অসুখের নাম খিদে || Desha Mishra

মিনি তাড়াতাড়ি করে স্নান সেরে বই গুছিয়ে নেয় ব‍্যাগে।
জুতো মজা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই ও কাঁদতে শুরু করে। ওর মনে পড়ে যায় স্কুল এখন ছুটি।

মিনির বাবা ভ‍্যান চালায়।তার উপর বেশ কিছু দিন ধরেই তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।তবুও সে কিছু পয়সার জন‍্য শরীরের দিকে তাকায় না।ভোর হলেই বেড়িয়ে যায় কাজে।
মিনির মা বাবুদের বাড়ি ধুয়ে মুছে সাফ করে,এঁটো বাসন মাজে।সে ও বেড়িয়ে যায় সকাল ছ’টায়।

ওরা দুজনে যা রোজগার করে তার অর্ধেক পাঠিয়ে দেয় মিনির ঠাকুমা ও ঠাকুরদা কে। ওনারা গ্রামে থাকেন।

বাবা মা কাজে বেড়িয়ে যাবার পরে মিনি ঘুম থেকে ওঠে।মুখ ধোয়,রাতের বাসি কিছু খাবার থাকলে তাই মুখে দিয়ে ও পড়তে বসে।
পড়া শেষ করেই সে স্নান করে ব‍্যাগ গুছিয়ে স্কুল যায় খালি পেটেই।আর অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে স্কুলের টিফিন টাইমের জন‍্য।প্রতিটা ক্লাস শেষ হওয়ার পর পর সে অফিস রুমের দরজায় টুকি দিয়ে দেখে নেয় আর কত দেরি।গরম ভাতের গন্ধে ওর শুকিয়ে যাওয়া মন-গাছে কিশলয় গান ধরে। থালায় ওমন করে সাজানো খাবার পেয়ে তৃপ্তি করে খায় মিনি এ পাওয়া ওর কাছে ভগবান পাওয়ার সমান। বেশি খিদে পেলে খুব কষ্ট হয়,চোখের সামনে আঁধার নামে,পেটেও ব‍্যাথা করে খুব,মিনির মনে হয় এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।যেমন এর আগে কালো অসুখে মারা গেল অজস্র লোক,মিনিও কেন সে দলে পড়ল না।

রবিবার মিনির একটুও ভালো লাগেনা সকাল থেকে প্রচন্ড খিদেতে মাথা ধরে যায়,গা গুলোয়।বারবার চোখ যায় ঘড়ির দিকে।স্কুলের টিফিন টাইমের কথা ভেবে ওর নাকে গরম ভাতের ঘ্রাণ আসে।খিদে বেড়ে যায় দিগুণ।কিন্তু বাড়িতে এখন ভাত কোথায়?ওর মা সেই বিকেলের পর বাড়ি ফেরে,স্নান সেরে তারপর উনুন ধরিয়ে ভাত বসায়।ওর মনে হয় মায়ের ফিরতে এখনও বছর খানেক দেরি।

ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে মিনি কাঁদতে কাঁদতে বলে -“একটা রবিবার আমি খুব কষ্টে কাটাই সোমবারের কথা ভেবে,আর এখন থেকে এই শুধুই রবিবারগুলো আমি কি করে থাকব ঠাকুর?তুমি কেন এমন করলে?মা তোমায় রোজ প‍্যারা পূজো দিতে পারেনা তাই তুমি রাগ করেছ বুঝি?আমি তো এতো ছুটি চাইনি তোমার থেকে।

দিদিমণি-পড়াশোনা, বন্ধুদের সাথে খেলা গল্প এসবই ওর ভীষন প্রিয় কিন্তু খিদের কাছে আর সবই ফিকে লাগে।যখন দেহ অবশ হয়ে আসে তখন একটু ভাতের জন‍্য পাগল হয় মন।ওই অন্নকেই পরম বন্ধু মনে হয় যা ছাড়া ও বাঁচতে পারবেনা।

দেওয়াল থেকে একটা ক‍্যালান্ডার পেরে নিয়ে-
ও রুল দিয়ে দাগ দিতে থাকে,-কতদিন ওকে বাঁচার জন‍্য যুদ্ধ করতে হবে।তারিখগুলো সব ভিজে যায় একটা মস্ত বড় অসুখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress