ফিরে পাওয়া
হ্যালো……. হ্যালো।
– হ্যাঁ বল্
– মাসীমণি,রীমা বাড়িতে?
– না,,,,রে। বন্ধুর বাড়ি গিয়েছে। কিছু বলতে হবে?
– না। থাক। তুমি বোলো শুভ্রতনু ফোন করেছিল।
– আচ্ছা। ছাড়ি তা হলে?
– হ্যাঁ মাসীমণি।
– শুভ্রতনুর স্বরটা ওর বাবার অল্প বয়সের যেন সেই সুমিষ্ট গলা। আমি চমকে উঠেছিলাম। কতদিন দেখিনি রুদ্র কে। কেমন আছে! কী করে! স্ত্রীর অবর্তমানে নিজের যত্ন নেয় তো?
– সারাটা দিন প্রশ্নগুলোর সঙ্গে রুদ্রর কথা যেন কানে এলো। রীমাকে বলতে হবে, শুভ্রতনুর বাবার ফোন নাম্বারটা জোগাড় করে দিতে।
– মা। ও,,,মা। হ্যাপি মাদার্স ডে আমার সোনা মা। উম্ ,,,মা,,,, আমার সবথেকে ভালো মা। জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগল রীমা।
– আরে ছাড় ছাড়। এই বয়সেও শৈশবের মতো আদর করিস।
– হ্যাঁ,,,মা। আজ খুব আনন্দের দিন।
– কেন রে? ও: তোকে বলাই হয়নি। শুভ্রতনু ফোন করেছিল। তুই একটু ফোন করে নিস কেমন। আর পারলে আমাকে ওর বাবার ফোন নম্বরটা যোগাড় করে দিস।
– হা-হা-হা।শুভ্রতনু আমার সামনেই ফোনটা তোমাকে করেছিল। আমরা একটা প্রমিস করেছিলাম। আমার মাকে ফোন করলে আমি রাজি।তাই,,,ই।
– সে কী কথা।ও যে বলল,রীমাকে বোলো শুভ্রতনু ফোন করেছিল।
– মাকে জড়িয়ে ধরে রীমার উচ্ছ্বাস। মা, আজ খুশির খবর। এবার একটা বড় দেখে হাঁ করো। আর ,,,,একটু বড়ো।আ,,,র,,,,,,। হাঃ হাঃ।
– কী রে?
– ক্যাডবেরি। আমার সুইট মায়ের জন্য ভালোবাসার সঙ্গে এই ছবিটা।
– বাহ্ । চমৎকার! কাপে কীভাবে করলি?
– হয় মা। সব হয়। ছোট্ট আমি তোমার কোলে। পছন্দ হয়েছে তোমার? আজ আমরা বন্ধুদের নিয়ে রেজেস্ট্রি করলাম। তোমাকে বলিনি সারপ্রাইজ দেবো বলে। অনেকদিন আগেই ব্যবস্থা করেছিলাম। আজ থেকে আমরা দুটি প্রাণ নই- একটি প্রাণ। দেখি এবার তোমার পা,,,টা। একটা পেলাম, আরেকটা দাও। হুম। আমার মায়ের চরণ ধুলি আমাকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে আশীর্বাদ করল।
– থাক্ থাক্ । খুব খুশি আমি। আশীর্বাদ করি তোরা দুজনে সুখে-শান্তিতে নতুন জীবন আরম্ভ কর। বাবা থাকলে কত খুশি হতেন। যা- বাবার ছবিতে প্রণাম কর। আমাকে নিয়ে গেলে আরো খুশি হতাম রীমা। শুভ্রতনুর বাবার সঙ্গেও দেখা হতো।
– ঠিক আছে। আঙ্কেলকে কালই আসতে বলব। উনি এখনো সারপ্রাইজ গিফটা পাননি।ও,,,মা,মা,,,আ এবার একটু হাসো।
– এইতো হাসছি। আগেকার সময় বাবা মা ছাড়া ভাবতে পারতাম না। বর্তমানে তোরা কতটা স্বাবলম্বী।
– টিং টং। টিং টং। প্লিজ ওপেন দা ডোর। টিং টং।
– আসছি,,,,ছি,,,,ই
– কে?
– আমি। শুভ্রতনুর বাবা।
– আচ্ছা আচ্ছা। (কাপড়টা একটু যত্ন করে গায়ে নিয়ে)
– তুমি?তু,,,মি ।
– আমি বুঝতে পারছি না সুলগ্না।
– শুভ্রতনু তোমার ছেলে। আমার জামাই।
– ঈশ্বর হয়তো আমাদের আবার একসঙ্গে রাখবেন। আমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছেন। কথাগুলো বলল রুদ্র। কেমন আছো সুলগ্না?
– ভালো। তবে রুদ্রনীল চ্যাটার্জী আজ ভালো লাগলেও কুটুম্ব রূপে তোমাকে গ্রহণ করতে পারছিনা।
– কেন সুলগ্না?
– সেদিন নরম তুলতুলে একটা হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছিলে ।ভালোবাসার অভিনয়ে তুমি সিদ্ধহস্ত। নিজের স্ট্যাটাস বজায় রাখতে শুভ্রর মা কে বিয়ে করলে।তারপর ,,তারপর আমার আর জানা নেই।
– শুভ্রর মা বছর কুড়ি হলো আমায় ছেড়ে চলে গেছে ।ওর কাছে আমি ছিলাম বিষাক্ত কীট।
– ঠিকই বলেছে সে। ভালোবাসাকে যারা দুহাতে গলা চেপে ধরে তারা অমানুষ। তবে রীমার বাবা প্রকৃত একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন ।তাইতো সব জেনেও আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। তিনি থাকলে রীমা এত বড় একটা ডিসিশন নিতে পারত না। আমি ওকে কোনোদিন কষ্ট দিইনি। আমি বাধা দিতে ও শুনত না। তাই সব জেনেও আমি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি।
– সুলগ্না, আমি জানি তুমি আমায় ঘৃণা করো। সব অন্যায় আমার। তবুও রিকোয়েস্ট করছি ছেলে মেয়ে দুটির মাঝে আমরা সুস্থ ভাবে বাঁচি।
– তা হয় না রুদ্রনীল চ্যাটার্জী। আপনি আসতে পারেন।
– আমি ফিরে যেতে নয় কাছে পেতে চাই সুলগ্না। এই দুটো হাত দিয়ে আমি তোমাকে বুকের মাঝে রাখবো। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করব।
– না। আমি আপনাকে ঘৃণা করি। আপনি ফিরে যান। আর দয়া করে ওদেরকে কিছু বলবেন না। আগের মত অভিনয়টা আপনি করুন। আমিও আপনার থেকে রপ্ত করে নেব।
– সুলগ্না, এত ঘৃণা জমিয়ে রেখেছো? একটু চেষ্টা করো সহজ হতে। এবার আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। শুভ্রের মা জানত তোমার সাথে আমার একটা সম্পর্ক। তাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে ঘৃণা করে গেল। বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা, আমি অন্য কোন নারীর প্রতি আসক্ত ছিলাম না। তোমাকে ভীষণভাবে মিস করতাম। অনুভবে তোমাকে পেতাম। কিন্তু আমার করনীয় কিছু ছিল না। ছেলের সামনে কত অপমানিত হতে হয়েছে। তবে শুভ্র খুব ভালো। আমাদের মাঝেও কোন কথা বলত না, কাউকে ঘৃণা করত না। তুমি সত্যিই একটা ভালো ছেলে পেয়েছো। রীমা খুব সুখী হবে। খুব সুন্দর ওদের জুড়ি।
– রুদ্র বাবু আপনি থাকলে আমার স্বামীর অকল্যাণ হবে। আপনি কোনদিনও এ বাড়িতে আসবেন না। প্রয়োজনে রীমাকেও পাঠাবেন না।
– সত্যি কথা বলতো সুলগ্না। তুমি আমায় এত ঘৃণা করো? আমি জানি আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে তুমি থাকতে পারবে না। খুব নরম মনের মানুষ তুমি। একটা ভুল হয়ে গিয়েছিল। রক্ষণশীল পরিবারের ছেলে। বাধ্য হতে হয়েছিল।
– কাছে এসো সুলগ্না ,আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাই। ফিরে পেতে চাই তোমাকে শেষ দিন পর্যন্ত।
– আর হয় না রুদ্র বাবু। আপনি যদি না যান আমিই এবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।
– মা, ও মা। দরজা খোলো। আমার ঘরের দরজা দিয়েছো কেন।
– হ্যাঁ আসছি। ভুল করে দিয়েছি। এইতো খুলে দিচ্ছি। আপনি এখনি চলে যান। প্লিজ।
– রীমা, আমার শরীরটা ভালো নয়।
– কী হয়েছে? বিশ্রাম নাও তুমি। শুভ্রর বাবার গলা শুনলাম। কোথায় গেলেন উনি। তুমি আমায় ডাকতে পারতে মা। আঙ্কেল কে একটু চা করে দিতাম।
– উনি বাইরে রয়েছেন। তোর সাথে দেখা করবেন তাই অপেক্ষা করছিলেন। আমি কথা বলেছি। তুই ওনাকে একটু বসিয়ে কফি দে। আমার শরীরটা ঠিক নেই।
– ঠিক আছে। তুমি একটু শুয়ে পড়ো। আঙ্কেল,,, আঙ্কেল ভিতরে এসো।
– আসছি রীমা। তোমার মার জন্য ডক্টর ডাকো। কথা বলতে বলতে উনি অসুস্থ হয়ে গেছেন। এভাবে ফেলে রাখা ঠিক হবে না। তুমি যদি বল আমি ডক্টর মুখার্জি কে ফোন করে দিচ্ছি।
– ঠিক আছে আঙ্কেল। তুমি ডক্টর ডাকো। আমার খুব নার্ভাস লাগছে। তুমি একটু দেখো।
– ভয় নেই রীমা। আমরা তোমার সাথে আছি। আমি পরে ডক্টর গোয়েঙ্কার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নেব। তোমার মা ঠিক হয়ে যাবেন। শুভ্র কে এই মুহূর্তে বলার দরকার নেই। সন্ধ্যেবেলা ফিরলে আমি সব বুঝিয়ে বলবো।
– ঠিক আছে আঙ্কেল। তুমি জলটা খাও। আমি কফি নিয়ে আসছি। মাকে একটু কিছু খাওয়াতে হবে।
– রীমা, তোমার মা চিরদিন বাচ্চাদের মত কিছু খায় না। খুব অভিমানী। তুমি একটু গরম স্যুপ নিয়ে এসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি। আমি ওকে অনেক ছোট থেকে চিনি।
– তুমি আমার মা কে চেনো আঙ্কেল?
– হ্যাঁ আমার প্রথম ভালোবাসা। বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ দোষ আমার। তাই আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। তোমার মায়ের একজন বন্ধু হয়েপাশে থেকে ওর সেবা করতে চাই। তোমার কোন আপত্তি নেই তো?
– আঙ্কেল জীবনে যাই ঘটুক না কেন এখন আমরা চারজনে এক সঙ্গেই থাকতে চাই। আমরা খুব আনন্দে থাকবো গো। সংসারটা আবার সুখের হবে।