Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রতিনিধি || Pratinidhi by Rabindranath Tagore

প্রতিনিধি || Pratinidhi by Rabindranath Tagore

অ্যাক্‌ওয়ার্থ্‌ সাহেব কয়েকটি মারাঠি গাথার যে ইংরাজি অনুবাদগ্রন্থ
প্রকাশ করিয়াছেন তাহারই ভূমিকা হইতে বর্ণিত ঘটনা গৃহীত ।
শিবাজির গেরুয়া পতাকা ‘ ভগোয়া ঝেণ্ডা’ নামে খ্যাত ।


বসিয়া প্রভাতকালে সেতারার দুর্গভালে
শিবাজি হেরিলা এক দিন —
রামদাস গুরু তাঁর ভিক্ষা মাগি দ্বার দ্বার
ফিরিছেন যেন অন্নহীন ।
ভাবিলা , এ কী এ কাণ্ড ! গুরুজির ভিক্ষাভাণ্ড —
ঘরে যাঁর নাই দৈন্যলেশ !
সব যাঁর হস্তগত , রাজ্যেশ্বর পদানত ,
তাঁরো নাই বাসনার শেষ !
এ কেবল দিনে রাত্রে জল ঢেলে ফুটা পাত্রে
বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে ।
কহিলা , ‘ দেখিতে হবে কতখানি দিলে তবে
ভিক্ষাঝুলি ভরে একেবারে ।’
তখনি লেখনী আনি কী লিখি দিলা কী জানি ,
বালাজিরে কহিলা ডাকায়ে ,
‘ গুরু যবে ভিক্ষা – আশে আসিবেন দুর্গ – পাশে
এই লিপি দিয়ো তাঁর পায়ে ।’

গুরু চলেছেন গেয়ে , সম্মুখে চলেছে ধেয়ে
কত পান্থ কত অশ্বরথ !—
‘ হে ভবেশ , হে শংকর , সবারে দিয়েছ ঘর ,
আমারে দিয়েছ শুধু পথ ।
অন্নপূর্ণা মা আমার লয়েছ বিশ্বের ভার ,
সুখে আছে সর্ব চরাচর —
মোরে তুমি , হে ভিখারি , মার কাছ হতে কাড়ি
করেছ আপন অনুচর ।’
সমাপন করি গান সারিয়া মধ্যাহ্নস্নান
দুর্গদ্বারে আসিলা যখন —
বালাজি নমিয়া তাঁরে দাঁড়াইল এক ধারে
পদমূলে রাখিয়া লিখন ।
গুরু কৌতূহলভরে তুলিয়া লইলা করে ,
পড়িয়া দেখিলা পত্রখানি —
বন্দি তাঁর পাদপদ্ম শিবাজি সঁপিছে অদ্য
তাঁরে নিজ রাজ্য – রাজধানী ।

পরদিনে রামদাস গেলেন রাজার পাশ ,
কহিলেন , ‘ পুত্র , কহো শুনি ,
রাজ্য যদি মোরে দেবে কী কাজে লাগিবে এবে —
কোন্‌ গুণ আছে তব গুণী ? ‘
‘ তোমারি দাসত্বে প্রাণ আনন্দে করিব দান ‘
শিবাজি কহিলা নমি তাঁরে ।
গুরু কহে , ‘ এই ঝুলি লহ তবে স্কন্ধে তুলি ,
চলো আজি ভিক্ষা করিবারে ।’

শিবাজি গুরুর সাথে ভিক্ষাপাত্র লয়ে হাতে
ফিরিলে পুরদ্বারে – দ্বারে ।
নৃপে হেরি ছেলেমেয়ে ভয়ে ঘরে যায় ধেয়ে ,
ডেকে আনে পিতারে মাতারে ।
অতুল ঐশ্বর্যে রত , তাঁর ভিখারির ব্রত !
এ যে দেখি জলে ভাসে শিলা !
ভিক্ষা দেয় লজ্জাভরে , হস্ত কাঁপে থরেথরে ,
ভাবে ইহা মহতের লীলা ।

দুর্গে দ্বিপ্রহর বাজে , ক্ষান্ত দিয়া কর্মকাজে
বিশ্রাম করিছে পুরবাসী ।
একতারে দিয়ে তান রামদাস গাহে গান
আনন্দে নয়নজলে ভাসি ,
‘ ওহে ত্রিভুবনপতি , বুঝি না তোমার মতি ,
কিছুই অভাব তব নাহি —
হৃদয়ে হৃদয়ে তবু ভিক্ষা মাগি ফির , প্রভু ,
সবার সর্বস্বধন চাহি ।’

অবশেষে দিবসান্তে নগরের এক প্রান্তে
নদীকূলে সন্ধ্যাস্নান সারি —
ভিক্ষা – অন্ন রাঁধি সুখে গুরু কিছু দিলা মুখে ,
প্রসাদ পাইল শিষ্য তাঁরি ।
রাজা তবে কহে হাসি , ‘ নৃপতির গর্ব নাশি
করিয়াছ পথের ভিক্ষুক —
প্রস্তুত রয়েছে দাস , আরো কিবা অভিলাষ —
গুরু – কাছে লব গুরু দুখ ।’

গুরু কহে , ‘ তবে শোন্‌ , করিলি কঠিন পণ ,
অনুরূপ নিতে হবে ভার —
এই আমি দিনু কয়ে মোর নামে মোর হয়ে
রাজ্য তুমি লহ পুনর্বার ।
তোমারে করিল বিধি ভিক্ষুকের প্রতিনিধি ,
রাজ্যেশ্বর দীন উদাসীন ।
পালিবে যে রাজধর্ম জেনো তাহা মোর কর্ম ,
রাজ্য লয়ে রবে রাজ্যহীন ।’

‘ বৎস , তবে এই লহো মোর আশীর্বাদসহ
আমার গেরুয়া গাত্রবাস —
বৈরাগীর উত্তরীয় পতাকা করিয়া নিয়ো ‘
কহিলেন গুরু রামদাস ।
নৃপশিষ্য নতশিরে বসি রহে নদীতীরে ,
চিন্তারাশি ঘনায়ে ললাটে ।
থামিল রাখালবেণু , গোঠে ফিরে গেল ধেনু ,
পরপারে সূর্য গেল পাটে ।

পূরবীতে ধরি তান একমনে রচি গান
গাহিতে লাগিলা রামদাস ,
‘ আমারে রাজার সাজে বসায়ে সংসারমাঝে
কে তুমি আড়ালে কর বাস !
হে রাজা , রেখেছি আনি তোমারি পাদুকাখানি ,
আমি থাকি পাদপীঠতলে —
সন্ধ্যা হয়ে এল ওই , আর কত বসে রই !
তব রাজ্যে তুমি এসো চলে ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress