Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রতিদান || Sudhindranath Dutta

প্রতিদান || Sudhindranath Dutta

ওগো গরবিনী,সত্রে তোমার
যত উপবাসী নিত্য জুটে,
আমি তো তাদের একজন নই,
চাব না ভিক্ষা চরনে লুটে।
তা ব’লে ভেব না ক্ষুধা নেই মম,
জানি না অভাব নিষ্ঠুরতম,
আশা-নিরাশার দোদুল দোলায়
নামিনি পাতালে, উঠিনি কূটে ।
প্রতিদানহীন ডান নিতে তবু
আসিনি লোভীর সঙ্গে জুটে ।।

বহুবার বিধি বহু দিক হতে
বহু বঞ্চনা করেছে মোরে
খনে খনে তবু অলোকের স্নেহে
জীবন আমার গিয়েছে ভ’রে ।
কপট পাশায় পৃথিবীপতিরে
বনে পাঠায়েছে অবনত শিরে ;
দ্বৈরথরণে তারই মাহাত্ম্য
দিয়েছে আবার দ্বিগুন ক’রে।
শাপ ও আশিস্‌, সুধা আর বিষ
একত্রে বিধি বিতরে মোরে ।।

যদিও আজিকে সম্পদহীন
পথে পথে ঘুরি মৌন দুখে,
তবু অরূপের অক্ষয় স্মৃতি
সঞ্চিত আছে আমারই বুকে ।
আমি জানি কোথা কোন পল্বলে
সোনার সবিতা তিলে তিলে গলে,
বকুলবনের কোন্‌ কোণে শশী
দেখে মুখছবি মুকুরে ঝুঁকে ।
তারার মেলায় যে গণে প্রহর,
অতন্দ্রিত সে আমারই দুখে ।।

যদিও আজিকে বীত নিঃশ্বাস,
দীর্ণ আমার মোহন বেণু,
তবু হয়েছিল সে-সুরে সিদ্ধি,
যা শুনে ভ্রষ্ট কল্পধেনু
ফিরে আসে গোঠে গোধূলিবেলায়,
চপলতা জাগে রাধিকার পায়,
মধুমালতীর বন্ধ্যা শাখায়
উড়ে এসে লাগে সৃজনরেণু ।
দেবতারা রাতে দীপ্র নয়নে
শুনে গেছে মোর দিব্য বেণু ।।
যেই বিভিষিকা ছায়ার সমান
ফেরে অহরহ রূপের পাছে,
বহুবার তার আকার,প্রকার
ব্যক্ত হয়েছে আমার কাছে।
আমার মনের আদিম আঁধারে
বাস করে প্রেত কাতারে কাতারে ।
প্রাক্‌পুরাণিক বিকট পশুর
দায়ভাগ মোর শোণিতে নাচে ।
সমুখে মরুর মরীচিকা ডাকে,
প্রলয়পয়োধি গরজে পাছে ।।

খিন্ন হলেও আমার নয়ন
দিব্যদৃষ্টি তাতেই রাজে।
আমি জানি কেন নিগূঢ় বেদনা
নবপ্রণয়ীর মরমে বাজে।
নির্মিত আমি পরশ পাথরে;
মৃন্ময়ী হয়য় সোনা মোর করে ।
জানি উর্বশী চিরযৌবনা
কারে পরখিতে জরতী সাজে ।
বুঝি আমি কোন্‌ নিগম অর্থ
ইতরের অপভাষায় রাজে ।।

তোমার প্রাণের পরতে পরতে
যে-অনাম তৃষা গুমরি কাঁদে,
অনুকম্পায়ী জীববীণা মোর
ঝংকৃত আজ সে অনুনাদে।
অচিন পথের দূতরূপে তাই
প্রতিদিন এসে দুয়ারে দাঁড়াই ;
অভাবনীয়ের আহ্বান নিয়ে
অবক নয়ন তোমায় সাধে ।
নিত্য জ্বালায় কলুষকালিমা
জানি ; তাই হিয়া দরদে কাঁদে ।।

নিয়ে যাবো আমি তোমারে যে –পথে,
সে-পথে একাকী যায় না যাওয়া ;
পদে পদে তার কাঁটার আঘাত,
পাকে পাকে হাঁকে পাগল হাওয়া ;
হিতবুদ্ধির তড়িৎ ভ্রুকুটি
দূরদিগন্তে উঠে ফুটিফুটি;
ভ্রমে আশেপাশে হিংসালু শিবি ;
পশ্চাতে আর যায় না চাওয়া ।
সর্বহারার দুর্গম পথে
নিয়ামক বিনা যায় না যাওয়া।।

তবু পরিহরি বিত্তের মোহ
রিক্ত অয়নে দাঁড়াও নেমে।
তোমার ত্যাগের দাম ধ’রে দেব
অনির্বচন অমর প্রেমে ;
নিয়ে যাব যেথা নেই দেশ-কাল,
নেই ব্যাধি-জরা, ক্ষয়-জঞ্জাল,
সত্য যেখানে স্বপ্নসুষমা,
ভেদ নেই যেথা সীসায় হেমে।
স্বার্থপরের অর্ঘ্যের লোভ
ত্যাগ ক’রে এসো নিভৃতে নেমে ।।

মোদের সমুখে নন্দনবন
আগলমুক্ত আবার হবে ;
রবে পদতলে অলকানন্দা,
ইন্দ্রধনুর তোরণ নভে ।
রচি ফুলশেজ চ্যুত পারিজাতে
পীযূষপেয়ালা তুলে দেব হাতে ।
উধাও মলয় দ্যুলোকে-ভূলোকে
মোদের প্রেমের কাহিনী কবে।
মোর অসাধ্যসাধনে, মানবী,
নিশ্চয় তুমি সিদ্ধ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *