Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রতারণা || Manisha Palmal

প্রতারণা || Manisha Palmal

প্রতারণা

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নেমেছে অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে! গাছগুলো দুহাত তুলে আহ্বান জানাচ্ছে বৃষ্টিধারা কে। বারান্দার গ্রীলে গাল ঠেকিয়ে মুখে চোখে বৃষ্টি কণা মাখছে কুহু। ভীষণ ভালোবাসে বৃষ্টিকে। মধ্য পঞ্চাশেও ওর এই ছেলেমানুষী থেকে গেছে। এই আদিবাসী গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের হেড মিস্ট্রেস ও । আরো তিনজন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন তারা স্থানীয় বাসিন্দা। 250 জন ছাত্র-ছাত্রী র স্কুল। স্কুলে প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল। আদিবাসী বাচ্চাগুলো সঙ্গেও এমন জড়িয়ে পড়েছে যে ফিরতে পারেনি কলকাতায়। যতদিন মামা মামীমা বেঁচে ছিলেন ততদিন একটা পিছুটান ছিল।বছরে দুবার কলকাতা যেত। গতবছর মামা চলে যাবার পর ও কলকাতা যাবার টান পায় না।
বৃষ্টি কুহুর খুব ভালো লাগে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যখন বৃষ্টি নামে, পাহাড়ের কোলে গ্রাম টা যে কি অপূর্ব লাগে ,না দেখলে বিশ্বাস হবে না!
এখানে আদিবাসীরা এখন বেশ কয়েকটা হোমস্টে বানিয়েছে! হোটেলের সব সুযোগ সুবিধা আছে কিন্তু আদিবাসীদের ঘরের মতো! প্রচুর মানুষ আসেন এখানে! নাগরিকতার আবিল জগত থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে, প্রকৃতির কোলে আশ্রয় নিতে!
এই বৃষ্টির মধ্যে একটা গাড়ী এসে কুহুর বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়ালো। জানালা গলিয়ে একটা মাথা বেরিয়ে জিজ্ঞেস করল —মনিরামের হোমস্টে কি এটা?
কুহু চমকে উঠল স্বরটা শুনে!—- বহু যুগের ওপার হতে যেন ভেসে এল এই কণ্ঠস্বর— খুব চেনা— খুব প্রিয়— কিন্তু তা কি করে হবে? সেই মানুষটা তো না ফেরার দেশে চলে গেছে—– বিশ্বের সাথে এনকাউন্টারে! তাড়াতাড়ি কুহু ওর সাহায্যকারিনী মেঘনা কে জিজ্ঞেস করে —-দেখ তো কী বলছেন!
মেঘনা ছাতা মাথায় গাড়িটাকে মনিরামের হোমস্টের দিক নির্দেশ করে দেয় — গাড়ি চলে যায় ধীরে ধীরে!
মেঘনা কুহুকে ধমকায় —আর ভিজনা দিদি মনি এবার ঠাণ্ডা লাগবে কিন্তু! কুহু আস্তে আস্তে পড়ার টেবিলে এসে বসে। বইয়ের আলমারি থেকে গীতবিতান টা বের করে । এর ভেতরে থাকা একটা সাদা খাম—- খামটা হাতে নিয়ে চুপ করে বসে থাকেও! খামের ভেতর থেকে উঁকি মারছে একটা বছর 26 27 এর যুবকের ছবি— এক মাথা ঝাঁকড়া চুল, উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত দুটো চোখ, শ্যামলা সুগঠিত শরীর।
ছবিটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে কুহু —-ধীরে ধীরে দুচোখের কোল উপচে পডে জলে।
এমনই এক বর্ষণমুখর দিন ওর সাথে শেষ দেখা। কলেজ থেকে বন্ধুত্বের শুরু। একই বিষয় ইংরেজি। কলেজ শেষে দুজনেই একসাথে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে। ততদিনে বন্ধুত্বটা আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। একটা বিশেষ সম্পর্কের দিকে চলেছিল বন্ধুত্বটা। শিলাদিত্য রায় —-বিরাট শিল্পপতি আদিত্য নারায়ন রায়ের একমাত্র সন্তান! আর কুহু একটা সাধারন নিম্নবিত্ত পরিবারের অনাথ মামাবাড়ির আশ্রিতা! একমাত্র অবলম্বন ওর পড়াশোনা ।খুবই মেধাবী তাই মামা মামীমা ওর পড়াটা বন্ধ করেনি। এই অসম বন্ধুত্ব সবাই মানবে কেন ?শিলাদিত্যের বাবার কানে উঠে কথাটা! ততদিনে ওরা দুজনে দুজনার কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে!
এই সময় উগ্র রাজনীতির জালে জড়িয়ে পড়ে শিলাদিত্য কিছুদিনের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল। হঠাৎ খবর আসে পুলিশের সাথে এনকাউন্টারে শিলাদিত্য মারা গেছে। কুহুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। মনে মনে যে সুখের ঘরের স্বপ্ন দেখেছিল এক ঝটকায় তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। কি করবে ভেবে পায়না মেয়েটা তারপর আস্তে আস্তে সময়ের মলমের প্রলেপ পড়ে মনের ক্ষতে। চাকরি পায় প্রাইমারি স্কুলে। কলকাতা থেকে এক প্রকার পালিয়ে আসে পুরুলিয়াতে। আস্তে আস্তে মনের ক্ষতটা একটু একটু করে পূরণ হয়েছিলো আদিবাসীদের অকৃত্রিম নিষ্পাপ ভালোবাসায়। আজ 25 বছর পরে ওই আঘাতের ক্ষতে আবার রক্তক্ষরণ শুরু হল—- এত বড় প্রতারণা!
পরদিন সকালে বাগানে ঘুরছিল কুহু বাগান করা ওর নেশা বাগানের গাছ গাছালি সঙ্গ ওর মনের কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। তখনই দেখে শিলাদিত্যকে। চেহারা একই আছে কেবল মাথার চুলে রুপালি ঝিলিক— গলার স্বরটা তাই এত চেনা লাগছিল! শিলাদিত্য পরিবার নিয়ে এসেছে হোমস্টেতে। ওর স্ত্রীভীষণ স্থূলকায়া ।সাথে একজন সাহায্যকারিনী তিনি সবসময় সাহায্য করছেন ওকে। শিলাদিত্য গেট খুলে বাগানে ঢুকে এবং মুগ্ধচোখে গাছগুলো দেখতে থাকে। কুহ ডাক দেয় —ভেতরে আসুন!
শিলাদিত্য দুই হাত জোড় করে নমস্কার করে বলে— আমি—
কুহু ওর মুখের কথাটা কেড়ে নিয়ে বলে— শিলাদিত্য রায় —-শিল্পপতি আদিত্য নারায়ণ রায়ের একমাত্র পুত্র!
শিলাদিত্য অবাক হয়ে বলে —আপনি আমাকে চেনেন? তারপর বেশ কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে বলে —-তুমি কুহু না?
কুহু বলে —যাক চিনতে পেরেছ তাহলে । কিন্তু নিজের মিথ্যে মৃত্যু সংবাদটা রটিয়ে ছিলে কেন? আমার সাথে এত বড় প্রতারণা তুমি কেন করলে?
তোমার মিথ্যে মৃত্যুসংবাদ টাকে সত্যি ভেবে সারা জীবন কাটিয়ে দিলাম—-
শিলাদিত্য চেষ্টা করেও কুহুর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না।কুহুর সব হারানো মনে গুনগুন করতে থাকে ক্রান্তদর্শী কবির সেই কথাগুলি—-
জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা ,
ধুলায় তাদের যত হোক অবহেলা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *