শেখ সুলেমান একটা চড় মেরেছিল নীলোফারের ভাই, বাচ্চা মজনুকে
সাতজেলিয়া থেকে মোল্লাখালি যাবার খেয়া নৌকো
এমনই কুমড়ো গাদা যে সবাই সবার গা ঘেঁষে আছে
বেশি টালমাটাল হলেই উল্টে যাবে ভরা বর্ষার রায়মঙ্গলে।
শতকরা সাতষট্টি জন যাত্রী সুলেমানের এই বেয়াদপি
মেনে নেয়নি মনে মনে
কিন্তু শেখের বিরুদ্ধে কে মুখ খুলবে, সবাই চুপ
আর শতকরা একুশ জন (হিসেবে মিলল না, তাই না?
কিছু লোক তো সব সময়ই বাইরে থাকে)
সুলেমানের সমর্থনে হেসে উঠল খলখলিয়ে
অবশ্য তারা সবাই জানে, পা মাড়িয়ে দেবার জন্য
মজনুকে চড় মারলেও
সুলেমানের আসল নজর ছিল নীলোফারের অপূর্ব দুটি
স্তনের ডৌলের দিকে
এ রূপ দেখলে ফেরেস্তাদেরও মতিভ্রম হতে পারে
কিন্তু মাছওয়ালি নীলোফার যে বড় বেশি সতীত্বের ছেনালি দেখায়।
একটা বাচ্চাকে চড় মারলে সে ঘটনা বেশিদূর গড়ায় না
খেয়া নৌকো ওপারে পৌঁছয়, সবাই ভুলে যায়, শুধু মজনু
কুঁ কুঁ করে মৃদু মৃদু কাঁদে
নীলোফার একবার মাত্র রক্ত চোখের ঝলক দিয়েছে
সুলেমান সাহেবের দিকে
তারপর বেশ কিছুদিন আর যায় না সাতজেলিয়ার হাটে
মজনু কোথায় কেউ তার খবরও রাখে না।
শেখ সুলেমান ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং নানান কাজে ব্যস্ত
তার চোরাই কাঠের ব্যবসা, তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাবার
সময় নেই
তা ছাড়া কেউ মুরুব্বির পা মাড়িয়ে দিলে তাকে চড় মারায়
দোষ হবে কেন?
তবু শেখ সুলেমান হঠাৎ হঠাৎ দেখতে পায়
নীলোফারের ঊরু জড়িয়ে ধরা কিশোরটির কান্না ভরা মুখ
খেয়াঘাটের বট গাছটা হঠাৎ তাকে বলে, ছি ছি, সুলেমান
শীতকালের আকাশের বিদ্যুৎ তাকে বলে, ছি ছি, সুলেমান
একটা লঞ্চের ভোঁ তাকে বলে, ছি ছি, সুলেমান
ফিনফিনে বাতাস তার কানে কানে বলে যায়, ছি ছি, সুলেমান
এ গ্রামের মানুষজন শেখ সুলেমানকে কিছু বলে না,
কিন্তু প্রকৃতি তাকে যেন ভূতের মতন তাড়া করছে
নৌকোর দাড়ের শব্দের মধ্যেও ছি ছি
গরম ভাতের থালায় ফিসফিস করে ছি ছি
যে হাত দিয়ে সে থাবড়া মেরেছিল, সেই হাতের তালুতে
লেখা ফুটে ওঠে ছি ছি
সুলেমান ক্ষমা চাইতে চায়। কিন্তু কোথায় নীলোফার, কোথায় মজনু
তারা আর দেখা দেবে না কোনোদিন।
মজনু ক্ষমা না করলে চিরকালই অদেখা থেকে যাবে
নীলোফারের বুকের ডৌল
এই দুঃখে মাটিতে গড়াগড়ি দেয় শেখ সুলেমান।