পোষ্যর দয়া মায়া
না, শীতটা খুব জাঁকিয়ে পড়েছে।কিউল তাই সোয়েটার-মাফলার না পড়ে বেরোয় না। কম্বলের ওমে রাত্রে সেঁধিয়ে থাকতে ভালোবাসে। বাড়ীর পোষা কুকুর ‘টুই’ ঘরে ওর পাশে পাশেই থাকে। মাঝে মাঝে রাস্তায় বেড়াতে বেরোয় প্রভুর সাথে। বাড়ীর অন্য সদস্যরাও যার পর নাই ওই পোষ্য জন্তুর সাথে খুউব সখ্যতা জমিয়েছে। তাদের যত্ম-আর্তিতে টুইয়ের জীবনের আদরের শান্ত প্রবাহ বয়ে চলে। কিউলের মতন মনিব পাওয়ায় বরাতের বিষয়।
একদিন কিউলের হাতে বকলস-বদ্ধ পোষ্যটি ওর পাশে চলতে চলতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। সে হতবাক। ব্যাপারটা কি?
ওর গলায় হাত বুলিয়ে শুধোয়, কি হলো রে?
স্থির দৃষ্টিতে এক বিশেষ দিকে চেয়ে “কুই কুই” করতে থাকে টুই। ওকে অনুসরণ করে কিউল দেখল, পথের অন্য ফুটপাতে রাস্তার কিছু কুকুর গুটিগুটি মেরে ঠান্ডায় ভীষণ কাঁপছে।
ওকে একটা চুমু দিয়ে আবার শুধোয়, কি রে ওমন করছিস ক্যান?
সে তখনো কুই কুই করে যাচ্ছে। এবার কিউল বোঝার চেষ্টা করে পোষ্যর অনুভূতি। রাস্তার ওই অভুক্ত শীর্ণ হাড় জিরজিরে কুকুরগুলোর অসহায় যন্ত্রণায় বিদ্ধ হচ্ছে টুই। কিউল তখন ভাবে, যদি ওই কুকুরগুলোর এমন ভয়ঙ্কর শীতলতা থেকে বাঁচানোর মতন কাপড় দিয়ে ঢাকার ব্যবস্থা করা যায়।
ভাবনা মতনই সে বাড়ী ফিরে বাবা-মাকে জানায়, কয়েকটা কাপড়-চোপড় লাগবে।
-কেন রে? কেন রে?- যুগপৎ বাবা-মা শুধোয়।
এরপর ছেলের কাছে সবটা শুনে তাড়াতাড়ি সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করে।
পাড়ার আর কয়েকজনের সহযোগিতায়, রাস্তার অবহেলিত সারমেয়দের ক্ষতবিক্ষত শরীরগুলো ঢেকে দেয়।
টুই সেসব দেখে বুঝে হাসিতে যেন গড়িয়ে যায়।
এরপর মনিবের অঙ্গে উঠে আদরের বন্যায় ভাসিয়ে দেয়।
স্বাভাবিকভাবে এক সুখের অনাস্বাদিত আমেজে কিউলও বুঝতে পারে, মানুষের থেকে প্রাণীরাও কম কিসে, বিশেষ করে দয়া-মায়ায়।