Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পাতাল-খন্দক || Syed Mustafa Siraj » Page 4

পাতাল-খন্দক || Syed Mustafa Siraj

গঙ্গার পাড় ধরে ছোট্ট টিলার ওপর রাজবাড়ির আউটহাউসে বা জয়ের চিড়িয়াখানার দিকে হেঁটে আসছিলেন কর্নেল আর বিজয়। ওদিকটায় রাজবাড়ির বাগানে ঢোকার ছোট্ট ফটকটা বহুকাল আগে বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশে একখানে পাঁচিলের খানিকটা ধসে গেছে। বিজয় বলল, “দেখুন কর্নেল, এখানটা দিয়ে ঢুকতে পারবেন নাকি?”

কর্নেল প্রকাণ্ড মানুষ। এখন তার প্রশস্ত টাক ঢেকে ধূসর টুপি। গলায় বাইনোকুলার আর ক্যামেরা ঝুলছে। পিঠে ছোট্ট কিটব্যাগ আটকানো। হাতে ছড়ির মতো দেখতে প্রজাপতি ধরা জালের হ্যান্ডেল। চোখে সানগ্লাস। বিজয়ের পর কাত হয়ে পাঁচিলের ফোকর গলে ভেতর ঢুকতেই ঘ্রাউ ঘ্রাউ করে উঠল কোথায় একটা কুকুর। বিজয় চাপা গলায় বলল, “সর্বনাশ! দাদার কুকুরটা ছাড়া আছে দেখছি।”

কর্নেল দেখলেন, ঝোঁপঝাড়ের ভেতর দিয়ে টিলার আউটহাউস থেকে শাদারঙের লম্বাটে একটা কুকুর নেমে আসছে। বিজয় জোরালো শিস দিতে দিতে চেঁচিয়ে উঠল, “জয়! তোমার কুকুর সামলাও!”

কোনো সাড়া এল না। বিজয় বলল, “থাক কর্নেল! জয়ের চিড়িয়াখানায় পরে যাওয়া যাবে। চলুন, আমরা বাগানের ভেতর দিয়ে বাড়ি ফিরি।”

কর্নেল একটু হেসে পিঠের কিটব্যাগের চেন খুলে একটা টিউবের গড়নের শিশি বের করলেন। তারপর বললেন “এস বিজয়! তোমাকে একটা ম্যাজিক দেখাই।”

বিজয় ভয় পাওয়া গলায় বলল, “ওদিকে যাবেন না কর্নেল! সনি আমাকেও খাতির করে না। ও একটা সাংঘাতিক কুকুর।”

কর্নেল গ্রাহ্য না করে টিলায় উঠতে থাকলেন। টিলার গায়ে প্রচুর ঝোঁপঝাড়। কিন্তু তার মধ্যে অসংখ্য ঝোঁপ যে ফুল বা সৌন্দর্যের খাতিরে একসময় বাপ্পাদিত্য লাগিয়েছিলেন, তা বোঝা যায়। অযত্নে সেগুলো এখন জঙ্গল হয়ে গেছে। ভেতরে উঁকি মারছে এখনও কিছু ভাঙাচোরা ভাস্কর্যও। কোথাও-কোথাও নানাগড়নের পাথরও দেখা যাচ্ছে। কুকুরটা একলাফে সামনের একটা পাথরে এসে পৌঁছেছিল। তারপর কর্নেলের দিকে আঁপিয়ে এল। বিজয় একটু তফাত থেকে চেঁচিয়ে উঠল, “কর্নেল! চলে আসুন! চলে আসুন!”

তারপর সে দেখল, কর্নেল সেই টিউব-শিশির ছিপি খুলে এগিয়ে গেলেন। অমনি একটা মিরাকল ঘটে গেল যেন। কুকুরটা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে গেল এবং লেজ গুটিয়ে কুঁউ-উ শব্দ করতে করতে উধাও হয়ে গেল। কর্নেল হাসতে হাসতে ঘুরে ডাকলেন, “চলে এস বিজয়!”

বিজয় দৌড়ে কাছে গিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, “আশ্চর্য তো!”

কর্নেল টিউব-শিশিটা পিঠের কিটব্যাগে ঢুকিয়ে বললেন, “এই ওষুধটার নাম ফরমুলা সিনিক টোয়েন্টি–সংক্ষেপে ফরমুলা ২০। সিনিক কথাটা গ্রিক। সিনিক মানে কুকুর। যাই হোক, জয়ের প্রহরী সনিবাবাজি এরপর আমাকে দেখলেই লেজ গুটিয়ে লুকিয়ে পড়বে।”

“জিনিসটা কী?”

“কিচ্ছু না! একরকম উৎকট দুর্গন্ধ। কুকুরের পক্ষে অসহ্য।”

চিড়িয়াখানার অংশটা এই ছোট্ট টিলার মাথায়। তারের জাল দিয়ে ঘেরা খানিকটা খোলা জায়গা। তার পেছনে তিনঘরের একতলা বাড়ি। ওপরে করগেটশিট চাপানো। কালো হয়ে গেছে শিটগুলো। মরচে ধরে ভেঙে গেছে। সে-সব জায়গায় টুকরো টিন বা খড় খুঁজে মেরামত করা হয়েছে।

বিজয়ের ডাক শুনে জয় কাঁধে তার প্রিয় কাকাতুয়া ‘রাজা’কে চাপিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। সনি’কে কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। জয় সগর্বে বলল, “আসুন কর্নেলসায়েব! আমার জ্ঞ দেখুন।”

কর্নেলের সঙ্গে গত সন্ধ্যায় আলাপ হয়েছিল জয়ের। বিজয় বলল, “সনি তেড়ে এসেছিল। কর্নেল ভাগ্যিস”,

কথা কেড়ে জয় একটু হেসে বলল, “সনির তো সেটাই কাজ।”

“কিন্তু সনি দ্যাখো গে ভীষণ জব্দ হয়ে গেছে কর্নেলের পাল্লায় পড়ে।”

বিজয় হাসতে লাগল। জয় শিস দিল। তারপর সনিকে বারকতক ডাকাডাকি করে বলল, “সনির আজ মেজাজ ভাল নেই। যাক, গে, বলুন কর্নেলসায়েব, কেমন লাগছে আমার জ্যু?”

“অসাধারণ।” কর্নেল ঘুরে চারপাশটা দেখে নিয়ে বললেন। তারপর জিগ্যেস করলেন, “চিতাবাঘটা কোথায়?

“আসুন দেখাচ্ছি। বাহাদুরকে আজকাল ঘরবন্দি করেছি। বড্ড বেয়াদপি করছে।”

একটা ঘরের দরজায় তালা আটকানো। তালা খুলে জয় ভেতরে ঢুকল। পেছন-পেছন কর্নেল ও বিজয় ঢুকলেন। ঘরটা আন্দাজ বারোফুট-দশফুট। একপাশে মজবুত খাঁচার ভেতর চিতাবাঘটা চুপচাপ শুয়ে ছিল। মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। কর্নেল খাঁচার কাছে গেলে চিতাটা খা খা শব্দে বিরক্তি প্রকাশ করে কোনায় সেঁটে গেল।

জয় বাঁকা মুখে বলল, “শরদিন্দু নিজের দোষে মারা পড়েছে। মদ তো আমিও খাই। কেউ বলতে পারবে না আমি মাতলামি করি। খাই, চুপচাপ শুয়ে পড়ি। ব্যস! আর শরদিন্দু মাতাল হয়ে আমার জুতে ঢুকে বাহাদুরের সঙ্গে ফাজলেমি করতে গিয়েছিল।”

“খাঁচা খুলে দিয়েছিলেন বুঝি শরদিন্দুবাবু?”

“হ্যা!”

“চিতাটা ওঁকে মেরে পালিয়ে যায়নি শুনলুম?”

“পালাবে কেন? পোষা চিতা। ফের খাঁচার ভেতর ঢুকে চুপচাপ বসে ছিল। কেউ কিচ্ছু টের পাইনি আমরা। ভোরে আমি এসে দেখি, শরদিন্দু ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে আছে খাঁচার পাশে। সঙ্গে সঙ্গে খাঁচার দরজাটা আগে আটকে দিলুম। তারপর–”

“রাত্রে যে শরদিন্দুবাবু বাড়ি ফিরলেন না, জয়া তার স্বামীর খোঁজ করেনি?”

“সেকথা জয়াকে জিগ্যেস করবেন।” জয় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠল। তারপর বিকৃত দৃষ্টে তাকিয়ে ফের চড়া গলায় বলল, “আপনি কে মশাই? আমাদের ফ্যামিলির ব্যাপারে আপনার দেখছি বড় কৌতূহল। কাল রাত একটায় দেখলুম, আপনি বাগানে ফোয়ারাটার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার এসব ভাল লাগে না। আপনি বিজয়ের চেনাজানা লোক এবং গেস্ট না হলে আপনি কর্নেলসায়েব হোন আর লেফটন্যান্ট জেনারেলই হোন, আমি ছেড়ে কথা কইতুম না।”

বিজয় বলে উঠল, “জয়! জয়! কাকে কী বলছ? ছিঃ!”

জয় ঢোক গিলে বলল, “সরি! আমাকে ক্ষমা করবেন কর্নেলসায়েব!”

কর্নেল মৃদুস্বরে বললেন, “বিজয় আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন। তাকে আমি তুমি বলি। সেই কারণে তার দাদাকেও তুমি বলতে পারি কি?”

জয় তার মুখের দিকে শূন্য দৃষ্টে তাকিয়ে তখনই মুখটা নামিয়ে বলল, “নিশ্চয় পারেন।”

“তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে জয়।”

“কী কথা?”

কর্নেল বিজয়ের দিকে তাকালেন। বিজয় বলল, “আপনারা কথা বলুন। আমি বাইরে যাচ্ছি।”

সে বেরিয়ে গেলে কর্নেল বললেন, “তোমার এই কাকাতুয়াটি বেশ। বিজয় বলছিল এর নাম রেখেছে রাজা। নামটাও চমৎকার! রাজাকে কথা বলতে শেখাওনি কেন?”

জয় গলার ভেতর বলল, “আপনার কথাটা কী?”

কর্নেল একটু হাসলেন। “কাকাতুয়াটা কথা বলতে পারলে দারুণ হত। তাই না?”

জয়ের চোখদুটো জ্বলে উঠল। “এই কথা বলার জন্যই কি বিজয়কে সরে যেতে ইশারা করলেন?”

“হ্যাঁ।” কর্নেল এবার গলা চেপে খুব আস্তে বললেন, “রাজাকে যখন কিনেছিলে তখন কিন্তু সে বোবা ছিল না শুনেছি। হঠাৎ একদিন সে বোবা হয়ে যায় নাকি। তুমি

জয় আবার উত্তেজিত হল। বলল, “আপনি আবার নাক গলাচ্ছেন কিন্তু! কে আপনি?”

“জয়! প্লিজ! উত্তেজিত হয়ো না। রাজাকে তুমি নিশ্চয় এমন একটা কথা শেখাতে চাইছিলে, যেটা কারুর পক্ষে হয়তো বিপজ্জনক। তাই সে তোমার রাজাকে রাতারাতি অপারেশন করে বোবা করে দিয়েছিল। তাই না?”

জয় ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল, “হ্যাঁ। দিনকয়েক আগে ভোরে এসে দেখি রাজার মুখ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। ধড়ফড় করছে দাঁড়ে। ভেবেছিলুম মারা পড়বে। শেষে কুর্ডি জঙ্গল এলাকা থেকে এক আদিবাসী বদ্যিকে ডেকে পাঠালুম। তার চিকিৎসায় প্রাণে বেঁচে গেল। তবে গলা দিয়ে নিছক শব্দ করা ছাড়া কথা বলা ওর পক্ষে অসম্ভব। কোনো শুওরের বাচ্চা ওর জিভটা কেটে ফেলেছে।”

“কী কথা শেখাচ্ছিলে জয়?”

জয় একটু সরে গিয়ে বলল, “আপনি যেই হোন, বড্ড বেশি ট্রেসপাস করছেন কিন্তু।”

“জয়! আমি তোমাদের ভাইবোনের হিতৈষী।”

জয় অদ্ভুত হাসল। উদ্ভ্রান্ত একটা হাসি। বলল, “পৃথিবীসুদ্ধ সবাই কানাজোল রাজবাড়ির হিতৈষী। কিন্তু কোনো হিতৈষীর সাধ্য নেই এ রাজবাড়িকে বাঁচায়। এ বাড়ির ওপর পাপের ছায়া পড়েছে। প্লিজ, আমাকে আর ঘাঁটাবেন না। আমার মাথার ঠিক নেই।”

বলে সে জোরে বেরিয়ে গেল। তারপর গলা তুলে ডাকতে থাকল, “সনি! সনি! কোথায় গেলি? এই রাস্কেল! থাম, দেখাচ্ছি মজা!”

বিজয় তারের বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। হরিণটা তার হাত শুকছিল। কর্নেলকে দেখে পিছিয়ে গেল। উল্টোদিকে হায়েনার খাঁচাটা দেখা যাচ্ছিল। হায়েনাটা পা ছাড়িয়ে শুয়ে ছিল। বিজয় একটু হেসে আস্তে বলল, “কী বুঝলেন?”

কর্নেল জবাব দিতে যাচ্ছেন, একটা লোক সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে চড়াই ভেঙে এদিকে আসছে দেখে বললেন, “ও কে, বিজয়?”

বিজয় দেখে নিয়ে বলল, “নানকু। ও দাদার এই চিড়িয়াখানার দেখাশোনা করে। খাবার আনতে গিয়েছিল বাজারে। কসাইখানা থেকে রোজ হাড়গোড় আর খানিকটা করে মাংস আনে। পাখিদের জন্য নিয়ে আসে কাংনিদানা, ছোলা, মটর এইসব।”

“নানকু কোথায় থাকে?”

“দাদার ঘরের ঠিক নিচে একটা ঘর আছে, সেখানে। তবে ও সারাদিন এই জ্যুতেই থাকে, শুধু খাওয়ার সময়টা ছাড়া।”

নানকু সাইকেলটা বেড়ার গেটের পাশে রেখে বিজয় ও কর্নেলকে সেলাম দিল। তারপর ব্যাকসিটে আটকানো চটের বোঁচকা আর রডে ঝোলানো একটা বাস্কেট খুলে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। সঙ্গে সঙ্গে চিড়িয়াখানা জুড়ে একটা সাড়া পড়ে গেল। হায়েনাটা উঠে দাঁড়াল এবং জিভ বের করে খাঁচার রডের ভেতর দিয়ে একটা ঠ্যাং বাড়িয়ে দিল। একজোড়া বানর গলার চেন টানটান করে একটা ছোট্ট গাছ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। হরিণটা বেড়ার বাইরে মুখ বাড়াল। একদল ক্যানারি পাখি তুমুল চেঁচামেচি জুড়ে দিল। ঘরের ভেতর থেকে চিতাবাঘের চাপা ঘঁও ঘাঁও গর্জন শোনা গেল।

বিজয় হাসতে হাসতে বলল, “প্রকৃতির জাগরণ। তাই না কর্নেল?”

কর্নেলও হেসে বললেন, “তুমি কবি। তোমার কাছে তাই মনে হওয়া উচিত। তবে আমার কাছে ক্ষুধার্তের কান্নাকাটি বলেই মনে হচ্ছে। সম্ভবত নানকু ওদের ঠিকমতো খেতে দেয় না।”

বিজয় চাপা স্বরে বলল, “নানকু এক নম্বর চোর–দাদাও জানে! যে টাকা দেয় নানকুকে, তার তিনভাগ নানকুর পকেটে যায়, সে আমি হলপ করে বলতে পারি।”

দুজনে কথা বলতে বলতে টিলার ঢাল বেয়ে একটা নালার ধারে এলেন। নালার ওপর কাঠের সাঁকো আছে। একসময় গঙ্গা থেকে এই নালা দিয়ে বাগানে সেচের জল আনা হত। রাজবাড়ির চৌহদ্দি পাঁচিল-ঘেরা। পাঁচিলের গায়ে ছিল সুইসগেট। সেটা কবে ভেঙে পড়েছে এবং বন্যা ঢোকার আশঙ্কায় নালার বুক থেকে পাঁচিল গেঁথে সীমানার পাঁচিলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির জলে নালাটা প্রায় বারোমাস ভরে থাকে।

কাঠের সাঁকোর ওধারে খোলামেলা ঘাসের জমি, অযত্নলালিত কিছু ফুল ফলের গাছ, তারপর রাজবাড়িটা। খিড়কির ফটকের কাছে পৌঁছুনোর আগেই হঠাৎ খিড়কির বড় কপাটের অন্তর্গত চোর-কপাট খুলে রঙ্গিয়া প্রায় দৌড়ে বেরুল। বেরিয়ে বিজয় ও কর্নেলকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তার মুখে আতঙ্ক লেগে আছে। বিজয় বলল, “কী রে রঙ্গি?”

রঙ্গিয়া হাঁফিয়ে বলল, “দিদিজি বেহেশ হয়ে পড়েছিল দরজার কাছে। অনেক করে হোশ হয়েছে। কথা বলতে পারছে না। বড়কুমারজিকে খবর দিতে বলল মা। তাই”

বিজয় বলল, “তোকে যেতে হবে না আর। চল, দেখি কী হয়েছে।”

রঙ্গিয়া দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। বিজয় চাপা স্বরে কর্নেলকে বলল, “নানকুটা খুব পাজি। রঙ্গিয়ার ওপর বড্ড লোভ। তাই যেতে দিলাম না।”

কর্নেল হঠাৎ বললেন “আচ্ছা বিজয়, কাকাতুয়াটাকে যেদিন কেউ জিভ কেটে বোবা করে দিয়েছিল, সেদিন কি নানকু জয়ের চিড়িয়াখানায় ছিল?”

বিজয় বলল, “জানি না। তবে ওর ব্যপারটা বলি শুনুন। নানকু আগে ছিল সার্কাসের দলে। ওর পরামর্শেই তো দাদা চিড়িয়াখানা করেছিল। সেসব প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে এল প্রায়। আমি তখন কলকাতায় ছিলুম। দাদা তো আগেই চলে এসেছিল। তারপর এইসব করেছিল।”

“নানকুর দেশ কোথায়, জানো?”

“বলে তো সাহেবগঞ্জের লোক।”

দোতলায় সিঁড়ির মুখে গিয়ে কর্নেল ইতস্তত করছিলেন। বিজয় বলল, “আসুন, আসুন! জয়ার কী ব্যাপার দেখি। হঠাৎ কেন অজ্ঞান হল কে জানে!”

ওপরের বারান্দায় যেতেই কানে এল কলাবতী কাউকে ডাক্তার ডাকতে বলছে। বুদ্বুরাম গাল চুলকোতে চুলকোতে জয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিল। বিজয়দের দেখে বলল, “দিদিজির তবিয়ত খারাপ। ডাক্তাররাবুকে ডেকে আনতে যাচ্ছি ছোটকুমার সাব!”

জয়ার ঘরের পর্দা তুলে বিজয় বলল, “কী হয়েছে, জয়া? মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলি শুনলুম। এই দ্যাখ, কর্নেলসায়েব তোকে দেখতে এসেছেন।”

ঘরের ভেতরকার কড়ামিঠে গন্ধটা কর্নেলের নাকে আচমকা ঝাঁপিয়ে এসেছিল। কর্নেল দ্রুত দরজার পর্দা টেনে দুপাশে সরিয়ে দিয়ে জয়ার দিকে এগিয়ে গেলেন। জয়া হেলান দিয়ে পালঙ্কে বসে আছে। ফ্যানটা ফুল স্পিডে ঘুরছে মাথার ওপর। জয়ার চোখদুটো নিষ্পলক।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *