Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

শিবকালীপুর অঞ্চলে

শিবকালীপুর অঞ্চলে—শিবকালীপুরেই প্রথম খাজনা-বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ধর্মঘটের আগুন জ্বলিয়া উঠিল।

আগুন জ্বলিতেই প্রাকৃতিক নিয়মে বায়ুস্তরে প্রবাহ জাগিয়া ওঠে। শুধু তাই নয় আগুনের আশপাশের বস্তুগুলির ভিতরের দাহিকাশক্তি অগ্নির স্পৰ্শ পাইবার জন্য উন্মুখ হইয়া যেন অধীর আগ্রহে কাপে। খড়ের চালে যখন আগুন জ্বলে, তখন পাশের ঘরের চালের খড় উত্তাপে স্ত্ৰীপুষ্পের গৰ্ভকেশরের মত ফুলিয়া বিকশিত হইয়া ওঠে। অগ্নিকণার স্পর্শ না পাইলেও—উত্তাপ গ্রাস করিতে করিতে সে চালও এক সময় দপ করিয়া জ্বলিয়া ওঠে। আগুন জ্বলে, সে আগুনের উত্তাপে আশপাশের ঘরেও আগুন লাগে। তেমনিভাবেই শিবকালীপুরের ধর্মঘট চারিপাশের গ্রামেও ছড়াইয়া পড়িল। দিন কয়েকের মধ্যেই এ অঞ্চলে প্রায় সকল গ্রামেই ধুয়া উঠিল—খাজনা-বৃদ্ধি দিতে পারিব না। দিব না। কেন বৃদ্ধি? কিসের বৃদ্ধি?অন্যদিকে শিবকালীপুরের নূতন পত্তনিদার চাষী হইতে জমিদার শ্ৰীহরি ঘোষও সাজিল। সে পাকা মামলাবাজ গোমস্তা, সদরের প্রধান দেওয়ানি-আইনবিদ উকিল এবং পাইক-লাঠিয়াল লইয়া প্রস্তুত হইয়া দাঁড়াইয়া সে ঘোষণা করিল—তাহাদের স্বপক্ষে আইনের সপ্তসিন্ধু উত্তাল হইয়া অপেক্ষা করিতেছে, তাহার অপরিমেয় অর্থশক্তি দ্বারা সেই সিন্ধু-সলিল ক্ৰয় করিয়া আনিয়া সে এই ক্ষুদ্র শিবকালীপুরকে প্লবিত করিয়া দিবে। খাজনা-বৃদ্ধির মামলা লইয়া সে হাইকোর্ট পর্যন্ত লড়িবে। আশপাশের জমিদারেরাও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হইয়া উঠিল। তাহারাও শ্ৰীহরিকে আশ্বাস দিল।

রথযাত্রার কয়েকদিন পর।

এই কয়েকদিনের মধ্যেই ধর্মঘটের উত্তাপ গ্রীষ্মের উত্তাপের মত ছড়াইয়া পড়িল। প্রবল বর্ষণে মাঠ ভরিয়া উঠিয়াছে। চাষের কাজ শুরু হইয়া গেল ঝপ করিয়া। রাত্রি থাকিতে চাষীরা মাঠে গিয়া পড়ে। চারিপাশের গ্রামগুলির মধ্যস্থলে মাঠের মধ্যেই কাজ করিতে করিতে ধর্মঘটের আলোচনা চলিতেছিল।

জলভরা মাঠের আইল কাটিতে কাটিতে ক্লান্ত হইয়া একবার তামাক খাইবার জন্য শিবু আসিয়া বসিল। চকমকি টুকিয়া শোলায় আগুন ধরাইয়া তামাক সাজিয়া বেশ জুত করিয়া বসিতেই আশপাশ হইতে কয়েকজন আসিয়া জুটিয়া গেল। কুসুমপুরের রহম শেখই প্রথমটা আরম্ভ করিল।

–চাচা, তোমরা লাগাছ শুনলাম?

শিবু দাস বিজ্ঞের মত একটু হাসিল।

এই সেদিন ন্যায়রত্নের বাড়িতে ধর্মঘট করা ঠিক হইয়াছে।

দেবু তাহাদের সব বুঝাইয়া বলিয়াছে। বাধা-বিপত্তি দুঃখ-কষ্ট অনিবার্যরূপে যাহা আসিবে, তাহার কথা সে বারবার বলিয়াছে। বিগত একশত বৎসরের মধ্যেই এই পঞ্চগ্রামে যত ধর্মঘট হইয়াছে তাহার কাহিনী শুনাইয়া জানাইয়াছেকত চাষী জমিদারের সঙ্গে ধর্মঘটের দ্বন্দে। সর্বস্বান্ত হইয়া গিয়াছে। বারবার বলিয়াছে, আইন যেখানে জমিদারের স্বপক্ষে, সেখানে বৃদ্ধি দিব না এ কথা বলা ভুল, আইন অনুসারে অন্যায়। প্রজা ও জমিদারের অর্থ-শক্তির কথা এবং আইনানুযায়ী অধিকারের কথা স্মরণ করিয়া সে প্রকারান্তরে নিষেধই করিয়াছিল।

সকলে দমিয়া গিয়াছিল; কিন্তু ন্যায়রত্ন মহাশয়ের পৌত্র বিশু সেখানে উপস্থিত ছিল, সে হাসিয়া বলিয়াছিল—আইন পাল্টায় দেবু-ভাই। আগে গভর্নমেন্টের মতে জমির মালিক ছিল জমিদার; প্রজার অধিকার ছিল শুধু চাষ-আবাদের। প্রজা কাউকে জমি বিক্রি করলে জমিদারের কাছে খারিজ দাখিল করে হুকুম নিতে হত। জমির উপর মূল্যবান গাছের অধিকারও প্রজার ছিল না। কিন্তু সে আইন পাল্টেছে। প্রজারা যদি বৃদ্ধি দেব না বলে—না দেবার দাবিটাকে জোরালো করতে পারে, সঙ্গত যুক্তি দেখাতে পারে—তবে বৃদ্ধির আইন পাল্টাবে।

কথাটা বলিবামাত্র সমস্ত লোকের মনে একটিমাত্র যুক্তি স্ফীতকলেবর বিন্ধ্যপর্বতের মত মাথা ঠেলিয়া আকাশস্পর্শী হইয়া উঠিয়াছিল—কোথা হইতে দিব? দিলে আমাদের থাকিবে কি? আমরা কি খাইয়া বাঁচিব? সরকারের এমন আইন কি করিয়া ন্যায়সঙ্গত হইতে পারে?

অন্ধ বৃদ্ধ পণ্ডিত কেনারাম হাসিয়া বলিয়াছিল কিন্তু বিশুবাবু, মারে হরি তো রাখে কে?

বৃদ্ধের কথায় সমস্ত মজলিসটা ক্ষোভে ভরিয়া উঠিয়াছিল। জীব-জীবনের ধাতুগত প্রকৃতি অনুযায়ী একজন অপরজনকে দ্বন্দ্বে পরাভূত করিয়া শোষণ করিয়া আপনাকে অধিকতর শক্তিশালী করিয়া তোলে। যে পরাজিত হয়, শোষিত হয়, শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মুক্তির প্রচেষ্টায় সে বিরত হয় না; সেক্ষেত্রে ক্ষোভ বা অভিমান সে করে না। কিন্তু প্রতিবিধানের জন্য সে যাহার ওপর নির্ভর করে, সেও যদি আসিয়া ওই শোষণকারীকেই সাহায্য করে, তাহার শক্তির চাপ চাপাইয়া দেয় প্রাণপণ মুক্তি প্রচেষ্টার বুকে, তবে শোষিতের শেষ সম্বল—দুটি বিন্দু অশ্ৰুসিক্ত মর্মান্তিক ক্ষোভ; শুধু ক্ষোভ নয়-অভিমানও থাকে। সেই ক্ষোভ; সেই অভিমান তাহাদের জাগিয়া উঠিল।

বিশু এবার বলিয়াছিলহরি যদি ন্যায়বিচার না করে মারতেই চায়, তবে এ হরিকে পাল্টে অন্য হরিকে পুজো করব আমরা।

দেবু শিহরিয়া বলিয়া উঠিয়াছিল—কি বলছ বিশু-ভাই! না—না, ও কথা তোমার মুখে। শোভা পায় না।

শুধু দেবু নয়, গোটা মজলিসটা শিহরিয়া উঠিয়াছিল। বিশু কিন্তু হো-হো করিয়া হাসিয়া বলিয়াছিল–বংশীধারী বা চক্রধারী গোকুল বা গোলকবিহারী হরির কথা বলছি না দেবু-ভাই, তিনি যেমন আছেন তেমনি থাকুন মাথার ওপর। আমি বলছি আইন যারা করেন তাদের কথা। যারা আইন করেন—তারা যদি আমাদের দুঃখের দিকে না চান, তবে আসছে-বারে আমরা তাদের ভোট দেব না। ভোট তো আমাদের হাতে।

এই সময় ন্যায়রত্ন অ্যাসিয়া বিশ্বনাথকে ডাকিয়া লইয়া গিয়াছিলেন। ন্যায়রত্ন পাশের ঘরেই ছিলেন; তিনি সবই শুনিতেছিলেন। বলিয়াছিলেন–বিশ্বনাথের সংসার জ্ঞান নেই। ওর যুক্তিতে তোমরা কান দিও না। তোমাদের ভাল-মন্দ তোমরা পাঁচজনে বিচার করে যা হয় কর।

বিশ্বনাথ চলিয়া গেলেও তুমুল তর্ক-কোলাহলের মধ্যে তাহাদের অন্তরের অকপট অভিলাষই জয়লাভ করিল-বৃদ্ধি দিব না।

দেবু বলিল—তবে আমি এর মধ্যে নেই। আমাকে রেহাই দাও।

–কেন?

—আমার মত—বৃদ্ধি দেব না এ কথা ঠিক হবে না। যা ন্যায়সঙ্গত তার বেশি দেব না। এই কথাই বলা উচিত। এর জন্য ধর্মঘট করতে হয়—আমি রাজি আছি।

–কিন্তু বিশুবাবু যে বললেন– আমরা দেব না বললে বৃদ্ধি-আইন পাল্টে যাবে।

মৃদু হাসিয়া দেবু বলিয়াছিল—ঠাকুরমশায় যে বললেন–বিশু-ভাইয়ের সংসারজ্ঞান নেই, আমিও তাই বলি। কাচাবাচ্চা নিয়ে ঘর-সংসার আমাদের, বৃদ্ধি দেব নাপণ ধরলে, আমাদের জমিজেরাত এক ছটাক কারও থাকবে না। অবিশ্যি তারপর হয়ত আইন পাল্টাতে পারে।

জগন উঠিয়া বলিল—এটা তোমার কাপুরুষের মত কথা। সবাই যদি ধর্মঘট করে, তবে জমি কিনবে কে?

–কিনবে কে? হাসিয়া দেবু স্মরণ করাইয়া দিল কঙ্কণার এবং আশপাশের ভদ্রলোক বাবুদের কথা—জংশনের গদিওয়ালা মহাজনদের কথা।

জগনও এবার মাথা নিচু করিয়া বসিয়াছিল।

অবশেষে দেবুর মতেই সকলে রাজি হইয়াছে। কিন্তু স্থির হইয়াছেও কথাটা ভিতরের কথা, প্রথমত বলা হইবে দিব না-বৃদ্ধি দিব না।

শিবু দাস ওই ভিতর বাহিরের কথা জানে, তাই বিজ্ঞের মত একটু হাসিল।

—আমাদের তো কাল জুম্মার নমাজমছজেদেই সব ঠিক হবে আমাদের। শিবু এবার প্রশ্ন করিল—দৌলত শেখ? শেখজী রাজি হয়েছে?

দৌলত শেখ চামড়ার ব্যবসায়ী ধনী লোক। অতীতের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়া শিবু দাসের সন্দেহ জাগিয়া উঠিল দৌলত শেখ সম্বন্ধে। তাহাদের গ্রামেও ঠিক ওই একই ব্যাপার ঘটিয়াছে। ভদ্রলোকেরা ধর্মঘটে যোগ দিতে রাজি হয় নাই। তাহাদের অধিকাংশই ব্যক্তিগতভাবে মামলা-মকদ্দমা করিবে স্থির করিয়াছে। কেহ কেহ আপোষে বৃদ্ধি দিবে বা দিয়াছে। ভদ্রলোকেরা নিজ হাতে চাষ করে না বলিয়া তাহারা জমিদারকে ধরিয়াছে। প্রথমেই তাহারা বৃদ্ধি দিতেছে বলিয়া ভদ্রতা এবং আনুগত্যের দাবিও তাহাদের আছে। ইহারা সকলেই চাকুরে এবং গরিব ভদ্র গৃহস্থ।

রহম হাসিয়া বলিল—ত্যালে আর পানিতে কখনও মিশ খায় চাচা? শ্যাখ আলাদা মামলা করবে। সবারই সঙ্গে সি নাই।

কুসুমপুরের পাশেই দেখুড়িয়া গ্রাম, দেখুড়িয়ার তিনকড়ি দাস দুর্ধর্ষ লোক, দুর্ধর্ষপনার জন্যই সে প্রায় সর্বস্বান্ত হইয়াছে। এখন সে অন্য লোকের জমি ভাগে চষিয়া খায়, শিবকালীপুরের এলাকার মধ্যেই কঙ্কণার ভদ্রলোকের জমিতে চাষ দিতে আসিয়াছিল, সে বলিল-আমাদের গায়ের শালারা এখনও সব গুজুর গুজুর করছে। আমি বলে দিয়েছি যে দেবে সে দিতে পারে, আমি দেব না।

পরক্ষণেই হাসিয়া বলিল—জমি তো মোটে পাঁচ বিঘে। পঁচিশ বিঘে গিয়েছে, পাঁচ বিঘে আছে। যাক ও পাঁচ বিঘেও যাক! তারপর তল্পিতল্পা নিয়ে বম্বম্ করে পালাব একদিন।

রহম বলিল—তুরা সব তা জানি না। মেড়ার মতন ঢু মারতেই জানি। লড়াই কি শুধু গায়ের জোরে হয়? প্যাচ হল আসল জিনিস। আমুতির (অম্বুবাচীর) লড়ায়ে সিবার এইটুকুন জনাব আলি—কেমন দিলে—তুদের লগেন গঁয়লাকে দড়াম করে ফেলে—দেখেছিলি?

তিনকড়ি চটিয়া উঠিল। সিধা হইয়া দাঁড়াইল।

দেখুড়িয়ার তিনকড়ি যেমন গোয়ার, দৈহিক শক্তিতেও সে তেমনি বলশালী লোক—তাহার উপর সে নামজাদা লাঠিয়ালও বটে। রহমের এই শ্লেষে সে চটিয়া উঠিল। চটিয়া উঠিবার হেতুও আছে। দেখুড়িয়ার লোকের সঙ্গে কুসুমপুরের সাধারণ চাষী মুসলমানদের শক্তি-প্রতিযোগিতা বহুকাল চলিয়া আসিতেছে। দেখুড়িয়ার বাসিন্দাদের অধিকাংশই ভল্লাবাঙ্গী; ভল্লাবাগীদের শক্তি বাংলাদেশে বিখ্যাত। তিনকড়ি চাষী সদ্‌গোপ হইলেও ওই ভল্লাবাদীদের নেতৃত্ব করিয়া থাকে। এ অঞ্চলে তাহার গ্রামের শক্তি তাহার অহঙ্কার। তাহার সেই অহঙ্কারে রহম ঘা দিয়াছে। শিবু দাস কিন্তু বিব্রত হইয়া উঠিল। দুজনে বুঝি লড়াই বাঁধিয়া যায়। সহসা বা দিকে চাহিয়া শিবু আশ্বস্ত হইয়া বলিল—চুপ কর তিনকড়ি—চৌধুরী আসছেন।

ও-দিক হইতে দ্বারিকা চৌধুরী আসিতেছিল চাষের তদবিরে। সাদা কাপড় দিয়া ডবল করা ছাতাটি মাথায়, লাঠি হাতে বৃদ্ধ ব্যক্তিকে এ অঞ্চলে সকলেই দূর হইতে চিনিতে পারে। তা ছাড়া লোকটিকে সকলেই শ্ৰদ্ধা সম্মান করে। শিবু দাস দূর হইতে চৌধুরীকে দেখিয়া বলিল চৌধুরী আসছেন, চুপ কর।

চৌধুরীরা একপুরুষ পূর্বে জমিদার ছিল, এখন জমিদারী নাই। চৌধুরী বর্তমানে চাষবাস বৃত্তিই অবলম্বন করিয়াছে, বৃত্তি অনুসারে চাষীই বলিতে হয়, তবুও চৌধুরীরা, বিশেষত বৃদ্ধ চৌধুরী এখনও সাধারণ হইতে স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়া চলে, তোকও বৃদ্ধ চৌধুরীকে একটু বিশেষ সম্মানের চক্ষে দেখে।

চৌধুরী কাছে আসিয়া অভ্যাসমত মৃদু হাসিয়া বলিল—কি গো বাবা সকল, তামাক খেতে বসেছেন সব?

আপনার সম্ভ্ৰম বজায় রাখতে চৌধুরী এমনিভাবেই সকলকে সম্ভ্ৰম করিয়া চলে। আপনি বলিয়া সম্বোধন করিলে প্রত্যুত্তরে তুমি এ সংসারে কেহ বলিতে পারে না।

শিবু দাস উঠিয়া নমস্কার করিয়া বলিল—পেন্নাম। এইবার তাহলে সেরে উঠেছেন?

চৌধুরী বলিলা বাবা, উঠলাম। পাপের ভোগ এখনও আছে—সেরে উঠতে হল। কিছুদিন পূর্বে শিবকালীপুরের নুতন পত্তনিদার শ্ৰীহরি ঘোষ ও দেবু ঘোষের মধ্যে একটা গাছ কাটা লইয়া দাঙ্গা বাঁধিয়াছিল। শ্ৰীহরি ঘোষ দেবু ঘোষকে জব্দ করিবার জন্য তাহার পিতামহের প্রতিষ্ঠা করা গাছ কাটিয়া লইতে উদ্যত হইয়াছিল; দেবু নিৰ্ভয়ে উদ্যত কুড়লের সামনে দাঁড়াইয়া বাধা দিয়াছিল। সেই দাঙ্গায় উভয় পক্ষকে নিরস্ত করিতে গিয়া চৌধুরী শ্ৰীহরি ঘোষের লাঠিয়ালের লাঠিতে আহত হইয়া কয়েক মাসই শয্যাশায়ী ছিল। ঘটনায় সকলেই হায় হায় করিয়াছে।

শিবু দাস বলিল—কালকের মজলিসের কথা শুনেছেন?

চৌধুরী হাসিয়া বলিল—শুনলাম বৈকি। জগন ডাক্তার মশায় গিয়েছিলেন আমার কাছে।

ব্যর্থ হইয়া শিবু প্রশ্ন করিলকি হল?

চৌধুরী চুপ করিয়া রহিল, উত্তর দিবার অভিপ্রায় তাহার ছিল না। প্রসঙ্গটা সে এড়াইয়া যাইতে চায়।

শিবু কিন্তু আবার প্রশ্ন করিল—চৌধুরী মশায়?

চৌধুরী হাসিয়া বলিলবাবা, আমি বুড়ো মানুষ, সেকেলে লোক; একেলে কাণ্ড-কারখানা বুঝিও না, সহ্যও হয় না। ওসবে আমি নাই।

কথাটা শুনিয়া সকলে অবাক হইয়া গেল। কয়েক মুহূর্ত অশোভন নীরবতার মধ্যে কাটিবার পর চৌধুরী অন্য প্ৰসঙ্গ আনিবার জন্যই হাসিয়া বলিল জল তো এবার ভাল—সকাল-সকালই বর্ষা নামল—এখন শেষরক্ষ করলে হয়।

রহম শেখ কথা বলিবার একটা সূত্র খুঁজিতেছিল পাইবামাত্র সে সেলাম করিয়া বলিল–সেলাম গো চৌধুরী জ্যাঠা! শেষরক্ষে কিন্তু হবে না-ই একেবারে খাঁটি কথা!

—সেলাম। কি রকম? শেষরক্ষে হবে না কি করে বলছেন শেখজী?

–পাপ। পাপের লেগে বলছি। আল্লার দুনিয়া পাপে ভরে গেল। বড়লোকের গোড়ের। তলায় দুনিয়াসুদ্ধ মানুষ কুত্তার মতন লেজ নাড়ছে; পাপের আবার বাকী আছে চৌধুরী মশায়?

–তা বটে। তবে বড়লোক, গরিবলোকসে তো আল্লাই করে পাঠান শেখজী।

—তা পাঠান, কিন্তু বড়লোকের পা চাটতে তো বলেন নাই আল্লা। এই ধরুন, আপনার মত লোক; এককালে আপনারাও আমীর ছিলেন, জমিদার ছিলেন। ছিরে চাষা আঙুল ফুলে। কলাগাছ হয়েছে—আপনি তার ভয়ে দশ-জলার ধর্মঘটে আসছেন নাই। ইতে কি আল্লা দয়া করেন, না শেষরক্ষে হয়?

চৌধুরী তবুও হাসিল। কিন্তু একথার কোনো উত্তর দিল না। কয়েক মুহূর্ত চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিয়া পাশ কাটাইয়া চলিতে চলিতে বলিল—আচ্ছা, তাহলে চলি এখন।

চৌধুরী ধীরে ধীরে পথ চলিতে চলিতে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলহরি নারায়ণ, পার কর প্রভু!

একান্ত অন্তরের সঙ্গেই সে এ কামনা করিল। রহমের কথার শ্লেষ তাহাকে আঘাত করিয়াছে। একথা সত্য, কিন্তু ওটাই একমাত্ৰ হেতু নয়। কিছুদিন হইতেই সে জীবনে একটা অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করিতেছে। সে অস্বাচ্ছন্দ্য দিন দিন যেন গভীর এবং প্রবল হইয়া উঠিতেছে। একালের সঙ্গে সে কিছুতেই আপনাকে খাপ খাওয়াইতে পারিতেছে না। রীতি-নীতি, মতি-গতি, আচারধর্ম সব পাল্টাইয়া গেল। তাহারই পুরনো পাকা বাড়িটার মত সব যেন ভাঙিয়া পড়িবার জন্য উন্মুখ হইয়া উঠিয়াছে। ঝুরঝুর করিয়া অহরহ যেমন বাড়িটার চুনবালি ঝরিয়া পড়িতেছে তেমনিভাবেই সেকালের সব ঝরিয়া পড়িতেছে। লোক আর পরকাল মানে না, দেব-দ্বিজে ভক্তি নাই, প্রবীণকে সমীহ করে না, রাজা-জমিদার-মহাজনের প্রতি শ্রদ্ধা নাই; অভক্ষ্যভক্ষণেও দ্বিধা নাই। পুরোহিতের ছেলে সাহেবী ফ্যাশানে চুল ছটিয়া টিকি কাটিয়া কি না করিতেছে? কঙ্কণার চাটুজ্জেদের ছেলে চামড়ার ব্যবসা করে। গ্রামের কুমোর পলাইয়াছে, কামার ব্যবসা তুলিয়া দিল, বায়েন ঢাক বাজানো ছাড়িল; ডোমে আর তালপাতা-বাঁশ লইয়া ডোম-বৃত্তি দেয় না, নাপিত আর ধান লইয়া ক্ষৌরি করে না, তেলে ভেজাল, ঘিয়ে চর্বি, নুনের ভিতর মধ্যে মধ্যে হাড়ও বাহির হয়। সকলের চেয়ে খারাপ মানুষের সঙ্গে মানুষের অমিল। প্রত্যেক লোকটিই একালে স্বাধীন প্রধান; কেহ কাহাকেও মানিতে চাহে না। এই প্রজা ধর্মঘট সেকালেও হইয়াছে, নূতন নয়, কিন্তু এইবারের ধর্মঘটের যাহা আরম্ভ তাহার সহিত কত প্ৰভেদ! জমিদার সেকালে অত্যাচার করিলে বা অন্যায় দাবি করিলে ধর্মঘট হইত; কিন্তু এবার জমিদার যে বৃদ্ধি দাবি করিতেছে—চৌধুরী অনেক বিবেচনা করিয়াও সে দাবিকে অন্যায় বলিয়া একেবারে উড়াইয়া দিতে পারে নাই। তাহার বিবেকবুদ্ধি অনুযায়ী একটা বৃদ্ধি জমিদারের প্রাপ্য হইয়াছে। আইনে বিশ বৎসর অন্তর জমিদার শস্য-মূল্যের বৃদ্ধির অনুপাতে একটা বৃদ্ধি পাইবার হকদার। অবশ্য পরিমাণ মত পাইতে হইবে জমিদারকে। অন্যায্য দাবি করিলে—ন্যায্য প্রাপ্যের বেশি দিব না একথা লোকে বলিতে পারে, কিন্তু একেবারে দিব না একথা বলিতেছে কোন্ ধর্মবুদ্ধিতে, কোন্ বিবেচনায়?

আপনাকে ঐ প্রশ্নটা করিয়া চৌধুরী পরক্ষণেই আপনার মনে হাসিল। ধর্মবুদ্ধি? তাহাদের পুরনো বাড়িটার পলেস্তারা-খসা ইট-বাহিরকরা দেওয়ালের মত মানুষের ধর্মবুদ্ধি লুপ্ত হইয়া লোভ, ক্ষুধা আর স্বার্থসর্বস্ব দতগুলিই একালে মানুষের সার হইয়াছে। ধর্মবুদ্ধি? তাও যদি উদরসর্বস্ব স্বার্থসর্বস্ব হইয়া পেটটাকে ভরাইতে পাইত—তবুও একটা সান্ত্বনা থাকিত। একালে কয়টা লোকের ঘরে ভাত আছে? জমিদারের ঘর ফাঁক হইয়া গেল, চাষীর গোলায় আর ধান ওঠে। না; সমস্ত ধান কয়টা মহাজনের ঘরে গিয়া ঢুকিল।

ছিরু পাল মহাজনী করিতে করিতে শ্ৰীহরি ঘোষ হইল জমিদারের গোমস্তা হইল—অবশেষে পত্তনিদার হইয়া বসিয়াছে। একালকে সে কিছুতই বুঝিতে পারিতেছে না। এই সময় মানে মানে যাওয়াই ভাল। অন্তরের সঙ্গেই সে হরিকে স্মরণ করিয়া প্রার্থনা করিল-পার কর প্রভু!

চারিপাশ জলে ভরিয়া গিয়াছে, ও মাঠ হইতে পাশে নিচু মাঠে কলকল শব্দে জল বহিয়া চলিয়াছে। আবারও আজ আকাশে মেঘ জমিয়াছে। মধ্যে মধ্যে অল্প অল্প বর্ষণও রহিয়াছে। চৌধুরী সন্তৰ্পণে পিছল আলপথের উপর দিয়া চলিতেছিল। তাহার নিজের জমির মাথায় দাঁড়াইয়া চৌধুরী দেখিল গরু দুইটার পিঠে পাঁচনলাঠির আঘাতের দাগ ফুটিয়া রহিয়াছে মোটা দড়ির মত। চৌধুরীর রাগ সহজে হয় না, কিন্তু গরু দুইটার পিঠের দাগ দেখিয়া সে আজ অকস্মাৎ রাগে একেবারে আগুনের মত জ্বলিয়া উঠিল। রহম শেখের কথার জ্বালাজীবনের উপর বিতৃষ্ণা এমনি একটা নির্গমন পথের সুযোগ পাইয়া অগ্নিশিখার মত বাহির হইয়া পড়িল। চৌধুরী জলভরা জমিতে নামিয়া পড়িয়া কৃষাণটার হাতের পাঁচনটা কাড়িয়া লইয়া বলিল—দেখবি? দেখবি?

কৃষাণটা আশ্চর্য হইয়া বলিল—ওই! কি? করলাম কি গো?

—গরু দুটাকে এমনি করে মেরেছি যে–?

চৌধুরী পাঁচন উদ্যত করিয়াছিল, কিন্তু পিছন হইতে কে ডাকিল–হাঁ, হাঁ, চৌধুরী মশায়!

চৌধুরী পিছন ফিরিয়া দেখিল, দেবু ঘোষ আর একটি বাইশ-তেইশ বৎসরের ভদ্রযুবা। চৌধুরী লজ্জিত হইয়াই পাঁচনটা ফেলিয়া দিল। বলিল—দেখ দেখি বাবা, গরু দুটোকে কি রকম মেরেছে দেখ দেখি? অবোলা জীব, গরু–ভগবতী!

ভদ্র যুবকটি হাসিয়া বলিল—ও লোকটার কিন্তু গরু দুটোর সঙ্গে খুব তফাত নেই চৌধুরী মশায়। তফাত কেবল-অবোলা নয়, আর ভগবতী নয়।

চৌধুরী আরও লজ্জিত হইয়া বলিলতা বটে। ভয়ানক অন্যায় হত। কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারলাম না?

দেবু বলিল—মহাগ্রামের ঠাকুর মশায়ের নাতি।

তৎক্ষণাৎ চৌধুরী সেই কর্দমাক্ত আলপথের উপরেই মাথা ঠেকাইয়া প্ৰণাম করিয়া বলিল–ও রে বাপ রে! বাপ রে! আজ আমার মহাভাগ্যি, আপনার পুণ্যেই আজ আমি মহা অন্যায় করতে করতে বেঁচে গেলাম।

বিশ্বনাথ কয়েক পা পিছাইয়া গেল, তারপর বলিল—না—না-ন! এ কি করছেন আপনি!

চৌধুরী সবিস্ময়ে বলিল—কেন?

আপনি আমার দাদুর বয়সী। আপনি এভাবে প্রণাম করলে—শুধু লজ্জাই পাই না, অপরাধও স্পর্শ করে।

—আপনি এই কথা বলছেন?

–হ্যাঁ বলছি।—বলিয়া বিশ্বনাথ তাহাকে প্রতিনমস্কার করিল।

চৌধুরী বিস্ময়ে হতবাক হইয়া গিয়াছিল। এ অঞ্চলের মহাগুরু বলিয়া পূজিত ন্যায়রত্নের পৌত্রের মুখে এ কি কথা! কিছুদিন পূর্বে শিবকালীপুরে যতীনবাবু ডেটিন্যু, তিনিও ব্রাহ্মণ ছিলেন, তিনিও তাহাক ঠিক এই কথাই বলিয়াছিলেন। কিন্তু চৌধুরী সেদিন এত বিস্মিত হয় নাই, তাহার অন্তরের সংস্কারে এতখানি আঘাত লাগে নাই। সেদিন সে আপনাকে সান্ত্বনা দিয়াছিল–যতীনবাবু কলিকাতার ছেলে, তাহার এ স্লেচ্ছভাব আশ্চর্যের নয়। কিন্তু ন্যায়রত্নের পৌত্র এ অঞ্চলের ভাবী মহাগুরু, তিনি যদি নিজ হইতে এইভাবে সমাজের কর্ণধারত্ব ত্যাগ করেন তবে কি গতি হইবে সমাজের?

দেবু অগ্রসর হইয়া বলিল—আপনার ওখানে কাল যাব চৌধুরী মশায়।

–এ্যাঁ?—সচকিত হইয়া চৌধুরী প্ৰশ্ন করিল–এ্যাঁ?

–কাল আমরা আপনার ওখানে যাব।

–সে আমার ভাগ্য। কিন্তু কারণটা কি? ধর্মঘট?

–হ্যাঁ।

–আমি ও ধর্মঘটে নেই বাবা। আমাকে বাবা ক্ষমা কোরো।—বলিয়াই সে সঙ্গে সঙ্গে চলিতে আরম্ভ করিল।

দেবু পিছন হইতে ডাকিল–চৌধুরী মশায়!

অগ্রসর হইতে হইতেই চৌধুরী হাত নাড়িয়া বলিল–না বাবা।

হাসিয়া বিশ্বনাথ বলিল—এস, পরে হবে। প্রণাম না নেওয়াতে বুড়ো চটে গেছে।

দেবু বলিল–ও কথা বলেই বা তোমার কি লাভ হল বল তো? আর প্রণাম নেবে নাই বা কেন? তুমি ব্ৰাহ্মণ।

—পৈতে আমি ফেলে দিয়েছি দেবু।

–পৈতে ফেলে দিয়েছ?

হাসিয়া বিশ্বনাথ বলিল–ফেলে দিয়েছি, তবে বাক্সে রাখি। যখন বাড়ি আসি গলায় পরে নিই। দাদুকে আঘাত দিতে চাই নে।

–কিন্তু সে তো প্রতারণা কর তুমি! ছি!

বিশ্বনাথ হাসিয়া উঠিল—ও আলোচনা পরে করা যাবে। এখন চল।

–না। দেলু দৃঢ়স্বরে বলিল না। আগে ওই মীমাংসাই হোক তোমার সঙ্গে। তারপর দুজনে একসঙ্গে পা ফেলব। নইলে ধর্মঘটের ভার তুমি নাও, আমি সরে দাঁড়াই। কিংবা–তুমি সরে দাঁড়াও।

—সেটা তুমিই ভেবে দেখ। তুমি যা বলবে তাই আমি করব। বিশ্বনাথ তখনও হাসিতেছিল।

দেবু বিশ্বনাথের মুখের দিকে চাহিয়া দাঁড়াইয়া রহিল, কোনো উত্তর দিতে পারিল না।

ঠিক এই সময়েই তাহাদে নিকটে আসিয়া দাঁড়াইল রহম শেখ।-আদাব গো দেবুবাপ!

চিন্তান্বিত মুখেই একটু শুষ্ক হাসি হাসিয়া দেবু প্রত্যভিবাদন জানাইল-আদাব চাচা।

রহম বলিল হাল ছেড়া আসতে পারছি, আর তুমরাও আচ্ছা গুজুর গুজুর লাগাছ যা। হোক। তা আমাদের গায়ে যাবা কবে বল দেখি?

–যাব চাচা, আজই যাব।

–হ্যাঁ। যাইও। কাল শুকুর বারে জুম্মার নামাজ হবে। মছজেদেই সব কায়েম হয়ে যাবে। তুমি বরং আজই উবেলাতেই যাইও, যেন ভুলিও না!

–আচ্ছা। দেবু একটু হাসিল।

—আর শুন। ওই তুমাদের ঠাকুরের লাতিউয়াকে নিয়া যাইও না। আমাদের তাসের মিয়া–জান তো তাসের মিয়ারে? কলকাতায় কলেজে পড়ে? উ বুলছিল–ঠাকুরের নাতি নাকি স্বদেশী করে। তাছাড়া আমাদের ইরসাদ মৌলভী বুলছিল—উনি বামুন ঠাকুর মানুষউয়ারে তুমরা হিন্দুরা মানতি পার, আমরা মানব কেনে?

না, না, তুমি জান না রহম চাচা-বিশু-ভাই আমাদের সেরকম নয়।–দেবু অত্যন্ত অপ্রস্তুত হইয়া পড়িল।

দুর্দান্ত রূঢ়ভাষী রহম-আন্দাজে বিশুকে চিনিয়াই কথাগুলি বলিয়াছিল—এবার সে হাসিয়া বলিল অ! তুমিই বুঝি ঠাকুরের লাতি?

হাসিয়া বিশু বলিল–হ্যাঁ।

—তুমি যাইও না ঠাকুর, তুমি যাইও না।—বলিয়া সঙ্গে সঙ্গেই সে ফিরিল আপনার জমির দিকে।

বিশ্বনাথ হাসিয়া বলিল মীমাংসা হয়ে গেল দেবু-ভাই। আমি তাহলে ফিরলাম।

দেবু কাতর দৃষ্টিতে বিশ্বনাথের দিকে চাহিয়া রহিল।

হাসিয়া বিশ্বনাথ বলিল-দরকার হলেই ডাক দিও–আমি তৎক্ষণাৎ আসব।

রিমঝিম বৃষ্টি নামিয়া আসিল। তাহারই ভিতর দুজনে দুজনের কাছ হইতে সামান্য দূরত্বের। মধ্যে বিলুপ্ত হইয়া গেল।

রহম রূঢ় সত্য প্রকাশ করিয়া মনের আনন্দে লাঙল ঠেলিতে ঠেলিতে তখন গান ধরিয়া দিল—

হোসেন হাসান দুটি ভাই—এই দুনিয়ায় পয়দা হয়,
তাদের মত খাস বান্দা এই দুনিয়ায় নাই।
ফাতেমা-মা, মা জননী—তার কাহিনী বলি আমি,
তাহার স্বামী হজরত আলি বলিয়া জানাই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress