পর্ব ২
চিৎকার চেঁচামেচি শুনে কত্তা মানে মালিক বাধ্য হলো চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। অফিসের হলঘরে একটা বোমা ফাটলো -চোওওওপ। যারা ভিড় করে তামাশা দেখছিল সুড়সুড় করে নিজেদের চেয়ারের দিকে হাঁটা দিল। নেপালও যাচ্ছিল ,বজ্রকন্ঠে আদেশ এলো -মি: সাধুখাঁ আমার চেম্বারে যান ,তারপর অন্যদের উদ্দেশ্য করে বলল এটা অফিস মেছো বাজার নয় ,ফের এই ধরনের কাজ দেখলে যে করবে তাকে তাড়িয়ে দেবে। নেপাল মালিকের চেম্বারের বাইরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনে চিন্তায় পড়লো ,এই রে আজ যদি তাকে তাড়িয়ে দেয়। তাই কি ডেকে নিলো ? তাকে তো কোনদিন মি: সাধুখাঁ বলে ডাকেনি ! তবে কি .! ধুস অত ভেবে কি হবে ,যা হবার তাই হবে। এত অপমান তার কলিগরা করছে তার বেলা। মালিক অন্যদের ধমক দিয়ে চেম্বারের কাছে আসতেই নেপাল দরজা খুলে দিলো , গটগট করে উনি ভেতরে গেলেন ,নেপাল পেছন পেছন। পরবর্তী আধঘন্টা ভয়ঙ্কর একটা ঝড় বয়ে গেল নেপালের ওপর দিয়ে। নেপালের আত্মপক্ষ সমর্থন বন্যার জলে ভেসে গেল। কত্তা স্টেনো মিস মিত্রকে ডেকে অফিসে অকারণে হৈ হট্টগোল করা , কাজকর্মে গাফিলতি ,অফিসের নিয়ম কানুন ভাঙা ইত্যাদির কারণ দর্শাতে বলে চিঠিও তৈরি করে ফেলে নেপালকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বললেন। হতাশ নেপাল নিজের জায়গাতে ফিরে এলো। মনেমনে অফিস কলিগদের মুন্ডুপাত আর নিজের গোঁয়ার্তুমির জন্য আফসোস করতে লাগলো। ইতিমধ্যে মিস মিত্রের দৌলতে নেপাল বাবুর শোকজ্ চিঠির উপাখ্যান অফিস শুদ্ধ লোক জেনে গেছে। সবাই কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টি নিযে নেপালকে দেখছে। কিছুটা কৌতুহল ,কিছুটা কৌতুক ,আবার কেউ কেউ সহানুভুতির নিয়েও দেখছে। যে এই খবরটা চাউড় করেছে সেই মিস মিত্র কিন্ত নির্বিকার ,একমনে টাইপ করে চলেছে। নেপাল বাবু একবার চারদিক ভালো করে দেখে ফাইলের দিকে নজর দিলেন। মন কি আর বসে। এখন মাথায় একটাই কথা ঘুরছে কি উচিত উত্তর হতে পারে এই চিঠির। ঘন্টাখানেক বাদে কত্তা বেরিয়ে গেলেন ,হয়ত কোন জরুরি কাজ হবে। যাওয়ার আগে হলঘরের মাঝখানে এসে গম্ভীর ভাবে ঘোষণা করলেন যে তিনি না থাকা কালীন অফিসে যেন কোনও রকম বিশৃঙ্খলা না হয় আর এই কাজের দায়িত্ব দিলেন মিস মিত্রকে। গটগটিয়ে উনি চলে গেলেন। বাঁড়ুজ্জে বাবু ফুট কাটলো – ক্লাশের মনিটর পেলাম। সবার মুখে চাপা হাসি থাকলেও মিস মিত্র ঘাড় তুলে দেখারও চেষ্টা করলো না ,এটা নেপাল বাবু লক্ষ্য করলেন ,নিজে তো মুখ আমসি করে আছেন। যথাসময়ে অফিস ছুটি হলো। বিরস বদনে অন্যদের সাথে নেপাল বাবুও সিঁড়ি বেয়ে নাবছেন। ডালহৌসি এলাকায় বৃটিশ আমলের বাড়ি। অনেক অফিস আছে। বহু লোক বাড়ি ফেরার জন্য তড়বড় করে নামছে। নেপালের থেকে কিছু দূরেই নাবছে মিস মিত্র। পেছনে অফিসের অন্যান্য কলিগরা। হটাৎই কানে এলো ব্যানার্জীদা কাউকে বলছেন – যাই বলো নেপালের ব্যাপারটা ঠিক হলো না ,বেচারা ,এখন ওকে একমাত্র মিলিই ( মিস মিত্র) বাঁচাতে পারে। কত্তা মিলিকে মেয়ের মত ভালোবাসে ,ওর আবদার রাখে ,দেখলে না বেরিয়ে যাবার সময় ওকেই মনিটর করে গেলো। কথাগুলো শুনে নেপাল বাবুর পা দুটো আটকে গেল। মৃণাল বলল – তাহলে এখন দেখছি একটাই রাস্তা ,নেপালদা যদি মিস মিত্রকে অ্যাপ্রোচ করে। ব্যানার্জীদা খিঁক খিঁক করে হেসে বলল – কিসের অ্যাপ্রোচ , বিয়ের । শুনেই নেপালের মাথা গরম। দুপুরের ঘটনা ভেবে তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করলো। বাস স্ট্যান্ডে এসে দেখলো মিস মিত্র রোজকারের মত বাসের অপেক্ষায়, ব্যানার্জীদা আর মৃণালের কথাগুলো ফের ভেসে এলো। এক অফিসে চাকরি করলেও নেপাল বাবু কাজের বাইরে একটা কথাও মিস মিত্রের সঙ্গে আজ পর্যন্ত বলেনি। বেশ কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দূর থেকে দেখলো। পাড়ায় ফিরে নিয়ম মাফিক চা খেতে গিয়ে দেখে তার বড় জ্যাঠার বড় ছেলের ছেলে মানে ভাইপো ভোম্বল বসে আছে । দু জনের বয়স সমান হলেও ভোম্বল নেপাল বাবুকে কাকা বলেই ডাকে ,যদিও তুই তোকারি চলে। ঐ একই অফিস বাড়িতে অন্য একটা অফিসে ভোম্বল চাকরি করে। বেশ চালক চতুর আর চৌখস ,আধুনিকও বটে। ছুটির আগেই ও রোজ অফিস কেটে পালিয়ে আসে। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এই ভোম্বলই নেপাল বাবুর বন্ধু স্থানীয় ,নেপালও ওকে পছন্দ করে। কাকার মুখ গম্ভীর দেখে জানতে চাইলো কি হয়েছে। নেপাল এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্যাগ থেকে শো-কজের চিঠিটা ওকে দিলো ,পড়েই ভোম্বলের আঁৎকে ওঠার পালা। নেপাল বাবু সংক্ষেপে ঘটনাটা বলে ভোম্বলের থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইতেই ভোম্বলের সোজা সাপটা কথা যদি মিস মিত্র মালিককে বললে কাজ হয় তবে কাকার উচিৎ ওনাকেই চেপে ধরা ,চাকরি গেলে এই মধ্য চল্লিশে নেপাল তো ডুবে মরবে। বিষন্ন এবং চিন্তিত নেপাল প্রায় মাঝ রাত অবধি ভাবলো,শেষে ঠিক করলো যাই থাকে কপালে কালকেই মিস মিত্রের কাছে দরবার করবে। যা ভাবা তাই কাজ। অফিসের পর বাস স্ট্যান্ডে বুকে অযুত হাতির বল এনে নেপাল ধরলো মিস মিত্রকে। বলল ওর একটু ব্যক্তিগত দরকার আছে কথা বলতে চায়। মিলি পত্রপাঠ বিদায় জানিয়ে বলে এখন তার তাড়া আছে কাল অফিসে কথা বলবে। হতাশ হয় নেপাল বাবু। তবুও আশায় বুক বাঁধে পরের দিনের জন্য। পরের দিন মিস মিত্র একটা ফাইল দিয়ে যায় নেপাল বাবুকে,যেমন অন্য দিনে দেয়। ফাইল খুলেই চমক।