Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নৃত্যশিল্পীর মৃত্যু-তদন্তে একেনবাবু || Sujan Dasgupta » Page 7

নৃত্যশিল্পীর মৃত্যু-তদন্তে একেনবাবু || Sujan Dasgupta

পারমিতার মৃত্যুর পর পাঁচ-ছ’ দিন পার হয়ে গেছে। এবার মনে হয় একেনবাবু ফেল মেরেছেন। আমরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। একেনবাবু সকাল সকাল চিন্তিত মুখে কোথাও যাচ্ছেন, ঠিক কী করছেন জানি না। মাঝে মাঝেই এরকম উনি করেন। নিশ্চয় ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের কোনো কাজ নিয়ে এক্সট্রা টু-পাইস কামাচ্ছেন, যেখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। আগে এরকম হঠাৎ হঠাৎ অদৃশ্য হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতাম। প্রমথ ধমকাত, ‘তুই কি একেনবাবুর গার্জেন? পুরোদস্তুর অ্যাডাল্ট, পুলিশে চাকরি করতেন, খুবই ঘুঘুলোক— শুধু বোকা-বোকা সেজে থাকেন… এত দিনেও সেটা বুঝলি না?”

কাল শুতে শুতে একটু রাত হয়েছে, সকালে ঘুম-ঘুম চোখে উঠে দেখি প্ৰমথ খুবই মুডে আছে। কিচেনে খুটখাট চলছে। আমাকে দেখে বলল, “আজ ব্রেকফাস্ট মেনু হচ্ছে মোগলাই পরোটা আর কষা মাংস।”

কষা মাংস গত রাত্রে বানিয়েছিল, কিন্তু আমাদের কাউকে খেতে দেয়নি। ওর থিয়োরি ঘণ্টা দশেক মজতে না দিলে স্বাদ ভালো হয় না। প্রমথর থিয়োরি ভুল না ঠিক সে নিয়ে আমি তর্ক করতে চাই না। কিন্তু রান্না হয়ে গেছে অথচ খেতে পাচ্ছি না… ব্যাপারটা আমার অসহ্য লাগে! উপায় কী, কুক যেখানে আপত্তি তুলছে! এমন সময়ে ডিং-ডং বেল। সক্কাল বেলাতে কে এল! দরজা খুলে দেখি ফ্ৰান্সিস্কা।

“আরে এসো এসো, হোয়াট এ সারপ্রাইজ!”

গত রাত্রে প্রমথর খাদ্য সংরক্ষণ করার কারণটা এতক্ষণে বুঝলাম। নির্ঘাত ফ্র্যান্সিস্কাকে নেমন্তন্ন করেছে স্পেশাল মোগলাই ব্রেকফাস্ট হচ্ছে বলে, সেটাই ব্যাটা আমাদের জানায়নি! কাঁচা বাংলায় অভিযোগ করতেই প্রমথর উত্তর, “আগে জানতে পারলে কী লাভ হত?”

“ঘরটা একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে পারতাম!”

“বাঃ, সেটা তো ভালোকথা। প্রতিদিনই তাহলে ধরে নে ফ্র্যান্সিস্কা আসছে।”

নিজের নামটা শুনে ফ্র্যান্সিস্কা আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কী নিয়ে কথা বলছ তোমরা?”

“তুমি আসছ জানলে বাপি নাকি ঘরটা ক্লিন করত।”

ফ্র্যান্সিস্কা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “সো সুইট!” তারপর বলল, “লেট মি হেল্প ইউ।”

“আরে না না, তুমি বসো, আমি করছি।”

“থাক। কাউকেই কিছু করতে হবে না। বাপি, তুই আমাকে কয়েকটা ডিম ভেঙে দে।”

“দেখি, কী করছে ও!” বলে ফ্র্যান্সিস্কাও কিচেনে ঢুকল।

মোগলাই পরোটা খাসা বানায় প্রমথ, তবে ঠিক দেশের মোগলাই পরোটা নয়- মেক্সিক্যান তরতিল্লা দিয়ে তৈরি, প্রমথর নিজস্ব ক্রিয়েশন। কর্ন ফ্লাওয়ার তরতিল্লা নয়, গমের আটার তরতিল্লা। প্রথমে ভালো করে ডিম ফেটিয়ে তাতে পিঁয়াজ কুচি, লঙ্কা কুচি আর নুন মেশাতে হয়। এরপর ফ্ল্যাট প্যান-এ অল্প আঁচে তরতিল্লার একটা সাইড নামমাত্র ভেজে, সেটা উলটে ফেটানো ডিম ঢেলে তিনটে সাইড মুড়ে ত্রিভুজ বানিয়ে সেটাকে উলটে একটু ভাজলেই প্রমথ-স্পেশাল। মানতেই হবে খেতে বেশ, আর তার সঙ্গে কষা মাংস থাকলে তো কথাই নেই!

ইতিমধ্যে একেনবাবু ঘুম থেকে উঠেছেন।

“গুড মর্নিং, ম্যাডাম।”

“গুড মর্নিং, ডিটেকটিভ। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ঘুম থেকে উঠলে?”

“আসলে ম্যাডাম, ক’দিন হল একটু রাত জেগে কাজ করেছি।”

কী কাজ করছেন, সেটা কিন্তু আমরা কেউ জানি না।” ফ্র্যান্সিস্কাকে কথাটা জানিয়ে একেনবাবুকে পাকড়াল প্রমথ, “রজতবাবুর কাছ থেকে যে কড়কড়ে ছ’হাজার হাতিয়ে নিলেন, সেটা নিয়ে কিছু করেছেন?”

“পাঁচ হাজার স্যার।”

“ওই হল পাঁচ আর ছয়-এ এমন কী তফাত?”

“না স্যার, বাপিবাবু তো এসব নিয়ে পরে লিখবেন। ভুল ইনফর্মেশন যাতে না দেন, তাই বললাম।”

“ননসেন্স!

“থ্যাংক ইউ একেনবাবু, গল্পে আমি পাঁচই লিখব।” প্রমথকে খোঁচা দেবার লোভ সামলাতে পারলাম না।

ফ্র্যান্সিস্কা বেচারা এসব ব্যাপার কিছুই জানে না। একটা কনফারেন্সে ক’দিন বাইরে ছিল।

‘কী নিয়ে কথা বলছ তোমরা?”

“তোমার ডিয়ার ডিটেকটিভকেই জিজ্ঞেস করো, আমাদের তো কিছু বলেন না।” প্রমথ উত্তর দিল।

“ডোন্ট বি সিলি!”

“আসলে ম্যাডাম একজন গ্রেট ডান্সার কিছুদিন আগে মারা গেলেন, তার কিছু খোঁজখবর করার দায়িত্ব ছিল।”

“খোঁজখবর পেলে কিছু?”

“একটু একটু পেলাম ম্যাডাম…।”

“সেই জন্যেই কি আজকে আমাদের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছেন?” প্রমথর ব্যঙ্গোক্তি, “আমাদের পক্ষে তো সেটা খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার!”

“কী যে বলেন স্যার, আপনাদের সঙ্গেই তো ব্রেকফাস্ট খাই… দু-এক দিন বাদ পড়ে শুধু। এরকম খাসা কফি আর কোথায় জুটবে?”

“থাক আর তেল মারতে হবে না।”

ফ্রান্সিস্কা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “টেল মাড়টে’ মানে?”

“অয়েলিং, অর্থাৎ…” কথাটা শেষ করতে পারলাম না, প্রমথও কিছু বলতে যাচ্ছিল… একেনবাবুর মোবাইল বেজে উঠল। ফোনটা নিয়ে উনি জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কতগুলো কথা ভালো করেই শুনতে পেলাম।

“আরেব্বাস, এটা তো দারুণ খবর স্যার! …আচ্ছা আমি পাঠাচ্ছি, দেখুন চিনতে পারে কিনা। “ পরের কথাগুলো বাইরে একটা অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজে ঠিক কানে এল না। ফোন কানে নিয়েই উনি নিজের ঘরে গেলেন।

“কী ব্যাপার বলো তো, ডিটেকটিভ তো একজন গ্রেট ডান্সার কিছুদিন আগে মারা গেছেন বলে চলে গেলেন!”

“হ্যাঁ, সেই মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করার ভারই একেনবাবুকে দেওয়া হয়েছে।” বলে সংক্ষেপে এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে সবই ফ্র্যান্সিস্কাকে বললাম। পাত্র-পাত্রী কাউকেই বাদ দিলাম না। এখন পর্যন্ত বিশেষ কিছু ঘটেনি, সুতরাং মিনিট দশেকের মধ্যেই পুরো ব্যাকগ্রাউন্ডই ফ্র্যান্সিস্কা পেয়ে গেল। তার মধ্যেই প্রমথর মোগলাই পরোটা বানানো শেষ।

একেনবাবু ফিরলেন তারও মিনিট দুই পরে।

“কার সঙ্গে কথা বলছিলেন এতক্ষণ ধরে? এদিকে মোগলাই পরোটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!”

“প্রথমে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট, সেটা শেষ হতে না হতেই ফ্যামিলির ফোন স্যার।” ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে কাঁচুমাচু মুখে সাফাই গাইলেন।

“বউদির ফোন, তাহলে তো আপনার সাতখুন মাপ। নিন বসুন, এবার খেয়ে আমাদের উদ্ধার করুন।”

চেয়ারে বসে একেনবাবু বললেন, “বুঝলেন স্যার, অভীকবাবুকে আসতে বললাম। ভাবলাম প্রোগ্রেস রিপোর্টটা দিয়ে দিই।”

“কীসের প্রোগ্রেস রিপোর্ট?”

“বাঃ, যার জন্যে উনি পাঁচ হাজার ডলার দিলেন!”

“সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে?”

“পুরোটা নয় স্যার।”

“তাহলে!”

“কয়েকটা খটকা আছে স্যার, সেগুলো ক্লিয়ার করতে হবে।”

“কখন আসছে? আমি কিন্তু আর মোগলাই পরোটা বানাতে পারব না, আপনার ভাগটা ওকে দেবেন।” প্রমথ ঘোষণা করল।

“না না স্যার, উনি এক ঘণ্টা বাদে আসছেন।”

“শুনুন একেনবাবু, ফ্র্যান্সিস্কা কিন্তু আপনার মুখ থেকে তদন্ত সম্পর্কে শুনতে চায়, আমি শুধু ওকে ব্যাকগ্রাউন্ডটা দিয়েছি।” একেনবাবুকে বললাম।

“ইয়েস। আই অ্যাম ওয়েটিং…” ফ্রান্সিস্কা একেনবাবুর দিকে সাগ্রহে তাকাল।

“বলব ম্যাডাম, অভীকবাবু এলেই এখন পর্যন্ত যতটুকু বুঝেছি পুরোটাই বলব। তার আগে খেয়ে নিই নইলে প্রমথবাবুর খারাপ লাগবে, এত কষ্ট করে রান্না করেছেন!”

একেনবাবুর কথায় ফ্র্যান্সিস্কা হেসে উঠল।

প্রমথ চটল। “আপনার এই ন্যাকামি সহ্য করতে পারি না। আমার কষ্ট হবে বলে খাচ্ছেন, না নিজের লোভে খাচ্ছেন!”

“দুটোই স্যার।” হাসি হাসি মুখে বললেন একেনবাবু।

এইসব গল্পগুজবের মধ্যেই খাওয়াটা শেষ হল। তার মধ্যেই টিং করে একেনবাবুর একটা মেসেজ এল। মুখ দেখে বুঝলাম সুখবর।

প্রমথ বলল, “কী ব্যাপার?”

“আরেক কাপ কফি কি হবে স্যার?”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *