সমুদ্রের পারে বসেছিলাম বিকেলে
শঙ্খচিল উড়ে গেল, মনে হল সন্ধ্যা নেমেছে দূরে স্তূপীকৃত টিলার উপর থেকে
এতক্ষণ ধরে যে আলো জ্বলছিল
তা এখন আর নেই
সব শেষ ।
মাথার উপরে কয়েকটা শাদা নিমফুল ঝরে পড়ে
শ্মশান যাত্রীরা স্নান সেরে ফিরে চলে অবেলায় ।
আমার মাথার উপরে মহানিম
একসময় নিমেভূত বিশ্বাস করতাম
কিন্তু আজ যখন দাঁতন করতে করতে মুখ ধুয়ে আসি তখন শুধু জিহ্বায়
লেগে থাকে তেঁতো ও পরে নোনতা আস্বাদ ।
ক্রমশঃ সন্ধ্যা নেমে আসে
ঢেউগুলো একে একে কালোজলের ভিতর হারিয়ে যায়, আর ঢেউ জাগে না
কল্লোল হুঁশিয়ারি দেয়
দক্ষিণা হাওয়া হু হু করে বাড়ি থেকে ফেরার বার্তা বয়ে আনে ।
তবু আমি উঠিনা, বসে বসে
নিমফুলের সুগন্ধ নিতে থাকি
কিছুটা সময় অন্ততঃ নিরাপদে থাকা যাবে এই ভেবে; কারণ বয়সটা বড্ড বেমানান পিঠে গুঁড়ি মেরে হাঁটছি, জীবনটা ছুঁড়ে ফেলা
খামের মতো নিষ্কর্ম ।
হঠাৎ আমি চমকে উঠি
চেয়ে দেখি সেই টিলার উপর থেকে
যেখানে লোকগুলো দাহ করছিল
সেখান থেকে এক বৃদ্ধ নেমে আসছে
সাদা কাপড়ে ঢাকা তার সর্বাঙ্গ
আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই
যখন সে আমার একেবারে সম্মুখে দাঁড়ালো
আমার মুচ্ছার উপক্রম হলো
অবিকল দেখতে বৃদ্ধটা আমার মতো
সে দাঁত বার করে কি যেন বলছে
সহসা দেখি তার দেহটা
নিমগাছটার সথে মিলিয়ে গেল ।
আমি উঠে পালাতে চাইলাম
এগুতে পারলাম না
নিমগাছটা তার ডালপালাগুলো নুইয়ে
আমাকে ঘিরে ধরলো
দূরে কাশবন ছিল, তাদের সোঁ সোঁ আওয়াজ
কানে বিকট ভাবে বাজতে লাগল
আমি ভয়ে মূর্চ্ছা গেলাম;
অনেক্ষণ পর চেয়ে দেখি
টিলাটার উপর আরেকদল শ্মশানযাত্রী
আগুন জ্বেলেছে
আগুনের আলোয় দেখতে পেলাম
মহা-নিম আগের মতই দাঁড়িয়ে,
এবার বাড়ি ফেরা যাক এই ভেবে পা বাড়ালাম
আর ভাবতে লাগলাম আমার আর কতদিন আছে নিম-ভূত হতে ৷