নাস্তিকের ঈশ্বর দর্শন -4
ব্যারিকেড টপকে এলাম এবার মন্দিরের রাস্তা কোথায়?তা তো জানি না,তবে একটা কথা ইতিমধ্যে সার বুঝেছি। এতক্ষণ যে বিভিন্ন গলির মুখে ব্যারিকেড দেখতে দেখতে এলাম,ঐ গলিগুলো নিশ্চয়ই মন্দিরে যাওয়ার পথ,এখানেও সেই অনুমানেই পুলিশকে ধোঁকা দেওয়া।কয়েক ধাপ উঠে দেখি বেশ বড় উঠোন,অনেক বিক্রেতাই আছে তবে খদ্দের নেই বললেই চলে।আমি তখন দলপতি,সবাইকে হুকুম দিলাম সারা বাজার ছড়িয়ে পড়তে ও বিভিন্ন আনাজের দর দাম করতে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি পুলিশ অফিসার কোমরে হাত দিয়ে আমাদের লক্ষ্য করছে।আমি একটা বুড়ো বিক্রেতার সামনে উবু হয়ে বসে ঢেঁড়স,পটল;বরবটি,লাউ এসবের দাম করতে লাগলাম।দাম নিয়ে চেঁচামেচি করতে দেখে ঐ পুলিশ অফিসারের নজরদারি শেষ হলো।পাঁচশো ঢেঁড়স আর পাঁচশো পটল কিনেছি দেখে সঙ্গীরা এই মারে তো সেই মারে–কি হবে এই সব দিয়ে।বরাভয় মুদ্রা দেখিয়ে ওদের থামালাম।বুড়োকে জিগ্যেস করলাম –মন্দিরে কোন রাস্তা দিয়ে যাবো।সে ততোধিক নির্বিকার চিত্তে যেখানে বসেছে তার গায়ের গলিটা দেখিয়ে বললো–এই তো মন্দির,বাঁ দিকে ঘুরলেই মন্দিরের গেট। বুড়োকে আনাজের দাম মিটিয়ে দলবলকে ডেকে নিলাম।দেখলাম পুলিশগুলো আর কেউই আমাদের লক্ষ্য করছে না।বাকিদের গলিটায় নেবে যেতে বলেই আমি বুড়োকে দাম মিটিয়ে বললাম-তুমি সবজিগুলো রাখো আমি এসে নিচ্ছি।গলিতে নেবেই নির্দেশ মত বাঁ দিকে ঘুরেই চক্ষু চড়কগাছ,কে নেই।পুলিশ যে ভারতে এত থাকতে পারে আমার আগে ধারনাই ছিল না।তাদের কত রঙের উর্দি,কত ধরনের টুপি,বুকে কত ধরনের ব্যাজ,আর অস্ত্র সম্ভার ! যত কম বলা যায় ততই ভাল।সাবেকী লাঠি থেকে স্টেনগান,সব মজুদ।শুধু ট্যাঙ্ক আর কামানটাই নেই।আর কিছু করার নেই।বাবার ধামে এসে এত মিথ্যে কথা,এত অনাচার।মনে হচ্ছে বাবা গাছে তুলে মইটা কেড়ে নিল।মন্দিরের গেটের গায়েই একটা বসার রক আর একটা দোকান,একটা অল্প বয়স্ক ছেলে রকটায় দাঁড়িয়ে।আমাদের দেখে একটু ভ্রু কোঁচকানো তারপর ইশারাতে কাছে ডাকতে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম।– মন্দিরে যাবেন -হ্যাঁ ভাই -আমি ঢুকিয়ে দিতে পারি -দিন না ভাই বড় উপকার হয়-আমি কি পাবো ( যাচ্চলে এখানেও ব্যবসা) -বলুন আপনি-না টাকা দিতে হবে না,আমার দোকানে বউনি করুন,যা ভালো লাগে অন্তত দশ টাকা হলেও কিনুন,আমি ঢুকিয়ে দেবো।আমি সকলের মুখের দিকে চাওয়াতে সকলেই হ্যাঁ বাচক ঘাড় নাড়লো,সবাই ওর কাউন্টারে গেলাম।পুঁথির মালা,ঠাকুরের ছবি,রুদ্রাক্ষের মালা।এটা সেটা কিনেই তিনশ টাকা বিল হলো।ও ইতিমধ্যে মোবাইলে কার সঙ্গে যেন কথা বলে নিয়েছে।বিল পেমেন্টের পরেই ছেলেটা বাইরে এসে মন্দিরের গেটের সঙ্গে লাগানো দেওয়ালে একটা দোকান দেখিয়ে বললো-সবাই মানিব্যাগ এখানে রেখে যান,টাকা গুনে রাখুন,আমি লিখে রাখছি ঐ কাগজে আপনারা সই করবেন আমারও থাকবে, জুতো হাতে নিয়ে রংবাজি করে পুলিশের ভীড় ঠেলে ওর কাছে যাবেন,কেউ আটকাবে না,ও বাঙ্ক খুলেই রাখবে জুতো রেখে জলে হাত ধুয়ে টোকেন পকেটে নিয়ে,ওর থেকে একপিস করে মালা নিয়ে কোনও কথা না বলে গেটে লাইনে দাঁড়িয়ে যান, পুলিশ কিছুই বলবে না-কেন -আরে এখানকার লোকাল লোকরা একটা মালা নিজেই পুজো দেয়,আরও শুনে রাখুন এই গেট দিয়ে ঢুকবেন বাইরে আসবেন কিন্তু অন্য গেট দিয়ে-তাহলে জুতো নেবো কি করে-ও যে টোকেন দেবে যে কোনও চৌকিতে দেখাবেন,সবাই ভি আই পি খাতির করবে, চলুন দেরি হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকে মানিব্যাগ খুলে টাকা ওর সামনে গুনে কাগজে সই করলাম,মনীশও ( ছেলেটার নাম ইতিমধ্যে জেনে নিয়েছি) সই করলো,বাইরে এসে মণীশ একটা সিটি মারতেই ঐ দোকানদার লাফিয়ে নেবে একটা জলের বোতল হাতে নিয়ে জুতোর বাঙ্কের দরজা খুলে ধরলো, আমরা একসঙ্গে “সাইড দিজিয়ে” বলে দোকানে যাওয়া মাত্রই সে বাঙ্কে জুতো রাখতে হুকুম দিল।অবাক কান্ড অত পুলিশ মেনি বেড়ালের মত আমাদের জায়গা করে দিল।আমরা ঝপাঝপ জুতো রেখে ওর দেওয়া জলে হাত ধুয়ে নিলাম,রাজুর (এই ছেলেটির নাম) হুকুম মত মন্দিরের বন্ধ দরজার বাইরের দেওয়ালে প্রায় হেলান দিয়ে লাইন করে দাঁড়িয়ে পড়লাম,রাজু একটা তামার ঘটি থেকে গঙ্গাজল মাথায় ছিটিয়ে দেহ শুদ্ধ করে দিল,তারপরেই সবার হাতে একটা করে গাঁদার ছোট মালা ধরিয়ে দিয়ে যেহেতু আমি সবার আগে হাতে দশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে বলল আমি যেন পন্ডিতকে দি পুজোর পরে আর একটা প্ল্যাস্টিকের চাকতি যা টোকেন বলেই সবাই চেনে,জানে;বলল উল্টো রাস্তায় বেড়িয়ে দোকানদার বা পুলিশ চৌকিকে দেখালেই সবাই মন্দিরের রাস্তা দেখিয়ে দেবে আমাদের অসুবিধে হবে না,চলে গেল।হটাৎ একদিন বিশাল বপুর পুলিশ অফিসার ( বুকে সেলাই করে নাম লেখা,হাতায় দুটো তরোয়ালের এমব্লেম, সোজা কথায় I.P.S অফিসার) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে সৌজন্য বিনিময় করলেন ওনার একটাই কথা-আপলোগ বহোত পূণ্ণবান,ইসি লিয়ে স্বয়ম্ বাবা নে আজ কা ইস অহম্ দিন পে বুলায়া অর ব ভি সবসে পহেলে যাঁহা লাখো শ্রদ্ধালু বাহার ইন্তেজার কর রাহা হ্যায়,আপ সভি কো প্রণাম।আমরাও প্রতি নমস্কার জানালাম।ইতিমধ্যে আমাদের পেছনে বেশ কিছু Authentic Local লোকজন লাইন দিয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইকে বলা হলো গ্রহণ শেষ,দরজা খোলা হচ্ছে।আমরা রেডি,দরজা খুললো,প্রথম পুজো বাবা পেল আমাদের। এরপর সবকিছু ঘড়ির কাঁটা মেপে চললো। ফিরে এসে রাজু আর মনীশকে তাদের পাওনা মেটালাম। ঐ I.P.S অফিসার ফের এলেন,আমরা যাতে ঠিক মত গলি থেকে বেরিয়ে মেন রোডে যেতে পারি তার ব্যবস্থাও করলেন। এতদিন বাদে বাঁক কাঁধে দৌড় দেখে ভাবি সত্যিই কি বাবা বিশ্বনাথ ঐ দিন আর কাউকে না হোক আমাকে কৃপা করেছিলেন।
….. না ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে। কালীঘাট আসবে এর পরে।