দুঃস্বপ্ন
” ভালবেসে তুমি তার কাছে কিবা চাও?
সুখ নাকি কষ্ট সেটা আগে ভেবে নাও।
ভালবেসে যদি তুমি কষ্ট নাহি পাও
তবে সেটা ভালবাসা কিনা,
মনে আগে জেনে নাও।”
রাতবারটার পর শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা, নিয়েই ফেলল অধ্যাপক বিনোদ মজুমদার।
না আর নয়। অনেক হয়েছে। অণিমা রায় তার মেয়ের মতো। তবু তাকে ছাড়া বাঁচবে না সে।
বিচার বুদ্ধি হারিয়ে, এতোটা ভালবেসে ফেলেছে সে তার ছাত্রীকে ।
রাত এখন গভীর। কুকুরগুলো ডাকতে ডাকতে ঝিমিয়ে পড়েছে। হয়তো ঘুমিয়েও পড়ছে। জেগে নেই কেউ।
ফ্যান থেকে ফাঁসটা ঝুলিয়ে গলায় পরানোই আছে। শুধু টুলটা একটু পা দিয়ে ঠেলে দিলেই হল। এত ভালবেসেছে অণুকে, এখন মরণ ছাড়া আর কোন গতি নেই তার।
কৃষ্ণও তো রাধাকে ভালবেসে ছিল। রাধা সম্পর্কে হতো কৃষ্ণের মামী। আর বয়সের ব্যবধানও তাদের মধ্যে খুব একটা কম ছিল না। তাদের প্রেম নিয়ে কত অমর কাব্য লেখা হয়েছে যুগে যুগে। তাদেরটা ছিল লীলা। আর আমি মেয়ের বয়সী কারও সাথে প্রেম করলে সেটা হয়ে যায় বিলা। মনে মনে ভাবল সে। কি বিচার এই পঙ্গু সমাজ-ব্যবস্থার।
টুলটা পায়ের ধাক্কায় ঠেলে দেবে এমন সময় আচমকা ঘরে ঢুকল কে যেন। চমকে উঠল সে।
– কে ?
– আমি তোমার বিবেক
– কি চাই তোমার ? কেন এসেছো এখানে?
– তোমাকে সাহায্য করতে
– কি ভাবে ?
– টুলটা আমি সরিয়ে নিচ্ছি, তোমার আর কষ্ট করে টুলটা সরাতে হবে না।
– না না না
চেচিয়ে উঠল বিনোদ।
অণু আমাকে এবারের মত বাঁচাও আমাকে
বাঁচাও প্লীজ •••
– কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। অণিমা এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কাল সকালে উঠে খবরটা শুনবে।
কিম্বা খবরের কাগজের হেড লাইনে দেখবে
–একটি আত্মহত্যা আর অনেক জল্পনা–
আঁতকে উঠল সে | হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে
গেল তার। গলা শুকিয়ে কাঠ। সারা শরীর ঘামে ভিজে, চপচপ করছে। বিছানা ছেড়ে উঠে এসে, এক বোতল জল ঢকঢক করে খেল সে।
জীবনে বাঁচার যে এত স্বাদ, এত আনন্দ বিনোদ আগে আর কখনো টের পায়নি। সারারাত সে আর ঘুমতে পারল না। দুঃস্বপ্নটা যদি আবার পুনরায় ফিরে আসে?