কিছু পথ হেঁটে তারা তিনজনে সন্ধ্যার আঁধারে
মাছের চোখের মতো ম্লান রেস্তোরাঁয় বসলো এসে
চোখে চোখে অনির্দিষ্ট চিন্তা এসে ঘুরলো বারেবারে
যেন তারা কথা বলবে হাওয়ার নির্দেশে ।
একজন ঈষৎ স্থূল, রুক্ষ চুল, দীঘকির গ্ৰীবা
অন্য দুটি শীর্ণকায়, দীপ্ত-চক্ষু, উত্তর-পঁচিশ
এরা সব এ যুগের হুলস্থূল দানবী প্রতিভা
আপন রক্তের সঙ্গে মিশিয়েছে সময়ের বিষ।
তিনটে কুটিল পোকা মগজের মধ্যে ঘুরে ফিরে
পাক খাচ্ছে, আর এক নামহীন ভয়ঙ্করী নদী
পাড় ভাঙছে অবিরাম–টানতে চাইছে অতল গভীরে,
তিনজন দাঁড়িয়ে আছে তার তীরে জন্ম থেকে যৌবন অবধি–
কিংবা তিনজনই হয়তো তিনটি নদী দেখছে মনে মনে
চোখের পাতার নিচে কয়েকটা পাখি ঘুরছে অজানা উৎসাহে
একদিন আমাকে টানবে এই নদী-কখন নির্জনে,
যদিও আপাত চিন্তা কফি কিংবা চায়ে ।
শুনেছ হে এ মাসের–অবিকল পাড় ভাঙা নদীর মতন
কণ্ঠস্বরে,–শুরু হলো অকস্মাৎ মিষ্টিকটু সাহিত্য-কাহিনী
প্রচণ্ড প্রহার খেলো টেবিলটা—একসঙ্গে তারা তিনজন
সপ্ সপ্ চা খেলো, আর একজন তো নিলই না চিনি !
এ হেন সময় এক যুবতীকে বাহুতে জড়িয়ে ভাগ্যবান
আর একটি যুবক ঢুকলো, হেঁকে উঠলো, এই যে অমুক !
তুমিও আছো হে দেখছি–তুমিও যে, তিনজনেই বুঝি একপ্ৰাণ
আনন্দে কাটাচ্ছে সন্ধে ! ঘামের ফোঁটার মতো তরলিত সুখ
যুবকের ভ্রূ থেকে ঝরছে–শব্দ করে গেলো দুরের ক্যাবিনে
কি কথায় হেসে উঠলো একসঙ্গে–সরু মোটা দুটি কণ্ঠস্বর,
মনে হল মেঘ ডাকছে অবিশ্রান্ত বাদলের দিনে
অনেক এগুচ্ছে নদী, টান দিচ্ছে পার্শ্ববতী ঘর ।
টেবিলে কনুই রেখে মুখোমুখি বসে রইলো তারা
শীতের হাওয়ার মতো রক্তে যেন অসহ নির্জন ।
মাঝে মাঝে টুকরো হাসি, শুনতে পাচ্ছে টুকরো কথা, অস্পষ্ট ইশারা
ঠাণ্ডা পেয়ালার মতো পড়ে রইলো সেই তিনজন ।