Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তসলিম রশিদের জীবনযাপন || Shamsur Rahman

তসলিম রশিদের জীবনযাপন || Shamsur Rahman

এড়িয়ে পিতার দৃষ্টি যৌবনপ্রত্যুষ দরজায় খিল দিয়ে
কবিতা লিখেছি আমি আর মনে প্রাণে
কবিতাকে করেছি গ্রহণ
পৃথিবীর সর্বোত্তম বস্তু বলে, অথচ জনক
কস্মিনকালে ও জানাননি সমর্থন
আমার এ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রতি। ভরা সূর্যাস্তের দিকে
মুখ রেখে তিনি
উঁচিয়ে বয়স্ক ছড়ি তাঁর
দিয়েছেন তাড়িয়ে বেবাক অলৌকিক
হরিণ এবং পরী ভাড়াটে বাড়ির
সংকীর্ণ চৌহদ্দি থেকে, আমি
অসহায় বন্ধ ঘরে মেরেছি সকালসন্ধ্যা কপালে চাপড়া।

জননীকে বোঝাতে চেয়েছি কবিতাই প্রকৃত আবেহায়াত
অস্তিত্বের ব্যাপক খরায়
মা আমার প্রশ্রয়ের হাসি হেসে গ্রীষ্মের দুপুরে
নিরিবিলি ঢেলেছেন মাটির সুরাই থেকে পানি,
যেমন শৈশবে তিনি আমাকে সাদরে
ভুলিয়ে ভালিয়ে রেখে গৃহকোণে শাণিত বটিতে
কাঁটতেন রান্নাঘরে রুপোলি ইলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বর্ষে দয়িতার কানে কানে, মনে পড়ে,
গোধূলি বেলায়

রমনা লেকের ধারে কবিতার পঙ্‌ক্তিমালা আউড়ে বলেছি-
কবিতা তোমারই মতো অনিবার্য স্বপ্নভূমি আমার জীবনে।
অর্থনীতিকানা তুমি ব’লে সে যুবতী
জ্বলজ্বলে কূটনীতিকের
ঘনিষ্ঠ জীবনলগ্ন হয়ে দিলো পাড়ি মার্কিন মুলুকে।
কারুর পিতাই নয় বস্তুত অমর। তাই পেনসনভোগী
জনক গেলেন পৌছে একদিন মায়াবী স্টেশনে
বিপন্ন সংসার ফেলে হাভাতে আঁধারে;
আমার কলেজ-পলাতক সহোদর রাত জেগে টকটকে
লাল কত আশার অক্ষরে

দিলখোলা অজস্র পোস্টার লেখে চোখের আড়ালে,
মাঝে মাঝে জেল খাটে এবং বিবাহযোগ্য বোন
প্রত্যহ শাপান্ত করে উদ্ভিন্ন উজ্জাত যৌবনকে।
আমি নিজে যেন তেন প্রকারেণ চাকরির খোঁজে

দিনে
অফিসে অফিসে ঘুরি আনকোরা গোয়েন্দার মতো,
রাতে
পরাবাস্তবের পিঠে তুমুল সওয়ার হয়ে ক্ষিপ্র
বলপেনে
ক্ষণজীবী বসন্তের এবং ফেরারি কোকিলের
জন্যে হা-পিত্যেশ করে ছিমছাম আঠারো মাত্রার
সুঠাম অক্ষরবৃত্তে কত তন্দ্রালু কবিতা লিখি
ঢুল ঢুল চোখে।
সন্ধ্যা নামে, নিরক্ষর সন্ধ্যা নামে শহরের বেল্লিক বস্তিতে।
আমার ভূতলবাসী অস্থির অনুজ আসে খুব
সন্তর্পণে
মায়ের হাতের রান্না চেখে নিতে মাঝে-সাঝে ফের
চকিতে গা-ঢাকা দ্যায় কে জানে কোথায়।
আমার ধৈর্যের বাঁধে ফাটায় সে বোমা বেধড়ক,
গালমন্দ দিই ওকে, বিশেষত যখন অফিসি মহাপ্রভু
আমাকে শুনিয়ে দেন বাছা বাছা স্ল্যাং। ইতোমধ্যে
একটি নিখাদ চাকরি জুটিয়ে নিয়েছি দৈববলে। বোনটিকে
ফাঁকি দিয়ে মহল্লার মাশাল্লা যুবক
সটকে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। সহোদরা যৌবনের জতুগৃহে
পোড়ে দিনরাত।
আমার জননী তাকে সর্ব্দা রাখেন চোখে চোখে,
পাছে সে গলায় দ্যায় দড়ি কিংবা ঝাঁপ
লাখেরাজ জন্মান্ধ কুয়ায়।

কোনো কোনো মধ্যরাতে সঙ্গমান্তে গৃহিণী বলেন
চুপিসারে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, সারাটা জীবন যাবে
ভাড়াটে বাড়িতে,

আজো তো হলো ছাই নিজের বসতবাড়ি কোনো।
আমি বিদূষক সেজে হাসন রাজার মতো গেয়ে উঠি-
কী ঘর বানামু আমি শূন্যের মাঝার।
যদিও বাসাড়ে আমি জন্মবধি এই দুনিয়ায়,
রোজানা বানাচ্ছি দ্যাখো গায়েবি মহল।

আমার অনুজ জপে প্রত্যহ মাও সে-তুঙ আর
পড়ে কৃশকায় চারুবাবুর কেতাব,
যা নিশ্চিত পাইপগানের চেয়ে বেশি অগ্নিউদগীরণকারী।
আমার অনুজ সুকান্তের সংক্রামক প্রেরণায়
নিজেকেই ঠাউরেছে মহান লেনিন।
দিন যায়, মাস যায়, বছর গড়িয়ে যায়, তবু
কোথাও পাই না খুজে অনুজকে আর।

কখনো সখনো আমি কবিসম্মেলনে যাই, নামজাদা সব
কবিদের সঙ্গে মফস্বলী মঞ্চে সদ্য-লেখা পদ্য পাঠ করি।
খদ্দরের পুরোনো পাঞ্জাবি
উড়ন্ত ঘোড়ার ডানা; বিবর্ণ স্যাণ্ডেল
হোলি গ্রেল; কিছুক্ষণ শব্দের নিজস্ব ইন্দ্রজালে
পিঠচাপড়ানি পেয়ে, দিশি মাল টেনে
ভুলে থাকি বাস্তবের কচ্ছপ-কামড়
তোতাপাখি বিবেক ছোলার লোভে সকল সময়
নিঃশব্দে ঘাপটি মেরে থাকে।
আমার বাঁদিকে বসে চোখের পিচুঁটি মোছে আর
হাই তোলে বারো বছরের স্বাধীনতা।
ইদানীং প্রায়শই পড়ি অনুজের বিস্ফোরক
পুরোনো ডায়েরি,
দাঁড়া-বার-করা হিংস্র পোকার মতন
ভাবনা মগযে ঘোরে। হতচ্ছাড়া জীবনকে কিছুতে পারি না
নিয়ে যেতে অন্য কোনো বাঁকে
শুধু পালটে দিই, ক্রমাগত দিতে থাকি
আমার নিজের কবিতার কিছু শব্দ রাগে, চরম ঘেন্নায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *