Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঝরোখা || Manisha Palmal

ঝরোখা || Manisha Palmal

ঝরোখা

সন্ধ্যার মায়াবি আঁধারে ঢাকা চরাচর। নিচে নদী থেকে উঠে আসা ঠান্ডা বাতাস ঝরোখাটাকে শীতলতায় ভরে দিচ্ছে। টবের পাতাবাহার আর ফুল গাছগুলো যেন আবেশে ভরিয়ে দিচ্ছে চরাচরকে। একটু পরেই রত্না বাই এসে এখানে বসবেন রেওয়াজে। ভজনের মধুর সুরে ভরে উঠবে চারপাশ। ঝরোখার খিলানের নকশাগুলো যেন মিঠেল স্বাদে ভরে উঠবে। সেই সুদূর বাংলাদেশের মেয়ে রতন কিভাবে যে রত্নাবাই এ রূপান্তরিত হয়েছে সে এক বিরাট কাহিনী। বছর বারোর সুকন্ঠী সুন্দরী মেয়েটি বেনারসের রূপের বাজারে বিক্রি হয়ে যায় ।তারপর গুরুমা রোশনি বাই এর তত্ত্বাবধানে নিজেকে রতন থেকে রত্না বাই এ পরিণত করেছে ।গান ই ওর সাধনা। গুরুমার সার্থক উত্তরাধিকারী ও। তাই শিষ্য শিষ্যার অভাব নেই। হিন্দুস্থানী মার্গসংগীতের থেকে শুরু করে পদাবলী কীর্তন সবেই ওনার সহজ গতি। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের কমতি নেই সারাদিন এতেই কেটে যায়। এই ঝরোখা ও রত্না বাই একে অপরের অঙ্গাঙ্গী সহেলী। ভোরে উঠেই রেওয়াজে বসে এখানে। দূরে নিচে গঙ্গাস্নানে আসা স্নানার্থী রা সুরের জাদুতে মুখ ফিরিয়ে দেখে ঝরোখা টাকে— সঙ্গীত সাধিকার সাধনারত মূর্তি দেখে কপালে হাত ছোঁয়ায়। দুপুরে তীব্র গরমের হলকা যখন বয়ে চলে ঝরোখার ছায়াসুনিবিড় অঙ্গনে একাকী নিঃসঙ্গ রত্না বাইকে দেখা যায় কখনো সূচিশিল্প রত কখনো বই হাতে। দূরে গঙ্গাবক্ষে ভেসে চলা নৌকো থেকে পথিকরা দেখায়—- ওই যে ওটাই রত্নাবাইয়ের মোকাম। গুরুমার সাধনপীঠ।
সঙ্গীতসাধিকা রত্না বাঙালি ।বেনারসের প্রবাসী বাঙালিরা ওঁর গুণমুগ্ধ ।সংগীতের মধ্য দিয়ে তিনি ঈশ্বরসাধনা করেন।
আজ মনটা ভালো নেই ।সকালের খবরের কাগজে পন্ডিত ধ্রুব মহারাজের মৃত্যুর খবরটা ওনাকে বারবার ফেলে আসা সময় টেনে নিয়ে যাচ্ছে——- গুরুমা রোশনি বাঈ এর প্রিয় ছাত্র ধ্রুব, ধ্রুব জ্যোতি শর্মা! বেনারসের বিখ্যাত ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান! ছেলেটি সংগীত অন্তপ্রাণ! রত্না ও ধ্রুব একই সাথে গুরুমার কাছে সঙ্গীত সাধনা করত। সংগীতের একাত্মতার মত একসময় ওরা ভালোবাসার রঙে রঙে উঠেছিল দুজনে কিন্তু গুরুমার নিষেধ ও ধ্রুবের পরিবারের বিরোধিতায় এই সম্পর্ক পরিণতি পায় নি। ধ্রুব বেনারস ছেড়ে চলে গিয়েছিল কলকাতা সংগীত সাধনা কে অবলম্বন করে কাটিয়ে দিয়েছিল সারা জীবন। রত্নাও একই পথের পথিক। দুজনে গুরু মাকে দেওয়া কথা রেখেছে। এই ঝরোখা সাক্ষী আছে ওদের মন দেওয়া-নেওয়ার। ওদের একসাথে সংগীত সাধনার। আর সব শেষে এই ঝরোখাতেই পরস্পরকে চিরজীবনের মতো ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে দেখার! খবরের কাগজের শেষ যাত্রার ছবিটা বারবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে রত্নার চোখে।
আস্তে আস্তে ঝরোখার আলসেতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দূরে নদীর বিস্তারের দৃষ্টি ছড়িয়ে দেয় সে—- ভুলি কেমনে
আজো যে মনে
বেদনা সনে রহিলো আঁকা—-!
নিঃসঙ্গ রত্না আর নিঃসঙ্গ ঝরোখা আজ একাঙ্গী!
দুজনেই যেন গেয়ে উঠছে সেই চিরন্তন গাথা–
” মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষের সনে”——!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *