Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঝরা পাতার দীর্ঘশ্বাস || Roma Gupta

ঝরা পাতার দীর্ঘশ্বাস || Roma Gupta

খোকা কখন আসবে বৌমা ? এই তো এসে পড়লো ব’লে ; আপনার জন্য একটা সুবন্দোবস্ত করে ফিরবে। মানে! বুঝলাম না! এই বাড়িতে আর থাকবোনা মা আমরা। এঁদো গলির ভিতরে, কোলকাতা শহর থেকে অনেক দূরে গ্ৰাম্য হালিশহর। সেরকম কোনো সুবিধাই নেই। পিছিয়ে পড়া গ্ৰাম্য পরিবেশ।
আপনার ছেলে একটা 1BHK ফ্ল্যাট কিনেছে কোলকাতার সল্টলেকে। ওখানে আমরা চলে যাবো, আর এই বাড়িটা প্রমোটারকে দেওয়া হয়েছে। এখানে ফ্ল্যাট বাড়ি হবে। আমরা দুটো ফ্ল্যাট পাবো, তখন ইচ্ছে হলে এখানে থাকতে পারবেন। আর ততদিন আপনাকে একটা ভালো বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই কাজেই আপনার ছেলে গেছে।
বলো কি বৌমা! আমাকে তো আগে জানাওনি!
তোমাদের সঙ্গে আমায় নেবে না! এই বাড়িকেও ভেঙে ফেলতে হবে? তোমার শ্বশুরের স্মৃতিজড়িত কষ্টের বাড়ি, তাঁর হাতের বাগান সব হারাবো?
ও মা! আপনি যে কী! সেই মান্ধাতা যুগের চিন্তা ভাবনা। আধুনিক যুগে এইসব স্মৃতি আঁকড়ে পুরোনো পলেস্তরা খসা গ্ৰাম্য পরিবেশের বাড়ির মোহ ছাড়তে পারছেন না। কোলকাতায় কত সুন্দর জায়গায় বাড়ি, কত সুবিধা; সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে এই বাড়ির জন্য ব্যাকুলতা! আর আপনাকে সঙ্গে নেবো কি করে? একটা রুম, একটা কিচেন- আমাদেরই কত অসুবিধা করে থাকতে হবে। কত টাকা খরচ করে বহু কসরত করে ফ্ল্যাটটা পাওয়া। হাতছাড়া করলে আর জুটতো না। আপনার ছেলের অফিসে যাওয়ার সুবিধা, নাতির ইস্কুল কাছেই। সেজন্যই তো নেওয়া। তাছাড়া এই বাড়িটা প্রোমোটারকে দিয়ে ফ্ল্যাট তৈরি হলে আমাদেরই লাভ।
এই তো আপনার ছেলে চলে এসেছে! দেখো তোমার মা কি বলছেন।
মা জিজ্ঞাসা করেন, খোকা তুই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিবি?
খোকা – হ্যাঁ মা , আসলে…., থাক বাবা। বুঝেছি আজ আমি তোদের বোঝা। বৃদ্ধ হয়েছি, শরীরের জোর কমেছে। মনের বল যাওবা ছিল ঝরা পাতার মতো চালচুলোহীন অসহায় মনে হচ্ছে। কোথায় , কোন অজানায় ঠাঁই হবে কে জানে!
তোদের এখন ভরা যৌবন, রক্ত গরম, আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার এইতো সময়। বেশ বেশ। আমার কেবল একটা জানার, তোর বাবার কষ্টের তৈরী বাড়িটা প্রমোটারকে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিবি? এখানেও তো আমি থাকতে পারতাম। একাই থাকতাম।
খোকা – শোনো মা, এতে আমাদের কত লাভ হবে জানো? দুটো ফ্লাট ফ্রি পাবো, সঙ্গে টাকা।
মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, কবে যেতে হবে বৃদ্ধাশ্রমে?
কালকেই মা। কারণ তারপর দিন শনিবার, কোথাও যাওয়া শুভ নয়। রবিবার আমরা ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠবো।
মা- আচ্ছা, তাহলে ব্যাগ গুছিয়ে নিই। রাত পোহালেই তো যাবার পালা, সময় নেই যে আর।
দূরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো ঠাকুমার আদরের নাতি ঋভু। দৌড়ে এসে ঠাকুমা’কে জড়িয়ে ধরে বললো, ঠাম্মি তুমি কোথাও যাবেনা। তুমি আমার সঙ্গে যাবে, আমার ঘরে থাকবে।
ঠাকুমা নাতিকে আদর করে বললেন, ওটা যে তোমার ঘর নয় ঋভু। ও তোমার বাবার ঘর। তুমি পড়াশোনা শিখে বড় হয়ে যখন ঐ ঘর ভেঙে বা বিক্রি করে নতুন ঘর কিনবে, সেটা হবে তোমার ঘর। কিন্তু তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাই না!তাই বলছি, কখনো তুমি ওরকম কাজ করো না। বাবার বাড়ি বেচে দিলে বা ভেঙে নতুন বাড়ি করলে বাবা-মা মনে কষ্ট পায়। ভুলেও কখনো বাবা- মা’কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখো না, কথাটা মনে রেখো কেমন!
রাত্রিবেলায় ঋভু ঠাম্মির কাছেই শোবে বায়না ধরলো।
ঠাম্মির চোখে ঘুম নেই। নাতিকে নানান স্মৃতিজড়িত কথার গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।
ভোর অন্ধকারে নিত্যদিনের মতো ফুল তুলতে গিয়ে ভোরের চৈতি হাওয়ায় ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি শুনে তাকিয়ে দেখে হাওয়ায় পাতাগুলো গড়াতে গড়াতে দূর অজানায় হারিয়ে যাচ্ছে। গাছের শাখায় নবীন কিশলয়।
মুহূর্তে মনে জাগে আমিও তো বৃদ্ধ ঝরা পাতার মতো। আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। নবীনদের হাসি খুশি সুখে থাকার দিন কিশলয়ের মতো। আমি বেজায় বোঝা, ব্রাত্য।
ফুলের সাজি ফেলে ছূটে এলেন ঘরে। তারপর কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে ভোরের আলো আঁধারিতে পাড়ি দিলেন সুদূর অজানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *