Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জীবন পথের বাঁকে || Manisha Palmal

জীবন পথের বাঁকে || Manisha Palmal

শিক্ষক দিবসের আবহে বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে আমার জীবন পথের বাঁকে বাঁকে দেখা হওয়া সেই সব শিক্ষকদের কথা যাঁরা আমাকে জীবনবোধের শিক্ষায় সমূদ্ধ করেছেন। এঁদের অনেকেরই তথাকথিত পুঁথিগত বিদ্যা নেই। অনেকে স্বাক্ষর ই নন। এঁদের কাছ থেকে যে শিক্ষা আমি পেয়েছি তা আমার জীবনের মণি-মুক্তার অলংকার হয়ে রয়েছে।
প্রথমেই বলি শতদল দিদার কথা। উনি একজন বৈষ্ণব সাধিকা। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা জীবন্ত প্রতিমূর্তি। কোন কিছু আশা না করে মানুষকে ভালবাসতে হয় কিভাবে এঁকে দেখে শিখেছি।
আমার জীবনের আরেক শিক্ষিকা” শশী দিদা”!
উনি একজন ঝুমুর শিল্পী! দেশের কথায়” নাচনী”।
মহাভারতের অদ্ভুত সুন্দর ব্যাখ্যা করেছিলেন উনি—- মহাভারত 5 কালো মানুষের কাহিনী– কৃষ্ণ, ব্যাস, সত্যবতী, দ্রৌপদীও অর্জুন। মহাভারতের নারী চরিত্র দ্রৌপদী কুন্তী সত্যবতী সম্পর্কে ব্যাখ্যা অবাক করে দেয়। উনি বলেছিলেন—” নিজেকে সম্মান করিস ভাই!যে নিজেকে সম্মান করে না সে কাউকেই সম্মান করতে পারেনা।”
আনন্দ বাউল– সাতবউনির মেলায় উনার সাথে আলাপ। সুন্দর সহজভাবে মরমিয়া তত্ত্ব বোঝালেন। মনের মানুষকে কেন বাইরে খোঁজো খোঁজো অন্তরে সেখানেই তাঁর অবস্থান। আমি বাকরুদ্ধ! কি সহজ বিশ্বাস! কী সুন্দর ব্যাখ্যা। অন্তরেই তো বিরাজ করেন অন্তর্যামী।
এমনই আরেক বাউল সাধিকা -” রসকলি”! নামটাই তাঁর রূপের মত মিষ্টি। এই বাউল বলেছিলেন ভালোবাসার কথা। প্রকৃতি জীব সবাইকে ভালবাসলে ভগবানকে ভালোবাসা হয়। সর্ব জীবে তিনি বিরাজ করছেন। তার প্রকাশ আলোকে বায়ুতে সৌরভে জীবকূলে।
একই কথার প্রতিধ্বনি শুনেছিলাম আমার বান্ধবীর শাশুড়িমা ফুলমণি সরেন এর কাছে। উনিও বলেছিলেন ভালোবাসার কথা।
“” জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”!
এবার বলব এক তামিল বৃদ্ধার কথা— যিনি একা এই পৃথিবীতে কেবলমাত্র যীশুকেভরসা করে কাটিয়ে দিলেন। রেলের কর্মচারী স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাঁর। সুদূর তামিলনাড়ু থেকে রুজি-রুটির টান রেল শহরে এসেছিলেন ওনার শ্বশুর। হিজলি স্টেশনের লাগোয়া বস্তিতে থাকতেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে রেল লাইনে কাটা পড়লো ছেলে টি। এই শোকে স্বামী পাগল হয়েগেলেন। তিনিও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। অসহায় বৃদ্ধা অক্ষর পরিচয় হীন। একমাত্র বিশ্বাস” যিশু বাবা”র উপর! শুরু হলো তার বাঁচার লড়াই। কয়েক বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।কী আত্মসম্মানবোধ। কখনো
দান নিতেন না। বয়সের ভারে ন্যুব্জ দেহ তবুও কিছু কাজের বিনিময়ে খাদ্য যোগাড় করতেন।
আমাদের বাড়িতে যখন আসতেন আমার ঠাম্মির সাথে বসে গল্প করতেন। আমাদের বাগানের গাছগুলো তে জল দিতেন। কিছু কাজ না থাকলে আমাকে ধরে বসিয়ে আমার লম্বা চুলে বেনি করে বাগানের ফুলের মালা লাগিয়ে দিতেন। দক্ষিণী মেয়েদের সাজে সাজিয়ে খুব আনন্দ পেতেন। সেই আত্মসম্মানবোধ আমি অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও দেখিনি। এঁরাই আমার জীবনবোধের শিক্ষক— নমি নমি চরণে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress