Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জলছবি || Abhijit Chatterjee

জলছবি || Abhijit Chatterjee

রাত প্রায় দু’টো,মনের গালে শুখনো জলের দাগ।
বাথরুমে গিয়ে ধুয়ে আসতে ইচ্ছে করছে না।পাশের ঘরে আশিস অঘোরে মানাইকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।
মানাই তাদের পনেরো বছরের বিবাহিত জীবনের একমাত্র ঈশ্বর প্রদত্ত উপহার।পূর্ণ গর্ভবতী মনের তখন সাত মাস চলছে।আশিস যথেষ্ট কেয়ার নিচ্ছে।তার মধ্যেই অঘটন।বাথরুমে পা কি করে যেন একদিন হড়কে গেল।আশিসের কথা মেনে মন বাথরুমের গেলে দরজা আটকাতো না।ঐটাই প্রেগন্যান্ট মহিলাদের সবথেকে ভয়ের জায়গা।সেদিনও অন্যথা হয়নি।মনের চীৎকার শুনে আশিস দৌড়ে এসে মনকে মেঝে থেকে টেনে তুলে ড:বক্সিকে ফোন করেছিলো।উনি পরীক্ষা করে বিভিন্ন টেস্ট করতে বলেছিলেন।ইউএসজি রিপোর্ট অনুসারে মনের ওভারিতে চোট ছিল,ব্লিডিং-ও হয়েছিল।ড:বক্সির দক্ষতা আর আশিসের অক্লান্ত সেবাতে ওরা মানাইকে পেয়েছিল।মানাই হওয়ার পর থেকেই আশিসের অফিসে যেন প্রমোশনের সিঁড়ি স্বর্গ থেকে নেবে এলো।কিছুটা নিজের দক্ষতায় আর কিছুটা ওপরওয়ালাদের নেকনজরে এসে কোম্পানির অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর হয়ে গেল,মানাই তখন তিন বছরের।আশিস বন্ধুবান্ধব আত্মীয় মহলে বলে বেড়াতে লাগলো,স্বয়ং মা লক্ষ্মী মানাই হয়ে তার ঘরে এসেছে।যত প্রমোশন পেতে লাগলো আশিস ততই কাজের চাপ বাড়তে লাগলো।দিনের অধিকাংশ সময় কাটাতে হত অফিসে আর বাড়িতে যতক্ষণ থাকতো পুরো সময়টা মেয়েকেই দিতো।মন প্রথমে এটাকে বাবার কর্তব্য বলেই ধরতো।কিন্তু দিন এগোনোর সাথে সাথে মন আর আশিসের সম্পর্কটা শীতল থেকে শীতলতর হয়ে উঠতে লাগলো।নেহাৎ দায় না থাকলে আশিস পারতপক্ষে মনের সঙ্গে কথাই বলতো না।যেন দোকানদার আর ক্রেতার সম্পর্ক। যতক্ষণ জিনিস কেনা নিয়ে কথাবার্তা ঠিক ততটাই।গভীর হতাশায় ডুবে যেতে যেতে আশ্রয় নিলো কাগজ কলমের। অল্প বয়সের কাঁচা কবিতাগুলো নিয়েই শুরু হলো তার নতুন যাত্রা।আশিসের দৌলতে হাল আমলের সব সুযোগ সুবিধেই মন পায়।সংসারে,মানাইকে,আশিসকে ঠিক ঠিক কর্তব্য করে বাকি সময় দেয় লেখালিখিতে।একদিন এক বন্ধুর কথায় খুলে ফেলে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। ক্রমে বন্ধুবান্ধব বাড়ে। অর্ধেকই তার রূপ পিয়াসী অলি,তার লেখার সমঝদার মুষ্টিমেয়।তারাই মনকে লেখার প্রেরণা দেয়,উৎসাহিত করে।দিন যায় মন-এর লেখা ক্রমশ: উন্নত থেকে উন্নততর হতে থাকে।এমনই এক সময়ে আলাপ হলো পল্লবের সঙ্গে।এক অদ্ভুত চরিত্র,গভীর ভাবাবেগ দিয়ে লেখে,চরম উচ্ছৃঙ্খল,নিজেকে নিয়ে উদাসীন,তুমুল আড্ডাবাজ,যথেচ্ছ গালাগাল দেয়
প্রতিষ্ঠান বিরোধী,এদিকে সমাজের সবথেকে উঁচুতলায় ঘোরাফেরা করলেও পা কিন্তু মাটিতেই থাকে আর কট্টর সমালোচক।মনের একটা লেখাতে এমন মন্তব্য করেছিল যে মন রেগে আগুন।তবুও ভদ্রতা করে মন ঐ মন্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছিল।পল্লব উত্তরে মনের ইনবক্সে এসে প্রতিটা শব্দ ধরে ধরে বিশ্লেষণ করে মনের ভুলটা বুঝিয়ে দিয়েছিল।মন অজান্তেই পল্লবকে গুরুর আসনে বসায়।পল্লব ঐ সব ভ্রুক্ষেপ করে না।বলে ভুল করলে ধরিয়ে দেওয়াই তার কাজ,যদিও সে শিক্ষক হতে নারাজ।মন ধীরে ধীরে এই বোহেমিয়ান চরিত্রের দিকে আকৃষ্ট হতে থাকে।সম্পর্ক বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় টেলিফোন নাম্বার আদানপ্রদান,দীর্ঘতর হতে থাকে দূরাভাষে সাহিত্য আলোচনা।পরিচয়ের দু বছর পরে এক সাহিত্য সভায় দু’জনের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার।ফেসবুকে তুখোড় আড্ডাবাজ পল্লব আদতে যে মুখচোরা তা বুঝতে মনের কষ্ট হয় না।মন ইতিমধ্যে লেখাতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে,পত্রপত্রিকাতেই শুধু তার লেখা ছাপা হয়নি তার গোটা দুয়েক কাব্যসঙ্কলনও প্রকাশিত হয়েছে। উল্টোদিকে পল্লব সেই ফেসবুকেতেই আবদ্ধ।মন হাজার বার বললেও পল্লবের এক গোঁ,তার লেখা এখনও যোগ্যতামান পেরোতে পারেনি।সংসারে আপাত ব্রাত্য মন তার যাবতীয় মনের খোরাক পায় পল্লবের কাছ থেকে। পল্লবের নরম মনটা,কেয়ারিং কথাবার্তা মনকে সবসময় আচ্ছন্ন করে রাখে।লেখালিখির বাইরে বেরিয়ে দু’জনের কথা যেন আঠারোর প্রেম।আশিস কলকাতার বাইরে পোস্টিং পায়েছে।মানাই নামি হস্টেলে থাকে।মনের কাছে অফুরন্ত সময়।পল্লবের সঙ্গে এর মধ্যে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে বিভিন্ন সাহিত্যসভায়।ক্রমে এমনিও দেখা হতে লাগলো দু’জনের।পল্লব হাতে ধরে মনকে লেখা শেখালো।একে অপরের অনেক অনেক কাছে এসে পৌঁছলো।পল্লবের ভাবুক স্বপ্নিল কথায় মন ফের নতুন করে বাঁচার রসদ পাচ্ছে।পল্লব আর মন যখন হাতে হাত রেখে চুপ করে বসে থাকে তখন দুজনের মনেই এক স্বর্গীয় সুখ বিরাজ করে।মন নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে একদিন পল্লবকে বলে সে কি স্বপ্ন দেখছে।মুখচোরা পল্লব এতদিনে মনের কাছে সাবলীল হয়েছিল,কথাটা শুনে কেমন যেন চুপ করে যায়।মনকে দিবাস্বপ্ন দেখতে মানা মরে।একদিন মন শ্রেষ্ঠা লেখিকার সম্মান পায় এক সাহিত্য সভায়।মঞ্চে উঠে আপ্লুত মন পল্লবের গুণগান গাইতে থাকে।মঞ্চ থেকে নেবে সই শিকারীদের ভীড়ে আটকে একটু দেরি হয়,দেখে পল্লব হলে নেই।পাগলের মত বাইরে এসে দেখে পুকুরপাড়ে বসে নিবিষ্ট মনে পল্লব মোবাইলে লিখে চলেছে একের পর এক কবিতা। মন জড়িয়ে ধরে পল্লবকে,পল্লব মনের কপালে গভীর ভালোবাসায় এঁকে দেয় চুমুর দাগ।দুজনে হাত ধরে হেঁটে চলে অনেকটা রাস্তা বাড়ি যাওয়ার আগে। রঙিন প্রজাপতি মন বাড়ি ফেরে।আশিস কলকাতায়,ওকে সদ্য পাওয়া স্মারক দেখায় মন।

Pages: 1 2
Pages ( 1 of 2 ): 1 2পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress