Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ছেলের চাকরিতে আকাশে মা || Suchandra Basu

ছেলের চাকরিতে আকাশে মা || Suchandra Basu

বিমানের আওয়াজ কানে বাজলেই যেকোনো কেউ একবার হলেও আকাশের দিকে তাকান। গ্রাম হলে তো কথাই নেই; বাচ্চাদের সঙ্গে বৃদ্ধরাও বিমান দেখতে ঘর থেকে দৌড়ে উঠোনে চলে আসেন।
ঘরের ওপর দিয়ে কোনো উড়োজাহাজ উড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনলেই এক দৌড়ে উঠোনে চলে আসতেন গীরু বালা রায়।

প্রায়ই আফসোস করে বলতেন, ‘একদিন যদি বিমানে চড়তে পারতাম….’ এ বলে দীর্ঘ নিশ্বাস নিতেন গীরু বালা রায়।অনটনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা। আর বিমানে চড়া তো দুঃস্বপ্ন। তবু মাকে কথা দিয়েছিলেন ছোট ছেলে শিপন রায়,চাকরি হলেই পূরণ করবেন মায়ের স্বপ্ন।

শিপন রায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এম এ প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় হয়ে যখন এমফিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই আসে চাকরির সু-সংবাদ।

অবশ্য বসতভিটাহীন পরিবারের বাবাহারা ছেলে শিপন রায়ের এতদূর আসার পেছনের গল্পটা অনেক সংগ্রামের। কী করেননি এ জীবনে। ১০ বছর বয়স থেকেই শুরু হয় তার লড়াই। রিকশা চালিয়ে প্রথম রোজগার। নরসুন্দরের কাজ, ধান রোপণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঁকড়া, তেল, সবজি, মাছ-শুঁটকি বিক্রি সব পেশাতেই হাত বসাতে হয়েছে শিপনের। শুধু তাই নয়; জীবনের তাগিদে গরুর গোবর দিয়ে লাকড়ি বানিয়েও বিক্রি করেছেন। করোনায় গ্রামে গিয়ে ৭০ শতক জমিতে নিজেই আমনের বর্গাচাষ করছেন। এই হল শিপনের জীবনের গল্প।

মাকে উড়োজাহাজে চড়ানোর গল্পটা নিজের মুখেই বলেন শিপন রায় , নন ক্যাডারে সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হতেই তড়িঘড়ি করে জোগাড় করেন উড়োজাহাজের টিকিট। এক ভোরে ফেনীর সোনাগাজীর চরচান্দিয়ার বাড়ি থেকে রওয়ানা হন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিকেল তিনটার ফ্লাইটে চড়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে নামেন। সেখান থেকে পুনরায় ঘরে ফেরা।’

মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে পেরে হাসি ফুটেছে শিপন রায়ের মুখেও। তাই বলেন, ‘মায়েরও বয়স বাড়ছিল। এখন বাষোট্টির ঘরে। নানা রকম অসুখ বাসা বাঁধছিল জীর্ণশীর্ণ শরীরে। মনের ভেতর ছিল একটা প্রশ্ন ,মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে পারবে তো?
চাকরিটা হলে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানায় শিপন।

বিমানবন্দর আর উড়োজাহাজের ভেতরে মায়ের সঙ্গে স্মারক হিসাবে তোলা ছবিতে ধপধপে সাদা শার্ট পরা ছেলের পাশে বসে মা গীরু বালার মুখজুড়ে উপচে পড়ছে হাসির ঢেউ।
চট্টগ্রামে নামার পর আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘একজীবনে আমার দুটো স্বপ্ন ছিল। ছেলের চাকরির খবর শোনা আর উড়োজাহাজে চড়া। দুইদিনে দুটোই পূরণ হয়ে গেছে। আমার আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই।’

২০০৯ সালে যখন এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনি বাবা স্বপন রায়কে হারান শিপন। অবশ্য অভাবের সংসারে দুঃখ-কষ্ট লেগে ছিল বারোমাসই। আমার সারাজীবনই কেটেছে এ ঘরে ও ঘরে কাজ করে। এখন ষাটোত্তীর্ণ বয়স বলে সেটিও আর পারিনা।

আমার এক ছেলে নাপিতের কাজ করেন। আরেক ছেলে রিকশা চালান। বিয়ে করে তাঁরা দুজনেই আলাদা সংসারে উঠেছেন। তিন ভাই মিলে আমার খরচ জোগায়। বলতে গেলে মাথা গোঁজার জন্য বসতভিটা তোলার একটুকরো জায়গাও নেই আমাদের।সেজন্য পড়ালেখা চালিয়ে নিতে প্রায় সব কাজেই হাত দিতে হয়েছে শিপনকে।

শিপন হাসতে হাসতে বলেন, ‘২৮ বছরের জীবনে ২৬ রকমের কাজ করেছি। নাপিতের কাজ করেছি প্রায় ১০ বছর। মানুষের ঘরের টয়লেটও পরিষ্কার করেছি। জমিতেও কাজ করতে দ্বিধা করি না।

অবশ্য এই দীর্ঘ সংগ্রামমুখর সফরে শিপন পেয়েছেন মানুষের নানা সহযোগিতাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের শুরু থেকেই পাচ্ছেন ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘পে ইট ফরওয়ার্ডের’ বৃত্তিও। করোনায় টিউশনি হারালে আবারও পাশে দাঁড়ায় এই সংগঠন। এখান থেকে পাওয়া ১০ হাজার টাকায় নিজের গ্রামে ৭০ শতক জমিতে আমনের বর্গাচাষ করে সেই ধান ঘরে তুলেছেন।

মানুষের এই ‘ঋণ পরিশোধে’ প্রায় সময় অসহায়দের পাশে দাঁড়ায় শিপন। করোনার সময়ে গ্রামে লাশ সৎকারে এগিয়ে গেছেন। গড়ে তুলেছেন প্যারেন্টস কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংগঠনও। যেটির মাধ্যমে তিনি রাস্তার পাশে পড়ে থাকা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চুল-দাঁড়ি কেটে দিয়ে প্রশান্তি জোগান। অন্যের কাছ থেকে কাপড়চোপড় এনে তুলে দেন তাঁদের গায়ে।

শিপন বলেন, ‘এখন চাকরিটা হওয়ায় মানুষকে আর্থিকভাবেও সহায়তা করতে পারার চেয়ে আনন্দ হয় না।’ তবে সব আনন্দ যেন ছাপিয়ে গেছে মাকে উড়োজাহাজে চড়িয়ে স্বপ্নপূরণ করতে পারার আনন্দের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *