সপ্তম অংক
সুরবালা ,উপেন, দিবাকর
দিবাকর– বৌদি…
সুরবালা– এসো ঠাকুরপো, এসো , ঘরে এসো।
দিবাকর– কি করছ , তোরঙ্গ গোছাচ্ছ? কেন?
সুরবালা — মুখখানা ভাই এতো শুকনো কেন? কি হয়েছে ভাই।
কি হলো মাথা নীচু করে আছো, আমায় বলবে না, আমি যে তোমার শুধু বৌদি নই , বন্ধু ত, বলো , এত বিমর্ষ কেন?
দিবাকর– বৌদি, আমি গোপনে জানতে পেরেছি, আমি, আমি বি. এ এগজামিন ফেল করেছি।
সুরবালা– ওমা, দেখো কান্ড, তাতে কি হয়েছে, সবার পাশ দিলে, ফেল কোথাও বসবে ত।
দিবাকর– যাও ,তোমার সবতাতেই
ঠাট্টা ।
সুরবালা– ঠাট্টা নয়। ঠাট্টা নয়, সত্যি কথা, একদম সত্যি।
আচ্ছা, তুমি কি বলত ঠাকুরপো, একবার ফেল হয়েছ ত কি হয়েছে, আবার এগজামিন দেবে।
এতে মন খারাপের কি আছে?
দিবাকর– না তাও শুধু নয়।
সুরবালা– আবার কি?
দিবাকর– তোরঙ্গ গোছাচ্ছ। কোথাও যাবে?
সুরবালা– হ্যাঁ ভাই, তোমার দাদা কলকাতা যাবেন।
দিবাকর– তুমিও
সুরবালা– হু, শুধু আমি নই, তুমিও যাবে।
দিবাকর– আমি? আমি কেন?
সুরবালা– তার আগে বলো, মনখারাপের খবর তোমার।
দিবাকর– তুমি ত সব জানো।
ছোড়দা কেন আমার বিয়ের আয়োজন করছেন?
সুরবালা–,ওমা, কি বলে দেখো, বিয়ের বয়স হয়েছে, উনি তোমার অভিভাবক, তিনি করবেন না তো কে করবেন? বাবার বৃদ্ধ হয়েছেন, তোমার মেজদা ত জানো সংসারে কিছু মাথা ঘামান না।
কিন্তু তোমার তাতে মনখারাপ কেন?
দিবাকর– আমি বিয়ে করবো না।
সুরবালা– উঃ বললেই হলো। টুক করে বিয়ে করে বৌ নিয়ে ঘরে ঢুকবে। তারপর আমি সব বুঝে নেবো।
উপেন– ওঃ, দিবাকর এখানে, ভালো হয়েছে, দুজনের সাথেই কিছু কথা আছে।
সুরবালা– ওমা, তুমি!!
উপেন–কি রে হতভাগা। ফেল হলি কি করে?
রোজ রাত্রি একটা অবধি জেগে জেগে এতদিন তবে করছিলি কি? কিরে মাথা নীচু করে কি ভাবছিস?
সুরবালা– তুমি কি গো, একবার ফেল দিয়েছে ত কি হয়েছে।
উপেন— নাঃ , এ বাড়িতে থেকে আর যাহোক তোর পাশ হবে না।
সুরবালা– বেশ হবে। তুমি বললেই হবে।
সামনের বার ঠিক পাশ হবে।
উপেন– দিবাকর , তোর বৌদি দেখি গণকঠাকরাণী হয়েছেন।
শোনো দিবাকর কলকাতা একমাস বাদে গিয়ে কালেজে ভর্তি হবে।
আমি সব ব্যবস্থা করেছি।
সুরবালা– ওমা। কলকাতা গিয়ে দিবাকর একা থাকবে কি করে? ছেলেমানুষ, ও কি কোনদিন একা থেকেছে।
উপেন– সে ঠিক পারবে, পারতে হবে। আপাতত বৌদির আঁচল থেকে ত মুক্তি হবে। এখানে থাকলে সে পাশ দিতে পারবে না।
সুরবালা– মা গো, কি সব বলছ বলোত, আবার বিয়ের বন্দোবস্ত করেছ!!!
উপেন — বিয়ের সাথে কলকাতা যাওয়া, পাশের পড়ার কি সম্পর্ক?
বৌ ত হবে তোমার বোন।
তোমার কাছেই থাকবে।
কিন্তু , এতো কাপড়চোপর তোরঙ্গ বোঝাই করছ কেন। সুরবালা?
সুরবালা– বাঃ দরকার হবে না–লাগবে।
উপেন — যাচ্ছি ত দুদিনের জন্য, ওদিকে হারানদার কোন খবর দিচ্ছে না সতীশ, কিছু বুঝতে পারছি না।
সুরবালা– একি। তোমার গা দেখি এখনও গরম।
ঠাকুরপো, শিগ্গিরই থারমোমিটর এনে তোমার ছোড়দার জ্বর মাপো তো।
উপেন– আঃ, কপাল থেকে হাত সরাও।
বলছি আমি ঠিক আছি।
সুরবালা– হু ঠিক আছো, তিনদিন ধরে জ্বর চলছে।
উপেন– আজ নেই।
সুরবালা– এই জ্বর গায়ে তোমায় একা ছাড়ি কি করে বলতো।তাই…
উপেন– ও তাই, এতো শাড়ি কাপড়
গোছাচ্ছ।
সুরবালা– শুধু আমি না , দিবাকরও আমাদের সাথে যাবে।
উপেন–দিবাকর!!! সে একমাস বাদে যাবে, হোস্টেল ঠিক করা আছে।
সুরবালা– না। এখনও যাবে, বিদেশবিঁভুই, সেখানে তোমার কিছু
হলে….
উপেন– আরে কোথায় উঠবো ঠিক নেই, সতীশের খবর পাচ্ছি না…
সুরবালা– কেন জ্যোতিষ বাবুর বাড়ি?
উপেন — না, সে হবে না। সরোজিনীর সাথে সতীশের বিয়ের কথা পাকা , কুটুমবাড়ি এখন ওমন হুট করে আর ওঠা যায় না।
সুরবালা– সে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
আর , তুমি হা করে দাঁড়িয়ে আছো কেন, ঠাকুরপো?
শুনলে ত সব, থার্মোমিটর দিয়ে ছোড়দার জ্বর মেপে, শিগ্গিরই সব গুছিয়েগাছিয়ে নাও ।
……………………………………………..
সুরবালা– আচ্ছা, কলকাতা ত এসেছি এখন গাড়ি করে কোথায় যাচ্ছ বলো ত ?
এ কলকাতায় কোথায় কার বাড়ি যাচ্ছ?
উপেন– হু ভাবছি, আগে সতীশের মেস বাড়ি যাই, দেখি কেন সতীশ কোন যোগাযোগ করছে না, তারপর দেখা যাবে।
সুরবালা– তাই চলো, হয়ত অসুস্থ আছে।
তো আমরা তিনজনের মেসবাড়িতে থাকব কি করে।
উপেন– আঃ থাকার কথা উঠছে কেন? সে অন্য ব্যবস্থা হবে।
সুরবালা— এই দোতলা বাড়িতে বুঝি সতীশ ঠাকুরপো থাকেন, অনেক লোকের সাথে।
কত ধনীঘরের ছেলে ঠাকুরপো, আর এখানে মেসবাড়িতে…..
উপেন— দিবাকর, তুই মালপত্র নিয়ে বৌদিকে নিয়ে ধীরেসুস্থে উপরে আয়, সামনেই দোতলার সিঁড়ি।
আমি আগে যাচ্ছি।
………………………………………………
উপেন– দিবাকর। একটা ভাড়াগাড়ি ঠিক কর।
সুরবালা– একি!!! কি হয়েছে, এমন তাড়াহুরা করে নেমে এলে, সতীশ ঠাকুরপোর ঘর থেকে। হাপাচ্ছ ……
ঠাকুরপোর সাথে কথাও ত হলো না।
উপেন– হু
সুরবালা– হু। কি? আমাকে চীৎকার করে বললে, এক পাও আর এগোবে না। আমি ত অবাক….
কথা বলছ না কেন?
ঘর অবধি গেলাম একটু দেখতেও পেলাম সতীশ ঠাকুরপোকে।
উপেন — ও অপবিত্র স্থানে তোমার না ঢোকাই উচিত।
সুরবালা– অপবিত্র কেন?
এখন কোথায় যাচ্ছি?
উপেন– পাথুরিয়াঘাটা , হারাণদার বাড়ি।
সুরবালা– তা ভালো। সতীশ ঠাকুরপোকে দেখলাম যেন খাটে
আধশোয়া অবস্থায়…..
শরীর খারাপ নয়ত?
উপেন— জানি না, হবে হয়ত….
সুরবালা— কি হয়েছে। এমন রেগে আছো কেন?
উপেন– কোনদিন রাগ করতে দেখেছ আমাকে।
সুরবালা– না, কোনদিন না। তোমার রাগ হলে তুমি গম্ভীর হয়ে যাও।
আমি বুঝি, সেটাই তোমার রাগ।
উপেন– আচ্ছা বেশ, হা হা হা( হাসি)
এবার হলো ত।
সুরবালা– দেখলে ছোটঠাকুরপো, তোমার ছোড়দার রকমখানা…..
এমন ভয় পাইয়ে দেন।
উপেন — ও কি আর বলবে আবার।
সুরবালা– আচ্ছা, সতীশ ঠাকুরপোর ঘরের মেঝেতে এক ঝলক দেখলাম এক ফর্সা রূপসী বিধবা মেঝেতে বসে পান সাজছে, সেই কি , সাবিত্রী?
উপেন– মানে , তুমি সাবিত্রীর নাম করছ…, তাকে জানলে কি করে?
সুরবালা— বাঃ সে তো সতীশ ঠাকুরপোই আমায় একদিন বলেছিলেন। সে নাকি সম্ভ্রান্ত পরিবারের, অবস্থা ফেরে এখন মেস বাড়ির ঝি- এর কাজ করেন।
উপেন– আঃ …থাক ওসব কথা এখন।
বেলা হলো দুপুর গড়িয়ে অপরাহ্ন।
সুরবালা– হু, তাদের বাড়িতে রোগী, কেমন আছেন কে জানে।
সতীশ ঠাকুরপো মাঝে একদিন এসেছিলেন না। বলছিলেন হারানদার স্ত্রীর কথা, কি অক্লান্তভাবে স্বামীর সেবা যত্নই না করেন সারাদিন।
উপেন — আমিও তাই ভাবছি। এখন কেমন আছেন।
যাক্ আর প্রায় এসে গিয়েছি।
………….
উপেন– দিবাকর বাড়িটি অতি পুরান আর সিঁড়িও ভাঙ্গাচোরা, তোর বৌদিদিকে সাবধানে নিয়ে দোতলায় নিয়ে আয়।
দিবাকর–হ্যাঁ, যাচ্ছি চলো বৌদিদি
সুরবালা– কি রকম ঘিঞ্জি জায়গা, ঠাকুরপো।
দিবাকর– বাড়িটি ত খুব ভাঙা। জরাজীর্ণ।
সুরবালা — কত কষ্ট করেই না থাকেন এরা।
ওমা, ঠাকুরপো, তোমার ছোড়দা ত এদিক পানি আসছেন। কি হলো?
বিপিন– হারানদা মারা গেছেন। তাকে নীচে নামান হ্য়েছে। অন্ধকার।
তুমি কি ভেতরে মানে বাড়িতে যাবে?
সুরবালা– ওমা ! কি বলো। এসময় কিরণদিদির কাছে যাব না? মেয়েমানুষের এইসময় মেয়েমানুষেরই ত কাছে থাকতে হয়।
কি অবস্থা ওনার?
বিপিন– ঐ হারানদার দেহের উপর মুখ গুঁজে কাঁদছেন।
সুরবালা– আহা। চলো চলো, দিবাকর এসো তাড়াতাড়ি।