Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গৃহিনীর সেকাল একাল || Rana Chatterjee

গৃহিনীর সেকাল একাল || Rana Chatterjee

গৃহিনীর সেকাল একাল

সময়ের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে কতকিছু পাল্টে যাওয়া দেখে আসছি ,আগামীতে আরো দেখতেই থাকবো। এটাই নিয়ম জেনে অবাক না হয়ে অতীতের সুখ স্মৃতিতে ডুব দিয়ে ভাবুক হই কমবেশি সবাই আমরা।

 অনেক কিছু যেমন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টে যাচ্ছে,তেমনি মনের চিন্তা ভাবনা ধ্যান ধারণা  পাল্টানোও অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ছে।জীবন শৈলী,সংসার ধর্ম, পাল্টে যাওয়া সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে গৃহিনী,কর্তা বা সন্তান – সন্ততি  সবার আচরণ,তাদের নিজ নিজ ভুমিকাতেও পরিবর্তনের প্রভাব ফুটে ওঠছে যা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

দুনিয়া জুড়ে সবকিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া,মানুষের মনন চিন্তন,ভাবনা সব যেন বুলেট ট্রেনের মতো গতিতে মুখরিত।তবু আজ স্বল্প পরিসরে আলোকপাত করার চেষ্টা থাকবে সংসার যাপনে বাড়ির মহিলা,তথা গৃহিণীদের একাল ও সেকালের ওপর।সেই আদি অনন্ত কাল ধরে মহাকাব্যের পাতায় আমরা দেখে এসেছি সমাজের নানা নিয়ম নীতির বেড়াজালে বাড়ির মহিলাদের সমালোচনা করার অধিকার বোধ পুরুষ কুলের।এটা যেন একটা বেশ করেছি,করতেই পারি গোছের বাড়ির নারীদের শেকলের বেড়ি পড়ানোর কৌশল ।এখনো যে সেই নিয়ন্ত্রণ করার সুপ্ত ইচ্ছা একেবারে নির্মূল হয়েছে সেটা কখনোই নয় তবু আধুনিকতার ছোঁয়া নারীদের সাহসী নির্ভীক করেছে।নারীরা ঘর সামলে নিজেদের যোগ্যতায় অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব আনার মাধ্যমে সংসারের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার বিষয়ে বেশ তৎপর যার ফল পাচ্ছে সংসার ও সমাজ ব্যবস্থা।

সেই প্রাচীন কাল থেকে সমাজ,সংসারে নারীদের অবস্থান তাদের নিয়ে ভাবনা,তাদের কাজের রূপান্তর সে এক বিরাট তথ্য বহুল আলোচনা সে রাস্তায় এখন হাঁটছি না।নারীদের নিয়ে যুগ যুগ ধরে কত বিরূপ মন্তব্য, সমালোচনার জোয়ার আমরা দেখেছি দিকে দিকে। এটুকু বলতে পারি অবশ্যই যে অন্যদের সমালোচনা  করার আগে নিজের সমালোচনাও করা প্রয়োজন আমি বা আমরা পুরুষেরা আদৌ পারফেক্ট আছি তো!তাই একটু সমাজতাত্ত্বিক আঙ্গিকে আগেকার সময়ে ঠাকুমা দিদিমা ,মা-মাসিদের সংসারে ভূমিকা ও এখনকার সংসার ,আধুনিক সমাজ জীবনের আঙিনায় গৃহিণীদের কাজের বা ভাবনার রকমফের নিয়ে  ভাবনার বৃহৎ বিষয়ের  ওপর সামান্য অবলোকনের প্রচেষ্টা করছি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে।

আগেকার দিনে গৃহিণীরা বৃহৎ পরিবারে,নয় জাঁদরেল বা স্নেহশীলা শাশুড়ি বা পিসি শাশুড়ির তত্ত্বাবধানে সংসার শুরু করতেন ।সংসারে একটা নিয়ম নিষ্ঠা,বড্ড কড়া অনুশাসনের শেকল বা বেড়ি যেন লাগাম ধরে থাকতো।গতানুগতিক নিয়ম নীতির চলে আসা অদৃশ্য অনুশাসন।যৌথ বৃহৎ পরিবারের কাজকর্মের ধরণটা ছিল এখনকার থেকে অনেকাংশেই আলাদা।সে যদি কৃষি ভিত্তিক গ্রাম্য বড় পরিবার হতো তাহলে তো আরো ভিন্ন, শহুরে যৌথ পরিবারের চরিত্র থেকে। গৃহিণীদের মাথার  ওপর ছিল রান্না-বান্না,ঘর-সংসার-গেরস্থ,সন্তান,ননদ,দেওর ভাসুর,গরু-গোয়াল কৃষেন আরো নানা ঝক্কি ঝামেলা চিন্তার বোঝা ।বড় পরিবার, অনেক মেম্বার তাদের তিন বেলা খাবার দাবারের ঝক্কি,হেঁসেল সামলে সংসারের না ফুরানো কাজ কর্মে নাভিশ্বাস ওঠা ঘূর্ণাবর্ত ।এখনকার তুলনায়  সে অর্থে চিন্তা  করতে হতো না  সন্তানের ক্যারিয়ার, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, মাথা গোঁজার ঠাঁই,ব্যাঙ্ক লোন চাপ,ভাঁড়ারে টান ইত্যাদি আরো আধুনিক দুশ্চিন্তার হাজারো খুঁটি নাটি। আগে গৃহিণীদের কাজ,দায়িত্ব পালনের রকম টাই ছিল আলাদা ধরণের । সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এখন কার পরিস্থিতি বোঝা কেবল অলীক কল্পনাই নয় রীতিমতো দুঃসাধ্য। তখন প্রাধান্য কেবল  সংসার ধর্ম,হেঁসেল ঠেলে,হাড় ভাঙা খাটুনি আর পতি দেবের,গুরুজনদের সেবা । সন্তান জন্ম দেওয়া, কোলে পিঠে করে বড়ো করা এই নিয়েই ভোর থেকে রাত্রি গুজরান হতো অন্দর মহলে মহিলাদের ।একথা বলতে খারাপ লাগলেও এটা এতটাই সত্যি যে তখন কার সময় ঠাকুমা-দিদিমারা খুব অল্প বয়সে বিয়ের পর নতুন পরিবেশে এসে বড়োদের ছত্রছায়ায় কিছুদিন থেকে অনেক কিছু খুঁটিনাটি শিখে তবে সংসারের বিরাট কর্মযজ্ঞে নিজেদের সঁপে দিতে অভ্যস্ত থাকতেন।  কাজের ব্যস্ততায় নিজেদেরকেই নিজেরা করতেন অবহেলা,মুখ বুজে শারীরিক কষ্ট নিয়েই জীবন কাটানো ছিল দস্তুর।শরীরের ভেতরে অজান্তে  রোগ জীবাণু বাসা বাঁধলে অকালে প্রাণ ঝরেও যেত কতজনের!তখন তো আজকের মতো চিকিৎসার উন্নতিও হয় নি!তারওপর বাড়ির অন্দরের মহিলারা পর পুরুষ ডাক্তারের কাছে যাবে এটাও মেনে নিতেন না অনেক বাড়ির অভিভাবক এমনকি বাড়ির অলিন্দের খবর বাইরে মুখরোচক আড্ডায় উঠেও আসতো।এমনিতেই ভালো চিকিৎসার সুযোগও ছিল কম ।তার ওপর বাড়ির মহিলা সে আবার মুখ ফুটে নিজের অসুস্থ হবার খবর বলবে পুরুষ মানুষকে সে কি কথা !তাহলে তো জুটবে অবলীলায় বেহায়া শব্দ!

সংসারে হাড় ভাঙা পরিশ্রম শেষে সকলকে পরিবেশন করে সামান্য দুটি যে খাবার নিজের  জন্য রাখবে বাড়ির মহিলারা সেই সুযোগ অনেক সময় পেতো না,এটা নির্দিষ্ট কোনো টুকরো ঘটনা নয়,এটি আসলে সার্বিক ছবি ছিল অনেক যৌথ পরিবারের। আবার যৎসামান্য খাবার থাকলেও খেতে বসার মুহূর্তে কোনো না কোনো অতিথি হাজির হলে তাদের সেবায় তুলেও দিতে হতো খাবার প্রায়শই। আর বাড়ির পুরুষ কত্তা,সদস্যরা তখন  তাম্বুল সেবনে সুখ দিবা নিদ্রায় ব্যস্ত।কই খেয়েছো,দেখি তোমাদের আদৌ আছে কিনা এই প্রশ্ন,আন্তরিকতার অভাব ছিল তৎকালীন সংসারে।এমন আন্তরিক ছোঁয়ার সাক্ষী হচ্ছে বর্তমান ছোট পরিবার গুলি অবশ্য অনেকক্ষেত্রে সেটাতেও গলদ কিছু স্বার্থপর,কেবল নিজেরটা বোঝে এমন পুরুষের জন্য।তবু এটাই ভালো দিক যে বর্তমান ব্যস্ততার দুনিয়ায় পা রাখা গৃহিণীরা নিজেদের ওপর সচেতন যা একটা ভালো লক্ষণ।
বর্তমানে  এটাও দেখি কখনো কানে আসে কোনো বাড়ির বয়স্কা মহিলা গায়ে গতরে খেটে খেটে ভগ্ন বেহাল শারীরিক অবস্থা নিয়ে আক্ষেপ করছেন যে তাদের কর্তা পুরুষ মানুষটিও কোনোদিন জানতে আসে নি সময়ে খাবার জুটেছে কিনা বাড়ির অন্দর মহলে থাকা গিন্নির !

আজ দিনকাল অনেক পাল্টেছে, এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপার্জন ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় নারীরা অনেকটা এগিয়ে।তারা এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে বাইরে বেরুচ্ছে ।পুরুষদের কাছ থেকে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সমীহ আদায় করে নিচ্ছে।সেই সময়কার অতীত সংসারে  একটা যেন বিষয় কাজ করতো পুরুষ আবার অন্দর মহলের নারীদের সে যতই আপনজন হোক না কেনো তার শরীরের খবর কি নেবে!স্ত্রীর খবর নিতে আসা পুরুষদের নিয়ে হাসি মস্করা কম ছিল না,তাদের কে বউ ন্যাওটা,বা বউয়ের আঁচলের তলায় থাকা স্ত্রৈন্য বলে হেয় পর্যন্ত করা হতো।

তাই স্বাভাবিক ভাবেই কাজের চাপে গিন্নিরা নিজেদের কষ্টকে উপেক্ষা করে এমনকি নিজেকে অবহেলা ও শেষে কিছু জড়িবুটি,আয়ুর্বেদিক ঘরোয়া টোটকার ওপর ভরসায় রাখতে বেশি অভ্যস্ত ছিল ।এরফলে খুব সহজেই তাদের অজান্তে শরীরে নাম না জানা নানা জটিল রোগের বাসা বাঁধলে কষ্ট সয়ে নেওয়াই নিয়ম ছিল আর এরফলে  কখনো তাদের  অকালে ঝরে যেতে দেখা যেতো। এ যেন মরে গিয়ে তাদের বেঁচে যাওয়ার সামিল ।

বাড়ির হেঁসেল কাজ  ফেলে বাড়ির গিন্নি বাইরে ডাক্তার দেখাতে বেরুলে গাঁয়ের লোকে বলবে  কি !ঢি: ঢি: পড়ে যাবে-ক্যানে গো ও বাড়ির গিন্নির কি যেন ব্যামো! অনেক ক্ষেত্রে এটা প্রমাণিত যে মহিলারাই মহিলাদের শত্রু হয়ে  ক্ষতি করতে উঠেপড়ে  তাই শুধু মহিলাদের  বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই কাজ করে যেতে হত আর ছিল অসীম সহ্য ক্ষমতা সব কিছুর মানিয়ে নেওয়ার অসীম ক্ষমতা যেন সৃষ্টিকর্তা কেবল নারীদেরই দিয়েছে এটা ভেবে অবাক হই। কোনো কিছু আদায়ে যে পুরুষদের সাথে তর্ক করবে তা আবার হয় নাকি..এর জন্য বাপ দাদা তুলে চোদ্দ পুরুষের সমালোচনা করা জলভাত,চির অভ্যস্ত পন্থা!

  এখনকার গৃহিণীদের বিষয়ে আলোকপাত করলেই বোঝা যাবে কাজের ধরণে,ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। প্রকৃত অর্থে একজন গৃহিনী যেন এখন প্রকৃত দশভুজা, সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য করার সেতু ,যেদিকে না নজর দেবে সেটাই রসাতলে।ধেয়ে আসবে কটাক্ষ,”ওই তো মা,সন্তান তো এমন হবেই “-কোনদিকে যাবে গৃহিণী!এক রুদ্ধশ্বাস চাপের মধ্যে থেকে এখন নারীদের গিনিপিগ জীবন তবু একটা স্বস্তি যে এখনকার নারীদের কিছু অংশে স্বাধীনতা আছে  নিজেদের মত প্রতিষ্ঠার।এর অন্যতম কারণ নারীরা ঘর সংসার সামলে কাজে কর্মে পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কিছুটা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে।

ঘর বাইরের মধ্যে সামঞ্জস্য বা সংসারের হাল ধরে স্বামীর যোগ্য জীবন সঙ্গিনী যে তাকেই হতে হবে। আধুনিকতা,পরিবর্তনের প্রভাব তো কিছুটা পড়বেই সে সব প্রলোভন এড়িয়ে সংযত জীবন যাপন, এ যেন প্রতি মুহূর্তে নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই,ছায়া যুদ্ধ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই।

তার ওপর গৃহিনী যেহেতু স্ত্রী লিঙ্গ নারী জাতি সমাজের সকল স্তরের পুরুষদের ,বাড়ির তো বটেই বাইরেরও যেন গণতান্ত্রিক অধিকার গৃহিনী নামক এই বিশেষ শ্রেণীর গুণগত চরিত্র ঠিক আছে কিনা সে নিয়ে কাটা ছেঁড়া,মজলিস  গড়ায় পাড়ার মোড়ে চায়ের টেবিলেও। অন্যের বাড়ির বউ নিয়ে তার কাজকর্ম বা স্বভাব, সে কতটা গুণবতী,সুন্দরী সে নিয়ে যখন আলোচনা চালায় অকর্মন্য পুরুষ তখন অবাক লাগে ।আবার যিনি বা যারা এসব সমালোচনা করেন সেই  ব্যক্তির সামনে ওনার বাড়ির মহিলাদের নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেখুন বাবুজির গোঁসা হবে,চরম লজ্জা লাগবে অথচ অন্যের বাড়ির শ্রীময়ী নিয়ে কটাক্ষ, কৌতুহল তুঙ্গে!এ যেন পুরুষদের জন্মগত অধিকার মহিলাদের নিয়ে কাটা ছেঁড়া করা,তাদের উদ্দেশ্যে চটুল মন্তব্য !সময় পাল্টেছে,এসেছে জীবন ধারণ, জীবন শৈলীর পরিবর্তন তবু নারীদের নিয়ে সমালোচনা আজও স্বমহিমাতে বহালের মাঝে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে গৃহিণীদের একাল ও সেকালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress