গহন আঁধার মন
সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখ , ডগি (আমাদের প্রিয় পোষা কুকুর ) মানুষের স্বরে কথা বলছে।
— দাদাবাবু , কে তোমাকে ডাকছে যেন বিছানা ছেড়ে বাইরে এসে দেখি , সমীরণ বাবু (বেদব্যাস সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক)।
— আপনার গল্পটা দিন।
— লেখা হয়নি ভাই , হলেই পাঠিয়ে দেব।
— হয়নি কেন , আপনার জন্য প্রেসে দিতে পারছি না।
— তোমার বৌদি পিত্রালয়ে , তার পিতা খুব অসুস্থ , তাই লিখতে •••
— বাপ্ রে , এই বয়সেও বৌদি ছাড়া চলে না দেখছি। সমীরণ বাবু ঠোঁট টিপে , মুচকি হাসলেন।
— না মানে , তা নয় ঠিক। নিজের হাতে সব কিছু করে নিতে হচ্ছে তো।আমি কৈফিয়তের সুরে বলি।
— তাড়াতাড়ি পাঠাবেন। সমীরণ বাবু চলে যান। ডগি এসে আমাকে বলে , লোকটা ভাল না , বদমাশ।
— কেন রে ?
— তুমি সেদিন ছিলে না , ও এসেছিল।
— তাতে কি হল ?
— বৌদিমণির কান ভারী করছিল। বলছিল , (তোমার সম্পর্কে), এমন অপদার্থ লোককে নিয়ে যে কিভাবে সংসার করছেন বৌদি ? শুনে আমি হাসলাম |
— তোমায় হাসি দেখলে, পিত্তি জ্বলে যায়। আর হেসো না দাঁত বের করে। হাসলে আমার দাঁত বেরিয়ে পড়ে।আমি ঠোঁট বুজে , দাঁত ঢাকলাম।
— লোকটার দৃষ্টিও কু , বৌদিমণিকে যেন চোখ দুটো দিয়ে চাটছিল।
— কি যে বলিস , উনি ভদ্রলোক।
— ভদ্রলোক না ছাই কেকা রূপবতী। বয়স এখন প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। মধ্য যৌবন , ভরা বসন্ত শরীরে , দেখবার মতোই চেহারা। চোখ দুটি পটল চেরা , মাথা ভর্তি কোঁকড়া চুল , গায়ের রং দুধে-আলতা। একবার ওর দিকে তাকালে , সত্যিই অন্য কোন চোখ দিকে ফেরানো দায় হয়ে পড়ে। এটা মিথ্যে নয়।হয়তো সেভাবেই সমীরণ বাবুর চোখ আটকে গিয়েছিল।
— শুয়ে শুয়ে আর স্বপ্ন দেখতে হবে না , এবার উঠে পড়।অনেক কাজ পড়ে আছে। ডগি বলল।
স্বপ্নটা ভেঙে গেল।দেখি,ডগি মশারীর ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে,আমার ঘুম ভাঙাবার জন্য গাল চাটছে।ঘুমটা ভেঙে,মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল সমীরণ বাবুর কথা ভেবে নয়।
তবে কেন ? স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ার জন্য।ডগি সত্যিই যদি মানুষের মতো কথা বলতে পারত , বেশ হত। ওর-ও তো কত কথা আছে বলার মতো। বলতে পারে না তাই।আমাদের মত ওর ইচ্ছে জাগে না কথা বলার,আপনারাই বলুন? বলতে তো চায় , আমরা বুঝি না। সে আমাদের অপারগতা,ওদের এতে দায় কোথায়?
ওরা কণ্ঠ জুড়ে, মানুষের ভাষা পাক,আমি মনে মনে বলে উঠি।
[ বি .দ্র – গতকাল ডগি মারা গেছে। ও আর কোনদিনও কারও সঙ্গে কোন কথা বলতে পারবে না।খুবই দুঃখের, আজ বড় বুকে বাজছে আমার।]