এই যে সারাটা সকাল আমার খাতার একটি খাঁ খাঁ পাতা
আর কলমের মধ্যে শুরু হ’ল রেষারেষি, তুমুল বাকবিতণ্ডা,
কে থামাবে এই হৈ হুজ্জত, এই চোখ রাঙানি, দাঁত-কটমটে
এই লড়াই? খাতার শাদা পাতা চায়, তার ধু ধু শূন্যতা শোভিত
হোক সবুজ লতাপতা, গোলাপ, চামেলি, লাল নীল পদ্ম,
আকাশের উদার নীলিমা, ঘাসবন, আর বাঁশবনের গাঢ় সবুজ
প্রিয়তমার দৃষ্টির কোমলতা, যা দিঘীসদৃশ, আর কোজাগরী
পূর্ণিমার ভরাট স্তব্ধতায়। অথচ আমার কলম আজ ভোরবেলা
শূন্য পাতার এই আবদারকে আজ এক বিন্দু আমল দিতেও
নারাজ। ঘাড় বাঁকিয়ে সে জেদ ধরেছে, খস্ খস্ করে লিখে
যাবে এমন কিছু পঙ্ক্তি যেগুলোয় থাকবে পাড়াগাঁ আর
শহর-ডোবানো হিংস্র খলখলে জল, মরা পশু, কলাগাছের
ভেলায় ভেসে-বেড়ানো, সর্বস্ব-হারানো মানুষ, দুঃখিনী
মায়ের বুকলগ্ন মৃত শিশু, বিপন্ন মানুষের উপচে-পড়া সকল
আশ্রয় কেন্দ্রের সাহায্য প্রার্থী ব্যাকুল, থরথর হাত,-
যেখানে ধর্ম, গোত্র, রাজনৈতিক আদর্শ বিচারের না-হক
বিলাসিতা গরহাজির; প্রলয়প্রতিম বিপর্যয়ে বিপন্ন মানুষ
শুধুই মানুষ। জেদী কলমের কথা শুনে আমার খাতার শূন্য পাতার
চোখ থেকে বেদনাশ্রু ঝরতে থাকে, যেন সে লখিন্দর-হারানো
বেহুলা, খাতার শূন্য পাতার বুকে ফুটতে থাকে কলমের আঁচড়।