Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

তুষার এবং রাত্রি

তুষার এবং রাত্রি দুজনই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুষারের মুখ ভাবলেশহীন, তবে রাত্রি একটু পরপর কেঁপে উঠছে। হাসি থামানর চেষ্টা করছে। সে বুঝতে পারছে কাজটা খুব অন্যায় হচ্ছে, তবু নিজেকে সামলাতে পারছে না। স্যারকে কী অদ্ভুত যে দেখাচ্ছে। মাথায় একটু চুলও নেই। আবার সামনের পার্টির দুটো দাঁত নেই। তাও সহ্য করা যেত, কিন্তু এখন তাদের পড়াবার সময় খুখুট করে তিনটে দাঁত পড়ে গেল। এক মুহূর্তের জন্যে চেহারাটা হয়ে গেল অন্য রকম।

নিশানাথ বাবু বললেন, হাসিস না।

রাত্রি বলল, হাসি এলে কী করব? তবে আপনাকে দেখে আসছি না, স্যার। অন্য একটা ব্যাপারে হাসছি।

কী ব্যাপার?

আছে একটা ব্যাপার। আমাদের স্কুলের একটা কাণ্ড।

রাত্রি খুকধুক করে আসছে। হাসি চাপার চেষ্টা করছে, পারছে না। তুষার বলল, ও কিন্তু আপনাকে দেখেই হাসছে, স্যার।

উহুঁ। আমি স্যারকে দেখে আসছি না। স্কুলের একটা ঘটনা মনে পড়েছে এই জন্যে হাসছি–হি হি হি হি।

রাত্রি যে মিথ্যা কথা বলছে নিশানাথ বাবু তা বুঝতে পারছেন। আগেও বুঝতে পারতেন। মিথ্যা কথা বললে রাত্রির গলা অন্য রকম হয়ে যায়। আজও তার গলা অন্য রকম হয়ে গেছে। তবে নিশানাথ বাবু গলার স্বরের। পরিবর্তন থেকে নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পদ্ধতিতে জানতে পারছেন রাত্রি মিথ্যা বলছে। এই পদ্ধতি তিনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না, কারণ পদ্ধতিটি যে কী, তিনি নিজেও জানেন না। যেমন আজকের কথাই ধরা যাক। ছেলেমেয়ে দুটি বসে আছে তাঁর সামনে। নিশানাথ বাবু কোনো এক জটিল প্রক্রিয়ায় ইচ্ছামতো এদের দুজনের মাথার ভেতর ঢুকে যেতে পারছেন। মাথার ভেতরটা অনেকটা কুয়োর মতো। গহীন কুয়ো। এত গহীন যে ভয় হয় এর বোধহয় কোনো শেষ নেই।

নিশানাথ বাবু জানেন না অন্যের মাথার ভেতর চলে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি কী। তিনি শুধু জানেন যে তিনি তা পারেন। সেই গহীন কূপের ভিতরে তিনি যখন নামেন তখন তাঁর রোমাঞ্চ বোধ হয়। কুয়োর দেয়ালগুলিতে থরে থরে কত কিছুই না সাজানো মানুষের স্মৃতি, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। কুয়োর গহীন থেকে উঠে আসে মানুষের চিন্তা, কল্পনা ও ভাবনা। একই সঙ্গে এক জন মানুষ কত কিছু নিয়েই না ভাবতে পারে।

মানুষের মাথার ভেতরে ঢুকতে পারার এই অদ্ভুত ক্ষমতার ব্যাপারটি নিশানাথ দু দিন আগে বুঝতে পেরেছেন। এই দুদিনে অনেকের মাথার ভেতর তিনি উঁকি দিয়েছেন। এ বাড়ির মালী, দারোয়ান, ড্রাইভার, রাস্তার ও-পাশে ভাই ভাই লণ্ড্রীর ছেলেটা, ডেল্টা ফার্মেসির রোগা লোক।

তিনি লক্ষ করেছেন একেক মানুষের জন্যে এই কুয়ো একেক রকম। কারও কারও কুয়ো আলোকিত। সেই সব ক্যােয় প্রবেশ করাও যেন এক গভীর আনন্দের ব্যাপার। এই যে শিশু দুটি তার সামনে বসে আছে তাদের মাথার ভেতরের কুয়ো দুটি আলোয় ঝলমল করছে। সেখানে কিছুক্ষণ থাকাও গভীর আনন্দের ব্যাপার।

আবার সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের কুয়োও আছে। সেখানে গাঢ় অন্ধকার। সেইসব কুয়োয় আলোর লেশমাত্র নেই। কুয়োয় ঢুকলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আতঙ্কে অস্থির হতে হয়। আবার কারো কারো কূয়োয় অল্প কিছু অংশ শুধু আলোকিত, বাকিটা গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা। এ সবের কী মানে? পুরোটাই তাঁর কল্পনা নয় তো?

রাত্রি বলল, স্যার, আপনার দাঁত পড়ে যাচ্ছে কেন?

নিশানাথ বাবু বললেন, বুঝতে পারছি না। বয়স হয়েছে, সেই জন্যেই বোধ হয় পড়ে যাচ্ছে।

তুষার বলল, স্যার আপনি কি জানেন বয়স হলে কেন দাঁত পড়ে যায়?

না, জানি না।

আমি জানি। বুড়ো লোকদের শক্ত খাবার দরকার নেই, সেই জন্যে দাঁত পড়ে যায়।

কে বলল?

আরু বলেছে।

ও আচ্ছা।

আরু সব কিছু জানে। নিশানাথ বাবু বললেন, ট্রানস্লেশন নিয়ে বস, তুষার। ট্রানস্লেশনে তুমি বড়োই কাঁচা।

রাত্রি বলল, ট্রানস্লেশনে আমি খুব পাকা, তাই না স্যার?

নিশানাথ বাবু কিছু বললেন না। তুষার তার ট্রানস্লেশন নিয়ে বসল। তার মুখ অপ্রসন্ন। ইংরেজি তার অসত্য লাগে। তার চেয়েও অসহ্য লাগে ট্রানস্লেশন। সে খাতা খুলল। বাড়ির কাজ করতে হবে–

যখন রুগী মারা যাচ্ছে তখন ডাক্তার এলেন।
বাড়ি থেকে যখ বের হলাম তখন বৃষ্টি নামল।
যখন ঘন্টা পড়ল তখন স্কুলে গেলাম।

তুষার পেন্সিল কামড়াচ্ছে।

নিশানাথ বাবু বললেন, পারছ না?

পারছি।

রাত্রি বলল, ও মুখে বলছে পারছি, আসলে কিন্তু ও পারছে না।

তুষার রাগী চোখে তাকাল। রাগ সামলে খাতার উপর ঝুঁকে পড়ল। আসলেই সে পারছে না। তার খুব কষ্ট হচ্ছে। নিশানাথ বাবু হঠাৎ লক্ষ করলেন তিনি তুষারের মাথার ভেতরে চলে এসেছেন। সেই গহীন কুয়োর মাঝামাঝি একটা জায়গায়। তুষারের কষ্টটা তিনি বুঝতে পারছেন। সে বাক্যগুলির ইংরেজি প্রতিশব্দ জানে, কিন্তু সাজাতে পারছে না। কোন শব্দটির পর কোন শব্দটি বসবে তা তার জানা নেই। আচ্ছা, তুষারের মাথার ভেতরে বসে কি তা ঠিক করে দেওয়া যায় না? এখান থেকে তাকে শেখানো কি সবচেয়ে সহজ নয়? চেষ্টা করে দেখবেন নাকি? এতে তুষারের কোনো ক্ষতি হবে না তো?

নিশানাথ বাবু চেষ্টা করলেন। মুহূর্তের মধ্যে তুষার তা ধরে ফেলল। তুষারের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সে খাতার উপর ঝুঁকে পড়ে একের পর এক ট্রানস্লেশন করে যাচ্ছে।

রাত্রি বলল, স্যার, ও কি পারছে?

হ্যাঁ পারছে।

নিশানাথ বাবুর খুশি হওয়া উচিত, কিন্তু তিনি খুশি হতে পারছেন না। এই জটিলতার কিছুই তিনি বুঝতে পারছেন না। কোনো এক জনের সঙ্গে আলাপ করলে কেমন হয়? কার সঙ্গে আলাপ করবেন? যাকেই তিনি বলবেন সে-ই তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। দীপা, দীপাকে কি বলা যায় না? সে কি হাসাহাসি করবে?

তুষার বলল, স্যার আমাকে আরো ট্রানস্লেশন দিন। আমার ট্রানস্লেশন করতে ভালো লাগছে।

নিশানাথ বাবু বললেন, যখন অন্ধকার হয় তখন পাখিরা আকাশে ওড়ে।

তুষার খাতায় ইংরেজিটা লিখছে। খাতা না দেখেও নিশানাথ বাবু বুঝতে পারলেন তুষার নির্ভুলভাবে ট্রানস্লেশন করবে। কারণ ইংরেজিটা সে ভাবছে, তিনি তাঁর ভাবনা বুঝতে পারছেন। এর মানে কী? হে ঈশ্বর, এর মানে কী? এর মানে কী? এর মানে কী?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *