রামায়ণ : কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড – সীতার শোকে রামের অনুতাপ
নীর অষ্টমাসের বরষাকালে শোষে।
মেঘ সঞ্চারিয়া চারি সাগরে বরিষে।।
বরিষার ধারাতে পৃথিবী ছাড়ে তাপ।
সীতারে স্মরিয়া রাম করেন সন্তাপ।।
আমার বচনে কর লক্ষ্মণ আরতি।
দুরন্ত বরিষা ঋতু, স্থির নহে মতি।।
সূর্য্য চন্দ্র দোঁহে বরিষার মেঘে ঢাকে।
আমি ত মরিব ভাই জানকীর শোকে।।
সজল জলদে শোভে বিদ্যুৎ যেমন।
জানকী আমার কোলে ছিলেন তেমন।।
চতুর্দ্দিকে জল স্থল সব এলাকার।
কেমনে হইবে কপিসৈন্য আগুসার।।
জলধর নিরন্তর বরিষে আকাশে।
জলমগ্না ধরণী যে ধরণীধর ভাসে।।
এ সময়ে সুগ্রীবের কহিব কি মতে।
কটক লইয়া চল সীতা উদ্ধারিতে।।
নদ নদী শুকাইবে, শুষ্ক হবে পথ।
তবে সে হইবে মম সিদ্ধ মনোরথ।।
তত দিনে সীতা হবে অস্থিচর্ম্মসার।
কি জানি ত্যজে বা প্রাণ বিরহে আমার।।
একাকিনী অনাথিনী শত্রুমধ্যে বাস।
কেমনে বাঁচিবে সীতা এই কয় মাস।।
আমা বিনা জানকীর আর নাহি মন।
এই ক্রোধে পাছে তারে বধে দশানন।।
কান্দিতে কান্দিতে সীতা মরিবে নিশ্চিত।
কি করিবে ভাই তুমি, কি করিবে মিত।।
পক্ষী হৈয়া উড়ে যাই সাগরের পার।
অভাগী সীতার দেখি শয়ন আহার।।
কান্দেন সর্ব্বদা রাম করিয়া হুতাশ।
রামের ক্রন্দন রচে কবি কৃত্তিবাস।।