রামায়ণ : কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড – বালি কর্ত্তৃক শ্রীরামের র্ভৎসনা
ভূমে পড়ি বালি রাজা করে ছটফট।
ধাইয়া গেলেন রাম তাহার নিকট।।
মৃগ মারি ব্যাধ যেন ধাইল উদ্দেশে।
ধাইয়া গেলেন রাম সে বালির পাশে।।
রক্তনেত্রে শ্রীরামের পানে চাহি বালি।
দন্ত কড়মড় করে, দেয় গালাগালি।।
নিষেধিল তারা মোরে বিবিধ বিধানে।
করিলাম বিশ্বাস চণ্ডালে সাধুজ্ঞানে।।
রাজকুলে জন্মিয়াছ, নাহি ধর্ম্মজ্ঞান।
আমারে মারিলে রাম, এ কোন্ বিধান।।
শজারু গণ্ডার কূর্ম্ম, গোধিকা শল্লকী।
ভক্ষণীয় জন্তু পঞ্চ, এই পঞ্চনখী।।
তার মধ্যে কেহ নাহি শুন রঘুবীর।
আমার শোণিত মাংস ভক্ষ্যের বাহির।।
আমার চর্ম্মেতে নাহি হইবে আসন।
মৃগ নাহি শাখামৃগে কোন্ প্রয়োজন।।
নির্দ্দোষী বানর আমি মার কোন্ কার্য্যে।
এই হেতু অধিকার না পাইলে রাজ্যে।।
কোন্ দেশ লুটিয়া দিলাম কারে ক্লেশ।
কোন দোষে করিলে আমার আয়ুঃ শেষ।।
আর বংশ জন্ম নহে, জন্ম রঘুবংশে।
ধার্ম্মিক বলিয়া তোমা সকলে প্রশংসে।।
এ কোন্ ধর্ম্মের কর্ম্ম করিলে না জানি।
অপরাধ বিনা বিনাশিলে মম প্রাণী।।
সবে বলে, রামচন্দ্র দয়ার নিবাস।
যত দয়া তোমার তা আমাতে প্রকাশ।।
তপস্বীর ছলে রাম ভ্রম এই বনে।
কাহার বধিব প্রাণ, সদা ভাব মনে।।
সর্ব্বলোকে বলে, রাম ধর্ম্ম-অবতার।
ভাল দেখাইলে রাম সেই ব্যবহার।।
ভাই ভাই দ্বন্দ্ব করি দেখহ কৌতুক।
আমারে মারিয়া রাম কি পাইলে সুখ।।
কোথাও না দেখি হেন, কখন না শুনি।
একের সহিত যুদ্ধে অন্যে হয় খুনি।।
সম্মুখি-সম্মুখি যদি মারিতে হে বাণ।
একটা চপেটাঘাতে বধিলাম প্রাণ।।
সম্মুখে সংগ্রাম বুঝি বুঝিলা কঠোর।
তেঁই রাম আমারে বধিলে হয়ে চোর।।
জ্ঞাত আছ আমারে, যেমন আমি বীর।
আমার সহিত যুদ্ধে হইতে কি স্থির।।
সুগ্রীব আমার বাদী, সাধি তার বাদ।
অবিবাদে তুমি কেন করিলে প্রমাদ।।
কেমনে দেখাবে মুখ সাধুর সমাজে।
বিনা দোষে কপটেতে বধি বালিরাজে।।
দশরথ রাজা, তিনি ধর্ম্ম-অবতার।
তাঁর পুত্র হইয়াছ কুলের অঙ্গার।।
মহারাজা দশরথ ধর্ম্মে রত মন।
তাঁর পুত্র তুমি না হইবে কদাচন।।
ধর্ম্মহীন মান্যে ছিলে বাপের গৌরবে।
মিলিলে সাধিতে ইষ্ট পাপিষ্ঠ সুগ্রীবে।।
পাপী পাপী মিলনেতে পাপের মন্ত্রণা।
নতুবা আমার কেন হইবে যন্ত্রণা।।
বানর হইতে কার্য্য করিবে উদ্ধার।
তবে কেন আমারে না দিলে এই ভার।।
এক লাফে পারাবার হইতাম পার।
এক দিনে করিতাম সীতার উদ্ধার।।
রাজপুত্র তুমি রাম, নাহি বিবেচনা।
কোন্ ছার মন্ত্রী সহ করিলে মন্ত্রণা।।
করিলাম কত শত বীরের সংহার।
আমার সম্মুখেতে রাবণ কোন্ ছার।।
রাবণ আসিয়াছিল রণ করিবারে।
লেজে বান্ধি ডুবাইনু চারি পারাবারে।।
লেজের বন্ধন তার কিষ্কিন্ধ্যায় খসে।
পায়ে পড়ি আমার সে উঠিল আকাশে।।
ত্রিলোক বিজয়ী শিবভক্ত দশগ্রীব।
কি করিবে তাহার নিকটে এ সুগ্রীব।।
যদি হয় হইবে, বিলম্ব বহুতর।
মধ্যে এক ব্যবধান প্রবল সাগর।।
যদ্যপি আমারে রাম দিতে এই ভার।
এক দিনে করিতাম সীতার উদ্ধার।।
আনিতাম রাবণেরে ধরিয়া গলায়।
সেবক হইয়া রাম সেবিত তোমায়।।
এ নহে বিচিত্র ভার, আমি বালিরাজ।
আমারে না জানে কোন বীরের সমাজ।।
বিস্তর ভৎসিল রামে রণস্থলে বালি।
কৃত্তিবাস বলে কেন রামে দেহ গালি।।