Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল || Sunil Gangopadhyay » Page 9

কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল || Sunil Gangopadhyay

সন্তু আর জোজো বাড়িতে খবর দিয়ে, মামুনকে নিয়ে চলে এল বালিগঞ্জ স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে ক্যানিং।

একবার সুন্দরবনের নদীতে একটা বিদেশি জাহাজ এসে ভাসছিল, সেটা ছিল একেবারে খালি। সেই খালি জাহাজের রহস্য ভেদ করার জন্য সন্তু কাকাবাবুর সঙ্গে গিয়েছিল সুন্দরবন অঞ্চলে। তাই ওদিকটা সে অনেকটা চেনে।

ক্যানিং থেকে অনেক দিকে লঞ্চ যায়। ছোট মোল্লাখালির লঞ্চ পাওয়া গেল একটু বাদেই।

মামুন বলল, ছোট মোল্লাখালিতে নেমে একটা নৌকো ভাড়া করতে হবে। সেখান থেকে যেতে হবে একটা দ্বীপে। সে দ্বীপে অবশ্য নামা চলবে না, ওরা তিনজন খালি হাতে গেলে কিছুই করতে পারবে না, শুধু পাশ দিয়ে ঘুরে চিনে রাখা হবে।

বাড়িতে খবর দিতে যাওয়ার সময় সন্তু আশা করেছিল, তার মধ্যে কাকাবাবু ফিরে আসবেন। কিন্তু আসেননি। টেলিফোনে রফিকুল আলমকেও পাওয়া যাচ্ছে না। দুজনেই কোথায় গেলেন?

প্যাসেঞ্জার লঞ্চ মাঝে-মাঝেই থামে। প্রচণ্ড ভিড়। ওরা তিনজন ওপরে সারেং-এর ঘরের সামনের দিকটায় কোনওরকমে বসার জায়গা পেয়েছে।

বিকেল প্রায় শেষ হতে চলেছে। ছোট মোল্লাখালি পৌঁছতে অনেকটা সময় লাগবে, আজ রাত্তিরে আর ফেরাই হবে না, ওরা বাড়িতে বলে এসেছে সেরকম। কাকাবাবুর সঙ্গে যাচ্ছে বললেই বাড়ির কেউ আপত্তি করে না।

আকাশ মেঘলা, হাওয়া দিচ্ছে ফিনফিনে। খোলা জায়গায় বসে আরামই লাগছে বেশ। লঞ্চের আওয়াজে ভাল করে কারও কথা শোনা যায় না, এর মধ্যেই চলেছে মামুন আর জোজোর গল্প বলার প্রতিযোগিতা।

মামুন ডিটেকটিভগিরি করতে করতে অনেক রোমহর্ষক ঘটনার মধ্যে গিয়ে পড়েছে। সেইসব এক-একটা ঘটনা বলছে খুব জমিয়ে। জোজোই বা ছাড়বে কেন?

মামুন খালি হাতে, ক্যারাটের প্যাঁচ মেরে তিনটে ডাকাতকে জব্দ করেছে। রাঙামাটিতে। তা শুনে জোজো বলল, আমি ক্যারাটে অত ভাল জানি না, তার দরকার হয় না, একবার আরিজোনার মরুভূমিতে একদল ডাকাতের পাল্লায় পড়েছিলাম, তারা দশ-বারোজন, তাদের মধ্যে দুজন মাত্র প্রাণে বেঁচে ছিল, আর বাকিরা..আমার সঙ্গে ছিল ডন পেড্রো, নিশ্চয়ই নাম শুনেছেন, সে ল্যাসো ছোড়ায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান, ল্যাসো হচ্ছে একরকম দড়ির ফাঁদ, ওটা আমিও ভাল জানি, আমরা দুজনে মিলে…

জোজোর সব গল্পই দূর বিদেশের।

সন্তু এরকম গল্প বলতে পারে না, সে চুপ করে শুধু শোনে আর মাঝে-মাঝে হাসে।

এই লঞ্চে অনেকরকম ফেরিওয়ালা ওঠে। কেউ ঝালমুড়ি, কেউ শোনপাপড়ি, কেউ চা বিক্রি করে। সেরকম কোনও ফেরিওয়ালা এলেই জোজোর গল্প থেমে যায়, এইসব খাওয়ায় খানিকক্ষণ সময় যায়।

ওদের কাছেই বসে আছে দুজন বন্দুকধারী পুলিশ। ওরা লঞ্চ পাহারা দিচ্ছে,

ছুটিতে বাড়ি ফিরছে, তা বোঝার উপায় নেই। প্রথম থেকেই ঘুমে ঢুলছে, মাঝে-মাঝে নিজেদের মাথা ঠুকে যাচ্ছে।

মামুন একবার বলল, এই পুলিশ দুজনের সাহায্য নেওয়া যায় না? তা হলে আমরা সেই দ্বীপটায় নামতেও পারি।

সন্তু বলল, ওরা আমাদের কথা বিশ্বাস করবে কেন? অফিসারদের হুকুম ছাড়া ওরা কিছুই করে না।

জোজো বলল, আগে তো ছোট মোল্লাখালি পৌঁছনো যাক। তখনও যদি পুলিশ দুটো থাকে, ওদের আমি ঠিক ভজিয়ে ফেলব!

মামুন বলল, আমার খালি ভয় হচ্ছে, দেরি না হয়ে যায়! বাচ্চাগুলোকে একবার মুম্বই চালান করে দিলে, তারপর কি আর উদ্ধার করা যাবে?

জোজো বলল, সেরকম দেখলে আমরাও মুম্বই যাব। মুম্বই শহরের পুলিশ কমিশনার আমার ছোটকাকার খুব বন্ধু। আমাকে দারুণ ভালবাসেন। তাঁকে বললেই সব সাহায্য করবেন!

মামুন বলল, তা হলে তো খুব ভাল হয়। আমি কখনও মুম্বই যাইনি, একবার যাওয়ার ইচ্ছা আছে। আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন কমিশনার সাহেবের?

জোজো বলল, অবশ্যই। একটা চিঠি লিখে দেব, আপনাকে হোটেলে উঠতে হবে না, ওঁর বাড়িতেই থাকবেন।

নদীতে অনেক নৌকো। লঞ্চটা কাছাকাছি এলে নৌকোগুলো খুব দুলতে থাকে। আবার পাশ দিয়ে অন্য লঞ্চ গেলে এই লঞ্চটাও দোলে।

আর একখানা লম্বা গল্প শেষ কোরে জোজো বলল, সন্তু, ঝালমুড়িওয়ালা কোথায় গেল রে? স্বাদটা খুব ভাল ছিল, দ্যাখ না, আর একবার পাওয়া যায় কি না।

সন্তু উঠে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে লোকটাকে পেয়ে তিন ঠোঙা ঝালমুড়ি কিনে নিয়ে এল।

সেগুলো খেয়ে আবার জোজোর তেষ্টা পেয়ে গেল।

এখানে খাবার জল নেই। সোড়া-লেমনেডও বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো ভেজাল হতে পারে।

একটা জায়গায় লঞ্চ থামতে পাওয়া গেল ডাব। বেশ শস্তা। জোজো খেল দুটো। তার মধ্যে পাতলা শাঁস পেয়ে সে আরও খুশি।

সে সন্তুকে বলল, ডাবের সঙ্গে শোনপাপড়ি দিয়ে খেতে দারুণ মজা লাগে। দ্যাখ না, শোনপাপড়িওয়ালাটা কোথায় গেল!

জোজোর সঙ্গে কোথাও যেতে হলে অনবরত খেতে হয়।

মামুন বলল, তোমরা একবার ঢাকায় এসো, খুব ভাল শোনপাপড়ি খাওয়াব। এগুলো তেমন ভাল না!

সন্তু খাওয়া থামিয়ে পাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

ডান পাশ দিয়ে আর একটা লঞ্চ যাচ্ছে। তার ওপরে, সামনের দিকে দাঁড়িয়ে আছে একজন বেশ লম্বা চেহারার পুরুষ, সাদা প্যান্ট ও সাদা শার্ট পরা, মাথার চুল উড়ছে হাওয়ায়।

সন্তু বলল, ওই যে, ওই লোকটি..আলমদা না?

জোজো এক পলক তাকিয়েই বলল, হ্যাঁ, আলমদাই তো?

সঙ্গে সঙ্গে ওরা লোকদের ঠেলেঠুলে রেলিংয়ের কাছে এসে চিৎকার করে ডাকতে লাগল, আলমদা! আলমদা!

পাশাপাশি দুটো লঞ্চের আওয়াজে কিছুই শোনা যায় না। চিৎকারের সঙ্গে-সঙ্গে সন্তু আর জোজো হাত নাড়ছে, তবু সেই লোকটি তাকাচ্ছে না এদিকে।

পাশের লঞ্চটির গতি বেশি, এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।

সন্তু এই লঞ্চের সারেং-এর কাছে এসে বলল, ওই লঞ্চটা থামান। আমাদের বিশেষ দরকার।

সারেং বললেন, ওটা তো পুলিশের লঞ্চ। আমি থামাব কী করে?

জোজো বলল, ভোঁ দিন। জোরে জোরে কয়েকবার ভোঁ দিন! সারেংসাহেব দুদিকে মাথা নাড়লেন।

সন্তু আর জোজো কাকুতি-মিনতি করতে লাগল, সারেংসাহেব কিছুতেই রাজি হলেন না।

অন্য লঞ্চটা এগিয়ে যাচ্ছে। সন্তু দারুণ হতাশ হয়ে গেল। এত কাছে পেয়েও রফিকুল আলমকে ধরা যাবে? কয়েক মুহূর্ত পরে সে একটা সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড করে ফেলল। ঘুমন্ত পুলিশ দুজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সে একজনের বন্দুক কেড়ে নিল। সেটা বাগিয়ে ধরে অন্য পুলিশটিকে বলল, আপনার বন্দুকটা ফেলে দিন। জোজো, ওটা তুলে নে।

সমস্ত যাত্রী ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল।

সন্তু চেঁচিয়ে বলল, কেউ এক পা এগোবেন না। কারও কোনও ভয় নেই।

এর পর সে বন্দুকটা আকাশের দিকে তুলে ফায়ার করল দুবার।

এখন সারেংসাহেবও ভোঁ বাজাতে লাগলেন ঘন ঘন।

সন্তু অন্য বন্দুকটা হাতে তুলে নিয়েছে।

পুলিশের লঞ্চটা বন্দুকের গুলির শব্দ শুনে থেমে গেছে।

সন্তু নিজেদের সারেংকে হুকুম দিল, আপনি ওই লঞ্চটার গায়ে গিয়ে লাগান!

এবার কাছাকাছি আসতেই জোজো আর সে একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, আলমদা!

রফিকুল আলম দারুণ অবাক হয়ে বললেন, সন্ত, জোজো, তোমরা এখানে? : কে গুলি চালাল?

সন্তু বলল, সব বলছি। আমরা আপনার লঞ্চে যাচ্ছি!

গায়ে গায়ে লাগতেই ওরা মামুনকে সঙ্গে নিয়ে লাফিয়ে চলে গেল অন্য লঞ্চে। যাওয়ার আগে বন্দুক ফেরত দিয়ে পুলিশ দুজনকে বলল, ধন্যবাদ!

দুটো লঞ্চ আবার আলাদা হয়ে গেল।

সন্তু প্রথমেই জিজ্ঞেস করল, আলমদা, কাকাবাবু কোথায়? আপনার সঙ্গে আছে?

রফিকুল বললেন, না তো! আমি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম। কেন, কাকাবাবুর কী হয়েছে?

সন্তু বলল, আপনার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি? কাল রাত্তির থেকে কাকাবাবু বাড়ি ফেরেননি। কিছু বলেও যাননি।

রফিকুল চিন্তিতভাবে বললেন, কেউ ধরে-টরে নিয়ে গেল নাকি? তোমাকেও কিছু বলে যাননি যখন…আমি দিনতিনেক কোনও খবর নিতে পারিনি…তবে, জানো তো সন্তু, একটা বেশ দারুণ ব্যাপার হয়েছে, সবকটা ব্যাঙ্ক-ডাকাত একসঙ্গে ধরা পড়েছে। এইদিকে ওদের আস্তানা। পর পর তিনটে ডাকাতি করে একটা দ্বীপে ঘাপটি মেরে ছিল। আমরা ধরতে গেলে গুলিও চালিয়েছে। তাতে ওদেরই একটা মরেছে, আর সাতটাকে বেঁধে এনেছি। টাকাও উদ্ধার হয়েছে। অনেক। চলো, নীচে গিয়ে ডাকাতগুলোকে দেখবে?

সন্তু বলল, আলমদা, এই হচ্ছে মামুনভাই। বাংলাদেশের ডিটেকটিভ। বাংলাদেশ থেকে চুরি করে আনা বাচ্চাগুলোকে এখানে একটা দ্বীপে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, ইনি সে দ্বীপটা চেনেন। আমরা সেখানেই যাচ্ছিলাম।

রফিকুল ভুরু কুঁচকে মামুনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে কোনও দ্বীপে রেখেছে? আপনি তা জানলেন কী করে?

মামুন বলল, আমি বাংলাদেশ থেকে ওদের দলটাকে ফলো করছি। এখানে একটা নৌকোয় করে দ্বীপটা দেখেও এসেছি। কিন্তু আমার একার পক্ষে তো কিছু করা সম্ভব নয়।

রফিকুল বললেন, ঠিক আছে। দুরাত আমার ভাল ঘুম হয়নি। এখন বসিরহাট গিয়ে ডাকাতগুলোকে ওখানকার জেলে রাখব। আজকের রাতটা বিশ্রাম নিতে হবে। কাল সকালে দেখা যাবে, আপনি কোন দ্বীপের কথা বলছেন।

মামুন মিনমিন করে বলল, কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে…যদি দেরি হয়ে যায়? যদি মুম্বই চালান দেয়?

সন্তু বলল, আলমদা, সত্যি যদি দেরি হয়ে যায়? কাকাবাবু কোথায় গেছেন। জানি না। কিন্তু আমরা যদি বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করতে পারি, তিনি কত খুশি হবেন! জানেন তো, এদের নিয়ে কাকাবাবু কত চিন্তা করছেন?

রফিকুল একটা হাই তুলে বললেন, সত্যি কথা বলতে কী, প্রাইভেট ডিটেকটিভদের ওপর আমি ঠিক আস্থা রাখতে পারি না। তবে সন্তু, তুমি যখন বলছ, তখন আজ রাতেই চেষ্টা করে দেখা যাক। বিশ্রাম পরে হবে, বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করতে পারলে কাকাবাবুকে খুশি করা তো যাবেই, আরও একটা বড় কাজ হবে, এ রকম ভাবে শিশু চালান দেওয়াই থামানো যাবে।

এ লঞ্চের সারেংকে তিনি নির্দেশ দিলেন, চলো, ছোট মোল্লাখালি!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress