Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল || Sunil Gangopadhyay » Page 5

কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল || Sunil Gangopadhyay

অমূল্য নামে একটা ছেলে, তার ডাকনাম রঞ্জু, একবার রেল-ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। কাকাবাবু সেই সময় সেই ট্রেনের কামরায় ছিলেন। ছেলেটিকে ভাল পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাকাবাবু পুলিশকে বলে টলে তাকে ছাড়িয়ে আনেন, তাকে একটা চাকরি জুটিয়ে দেন। কিন্তু সে সহজে ভাল হতে চায় না। কিছু একটা চুরি-টুরি করে ফেলে, তাতে তার চাকরি যায়। এর মধ্যে তিন-চারবার এ রকম হয়েছে। প্রতিবার চাকরি গেলেই সে কাকাবাবুর কাছে এসে পায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষমা চায়।

ছেলেটির ওপর কাকাবাবুর মায়া পড়ে গেছে, তিনি ওকে ক্ষমা করে আবার ঢুকিয়ে দেন অন্য চাকরিতে।

আজ কাকাবাবু তাকে টেলিফোনে ডেকে এনেছেন।

রঞ্জু কাকাবাবুর কাছে এসে কক্ষনও চেয়ারে বা সোফায় বসে না। মাটিতে বসে হাত জোড় করে থাকে। কাকাবাবু অনেক বকেবকেও তার এই স্বভাব ছাড়াতে পারেননি।

রঞ্জুর বয়েস ছাব্বিশ-সাতাশ বছর, বেশ লম্বা, পেটানো চেহারা, খাকি প্যান্টের ওপর একটা কালো ডোরাকাটা জামা পরা। মাথার চুল ঘাড় ছাড়িয়ে গেছে। তাকে চা খেতে দেওয়া হয়েছে, সে দুহাতে কাপটা ধরে চুমুক দিচ্ছে।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ওহে রঞ্জু, এবারের চাকরিটা তোমার আর কদিন টিকবে?

রঞ্জু বলল, এবারে টিকে যাবে। আর কোনও গোলমাল হবে না সার।

কাকাবাবু বললেন, যা মাইনে পাও, তাতে সংসার খরচ চলে যায়?

আজ্ঞে হ্যাঁ সার। মোটামুটি চলে যায়। বাড়িতে বুড়ো বাবা-মা আছেন, তাঁদের জন্যই তো চাকরি করা।

আগের চাকরিটা তো আরও ভাল ছিল। মাইনে বেশি ছিল। তবু সেখানেও চুরি করতে গেলে কেন?

ওই যে বলে না সার, অভাব যায় না মলে, স্বভাব যায় না ধুলে! ছেলেবেলা থেকেই বাজে লোকদের সঙ্গে মিশে ওই স্বভাব হয়ে গেছে। মাঝে-মাঝে হাত সুলসুল করে। তবে, এবারে আমি সামলে নিয়েছি সার, নিজের হাতকে নিজেই ধমকাই!

চুরি ডাকাতি করলে যে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়তে হয়, শাস্তি পেতে হয়, এটা কেন ভাববা না?

কী যে বলেন সার! ওকথা যদি সবাই ভাবত, তা হলে তো গোটা পৃথিবী থেকে চুরি-ডাকাতি উঠেই যেত। জেলখানা কিংবা পুলিশ রাখার দরকারই হত না।

তা ঠিক। রেল-ডাকাতির সময় তোমার যেসব সঙ্গী-সাথি ছিল, তাদের কোনও খবর রাখো?

দুজন জেলে পচছে। একজন পুলিশের গুলি খেয়ে পটল তুলেছে। আর কয়েকজন এখনও ছুটকো-ছাটকা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

তাদের সঙ্গে তোমার দেখা হয়? আমি দেখা করতে চাই না, তারাই আমার পেছনে ঘুরঘুর করে। আমায় কু-মতলব দেয়। বলে কী, রঞ্জু, তুই ওইসব বাঁধা মাইনের চাকরি কতদিন চালাবি? আমাদের দলে ফিরে আয়। একটা বড় দাঁও মারতে পারলে একসঙ্গে অনেক টাকা হাতে আসবে, আরামসে থাকতে পারবি! আমি তাদের বলি, ভাগ, ভাগ, আমি আর ওসব লাইনে যেতে চাই না। পুলিশের পিটুনি খেলেই সব আরাম ঘুচে যাবে। তা ছাড়া লুটের জিনিসের ভাগ নিয়ে ঝগড়া, খুনোখুনি পর্যন্ত হয়। আমি এখন বেশ আছি।

তোমার ওই সঙ্গী-সাথিদের দিয়ে আমি একটা কাজ করাতে চাই। একটা বাচ্চা ছেলেকে চুরি করে আনতে হবে।

রঞ্জুর মুখের হাঁটা অনেক বড় হয়ে গেল।

চোখ গোল গোল করে বলল, আমি কি নিজের কানে ভুল শুনছি? আপনি কী বললেন সার? একটা ছেলেকে চুরি করে ধরে আনতে হবে?

কাকাবাবু হেসে বললেন, ঠিকই শুনেছ। একটা ছেলেকে আমার চাই। বেশি, এ কাজের জন্য আমি হাজার দু-এক টাকা দেব।

রঞ্জু বলল, আপনি যখন বলছেন, টাকার কোনও কোশ্চেনই নেই। আপনার জন্য জান দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আপনি ছেলে চুরি করতে বলছেন কেন সার?

তা তোমাদের এখন জানার দরকার নেই। কাজটা কি খুব শক্ত?

মোটেই না, মোটেই না। একটা বাচ্চাকে তুলে আনা আর এমন কী ব্যাপার। তারপরে লুকিয়ে রাখাটাই শক্ত। বাচ্চারা চ্যাঁ-ভ্যাঁ করে কাঁদে, পাড়ার লোক জেনে যায়, তারাই পুলিশে খবর দেয়, তখন জায়গা পালটাতে হয়। অত হ্যাপা পোষায়

বলেই ও লাইনে বিশেষ কেউ যায় না।

তোমাদের সে ঝামেলা পোহাতে হবে না। বারাসত হাসপাতালের কাছে একটা ভাতের হোটেল আছে। সেখানে কাজ করে ময়না দাস। কাছেই তার বাড়ি। সেই ময়নার ছেলে কার্তিককে তুলে আনতে হবে। আমার এক ডাক্তার বন্ধুর নার্সিং হোম আছে বেহালায়, ছেলেটাকে সেখানে পৌঁছে দেবে। তারপর আর তোমাদের কোনও দায়িত্ব নেই। কতদিন সময় লাগবে?

অন্তত দুটো দিন সময় দিন সার।

দুদিনও লাগল না। পরদিন বিকেলেই রঞ্জু এসে বলল, কাজ হয়ে গেছে। সার। নো গণ্ডগোল। বাচ্চাটাকে নার্সিং হোমে পৌঁছে দিয়েছি।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কান্নাকাটি করেছে নাকি?

রজ্জু বলল, ঘুমের ওষুধ মেশানো লজেঞ্চুস খাওয়ানো হয়েছে তো, এখনও ঘণ্টা তিনেক ঘুমোবে। তারপর খানিকটা তো চেল্লাবেই। সে ডাক্তারবাবু বুঝবেন।

কাকাবাবু বললেন, বেশ। তোমার বন্ধুদের বোলো, কোনও খারাপ উদ্দেশে ছেলেটাকে চুরি করে আনা হয়নি। ভাল কাজের জন্যই। আর ওইসব বন্ধুরা যদি চুরি-ডাকাতি ছেড়ে সৎপথে আসতে চায়, আমি তাদের চাকরি জোগাড় করে দিতে পারি। এখন তোমার শুধু আর একটা ছোট কাজ বাকি আছে। আমি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি, এই চিঠিটা ময়না দাসের বাড়িতে গোপনে ফেলে দিয়ে আসবে।

কাকাবাবু লিখলেন :

কার্তিক নামে একটি বাচ্চা ছেলে আমার হেফাজতে আছে। সে নিজের নাম আর বাবা-মায়ের নাম বলতে পারে, কিন্তু ঠিকানা বলতে পারে না। যদি আপনাদের সন্তান হয়, উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারেন। আমার ঠিকানা লেখা আছে প্যাডের ওপরে। সকাল নটা থেকে বারোটা পর্যন্ত সাক্ষাতের সময়। ছেলেটি ভাল আছে।

ইতি
রাজা রায়চৌধুরী

চিঠিখানা নিয়ে রঞ্জু চলে যাওয়ার পর কাকাবাবু মনের আনন্দে গান ধরলেন গুনগুনিয়ে।

সন্তু বাড়িতে নেই। এই সময় সে সাঁতার কাটতে যায়।

বেহালার নার্সিং হোমে ফোন করে ডাক্তার বন্ধুটির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেন কাকাবাবু।

ডাক্তার নরেন সেন বললেন, ছেলেটিকে আমার কাছে পাঠিয়ে ভালই করেছ। রাজা। এ তো দেখছি হুপিং কাশিতে ভুগছে। ঘুমের মধ্যেও কাশছে। কদিন চিকিৎসা করে সারিয়ে দেব।

কাকাবাবু বললেন, দেখো, যেন পালিয়ে না যায়। আমি তোমার নার্সিং হোমে যাব না, কারণ আমাকে ওরা ফলো করতে পারে। তুমি ওর যত্ন করবে, জানি!

এর পর শুধু অপেক্ষা। চিঠিটা পাওয়ার পর ময়না দাস আর তার স্বামী কী করে, সেটা দেখতে হবে।

পরদিন সকালে তারা এল না।

রফিকুল ফোনে একটা খারাপ খবর দিলেন।

গঙ্গার ধারে ট্রেন লাইনে কনস্টেবল বিমল দুবের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

রফিকুল বললেন, দেখে মনে হবে, ট্রেনে কাটা পড়েছে। কিন্তু অন্য জায়গায় খুন করে ট্রেন লাইনে ফেলে দেওয়াও হতে পারে। সেটাই বেশি সম্ভব। তবে ট্রেনের চাকায় লাশটা এমন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে যে আর কিছু বোঝার উপায় নেই।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, থানা থেকে ও বাইরে গেল কী করে?

রফিকুল বললেন, আপনি তো দেখলেন, ওকে হাজতে আটকে রাখতে বলেছিলাম! অন্য পুলিশদের সঙ্গে চেনাশোনা, কিছু একটা ছুতো করে বেরিয়ে পড়েছিল নিশ্চয়ই।

কাকাবাবু কয়েক মুহূর্ত থেকে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, লোকটা বড় বেশি লোভী ছিল, ঘুষের বাকি টাকাটা আদায় করবার জন্যই বেরিয়েছিল। বেঘোরে প্রাণটা দিল। বুঝতেই পারছ, একটা খুব শক্তিশালী চক্র কাজ করছে। সেই চক্রের একটামাত্র সূত্র ওই ময়না দাস নামে মেয়েটি। তাও সে কতখানি জড়িত, আমরা এখনও জানি না। ওই ভাতের হোটেল আর ময়না দাসের ওপর নজর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

রফিকুল বললেন, তা অবশ্যই করব। তবে মুশকিল হচ্ছে, এই কেসটায় আমি তেমন সময় দিতে পারছি না। আমাকে ব্যাঙ্ক-ডাকাতদের নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। কালও আবার সোনারপুরে একটা ব্যাঙ্ক-ডাকাতি হয়েছে। খবরের কাগজে খুব লেখালেখি হচ্ছে এই নিয়ে। আমি একটাকে ধরেছি, বাকি পুরো গ্যাঙটাকে জালে ফেলতে না পারলে আমার শান্তি নেই।

কাকাবাবু বললেন, তুমি থাকো তোমার ব্যাঙ্ক-ডাকাতদের নিয়ে। খুনি আর ডাকাতদের ধরা পুলিশের কাজ, সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না আমি। বাচ্চাগুলোকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়, আমি সেই চিন্তা করছি।

রফিকুল বললেন, কাকাবাবু, আমাকে ভুল বুঝবেন না। বাচ্চাগুলোকে তো উদ্ধার করতেই হবে, এই ব্যাঙ্ক-ডাকাতগুলোও বড় জ্বালাচ্ছে। আপনাকে সব ব্যাপারে সাহায্য করতে আমি সব সময় রাজি আছি। বরুণ মজুমদার নামে একজন ইয়াং অফিসারকে আপনার কাছে পাঠাব? সে সবসময় আপনার সঙ্গে থাকতে পারবে।

কাকাবাবু বললেন, আপাতত তার দরকার নেই।

ফোন রেখে তিনি খবরের কাগজ পড়তে লাগলেন। সোনারপুরে ব্যাঙ্ক-ডাকাতির খবর প্রথম পাতাতেই বড় করে ছাপা হয়েছে। অন্য কোনও পৃষ্ঠায় তন্নতন্ন করে খুঁজেও তিনি বাচ্চাগুলির কোনও খবর দেখতে পেলেন না। সে খবর চাপা পড়ে গেছে।

বিরক্তিতে তাঁর ভুরু কুঁচকে গেল।

কতগুলো বাচ্চাছেলের জীবনের চেয়ে কি টাকার দাম বেশি?

বাচ্চাগুলোকে যদি মুম্বই পর্যন্ত পাচার করে দেয়, তা হলে আর তাদের হদিস করা মুশকিল হবে। সেখান থেকে তাদের তুলে দেওয়া হবে কোনও আরব দেশের জাহাজে।

কাকাবাবু মনে মনে ঠিক করলেন, দরকার হলে তিনি আরব দেশেও যাবেন। উটের দৌড়ের নিষ্ঠুর খেলাটাই বন্ধ করে দিতে হবে। চিঠি লিখতে হবে রাষ্ট্রসঙ্ঘে।

এক সময় তাঁর চোখ বুজে এল। তার মধ্যে তিনি দেখতে পেলেন, মরুভূমির মধ্যে উটের দৌড় চলছে, প্রত্যেকটা উটের ওপর এক-একটা বাচ্চা ছেলে, তারা প্রাণের ভয়ে চিৎকার করছে। একটা বাচ্চা উটের পিঠ থেকে ছিটকে পড়ে গেল, মাটিতে পড়ার আগেই কাকাবাবু তাকে লুফে নিলেন। তাকে আদর করতে করতে তিনি বলতে লাগলেন, ভয় নেই, আর ভয় নেই। তাঁর মুখে বাংলা কথা শুনে বাচ্চাটি কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে চেয়ে রইল।

বিকেলবেলা সিঁড়ি দিয়ে দুপদাপ করে শব্দ করে ঘরে এসে চুকল দেবলীনা।

ঢুকেই জিজ্ঞেস করল, সন্তু কোথায়?

কাকাবাবু বললেন, সন্তু আজ কলেজে গেছে।

দেবলীনা বলল, পৌনে পাঁচটা বাজল, এখনও ফেরেনি কেন? নিশ্চয়ই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে।

কাকাবাবু বললেন, সেটা খারাপ কিছু নয়। কলেজে পড়বে আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবে না, তা কি হয়? তুমিও যখন কলেজে যাবে—

দেবলীনা বলল, আমি মোটেই কলেজে পড়ব না। আমি ডাক্তারি পড়ব!

কাকাবাবু হেসে বললেন, সেটাও তো কলেজ। ডাক্তারির ছাত্র-ছাত্রীরা বুঝি আড্ডা দেয় না?

একটা চেয়ার টেনে কাকাবাবুর ঠিক সামনে মুখোমুখি বসে দেবলীনা জিজ্ঞেস করল, তারপর কী হল?

কাকাবাবু ওর মুখের দিকে চেয়ে বললেন, তোমার চোখদুটো ছলছল করছে কেন? জ্বর হয়েছে নাকি?

দেবলীনা এক হাত নেড়ে বলল, ও কিছু না!

কাকাবাবু ঝুঁকে ওর কপালে হাত দিয়ে বললেন, হ্যাঁ, বেশ জ্বর দেখছি! কখন থেকে হল?

খবরদার! কাউকে কিছু বলতে পারবে না।

কী বলব না?

এই জ্বরের কথা। আমার বাবাকে বলবে না, প্রতিজ্ঞা করো!

এরকম প্রতিজ্ঞা করতে হবে কেন?

আজ সন্ধেবেলাই বাবাকে প্লেন ধরে ব্যাঙ্গালোর যেতে হবে। অফিসের কাজে। আমার জ্বর শুনলে যেতে চাইবেন না, তাতে কাজ নষ্ট হবে। জ্বর তো মানুষের হয়ই, আবার সেরে যায়। সামান্য জ্বরের জন্য বাবার কাজ নষ্ট করতে হবে কেন?

তা ঠিক। জ্বরের জন্য বেশি ব্যস্ত হওয়া ঠিক নয়। তবে জ্বর বাড়লে ওষুধ খেতে হবে। আমি ওষুধ দিয়ে দেব। বাড়িতে তোমার পিসিমা আছেন?

হ্যাঁ আছেন। পিসিমার সঙ্গে আজ আমার খুব ঝগড়া হয়েছে।

তিনি বুঝতে পারলেন, তিনি সাঙ্ঘাতিক ভুল করে ফেলেছেন।

কার্তিক নামের ছেলেটিকে হঠাৎ চুরি করে আনা ঠিক হয়নি। ওরা অত্যন্ত শক্তিশালী। আঘাতটা যে এইদিক থেকে আসবে, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।

দেবলীনার বদলে সন্তুকে ধরে নিয়ে গেলে তিনি মোটেই চিন্তিত হতেন না।

দেবলীনাকে কখন ধরল? এ বাড়ি থেকে বেরোবার সময়? নিশ্চয়ই ওরা এ-বাড়ির ওপর নজর রেখেছে। মেয়েটা মোটেই কথা শোনে না, সন্তু যদি ওর সঙ্গে যেত, তা হলে হয়তো দেবলীনার বিপদ হত না।

আল ফারুকির সঙ্গে যখন তিনি কথা বলছিলেন, তার মধ্যে দেবলীনা কখন বেরিয়ে গেছে, তিনি খেয়ালও করেননি। মেয়েটার জ্বর, ওষুধ খায়নি। ওকে ধরে নিয়ে গিয়ে কত কষ্ট দেবে তা কে জানে!

নিজের ওপরেই এত রাগ হল কাকাবাবুর যে, ইচ্ছে হল গালে চড় মারতে!

একবার হঠাৎ মনে হল, টেলিফোনে লোকটা মিথ্যে ভয় দেখায়নি তো?

দেবলীনার বাড়িতে তিনি ফোন করলেন।

না, মিথ্যে নয়। দেবলীনা বাড়ি ফেরেনি। দেবলীনার বাবা আগেই এয়ারপোর্ট চলে গেছেন। পিসিমা এইসব খবর জানালেন।

কাকাবাবু বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না। দেবলীনা আমার সঙ্গেই আছে। রাত্তিরে এখানেই থাকবে। দু-একদিন আমার কাছেই থাকবে বলেছে। পরে আপনাকে জানাব।

ফোন রেখে কাকাবাবু একটুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন।

ক্রমশ তাঁর রাগ বাড়ছে। গরম নিশ্বাস বেরোচ্ছে ঘন ঘন।

এইরকম সময় তাঁর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। দুনিয়ার কোনও বিপদকেই গ্রাহ্য করেন না তিনি। দেবলীনাকে উদ্ধার করার জন্য তিনি এক মুহূর্তও নষ্ট করতে রাজি নন।

রিভলভারটা পকেটে নিয়ে তিনি নেমে এলেন নীচে।

অন্য সবাই খেতে বসে গেছে। কাকাবাবু মুখ বাড়িয়ে গম্ভীরভাবে বললেন, আমি আজ খাব না। বিশেষ কাজে আমাকে বেরোতে হচ্ছে এক্ষুনি।

সন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই কাকাবাবু বেরিয়ে গেলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress