Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কাকচরিত্র || Syed Mustafa Siraj » Page 4

কাকচরিত্র || Syed Mustafa Siraj

সেদিন পুরোটা কী হল, সে বর্ণনা আমি দেব না। পুলিশের এসব ক্ষেত্রে যে রুটিন ওয়ার্কস অর্থাৎ ছকবাঁধা কাজকর্ম থাকে, তা যেমন ক্লান্তিকর আর বৈচিত্র্যহীন, তার বর্ণনাও তেমনি বিরক্তিকর হবে। হত্যাকারীর হাতে দস্তানা ছিল নিশ্চয়। কোথাও আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। কোন সূত্র না–কোন নতুন তথ্যও না। অবশেষে পুলিশ যথারীতি শ্যামলীকে খুনের সন্দেহে মিসেস সেন আর অমরেশকে গ্রেপ্তার করেছিল।

আমি একটা মারাত্মক সাক্ষী হতে পারতাম কারণ শ্যামলীর সঙ্গে মিসেস সেনকে কথা বলতে দেখেছি ওই জায়গাতেই, তখন কর্নেল ওখানে উপস্থিত ছিলেন না।

অথচ কর্নেল বলছেন–তিনি আর মিসেস সেন আগাগোড়া একসঙ্গে আছেন। কথা বলছেন। তারপর একসঙ্গে নিচে নেমে এসেছেন। লাইব্রেরিতে ঢুকেছেন মিঃ সেনের কিছু কাগজপত্র পরীক্ষা করতে।

তাহলে হয় আমি ভুল দেখেছি, নয় কর্নেল মিথ্যা বলছেন। অথচ দুজনেই জোরের সঙ্গে নিজের নিজের বর্ণনা দিচ্ছে। অগত্যা পুলিশ দুজনেরই সাক্ষ্য থেকে ও প্রসঙ্গটা আপাতত বাদ রেখেছে। মাঝখান থেকে আমি রেগেমেগে কর্নেলের বার্ধক্যজনিত মতিভ্রম ও বুদ্ধিভ্রংশের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে মন খারাপ করে বসলাম। এমন কি একা গাড়ি নিয়ে চলে এলাম। কর্নেলের মুখটা গম্ভীর দেখেছিলাম। একটি কথাও বিতর্কের ছলে বলেননি। পুলিশের গাড়িতে উনি বাসায় ফিরলেন।

রাতে আর ঘুম হল না। কর্নেলের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসব ঠিক করলাম। রাত তখন প্রায় বারোটা, হঠাৎ ফোন বাজল। ভাবলাম, থাকগে, নির্ঘাৎ আমার কাগজের অফিস ডাকছে।

কানে রাখতেই কর্নেলের সস্নেহ কণ্ঠস্বর শুনলাম–ডার্লিং জয়ন্ত, আশা করি। তোমার ঘুম হচ্ছে না। শোন, তাই বলে ওষুধ খেয়ে বসো না। ড্রাগ হ্যাবিট মানুষের সর্বনাশ করে। দেখছ তো, আমি কেমন ওষুধ না খেয়েই চালিয়ে দিচ্ছি! ঘুম না এলে ভালো করে ঘাড় আর হাতের কনুই অব্দি ধুয়ে ফেলো। আর ইয়ে শোন ডার্লিং, ইউ আর রাইট। তুমি লাইব্রেরি রুমে খুনীকেই দেখেছিলে। কিন্তু সে মিসেস সেনের ছদ্মবেশে বসেছিল। মুখটা কালো শাড়ির আঁচলে ঘোমটা দিয়ে ঢাকা–অবিকল যেমন মিসেস সেন ঢেকে রাখেন। ব্যাপারটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত শ্যামলীর ফ্ল্যাটে যে ঝি মেয়েটি থাকে–সে বলেছে, একটা ফোন এসেছিল বাইরে থেকে। ফোন পেয়েই চলে যায় শ্যামলী। ওকে বলে যায়–মিঃ সেনের নিউ আলিপুরের বাড়ি থেকে কর্নেল সরকার ওকে এক্ষুনি যেতে বলেছেন। বুদ্ধিমতী মেয়ে বুদ্ধি করে বলেও গিয়েছিল। কিন্তু জয়ন্ত, আগে বলেছিলুম তোমাকেও বোকাও তত

হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। বললাম, কর্নেল, কর্নেল! আপনি ঠিক বলেছেন। আমি তাহলে ছদ্মবেশী খুনীকেই দেখেছিলাম। ইস্! যদি আর একটু বুদ্ধি করে ওখানটায়–

–যা হবার হয়ে গেছে। তবে আমি এদিকটা এত গুরুত্ব দিয়ে ভাবিনি! শ্যামলীকে কেউ সত্যি মেরে ফেলবে–আঁচ করতে পারিনি। কারণ নিছক প্রতিহিংসা ছাড়া ওকে মেরে তো কেউ লাভবান হচ্ছে না। প্রতিহিংসার একমাত্র জায়গা মিসেস সেন। অথচ ওঁর অ্যালিবাই অর্থাৎ অজুহাত ভীষণ শক্ত। কারণ আমি বরাবর সঙ্গে ছিলাম।

কর্নেল, আপনি জানেন, ভদ্রমহিলা আপনাকে একটা প্রচণ্ড মিথ্যা বলেছেন। উনি আগের কোন পিকনিকে বিলাসপুরে মোটেও যাননি। কারণ উনি তখন মিঃ সেনের স্ত্রীই ছিলেন না। মাত্র ক’মাস আগে বোম্বে থেকে ওঁকে মিঃ সেন বিয়ে। করে এনেছেন।…জগন্নাথের কাছে শোনা ঘটনাটা বললাম কর্নেলকে।

কর্নেল বললেন–মাই গুডনেস্!

তাছাড়া ওঁর ভাই না কে ওই অমরেশ ডাক্তার এই প্রথম ও বাড়ি আসে পিকনিকের ঠিক আগের দিন।

–ও মাই!

–স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, পুলিশ ভুল করেনি। ওই ভাইটাই কালোশাড়ি পরে খুন করেছে শ্যামলীকে। চেহারাটা বা কণ্ঠস্বর কেমন মেয়েলি নয় ওর?

কর্নেলের সাড়া না পেয়ে বললাম কী হল কর্নেল?

–কিছু না। বলে যাও!

–আরে শুনুন, মিসেস সেন তখন আপনার সামনে যা বলেছিলেন–মানে পিকনিকের ব্যাপারটা মনে হল, মিঃ সেন কাক তাড়াতে দৌড়ে যাননি। ওটা আকস্মিক যোগাযোগ। আমার ধারণা, তাড়া খেয়ে কাকগুলো যখন পালিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তেই উনি কোন কারণে কাকেও দেখে…

কী বললে, কী বললে?

–হ্যাঁ। হয়তো এমন কাকেও নদীর ধারের ভাঙা পাঁচিলের দিকে দেখতে পান কাকগুলো তখনই উড়ে যাচ্ছল। তাকে গুলি করে মারতে তাড়া করেছিলেন।

বলে যাও, ডার্লিং!

তারপরে তার সঙ্গে ওঁর ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। এবং সেই লোকটা বন্দুক কেড়ে নিয়ে বুদ্ধি করে ওঁকে গলার নীচে নল রেখে গুলি করে, যাতে আত্মহত্যা বলে চালানো যায় নয়তো দৈবাৎ গুলি ছুটে যায় কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে।

–তোমার উন্নতি হবে জয়ন্ত। গুলিটা অ্যাকসিডেন্টাল হলে বাঁদিকের কণ্ঠ তালু ফুঁড়ে বেরোনোর চান্স ছিল। লেগেছে ডানদিকে। দিস ইজ অড। তাছাড়া জয়ন্ত, বন্দুকের ট্রিগারে যে আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে, তা ওর বাঁ আঙুলের। আজ লালবাজারে ফরেনসিক এক্সপার্টরা ফের রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। কাজেই খুনই হয়েছেন মিঃ সেন। কুঁদোতে ডানহাতের আঙুলের ছাপ কেন থাকবে? মিঃ সেন লেফটহ্যান্ডেড ছিলেন না। ওঁর দুটো হাত স্বাভাবিকভাবে কাজ করত জানা গেছে। কাজেই খুনী বন্দুকটা তাড়াতাড়ি ওইভাবে রেখেছিল। সবচেয়ে লক্ষ্য করার বিষয়বন্দুক ওসব ক্ষেত্রে হাতে থাকবে কেন? ছিটকে পড়বে পাশে। হাতপায়ের খিচুনি হবে মৃত্যুর সময়। তাই না?

–অবশ্যই। কিন্তু ফুলের ব্যাপারে কোন সূত্র পেলেন? আমি জগন্নাথকে জিগ্যেস করেছিলাম। ও বলছিল, কেউ ফুলটুল গোঁজেনিনা চুলে, না বাটন হোলে। কর্নেল, ফুলটা কিন্তু আমার দেখাই হয়নি! কী ফুল?

লাল গোলাপ। আজ বিকেলে লালবাজার থেকে একজন নার্সারি বিশেষজ্ঞকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি পরীক্ষা করে বললেন, এই গোলাপগুলোর নাম প্রিন্স অ্যালবার্ট। এখন, মজার কথা–মিঃ সেনের নিউ আলিপুরের বাড়িতে এই ফুলের গাছ রয়েছে।

-তাই নাকি? কর্নেল, ফুলের বোঁটায় চুল জড়ানো আছে বলেছিল শ্যামলী।

–একগোছা চুল। একটু লালচে রঙের। ইঞ্চি চার লম্বা।

কর্নেল, কর্নেল! অমরেশের মাথার চুল লালচে দেখেছি। নির্ঘাৎ

–এখন সব ফরেনসিক এক্সপার্টদের কাছে গেছে। কাল ওঁদের মতামত জানতে পারব। তুমি সকাল সাতটার মধ্যে চলে এস। আমরা বিলাসপুর যাবো…

ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়েছিলাম সাড়ে ছ’টার। ঘুম ভাঙলো তার আওয়াজে কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠতে সাতটাই বেজে গেল।

কর্নেলের বাসায় পৌঁছলাম সাড়ে সাতটায়। গিয়ে দেখি, কর্নেল তৈরি। দক্ষিণের সেই জানালায় ঝুঁকে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে। ঢুকে বললাম দুঃখিত। দেরি করে ফেললাম।

কর্নেল মুখ না ঘুরিয়ে বললেন–একটা মজার কাণ্ড দেখে যাও, জয়ন্ত।

কাছে গিয়ে উঁকি দিলাম। নিচে খানিকটা পোতড়া জায়গা রয়েছে। জানলা থেকে বড়জোর চার মিটার তফাতে একটা জামরুল গাছ–তার মাথার শেষ উঁচু পাতাটি এই জানলার নিচের চৌকাঠের সমান্তরালে। বললাম–কী?

কাকের বাসা। ঐ দ্যাখো!

হা–ঠিক মাঝখানে ঝকড়া ডালপালা ও পাতার মধ্যে একটা কাকের বাসা রয়েছে। সেখানে বসে ডিমে তা দিচ্ছে একটা কাক। কর্নেল একটু হেসে বললেন–এবার ঐ শিমূল গাছটার দিকে তাকাও। ওই দ্যাখো একটা কোকিল কেমন ঘাপটি পেতে বসে রয়েছে। কদিন আগে দেখলাম, ওই কোকিল আর তার সঙ্গীটা কোত্থেকে এসে শিমূলডালে বসল। সঙ্গীটা পুরুষ-কোকিল। সে করল কী, আচমকা এসে কাকটাকে জ্বালাতন শুরু করল। কাকটা অগত্যা ডিম ছেড়ে ওকে তাড়া করল। উদ্দেশ্যটা তখনও বুঝিনি। প্রায় সকাল থেকে দুপুর অব্দি ওইভাবে ওকে ক্রমাগত জ্বালাতন করছিল কোকিলটা। অবশেষে দেখি কাকটা এবার ওকে তাড়িয়ে দূরে নিয়ে গেল। সেইসঙ্গে আরও অনেক কাক যোগ দিল দলে। ওরা ওই দূরের বাড়িটার দিকে চলে গেল। স্ত্রী-কোকিলটা অমনি এসে কাকের বাসায় বসে পড়ল ডিমগুলোর ওপর। ঠুকরে ফেলে দেবার চেষ্টাও করল। একটা পড়ে গেল। কিছুক্ষণ পরেই সে উড়ে পালাল। ডিমগুলো এখান থেকে গোনা যায় না। যাই হোক, কোকিলটা যে কাকের বাসায় ডিম পেড়ে গেল, তাতে কোন ভুল নেই।

–কাকটা ফিরল না আর?

–অনেক পরে ফিরে এল চাঁচাতে চাঁচাতে। আবার তা দিতে থাকল। ওই দ্যাখ, কেমন চুপচাপ বসে প্রকৃতির নিয়ম পালন করছে। এরপর একদা আমরা কাকের বাচ্চার দলে দুটি-একটি কোকিল বাচ্চা নিশ্চয় দেখব। ভারি অদ্ভুত ব্যাপার চলে প্রকৃতিজগতে!

–কোকিল যে বাসা বানাতে জানে না। ওরা ছন্নছাড়া হাঘরে পাখি! শুধু গানটান আমোদ স্ফুর্তি করেই জীবন কাটাতে চায়।…বলে আমি হেসে উঠলাম।

রাইট, রাইট। গানটান আমোদ স্ফুর্তি! ঠিকই বলেছ, জয়ন্ত, কিন্নরজাত।

কর্নেল কিন্তু হাসলেন না! গম্ভীর হয়েই বললেন কথাটা! তারপর আমার হাত ধরে বেরোলেন। ষষ্ঠীচরণকে বিদায় সম্ভাষণ করে আসতে ভুললেন না।

গাড়ি স্টার্ট দিলাম। পার্ক স্ট্রিটে ঢোকার পর কর্নেল মুখ খুললেন ইয়ে জয়ন্ত, আমরা আপাতত টালিগঞ্জে যাচ্ছি।

-কেন? বিসালপুর কী হল?

–আগে টালিগঞ্জে যাই তো! আটর্নি মজুমদারের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

মিঃ সুশান্ত মজুমদারের বাড়িটি অত্যাধুনিক ধাঁচের। বাগুবাগিচা, সবুজ লন, টেনিসকোর্ট রয়েছে। কিন্তু বাড়িটা ছোট। একতলা। নানারঙের স্ট্রিমলাইন দেয়াল থাকায় মনে হয় ভীষণ গতিশীল।

সুশান্তবাবু বিপত্নীক মানুষ। হাসিখুশি সৌমকান্তি। মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। কিন্তু ব্যক্তিত্ব আছে চালচলনে বিশেষ করে ঠোঁটের কোনা আর চিবুকে দৃঢ়সংকল্প মানুষের পরিচয় রয়েছে। আমাদের পরিচয় পেয়ে অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেলেন বসার ঘরে। বললেন–আজ একটু সকাল-সকাল অফিসে যাব ভেবেছিলাম। যাকগে, সেজন্যে আমার অনারেবল গেস্টদের উদ্বেগের কারণ নেই। অন্তত আধঘণ্টা সময় যথেষ্ট হবে, আশাকরি।

বুঝলাম, ভদ্রলোক খুব নিয়মনিষ্ঠ এবং কেজো মানুষ। সময়ের অপব্যবহার করেন না মোটেও।

কর্নেল বললেন–আপনার ফার্ম তো চার্চ লেনে, মিঃ মজুমদার?

-হ্যাঁ। বোস অ্যান্ড মজুমদার। পৈতৃক বলতে পারেন।

–হ্যাঁ, হ্যাঁ। আপনার বাবা মিঃ রথীন্দ্র মজুমদারের খ্যাতির কথা আজও কেউ ভোলেনি। কলকাতার সবেচেয়ে বিজ্ঞ সলিসিটার বলতে…..

সুশান্তাবু হেসে বললেন–সে দিন চলে গেছে, কর্নেল সরকার। বাই দা বাই, আপনি শুনলাম মিসেস সেনের পক্ষে মিঃ সেনের রেজিস্টার্ড উইলটা চ্যালেঞ্জ করতে চান! দেখুন কর্নেল সরকার, আমরা–মানে মেসার্স বোস অ্যান্ড মজুমদার দীর্ঘ একুশ বছর ধরে মিঃ সেনের উন্নতির গোড়া থেকেই ওঁর কাজকর্ম করে আসছি। মিঃ বোস অবশ্য নেপথ্যে থাকেন বরাবর–আমি মিঃ সেনের আইন সংক্রান্ত উপদেষ্টা। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে যে উইল সম্পাদিত এবং যথারীতি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে–তা ওল্টানো শুধু অসম্ভব নয়, অবাস্তব, এবং হাস্যকর চেষ্টা। দেয়ার আর সাম লজ ইন আওয়ার কানট্রি।

কর্নেল হাত তুলে বললেন–যথেষ্ট, যথেষ্ট মিঃ মজুমদার! আমি একজন নগণ্য প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটার মাত্র। শুধু কিছু জিজ্ঞাস্য নিয়ে এসেছি। জবাব পেলেই খুশি।

–বেশ, বলুন কী জানতে চান?

–মিঃ সেনের উইলের তারিখটা জানতে চাই।

একুশে ফেব্রুয়ারি–দিস ইয়ার।

–মিঃ মজুমদার, ইতিমধ্যে হিতেনবাবু আপনাকে এই উইল পরিবর্তন করে কোন নতুন উইলের কথা কি বলেননি?

–অ্যাবসার্ড! হাউ ডু ইউ ইমাজিন দ্যাট? কেন ভাবছেন ও কথা?

কর্নেল না দমে বললেন–এ কি সত্য যে দোলপূর্ণিমার পিকনিকের অনুষ্ঠানে হিতেনবাবু তার নতুন উইলের কথা ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন?

সুশান্তবাবুর মুখ রাঙা হয়ে গেল। চোখদুটো তীব্রতর হল। বললেন– ননসেন্স! এমন প্রশ্ন আজগুবি শুধু নয়, আমার সুনাম–আমার ফার্মের সুনামের পক্ষে ক্ষতিকর।

কর্নেল গ্রাহ্য করলেন না। বললেন–সেই নতুন উইল যথারীতি সম্পাদন করা হয়েছিল, হিতেনবাবু সইও করেছিলেন এবং পরদিন রেজিস্ট্রি করা হত। কলকাতা ফিরেই। আপনি কী বলেন?

সুশান্তবাবুর মুখটায় যেন আগুন জ্বলছে। কিন্তু কিছু বললেন না।

এই নতুন উইলের সাক্ষী হিসাবে সই করেছিলেন ওঁর শ্যালক ডাক্তার অমরেশ গুপ্ত, সোফার সুরেন্দ্র ঘটক এবং হিতেনবাবুর পারিবারিক চিকিৎসক ডাক্তার সত্যেন সিংহরায় এবং আপনি। কী বলেন মিঃ মজুমদার?

সুশান্তবাবু হো হো করে আচমকা হেসে উঠলেন।–মাথা খারাপ। মাথা খারাপ!

–এই নতুন উইলে মিস শ্যামলীকে মাত্র নগদ দশহাজার টাকা, স্ত্রী স্বাগতা সেনের নামে মোট সম্পত্তির অর্ধেক, এবং কয়েকজন দুঃস্থ আত্মীয়স্বজনের নামে…

সুশান্তবাবু পলকে মুখ বিকৃত করে বললেন–আমার সময়ের দাম আছে। মশাই। লেট ইট বি ফিনিশড হেয়ার।

উনি উঠে দাঁড়ালেন। কর্নেলের ওঠার চেষ্টা দেখলাম না। আমার ব্যাপারটা খুব অপমানজনক মনে হচ্ছিল। কর্নেলের দিকে তাকালাম। কর্নেলের দৃষ্টি সুশান্তবাবুর মুখের দিকে। বললেন–গতকাল সকাল দশটা নাগাদ আপনি মিঃ সেনের নিউআলিপুরের বাড়ি গিয়েছিলেন। তখন আমরা মিসেস সেনের সঙ্গে ওপরের ঘরে কথা বলছিলাম। কেন গিয়েছিলেন সুশান্তবাবু। কার কাছে?

-কে বলেছে আপনাকে?

জগন্নাথ। আমি ও মিসেস সেন কথা বলছিলাম, জয়ন্ত উঠে বাইরে গেল–তারপর জগন্নাথ মিসেস সেনকে গিয়ে বলল, আপনাকে নিচের লাইব্রেরি ঘরে বসে থাকতে দেখেছে। তাই একটু পরেই আমি ও শ্রীমতী সেন নিচে লাইব্রেরিতে গেলাম। গিয়ে আবিষ্কার করলাম শ্যামলীকে। ইতিমধ্যে আপনি সম্ভবত বাড়ির পেছনে ঘুরে চলে গেছেন। সামনে দিয়ে বেরোলে জয়ন্ত দেখতে পেত।

–গেট-আউট! গেট-আউট ইউ ওল্ড ফুল! গর্জন করে উঠলেন সুশান্তবাবু! থরথর করে রাগে কাঁপছেন ভদ্রলোক।

এবার কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। পা বাড়াতে গিয়ে ঘুরে বললেন ফিল্ম অভিনেতা পার্থকুমার ২১শে ফেব্রুয়ারি উইল রেজিস্ট্রির পরদিন ২২শে তারিখে শ্যামলীকে বিয়ে করবে বলে হোটেলে পার্টি হয়। হোটেলের এই পার্টির সব খরচ আপনার নামে বিল করা হয়েছিল। তার মানে আপনিই এর উদ্যোক্তা ছিলেন। মিঃ মজুমদার, পার্থ আপনার কে?

–গেট-আউট, কোন কথার জবাব আমি দেব না।

ক্যাবারে গার্ল মিস শ্যামলীকে হিতেনবাবুর প্রথম স্ত্রীর হারিয়ে যাওয়া মেয়ে বলে আপনি হিতেনবাবুকে কনভিনসড করেছিলেন। দিনের পর দিন সুপরিকল্পিত পথে ওঁর বিশ্বাস আপনি এনেছিলেন শ্যামলীর প্রতি। এমন কি হিতেনবাবুর পোর্ট্রেট আঁকিয়ে শ্যামলীর ঘরে রাখতে বলেছিলেন এবং শ্যামলী নামে হতভাগিনী পিতৃমাতৃ পরিচয়হীনা ক্যাবারে গার্লটিকে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। সে তা টের পায়নি। কিন্তু সুটিঙে গিয়ে পিকনিকের পরদিন সে ফুলটা কুড়িয়ে পেল, পরিচালক অতীন্দ্রবাবুর কাছ থেকে পার্থকুমার তা জানল এবং আপনাকে জানাল। অমনি আপনি শ্যামলী সম্পর্কে সতর্ক হয়ে উঠলেন। বিশেষ করে শ্যামলী যখন আপনার ব্রাউন রঙের কোটের বাটনহোলে একই প্রিন্স অ্যালবার্ট গোলাপ দেখে মারাত্মক প্রশ্ন করে বসল–দ্যাট ওয়াজ ইন দা ইভনিং অফ টোয়েনটি ফিফথ শ্যামলী তারপরই আমার কাছে যায়–মিঃ মজুমদার, আপনি দেখলেন শ্যামলী আপনাকে চিনে ফেলেছে। এবং সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার–সে পার্থকে ফোনে জানিয়ে দিল যে এ বিয়ে হবে না। শ্যামলী ক্যাবারে গার্ল হলেও সে অর্থলোভী হৃদয়হীনা ছিল না। আমি তাই তাকে বারবার কোমল হৃদয়া বলেছি। মিসেস সেনের বাড়িতে আপনি আমার নাম গোপন করে ডেকে পাঠান ওকে। শ্যামলী তক্ষুনি চলে যায়। কেন যায় শ্যামলী? শুধু আমি ডাকছি বলে নয়–সে মিসেস সেনকে তার ন্যায্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চায় না, উইলে যাই থাক্‌-একথা বলতেই যায়। শ্যামলী ছিল ভীষণ ভাবপ্রবণ মেয়ে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, গিয়ে আপনার ফাঁদে পড়ে যায়। আপনি মিসেস সেনের ছদ্মবেশে লাইব্রেরিতে অপেক্ষা করছিলেন ওঁর জন্যে।

–মিথ্যা! সব জঘন্য মিথ্যা! আমি একজন লইয়ার! আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব!

পর্দার আড়াল থেকে ডাক্তার অমরেশ আপনাকে খুন করার পর পালাতে দেখেছেন, সুশান্তবাবু। আপনি গরাদবিহীন ফ্রেঞ্চ জানলা গলিয়ে চলে গেলেন। আপনার হাতে কালো শাড়িটা ছিল। আপনি বাথরুম থেকে পোশাক বদলেই লাইব্রেরিতে ঢোকেন। কিন্তু আপনার দুর্ভাগ্য, তাড়াতাড়িতে আপনার ব্রাউন কোটটা পরার সময় পাননি। আলমারির পিছনে ফেলে রেখেছিলেন। পরে মানে, এখনই বেরোতে চাচ্ছিলেন কোটটা এক সুযোগে নিয়ে আসতে। কারণ গতকাল পুলিশ ছিল বাড়িটাতে–আজ নেই। এবং আজই ভোরে ঝাড়ু দিতে গিয়ে জগন্নাথ কোটটা আবিষ্কার করেছে। সুশান্তবাবু, বিলাসপুরে মিঃ সেনের ডেডবডির কাছে পড়ে থাকা ফুলে আপনার কোটের একটা ফাইবার জড়িয়ে রয়েছে–ওটা চুল নয়, আঁশ।

সুশান্তবাবুর মুখ সাদা হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। দুহাতে একটা চেয়ারের পিছনদিক ধরে ঝুঁকে পড়েছিলেন। হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন–কিন্তু বাট ইউ আর রং। পিকনিকের দিন সন্ধ্যায় আমি মিসেস সেনের আর অমরেশ ডাক্তারের সঙ্গে সারাক্ষণ গল্প করেছি।

–মোটেও না স্যার। ওঁদের কাছে ছিলেন যিনি–তিনি ফিল্ম অভিনেতা পার্থকুমার। সে সবার শেষে জুটেছিল একা–তখন আপনি মিঃ সেনের সঙ্গে বাড়ির মধ্যে মোকাবিলা করছেন। আপনার নাম মিসেস সেন জানতেন। সোফার চাকর রাঁধুনীরা সবাই জানত–অমরেশও এসে শুনেছিল, কিন্তু কারো সঙ্গে চাক্ষুষ পরিচয় আপনার হয়নি। আপনি হিতেনবাবুর বাড়ি কখনও যাননি। কাজ যা কিছু হয়েছে-সব অফিস থেকেই। কাজেই সবার শেষে এমন সময় পার্থকুমার বটতলায় তাঁবুর কাছে হাজির হয়ে নিজের পরিচয় দিল–যখন মিঃ সেন কুঠিবাড়িতে কী কাজে রয়েছেন। তারপর

সুশান্তবাবু এবার দৌড়ে আলমারির কাছে গেলেন। চাবি বের করে গর্তে ঢুকিয়েছেন কর্নেল আচমকা রিভলবার বের করে বললেন–ও চেষ্টা করবেন না মিঃ মজুমদার।

পরক্ষণে হুড়মুড় করে বাইরে থেকে তিনজন পুলিশ অফিসার এসে ঢুকে পড়লেন। সবাই সশস্ত্র। চারটে রিভলবারের সামনে সুশান্তবাবু কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন।

কর্নেল আমাদের কাছে তাঁর ড্রয়িং রুমে বসে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন– হিতেন সেনের স্ত্রীর মৃত্যুর অনেকবছর পরে ঘটনাচক্রে এয়ারহোস্টেস স্বাগতার সঙ্গে পরিচয় এবং প্রেম হয়। বিয়ের সিদ্ধান্তে আসতে বহুদিন লেগে যায়। এদিকে হিতেনবাবুর একমাত্র মেয়ে তিনবছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিল। আর ছেলেপুলে হয়নি প্রথমা স্ত্রীর। অনেক চেষ্টাতেও হারানো মেয়ের সন্ধান পাননি। যাই হোক, স্বাগতার প্রসঙ্গে আসি এবার। স্বাগতার সঙ্গে বিয়ে রেজেস্ট্রি অবশেষে হল। গত সেপ্টেম্বর মাসের দশ তারিখে–বোম্বেতে। হিতেনবাবু একা কলকাতা ফিরলেন। স্বাগতার চাকরির ব্যাপারে তক্ষুনি ছেড়ে দেওয়ার কিছু বাধা ছিল। ইতিমধ্যে হঠাৎ বিমান দুর্ঘটনায় স্বাগতার মুখের একটা দিক পুড়ে বিকৃত হয়ে যায়। হৃদয়বান মানুষ হিতেন সেন বোম্বে গিয়ে অনেক খরচা করেও প্ল্যাস্টিক সার্জারিতে কাজ হল না। অ্যালার্জি শুরু হল। অগত্যা ফের অপারেশান করে বিকৃত মুখ নিয়েই দাম্পত্যজীবন যাপনের উদ্দেশ্যে স্বাগতাকে চলে আসতে হল গত নভেম্বরে স্বামীর সঙ্গে। মুখটা সবসময় ঢেকে রাখতে অভ্যাস করলেন ভদ্রমহিলা!

কর্নেল একটু চুপ করে থাকার পর ফের বলতে শুরু করলেন–অত খুঁটি নাটি না বললেও চলবে। সবটা তো তোমরা অনুমান করতে পারছ। মুখ পোড়ার পর থেকে স্বাগতার একটা গুরুতর মানসিক প্রতিক্রিয়াজনিত ভাব প্রকাশ হতে থাকে। সে দজ্জাল হয়ে ওঠে। কথায় কথায় স্বামীকে লাঞ্ছিত করে। হিতেনবাবু ক্রমশ তার ব্যবহারে চটে গেলেন। বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। ইতিমধ্যে সুশান্ত মজুমদার বোকা সরল মেয়ে শ্যামলীকে হাত করে টোপ ফেলে আসছিলেন। ২১ তারিখে উইল রেজেস্ট্রি হল। স্ত্রীকে যখন ডিভোর্সই করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন–তখন বেশি কী আর দেবেন হিতেনবাবু! নেহাত হৃদয়বান মানুষ বলে কিছু দিলেন উইলে। এ মাসের অর্থাৎ মার্চের মাঝামাঝি যে ভাবে হোক–আমি জানি না, জানতেও আর পারব না–হিতেনবাবু সুশান্ত মজুমদারের চক্রান্ত টের পেয়ে যান। হয়তো শ্যামলীই বেস কিছু বলে থাকবে–যাতে সুশান্তবাবুর সঙ্গে তার গোপন যোগাযোগ ইত্যাদি প্রকাশ হয়ে পড়ে হিতেনবাবুর কাছে। কিন্তু নতুন উইলে শ্যামলীকে বঞ্চনা করতে চাননি। কারণ হারানো মেয়ের জন্য স্নেহ ততদিনে শ্যামলীতে কিছু ঘন হয়ে উঠেছিল অভ্যাসের ফলে। যাই হোক, তিনি ঠিক করলেন পিকনিকের দিন শ্যামলীও উপস্থিত থাকবে এবং নতুন উইল পড়ে শোনানো হবে।

আমি এসময় বলে উঠলাম কর্নেল, ২১ ফেব্রুয়ারি উইল রেজেস্ট্রির পর দিনই শ্যামলীর সঙ্গে পার্থের বিয়ের পার্টি হয়েছিল। তা হলে দেখছি

রাইট। পার্থ হচ্ছে সুশান্ত মজুমদারেরই ছেলে। বাবার সঙ্গে থাকে না। একটু উজ্জ্বল প্রকৃতিরও বৃটে। কিন্তু তা হলেও ছেলে তো বটে! সুশান্তবাবু ওকে বলেছিলেন–শ্যামলী সম্পত্তি পাচ্ছেতার সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে পার্থর পক্ষে মঙ্গল। নিজেই ছবি করতে পারবে। পার্থ রাজি হয়–সিনেমাই তার জীবন। এবার আমরা বিলাসপুরের কুঠিবাড়িতে যাই। মিসেস সেন, মিঃ সেন ও অমরেশ এক গাড়িতে, অন্য গাড়িতে জিনিসপত্র, জগন্নাথ, হরিয়া, ঘনশ্যাম এবং ড্রাইভার সুরেন্দ্র। মিঃ সেন চলে গেলেন ওঁর কাছে। তাবুর কাছে মিসেস সেন আর অমরেশ এবং সুরেন্দ্ররা থাকল। মিঃ সেন ও মজুমদার ঢুকলেন কুঠিবাড়িতে। একটু পরেই পার্থ বাবার মতো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি পরে চলে এল তাঁবুর কাছে সে এতক্ষণ সুযোগের অপেক্ষা করছিল কুঠিবাড়ির পিছনে সম্ভবত গাছপালার আড়ালে। সে নিজের পরিচয় দিল মিঃ সুশান্ত মজুমদার বলে। গল্পে গল্পে জমিয়ে তুলল। ওদিকে কুঠিবাড়ির ঘরে নাটক চলছে তখন। নাটকটা ঠিক কী রকম বলা কঠিন। তবে লেটেস্ট তদন্ত থেকে আমার ধারণাই প্রমাণিত হয়। সুশান্তবাবু মিঃ সেনকে আচমকা রিভলবার বের করে গুলি করতে যাচ্ছিলেন– কিংবা অন্য কোনভাবে আক্রমণ করেছিলেন, মিঃ সেন আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হন তখনকার মতো। ওঁর রাইফেলটা ঘরেই কোথাও রেখেছিলেন–বের করে আনতে আনতে নিশ্চয় সুশান্তবাবু তখন ভোঁ দৌড়। নদীর ধারে ভাঙা পাঁচিল ডিঙিয়েই পালালেন। মিঃ সেন রাইফেল হাতে বেরোলেন। ঠিক সেইসময় কাকগুলো তাড়া খেয়ে উড়ে যাচ্ছে। ধূর্ত পার্থ সুযোগটা নিল। জগন্নাথ বলেছে–সে ওই সময় বলে ওঠে, কী কাণ্ড! মিঃ সেন কাকের ওপর রেগে গেলেন দেখছি! কাক মারতে দৌড়চ্ছেন! সবাই এই বাক্যে ধারণা দাঁড় করায়হা, মিঃ সেন কাক তাড়া করে যাচ্ছেন। পার্থ নিশ্চয় উদ্বিগ্ন হয়েছিল। যাই হোক, ওদিকে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছেন প্রাণভয়ে ভীত সুশান্তবাবু। আর সেই ঝোপের সামনে দাঁড়িয়ে বুলেট-ভরা রাইফেল হাতে এদিক-ওদিক তাকে খুঁজছেন হিতেন সেন। সুশান্তবাবুর নার্ভ শক্ত। সুযোগটা নিলেন। আচমকা বাঘের মতো লাফিয়ে পড়লেন। ধস্তাধস্তি হল। তারপর যেভাবেই হোক গুলি, বিধল মিঃ সেনের ডানদিকে গলায় কণ্ঠতালু ভেদ করে বুলেট মগজে বিঁধে হাড়ে আটকে গেল। ওখানে সবাই ভাবলেন–মিঃ সেন কাককে গুলি করলেন। অনেক পরে উদ্বিগ্ন পার্থ সুরেন্দ্রকে নিয়ে খুঁজতে বেরোল। সে আশা করেছিল– বাবার মৃতদেহ দেখবে। কিন্তু দেখল হিতেন সেনের মৃতদেহ।…..

কর্নেল চুরুট ধরালেন। ষষ্ঠীচরণ ট্রেতে কফি নিয়ে এল আরেক দফা।

বললাম–ওই ফুলটাই অবশ্য শ্যামলী আর সুশান্ত মজুমদারের কাল হল।

ডিটেকটিভ অফিসার সত্যেন্দ্রবাবু বললেন জানেন? আগাগোড়া কাকের ব্যাপারটায় একমাত্র আমারই কিন্তু সন্দেহ থেকে যাচ্ছিল।

কর্নেল বললেন–হ্যাঁ। কাকচরিত্র নামে প্রাচীন শাস্ত্র পড়েছি কাক যদি ডাকতে ডাকতে কারো মাথার উপর দিয়ে বায়ুকোণ থেকে অগ্নিকোণে যায়, তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য। মিঃ সেনের মাথার ওপর ঠিক এই দিকেই কাকগুলো যাচ্ছিল।

আমি বললাম–তাহলেও কাক সবচেয়ে বোকা পাখি। কোকিলের বাচ্চাকে নিজের ভেবে লালনপালন করে। অথচ কোকিল ইজ কোকিল।

কর্নেল হেসে বললেন–তুমি শ্যামলীর কথা বলছ! দ্যাটস রাইট, ডার্লিং। অ্যাকসিডেন্ট ইজ অ্যাকসিডেন্ট, উইল ইজ উইল–এবং অবশ্যই কোকিল ইজ কোকিল। ঘরবাঁধা তার ভাগ্যে লেখেননি প্রকৃতি। বেচারা শ্যামলী!…. একসঙ্গে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress