Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

উপসংহার পর্ব

স্বভাব শান্ত ও স্থিতধী যুধিষ্ঠির এতক্ষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও শ্রীকৃষ্ণের কথা মনোযোগ সহকারে শুনছিলেন, এবার তিনি এগিয়ে এলেন কুন্তির কাছে, মায়ের সামনে নতজানু হলেন তারপর জিজ্ঞেস করলেন বাসুদেব যা বললেন তা কি সবৈব সত‍্য? অঙ্গরাজ কর্ণ কি সত‍্যিই প্রথম কৌন্তেয়? আমি আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই! কুন্তি অশ্রুসিক্ত নতমুখে তখনও নিরুত্তর। যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি মৌন থাকবেন না মাতা, অঙ্গরাজ যদি আমাদের সহোদর হয় তবে তাঁকে বধ করে আমরা মহাপাপ করেছি। গুরু দ্রোণ এবং পিতামহকে ( ভীষ্ম তখনও জীবিত ) বধ করার দায় আমরা এড়াতে পারিনি কিন্তু অঙ্গরাজের কাছে ভাই হিসেবে আত্মসমর্পণ করতে পারতাম। কিন্তু সে সুযোগ আপনি দিলেন না। কিশোরীবেলার প্রথম সন্তানকে লোকলজ্জার ভয়ে পরিত‍্যাগ করেছিলেন কই মাতা জবালাতো সত‍্যকামকে পরিত‍্যাগ করেন নি। আপনার এই অপরিণামদর্শীতার জন্য আমাদের ভাতৃহত‍্যার দায় বহন করতে হচ্ছে।
একজন স্ত্রীলোক হিসেবে যেভাবে আপনি এই অত‍্যন্ত সংবেদনশীল কথা গোপন রেখেছেন এরপর আর কোন স্ত্রীলোক এইভাবে কোন কথা গোপন রাখতে পারবে না।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন মহারাজ যুধিষ্ঠির সবটুকু না বুঝে মাতা কুন্তিকে এভাবে তিরস্কার করা ঠিক নয়। যদিও মাতা কুন্তিকে এই গোপনীয়তা অনেক আগেই প্রকাশ করা উচিৎ ছিলো। কিন্তু নিয়তির বশবর্তী সবাই এমনকি আমিও। কর্ণের মৃত‍্যু অর্জুনের হাতে পূর্বনির্ধারিত। দম্ভোদভব নর নারায়ণ সংঘাতের পূর্বেও আরও একবার কর্ণ অর্জুন মুখোমুখি হয়েছিল। সে এক বিস্তৃত কাহিনী।
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা পালনকর্তা বিষ্ণু ও সংহার কর্তা মহাদেব নিজেদের মধ‍্যে কথা বলছিলেন, কিন্তু কথায় কথায় ব্রহ্মা দম্ভ প্রকাশ করায় মহাদেব অত‍্যন্ত রুষ্ঠ হন, তিনি তাঁর ত্রিশূল দিয়ে ব্রহ্মার পঞ্চম শির খন্ড করে দেন! ব্রহ্মা ক্রুদ্ধ হয়ে তার স্বেদ থেকে এক দৈত্য সৃষ্টি করে মহাদেবকে বধ করতে বললেন। মহাদেব বুঝতে পারলেন স্বেদজের সাথে সরাসরি যুদ্ধ করা সম্ভব নয় তিনি বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন, বিষ্ণু বললেন আপনি আমার দক্ষিণ হস্তে ত্রিশূল দিয়ে আঘাত করুন। মহাদেব বিষ্ণুর ডানহাতে ত্রিশূলাঘাত করলে রক্তপাত হলো সেই রক্তে বিষ্ণু ও মহাদেবের তেজ মিশ্রিত হয়ে সৃষ্টি হল রক্তজ নামের এক দৈত্য। এই রক্তজ আর স্বেদজর দীর্ঘকাল ব‍্যাপি সংঘর্ষের পরও কেউ কারও কাছে পরাজিত হয় না। কিন্তু ব্রহ্মাণ্ডে তখন ত্রাহি রব বিষ্ণু বললেন এই যুদ্ধ বন্ধ হোক ব্রহ্মা বললেন বন্ধ হতে পারে একটাই শর্তে যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারিত হবে পরের জন্মে। পরের জন্মে রক্তজ দায়িত্ব নিলেন ইন্দ্র আর স্বেদজ দায়িত্ব নিলেন সূর্যদেব। এভাবেই পূর্বনির্ধারিত এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটলো।
তাছাড়াও আমি ব‍্যক্তিগতভাবে কর্ণকে তার পরিচয় জানিয়ে এই যুদ্ধে তাঁকে নিরপেক্ষ থাকতে বলেছিলাম কিন্তু দূর্যোধনের সাথে মিত্রতার বন্ধন এবং তাঁর প্রতিজ্ঞা থেকে একপাও সরে আসেন নি। বলতে বাধ‍্য হচ্ছি এই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জন‍্য শকুনি দূর্যোধনরা সেভাবে দায়ী নয় যতখানি দায়ী মহামহিম ভীষ্ম গুরু দ্রোণ আর অঙ্গরাজ কর্ণ। এঁরা যদি নিজেদের প্রতিজ্ঞা আর কৃতজ্ঞতার কথা না ভেবে ন‍্যায় অন‍্যায়ের কথা ভেবে দূর্যোধনকে সমর্থন না করতেন তবে এই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধই হতো না।
যুধিষ্ঠির অনুতপ্ত হলেন বারবার ক্ষমা চাইলেন কুন্তির কাছে। তারপর বললেন কিভাবে অঙ্গরাজের শেষকার্য সম্পূর্ণ হবে এবিযয়ে তোমার পরামর্শ কি বাসুদেব? শ্রীকৃষ্ণ বললেন এ বিষয়ে দূর্যোধনের পরামর্শ আবশ্যক, কারন তার হয়ে সৈনাপত‍্য করা কালিন অঙ্গরাজ কর্ণ নিহত হয়েছেন।
দূর্যোধন বললেন অঙ্গরাজ কর্ণ আমার মিত্র ঠিকই কিন্তু যখন জানতে পারলাম তিনি যুধিষ্ঠিরদের অগ্রজ তখন শেষকৃত‍্যের দায়িত্ব ওদেরই প্রাপ‍্য।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন আমার মনে হয় অঙ্গরাজ কর্ণের মুখাগ্নি অর্জুন করুক এতে অর্জুনের অনুশোচনা কিঞ্চিৎ লাঘব হবে। রাধা এবং অধিরথ মেনে নিলেন শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ শুধু ভ্রুশালী বললেন বসুসেনের সাথে সহমরণে যেতে আপনারা আমাকে আজ্ঞা দিন।

গভীর রাত্রে জ্বলে উঠলো কর্ণের চিতা মুখাগ্নি করলেন অর্জুন সহমরণে গেলেন ভ্রুশালী। সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্তে সূর্যপুত্রের নশ্বর শরীর পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেল। শুধু সেদিনের সূর্যোদয় কিঞ্চিৎ বিলম্বিত হলো।

কর্ণ ও অর্জুন সংবাদ
উপসংহার পর্ব
সমাপ্ত

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
Pages ( 10 of 10 ): « পূর্ববর্তী1 ... 89 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress