কপাল
জাঠতুতো ওদিকে মামাতো ও মাসতুতো সব দাদা ও ভাই আমার।আমি একমাত্র মেয়ে,কার ও দিদি বা কার ও বোন।ছোট থেকেই তাই মামারবাড়ির দিক দিয়ে প্রচুর আদর,উপহার আর ঠাম্মা বাড়ির দিকে আমিই একমাত্র মেয়ে।যখন তখন উপহার,আদর।
ভাইফোঁটায় আমায় নিয়ে কাড়াকাড়ি চলে।আমিও তাই কার ও বাড়ি এখন যাই না,সবাই আমার বাড়িতে আসে।সব বন্ধুরা বলে বাবা ,সোমা তোর কি মজা।
এখন আমার বয়স বাইশ,সব জিনিষ সেরা পেতে পেতে এমন অভ্যাস হয়ে গেছে যে সম্বন্ধ আসে আমার পছন্দ হয় না।ঐ যে সব ভাই দাদাদের কাছে আমি যে ডানাকাটা পরী।তাই হয়ত পেঁচী দেখতে হয়েও নিজের হবু বর রাজপুত্রের মত দেখতে হবে ও অবশ্যই গুণী তো হবেই কল্পনায় ভাসতাম।মার তো যেই পাত্র আসে তাকেই পছন্দ।মোটামুটি বিয়ের কথাবার্তা ঠিকঠাক তখন আমি আমার ইউনির্ভাসিটির বন্ধু অমিত কে ফোন নাম্বার দিয়ে বলি ওই আমার প্রেমিক সেজে একটু বিয়েটা ভাঙ।কলেজ থেকে ফিরলেই বাবা মা বলেন শোন্, তোর অনেক ভাল পাত্র আসবে,ওরা তোকে পছন্দ করেনি।আমিও কিছুই জানি না ভেবে দুখী মুখ করে বলি এইজন্যই তো বলছি আমার মার্ষ্টাসটা শেষ হতে দাও।
আবার ঘটক হাজির হন।আমি বলি মা ছেলে তো বেঁটে,আমায় কোলে নিয়ে ওঠতে হবে বাসে।তারপর আরেকটা কে বলি এ তো লম্বু,আমায় তো মালাবদলের সময় কুর্সিতে দাঁড়াতে হবে।আবার কাউকে অন্ধকারে বিড়াল ভাবব।কারণ পাত্রের চোখ বিড়ালের মতন।আবার কোন ছেলের মাথায় রুপালি কয়েকটা চুল দেখতে পেয়েছি,ও মা ছেলে তো বুড়ো।একদিন মা বলেই ফেলল অতি বড় সুন্দরীর জোটে নাকো বর ,ঘর।শোন তোর নিজের কোন পছন্দ থাকলে বলিস।হায় রে আমার তো কোন বিশেষ বন্ধু নেই।
কলেজে একদিন নবীনবরণ উৎসবে শাড়ি পড়তে হবে।আমি সর্বদা অলীক কল্পনায় ভাসি,তাই ভাবি ,আমার বর সুন্দর হবে।পড়াশুনায় ভাল হবে,ভাল চাকরি করবে।কিন্তু কাউকেও চোখে পড়ে না।
কলেজে পৌঁছানোর আগের মূহুর্তে বাস থেকে নামতে গিয়ে ধপাস।কি লজ্জা উঠতেও পারছিলাম না।হঠাৎ একটা সাদা গাড়ি থেকে এক রাজপুত্র হাত বাড়িয়ে আমায় তুলল।
আহা কি দেখতে।এবার তার মুখ শয়নে স্বপনে দেখতে পাচ্ছিলাম।বন্ধুরা বোঝাল ছেলেটা বিবাহিত হতে পারে ।ধুস ছেলেরা কেন রে সিঁদুর লাগায় না।সবাই হা হা করে হেসে ওঠে।
কোথায় পাবি তাকে,তার চেয়ে যে পাত্র কাল আসবে ,ভাল লাগলে বিয়ে করে ফেল।আমার বাবা মায়ের বয়স হচ্ছে,এই বলে বন্ধুরা অনেক জ্ঞান দিল।
ঐ ছেলেটা আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।সত্যিতো কোথায় পাব ওনাকে।
সেজে বসলাম ,পাত্রের বাড়ির সবাই কে প্রনাম করতেই সেই সুদর্শনের সাক্ষাৎ।ও নাকি আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।হঠাৎ ছেলেটা বলে আপনার মেয়েকে কিছু খাওয়ান না।মা বলে কেন বাবা আমার মেয়ের স্বাস্থ্য তো ঠিক আছে।আরে ও তো রাস্তায় পড়ে যায়। মা ব্যাপারটা জানত,সেদিন তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার কথা জিজ্ঞাসা করতেই সোমা মা কে গড়গড় করে যা বিপত্তি হয়েছিল. বলেছিল।
হুম তারপর আর কি,আমার মনে দাগ কাটা ছেলের সাথেই বিয়ে হল। কপালটা মন্দ ছিল না।