এখানে ভালোই আছি, বেশ ভালো আছি নানাবিধ
কীটপতঙ্গের মাঝে। কখনও কখনও
গা বেয়ে মসৃণ ওঠে তারা, ইচ্ছে হলে কেউ কেউ
হঠাৎ কামড়ে ধরে। তেমন কিছুই নয়, জ্বালা করে কয়েক মিনিট।
ছোট বড় গাছপালাদের স্নিগ্ধ, নিঃশর্ত সবুজ
মায়ায় ভালোই আছি ইদানীং। কোনও কোনও বন্য প্রাণী দূর
থেকে লক্ষ্য করে এই আহত আমাকে, কেউ কেউ
গা চেটে আমার ফিরে যায় প্রিয় সঙ্গীদের কাছে।
তোমাদের বান্ধব শ্যামল আমি, ভীরু এক নিরস্ত্র যুবক
এ দেশের, পলাতক পুর্বপুরুষের বাস্তুভিটা থেকে, যেখানে রয়েছে
নিঃস্পন্দ, নিষ্প্রাণ পড়ে বিধবা মা, হিংসা আর লালসা-তাড়িত
নরপশুদের সমবায়ী নিপীড়নে
আমার কুমারী বোনটির কলঙ্কিত, প্রতিবাদী লাশ-এই দৃশ্য
দেখে কাঁপে আকাশ এবং ভাঙা চাঁদ কান্নায় লুকায় মুখ!
এখানে ভালোই আছি গাছপালা, ঝোপঝাড় নানা
কীটপতঙ্গের, পাখি আর পশুদের
দয়ালু সংসারে। না রহিম, না বশির, না আমিন
তোমরা আমাকে আর ফিরে যেতে বলো না সেখানে,
আমি সেই শ্মশানে যাব না। এই ঘোর অবেলায়
যা বলছি, তার উৎস নয় কণ্ঠ। আমার দু’চোখ, লাঠিপিষ্ট
দশটি আঙুল, ভাঙা নাক আর থ্যাতলানো বুক
বিশ্বস্ত কথক এই নিরালায়। প্রিয় বন্ধুগণ, ফিরে যাও
আপন নিবাসে, নইলে তোমরা এখানে
আবিষ্কৃত হলে দ্রুত বনে যাবে পশুদের সহজ শিকার। কোন পশু?
তোমাদেরই প্রতিবেশী, মুখের আদলে
কিছু মিল থাকলেও আচরণে ওরা ঠিক নিখুত জল্লাদ।
যাও, ফিরে যাও ঘরে। তোমাদের প্রতি
নেই কোনও অভিমান, অনাস্থাও নেই। এখানে থাকব শুয়ে
একা রঙধনুর শয্যায়, আহ্লাদিত প্রজাপতি
নাচবে আমাকে ঘিরে, সুকোমল পাখির পালকে
মুছে যাবে খেদ, ক্লান্তি, দু’চোখের জলধারা আর
ভবঘুরে মেঘ গান শোনাবে ঈষৎ দূরে থেকে রয়ে সয়ে
এবং উঠবে সেরে আস্তেসুস্থে আমার বুকের
ক্ষতগুলি, এখানেই গড়ে নেব নিরালা সংসার।