এই সড়কে আমার দৃষ্টিপথে মুহূর্তে ঝলসে ওঠে
অনেকগুলো মুষ্টিবদ্ধ হাত। সেসব
হাত থেকে হীরকদ্যুতির মতো ঝরছে শপথ, যেন জীবন
সারি সারি হাতের ভেতর পুরে দিয়েছে
অপূর্ব এক বোধ, যা নিমেষে বদলে দেয় প্রাক্তন
দৃষ্টিভঙ্গি। রাস্তার ধারের বাড়িগুলোর
বারান্দা থেকে ঝুঁকে-দাঁড়ানো সব মানুষ
বিস্মিত চোখে তাকায় সেসব উত্তোলিত হাতের দিকে।
এই হাতগুলোর নিপুণ চাঞ্চল্যে কলকারখানার চাকা ঘোরে,
এই খেটে-খাওয়া হাতগুলো অবিরত গড়ছে
চোখ-ধাঁধানো পুঁজি। এই হাতগুলো রোদ আর
জ্যোৎস্নার চুমোয় পাবলো নেরুদার কবিতা হ’য়ে দিনরাত
ঝলসাতে থাকে; ট্রাম্পেটের মতো।
এই সব হাত কখনও শ্রমের ক্লান্তি ভুলে থাকার জন্যে
দিশি মদে চুর হ’য়ে ঘরে ফেরে, কখনও
সপ্রেম ফুল গুঁজে দেয় নারীর খোঁপায়,
এই সব হাত সস্নেহে বুকে টেনে নেয় ছেলেমেয়েদের,
এই সব হাত সূর্যকে স্পর্শ করতে চায়, অন্ধকার রাতে
হ’য়ে উঠতে চায় কালপুরুষ।
এই হাতগুলো এখন প্রধান সড়কে, ওরা এখন
দ্রুত অগ্রসরমান পতাকা। ওরা আগেই জেনে গেছে,
একদা যাদের যন্ত্রণায় সড়ক, বস্তি, কলোনি,
অধ্যাপক, লেখক, বুদ্ধিজীবীর শান্তির নীড় ভেসেছে রক্তে,
যাদের আলখাল্লায় রক্তচিহ্ন, তারাই আজ মতলববাজ রাজনীতিকদের
দহলিজে কথার তুবড়ি ফোটাচ্ছে, ধর্মের বুলি ঝেড়ে
মানুষকে কুসংস্কারের পিঁজরাপোলে ঢুকিয়ে
হিংস্র আর অমানবিক ক’রে তুলতে চায়। সড়কে উদ্ভাসিত
হাতগুলো প্রতারণার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেই
মুক্তিযুদ্ধের সূর্যোদয় অন্তরে নিয়ে মে-দিনের গৌরবদীপ্ত
ডাক হ’য়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই আছড়ে পড়ছে
প্রতিক্রিয়াশীলতার সব খোঁড়লে।