Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উপেক্ষিতা যশোধরা || Sanjit Mandal

উপেক্ষিতা যশোধরা || Sanjit Mandal

কার পথ প্রান্তে চেয়ে যুগ হতে যুগান্তরে সিক্ত আঁখি মোছ তবে রাজনন্দিনী তুমি বধু যশোধরা!
যে করুণ সিক্ত আঁখি নিশীথে রয়েছে ভাসি দূর নভে নীলিমার পানে।
সেখানে কি সেই শুভক্ষণে আচম্বিতে দেয় দেখা কালপুরুষের রেখা,
রজনীর সেই মধ্যযামে।যখন অগন্য তারা চেয়ে রয় ব্যথাতুর‍্য,
দিশাহারা হয়ে তবু কপিলাবাস্তুর সেই লুম্বিনী উদ্যানে!
গৌতম চলেছে বুদ্ধ-ঞ্জান অণ্বেষণে।
পৃথিবীর যত কিছু শোক দু:খ তাপ, জরাব্যাধি, রোগ অবসাদ সব কিছু ধুয়ে মুছে করে দেবে সাফ যা আছে যেখানে।

নিজ গৃহে মনস্তাপে,সে দিন নিশীথে রাতে আধো ঘুমে আধো জাগরণে,
দারা পুত্র পরিবার সুখের সংসার যার, শুয়ে তারা আপনার মনে।
আছে বৃদ্ধ রাজা শুদ্ধোদন,শাক্য রাজ্য পালিবার, আছে মাতা মায়াদেবী, ভরা সংসার তার, যেথা নিদ্রামগ্ন গোটা রাজপরিবার।
তবু তুমি চলে গেলে ধীরে, সব মায়া মমতারে ছেড়ে,আপন ইচ্ছাতে।
রাজবেশ ছেড়ে তুমি চলেছ আঁধার রাতে হবে নিরুদ্দেশ!
পরবাসে,কোন এক অমৃত পরশে, মুক্তি এনে দেবে তুমি বিশ্ব জগতেরে, হইয়া দেবতা!
আমি হেথা তন্দ্রাহারা, আকাশের শুকতারা,কোলে করে রাখি ধরে অবোধ সন্তানে।
শাপভ্রষ্টা, চেয়ে রই চলমান দেবতার পানে।

হে জীবনস্বামী,আমি তব পথগামী জীবনে জীবনে।
তুমি রাজপুত্র জানি এসেছি ভুবনস্বামী বহু পুণ্য মানি।
আজি এই দুর্যোগের রাতে কোন অপরাধে প্রভু, ছেড়ে চলে যাও তবে, ফেলে দিয়ে শূন্যশয্যা খানি।
ভেবেছিনু,বহু জনমের বুঝি বহু পূণ্যফলে এসেছি তোরারই কোলে রাজসুখ মানি।
আজি এ দুর্যোগ রাতে, মন্দ ভাগ্য লয়ে সাথে, কেমনে দেখাব মুখ,নবীন প্রভাতে?
যদি রাজ্যবাসী সবে জিঞ্জাসে সকলে সাথে, কেন তুমি দিলে যেতে তোমারে ছাড়িয়া?
প্রেমের সে মায়া ডোরে পারিনি বাঁধিতে যারে, সব প্রেম ব্যর্থ করে ফেলে দিয়ে গেল চলে আমারে ত্যজিয়া।
এ আমার পরাজয়, এই বুঝি বিধিলিপি এই ভ্যগ্যলিখা!

তুমিতো করুণাঘন, দেবতার পুত্র সম প্রেমময় ভগবানই তব পরিচয়।
কোন বাল্যকাল হতে আহত মরাল বুকে সেবা দিলে করুণা অপার।
ক্রুদ্ধ দেবদত্ত, সেই কুপিত অন্তরে,কাড়িতে পারেনা তারে, রাজসভা বিচারের ঘরে।
সেই তুমি ছেড়ে গেলে নবজাত শিশুটিরে,যে পেয়েছে মুক্তি তার মাতার জঠরে।
তব স্নেহ, দয়া মায়া, সব করুণার ছায়া, কোনো কিছু রুধিল না গৃহত্যাগ হতে?

আমি নারী, হতভাগী, বঞ্চিত সবারি, জন্ম হতে সহিতেতো পারি, যত দু:খ, শোক ব্যথা, প্রবল উত্তাপ, এই আমাদের ভাগ্য, এই বুঝি বিধাতার শাপ!
মানুষের দয়া, অবহেলা,একরাশ ঘৃণা অপমান,নি:শেষে করিয়া পান হয়েছি জননী!
এই মম ভাগ্য মানি, এ যে সেই বিধাতার দান, বিষ পান করে তুলি অমৃত সমান।
যত কিছু ক্লেদ গ্লানি তুমি দিয়েছিলে আনি সবই তো সয়েছি আমি ব্যথিত অন্তরে।
তাই হোক, তবে তাই হোক,সে কথা জানুক লোক, তুমি হবে জগতের স্বামী!
আমি হেথা মায়া ভরা রাজ্যের মঙ্গল ঘড়া পূর্ণ করে চেয়ে রব তব পথ পানে।

শোক, দু:খ,ভয়, ত্রাস,জরা, ব্যধি মৃত্যুহাস তুমি করে নেবে জয়।
তোমার কীসের ভয়?
একবারও ভেবেছ কি কতখানি কাঁদিয়াছি যুগে যুগে স্বামী পুত্র মঙ্গলের লাগি।
আমি নয় শত জনমের সেই অভাগিনী নারী।
মোর ভাগ্যরবি বুঝি গিয়েছিল ছাড়ি মোর নারী জনমের সেই কুলগনে।
কী দোষ করিল বলো পুত্র আপনার?
সে কেন বঞ্চিত হবে তব স্নেহ পেতে তার পিতার কোলেতে? যত দায় সে শুধু মাতার!

আমি যে অবোধ নারী,কিছুতে বুঝিতে নারি যে পারে যেমন করে দোষ দেয় মোরে।
শুধু চেপে ধরে,যা কিছু সম্পদ মোর নিত্য ওরা কাড়ে, আমি নি:স্ব রিক্ত হই ব্যথিত অন্তরে।
ওগো মহাঞ্জানী, জেনেছ কি সংসারের কত ক্লেদ গ্লানি, কতখানি বিষ পান করে হয় সে জননী, যুগে যুগে দেশে দেশান্তরে?
তুমি গেছ প্রভু মোর,ভেঙে দিয়ে ফুলডোর জগতের কল্যাণ সাধিতে।
বিশ্বলোকে জয়গান মুখরিত হবে প্রাণ,তব নাম গানে।
আমি হেথা যশোধরা, তবু যশ দিলো নাকো ধরা কভু অন্তরে বাহিরে!
মানুষের ইতিহাস কভু করিবেনা ফাঁস কতশত যশোধরা কেঁদে হয় দিশাহারা ব্যথিত অন্তরে।
কপিলাবাস্তুর আলো ম্লান হয়ে গেল বুঝি যশোধরা শোকে।
পৃথিবীতে যত যশোধরা আছে তারা সবে ম্লান মুখে ভাসে অশ্রুজলে,
এ নহে জাতক কথা এ শুধু নারীর ব্যথা বলে যাই কবিতার ছলে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *