রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – কেকয় দেশে ভরত কর্ত্তৃক তিন কোটি গন্ধর্ব্ব বধ ও শ্রীরামাদির অষ্টপুত্রের রাজ্যাভিষেক
এগার হাজার বর্ষ লোকের পালন।
পাত্র মিত্র সুখে আছে আর প্রজাগণ।।
চারি ভায়ের মাতা মরে কাল অবসান।
ভাণ্ডার বিলান রাম করে নানা দান।।
কৌশল্যা কৈকেয়ী আর সুমিত্রা সুন্দরী।
দশরথ নৃপতির প্রিয় সহচরী।।
ক্রমে মরিলেন আর সাত শত রাণী।
নিজালয়ে আনিলেন ক্রমে দণ্ডপাণি।।
যাঁর পুত্র ভগবান রাম মহামতি।
স্বর্গে বাস তাঁহার কে করে অব্যাহতি।।
পাত্র মিত্র সহ রাম আছেন রাজকার্য্যে।
কেকয় দেশের দ্বিজ আইল সে রাজ্যে।।
দধি দুগ্ধ আর মধু কলসী কলসী।
সন্দেশ অমৃত-তুল্য আনে রাশি রাশি।।
মৃগ পক্ষী জীব জন্তু আনে যত পারে।
অন্য অন্য দ্রব্য যত আনে ভারে ভারে।।
বসন ভূষণ আদি নানা বস্ত্র আনে।
রাখিল সকল দ্রব্য রাম-বিদ্যমানে।।
লোমশ গন্ধর্ব্ব রাজা সর্ব্বলোকে জানে।
দৌরাত্ম্য আমার রাজ্যে করে রাত্রিদিনে।।
আপনি আসিয়া তারে করহ দমন।
অথবা শ্রীরাম তুমি পাঠাও নন্দন।।
মামার সংবাদ পেয়ে রাম হরষিত।
ডাক দিয়া ভরতেরে কহেন ত্বরিত।।
শত্রাজিৎ মামা মোর কে না তাঁরে জানে।
পাঠালেন বার্ত্তা এক দ্বিজবর-স্থানে।।
তিন কোটি গন্ধর্ব্ব সে বড়ই দুর্জ্জয়।
তাঁর রাজ্য নিতে চাহে বড় পাই ভয়।।
দুই পুত্র তোমার যে সমরে প্রখর।
বিক্রমে দুর্জ্জয় তারা দোঁহে ধনুর্দ্ধর।।
গন্ধ্বর্ব্ব মারিয়া দুই পুত্রে কর রাজা।
রাজ্য বসাইয়া যে পালহ সুখে প্রজা।।
গন্ধর্ব্ব সু-অস্ত্র ছিল রামের প্রধান।
সেই সে গন্ধর্ব্ব-অস্ত্র তাঁরে দেন দান।।
দুই পুত্র লইয়া ভরত তথা যান।
ধায় প্রেত পিশাচ করিতে রক্ত পান।।
সসৈন্যে ভরত যান মাতুলের ঘরে।
রহিল সামন্ত সৈন্য বাটীর বাহিরে।।
ভাগিনেরে দেখিয়া হরিষ শত্রাজিৎ।
ভোজন করিয়া দোঁহে বসিল সহিত।।
এইরূপে প্রভাত হইল বিভাবরী।
তিন কোটি গন্ধর্ব্ব আইল ত্বরা করি।।
চারিভিতে মারে শেল জাঠি ও ঝকড়া।
অস্ত্রে বিন্ধি পড় ভরতের হাতি ঘোড়া।।
সাত দিন যুদ্ধ হৈল কারো নাহি জয়।
দেখিয়া অমরগণে লাগিল বিস্ময়।।
গন্ধর্ব্ব না মারা যায় অতি ভয়ঙ্কর।
ভরত গন্ধর্ব্ব অস্ত্র ছাড়েন সত্বর।।
এক বাণে জন্মিল গন্ধর্ব্ব তিন কোটি।
ছয় কোটি গন্ধর্ব্বে লাগিল কাটাকাটি।।
সহজে গন্ধর্ব্ব-জাতি বড়ই দুর্নীতি।
তাহাতে অধিক যুদ্ধ জ্ঞাতির সহিত।।
ছয় কোটি গন্ধর্ব্বে উঠিল মহামার।
গন্ধ্বর্ব্ব-অস্ত্রেতে হয় গন্ধর্ব্ব সংহার।।
মারিয়া গন্ধর্ব্ব বসাইল দেশ এক।
দুই পুত্রে ভরত করিল অভিষেক।।
পুষ্করের জন্যে রাম দিলেন সেই পুরী।
পুষ্কর দেশের সেই পুষ্কর-অধিকারী।।
দ্বাদশ বৎসর বসাইয়া সেই পুরী।
আইলেন শ্রীভরত অযোধ্যা-নগরী।।
মহাহ্লাদে শ্রীরাম করেন সম্ভাষণ।
শুনিয়া গন্ধর্ব্ব-বধ হরষিত মন।।
শ্রীরাম বলেন যোগ্য ভরত-কুমার।
দুই ভাইপোয়ে দেন রাজ্য-অধিকার।।
চন্দ্রকেতু অঙ্গদ এ দুই সহোদর।
রামের আজ্ঞায় দোঁহে হৈল দণ্ডধর।।
অঙ্গদ পাইল মল্লদেশ অধিকার।
অশ্বদেশ অধিপতি চন্দ্রকেতু আর।।
লক্ষ্মণের দুই পুত্র হইলেক রাজা।
রাজ্য বসাইয়া পালে বিধিমতে প্রজা।।
শত্রুঘ্নের দুই পুত্র পরম সুন্দর।
শত্রুঘাতী সুবাহু এ দুই সহোদর।।
চারি ভায়ের অষ্ট পুত্র হৈল মহামতি।
শত্রুঘ্নের দুই পুত্র মথুরাধিপতি।।
লব কুশ পাইলেন অযোধ্যা নন্দীগ্রাম।
অষ্ট জনে অষ্ট রাজ্য দিলেন শ্রীরাম।।
এগার হাজার বর্ষ রামের পালনে।
পাত্র মিত্র আদি সুখে আছে সর্ব্বজনে।।
কৃত্তিবাস কবিত্ব অমৃতে আমোদিত।
গাহিল উত্তরকাণ্ডে রামের চরিত।।