রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – শ্রীরামের অশ্বমেধ যজ্ঞ সমাপন ও পুনর্ব্বার রামায়ণ গান
এইরূপে ব্রহ্মা প্রবোধেন নানা ছলে।
বলেন পৃথিবী শ্রীরামের হেনকালে।।
শ্রীরাম আমারে কোপ কর অনুচিত।
অবশ্য ভোগিতে হয় ললাটে লিখিত।।
কোন্ দোষে মম কন্যায় দিলে বনবাস।
বনবাস দিয়া কেন আন নিজ বাস।।
আমার নিকটে কন্যা তিলেক না থাকে।
স্বমূর্ত্তি ধরিয়া তিনি গেলেন গোলোকে।।
বিষ্ণু-স্থানে হইলেন আপনি কমলা।
নাগলোকে সীতা সঞ্চারিলা এক কলা।।
মর্ত্ত্যে আছে যত লোক পূজেন দেবতা।
এক কলা তথায় সে সঞ্চারিলা সীতা।।
দৈবযোগে সীতা সঞ্চারিলা তিনলোক।
সীতার লাগিয়া রাম কেন কর শোক।।
এই লোকে সীতা সনে নাহি দরশন।
বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মীর সঙ্গে হবে সম্ভাষণ।।
সে সীতা স্পর্শিবে যেবা হইবেক সতী।
তাঁহার সমান নহে লক্ষ্মী ভগবতী।।
অসতী যতেক নারী করে অনাচার।
সেই অনাচারে নষ্ট হয়ত সংসার।।
এত যদি পৃথিবী রামেরে বলে বাণী।
হেনকালে শ্রীরামেরে প্রবোধেন মুনি।।
সীতার লাগিয়া কেন করহ রোদন।
ভালমতে প্রভাতে শুনিহ রামায়ণ।।
প্রভাতে প্রভাতকৃত্য করি সমাপন।
বসিলেন শ্রীরাম শুনিতে রামায়ণ।।
সঙ্গীত শুনিতে রাম বসেন সভায়।
রামের তনয় দুটি রামায়ণ গায়।।
হাতে বীণা করিয়া ললিত গীত গায়।
শুনিয়া সকল লোকে মোহিত সভায়।।
যজ্ঞ অবসানে গীত ছিল অবশেষ।
গাহিতে লাগিল গীত তাহার বিশেষ।।
কালপুরুষের সনে রামের দর্শন।
সংসার ছাড়িয়া রাম করিবে গমন।।
দুর্ব্বাসা আসিয়া দ্বারে রহিবেন কোপে।
লক্ষ্মণেরে বর্জ্জিবেন সে মুনির শাপে।।
স্বর্গবাসে যাইবেন লইয়া সংসার।
ইহা বিনা বাল্মীকি না লিখিলেন আর।।
এই গীত শুনি রাম দুঃখিত অন্তরে।
বিদায় করেন সর্ব্বলোকে যজ্ঞ-পরে।।
বিপ্র সব তুষ্ট হৈল শ্রীরামের দানে।
ধনী হয়ে মুনিগণ গেল নিজ স্থানে।।
মেলানি করিয়া দেশে যান বিভীষণ।
সুগ্রীব অঙ্গদ চলে লয়ে কপিগণ।।
বিদায় হইয়া চলে পৃথিবীর রাজা।
নানা ধনে শ্রীরাম করেন সবে পূজা।।
জনক রাজারে রাম করেন স্তবন।
যজ্ঞের দক্ষিণা দেন বহুমূল্য ধন।।
বাল্মীকি প্রভৃতি করি যত মহামুনি।
নিজস্থানে গেল সবে করিয়া মেলানি।।
ব্রহ্মা আদি করিয়া যতেক দেবগণ।
দেবলোকে সকলেতে করেন গমন।।
এ উত্তরকাণ্ডে লব কুশের আখ্যান।
কৃত্তিবাস গায় গীত অমৃত-সমান।।