রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – লব কুশের সহিত যুদ্ধে শ্রীরামের পরাজয় ও মূর্চ্ছ
কুশ বলে লব তুমি মোর জ্যৈষ্ঠ ভাই।
সারিয়া চলিল রাম আমা দোঁহার ঠাঁই।।
একবারে দুই ভাই করিব সংগ্রাম।
চল ঝাট মারি গিয়া আমরা শ্রীরাম।।
কুশ হৈতে অস্ত্র-শিক্ষা লব ভাল ধরে।
এড়িয়া চিকুর-বাণ দিক্ আলো করে।।
লবের বাণেতে ব্যর্থ শ্রীরামের বাণ।
আকাশেতে অগ্নি জ্বলে পর্ব্বত সমান।।
লবের বাণেতে সব অন্ধকার ঘুচে।
সন্ধান পূরিয়া গেল শ্রীরামের কাছে।।
একবারে দুই ভাই পূরিল সন্ধান।
বাণের প্রতাপ দেখি পাছু হন রাম।।
ক্ষণে রাম আগু হন ক্ষণে দুই ভাই।
বাণের ঠনঠনি শুনি লেখাজোখা নাই।।
হইল রামের বাণে ক্লান্ত দুই জন।
শঙ্কান্বিত লব কুশ ভাবে মনে মন।।
যে অস্ত্র যোড়েন রাম করিয়া শৃঙ্খলা।
সে লব কুশের গলে হয় পুষ্পমালা।।
লব কুশ দুই ভাই যে যে অস্ত্র ফেলে।
রামের চরণ বন্দি প্রবেশে পাতালে।।
এইরূপে পিতা পুত্রে বাজিল সমর।
স্বর্গেতে কৌতুক দেখে যতেক অমর।।
কেহ কারে নাহি পারে সমান উভয়।
পিতার সদৃশ পুত্র কেহ ছোট নয়।।
দুই দিকে দুই ভাই রাম একেশ্বর।
বাণে বিদ্ধ শ্রীরাম হইলেন কাতর।।
নানা অস্ত্র দুই ভাই এড়ে দুই ভিত।
কোন্ দিক রাখিবেন শ্রীরাম চিন্তিত।।
চাহিতে লবের পানে কুশ এড়ে বাণ।
লব বিন্ধে যদ্যপি কুশের পানে চান।।
একবারে দুই ভাই পূরিল সন্ধান।
মূর্চ্ছিত হইয়া ভূমে পড়েন শ্রীরাম।।
পূর্ব্বের নির্ব্বন্ধ যেই আছে ব্রহ্মশাপ।
সমরে পুত্রের হাতে হারিবেন বাপ।।
লব এড়িলেন বাণ নামে অশ্বকলা।
ধনুর্ব্বাণ সহিত রামের বান্ধে গলা।।
কুশ বাণ এড়িল অক্ষয়জিৎ নাম।
বুকেতে বাজিয়া ভূমে পড়িলেন রাম।।
ছটফট করে রাম প্রাণ মাত্র আছে।
শীঘ্র গেল দুই ভাই শ্রীরামের কাছে।।
নড়িতে নারেন রাম বাণে অচেতন।
লব কুশ কাড়ি লয় গাত্র-আভরণ।।
কানের কুণ্ডল নিল মাথার টোপর।
নিল হার কেয়ূর হাতের ধনুঃশর।।
সংগ্রামের বেশ কাড়ি লয় দুই ভাই।
অস্ত্র শস্ত্র ধনুর্ব্বাণ কিছু ছাড়ে নাই।।
হনুমান জাম্ববান উভয়ে অমর।
দুই জন নাহি মরে শত মন্বন্তর।।
উঠিবার শক্তি নাই বাণে অচেতন।
সেই পথ দিয়া লব কুশের গমন।।
যাইতে দেখিল পথে বানর ভল্লুক।
মুখ দেখি উভয়ের বাড়িল কৌতুক।।
সাঙ্গি বান্ধি উভয়কে লইলেক স্কন্ধে।
বণজয়ী দুই ভাই চলিল আনন্দে।।