রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – শ্রীরামচন্দ্রের বিলাপ
হরি হরি ক্ষুণ্ণ মন, দেখিয়া অদ্ভুত রণ,
ভূমিতে বসিয়া রঘুনাথ।
ভ্রাতৃ-মৃত্যু সৈন্য ধ্বংস, পরাভূত রঘুবংশ,
শোকানলে হয় অশ্রুপাত।।
দৈব যদি হয় বাম, সিদ্ধ নহে কোন কাম,
যজ্ঞ হৈল সংহার কারণ।
তখনি জানিল মন, জিনিতে নারিব রণ,
যখন পড়িল শত্রুঘন।।
সুদিন কুদিন দুই, বিধাতার সৃষ্টি এই,
এবে সেই বীর হনুমান।
যে গন্ধমাদন আনে, কুম্ভকর্ণে জিনে রণে,
লোটায় শিশুর খেয়ে বাণ।।
সুগ্রীব প্রভৃতি বলে, সহায় সাগর-জলে,
মহাযুদ্ধ কৈনু লঙ্কাপুরে।
হেন জনে শিশু মারে, অঙ্গদ দেবেন্দ্র মরে,
এত করাইল দৈবে মোরে।।
কত ব্রহ্মবধ কৈনু, যজ্ঞ মধ্যে ভস্ম দিনু,
পাতক করিনু কত আর।
কত বড় নাম ছিল, দণ্ড মধ্যে ভস্ম হৈল,
পরাভব হইল আমার।।
সে বংশে সগর-রাজা, রঘুবীর মহাতেজা,
ভগীরথ বেণ মহাশয়।
হেন বংশে জনমিয়া, না করি বংশের ক্রিয়া.
জিনে মোরে মুনির তনয়।।
মরিল যে তিন ভাই, মিত্রবর্গ কেহ নাই,
যে সবারে আনিলাম রণে।
মরিল যাহার পতি, অনাথা হইল সতী,
অকীর্ত্তি রহিল এ ভুবনে।।
বিধাতা নির্দ্দয় হয়ে, এত বড় বাড়াইয়ে,
সর্ব্বনাশ করিলেক শেষে।
হায় হায় কি হইল, বংশে কেহ না থাকিল,
পৃথিবী পূরিল অপযশে।।
মাতৃগণ আছে ঘরে, প্রাণ দিবে অনাহারে,
শত্রুগণে নাশিবেক পুরী।
অযোধ্যা কিষ্কিন্ধ্যা লঙ্কা, হইল জীবনশঙ্কা,
পতিহীনা হৈল সর্ব্ব নারী।।
সূর্য্য বিনা দিবা নহে, জল বিনা মৎস্য দহে,
অরাজক পুরীর সংহার।
এই সে থাকিল দুঃখ, না দেখি বন্ধুর মুখ,
কোথায় রহিল পরিবার।।
বিদরিয়া যায় বুক, না দেখি সীতার মুখ,
মজিল যে অযোধ্যার রাজ্য।
চারি ভাই একমাসে, মরিলাম এক দেশে,
প্রতিকূল বিধির এ কার্য্য।।
দুই শিশু যম সম, নর বলি করি ভ্রম,
কুম্ভকর্ণ বিম্বা দশানন।
জাতিস্মর দুই জন, করিতে আইল রণ,
পূর্ব্ব বৈর করিতে শোধন।।
কিম্বা সে দূষণ খর, হইয়া আইল নর,
পূর্ব্ব বৈর করিতে শোধন।।
কিম্বা সে দূষণ খর, হইয়া আইল নর,
পূর্ব্ব বৈরী করিতে সংহার।
মারিল সকল জনে, সুগ্রীব শ্রীবিভীষণে,
যত সব সুহৃদ আমার।।
সুহৃদ আছিল যারা, প্রায় গতপ্রাণ তারা,
আর কারে করিব সহায়।
আজি দুই শিশু মারি, কিম্বা সে আপনি মরি,
তবে ক্ষত্রধর্ম্ম রক্ষা পায়।।
আজি দুই শিশু মারি, সে রক্তে তর্পণ করি,
তবে আমি রঘুবংশ হই।
যুঝিব শিশুর সনে, এই দাঁড়াইনু রণে,
নাহি দেখি গতি ইহা বই।।
যুঝিব শিশুর সনে, এই দাঁড়াইনু রণে,
নাহি দেখি গতি ইহা বই।।
এতেক ভাবিয়া মনে, শ্রীরাম চলেন রণে,
জীবনেতে হইয়া হতাশ।
রামারণ সুধাভাণ্ড, তাহার উত্তরকাণ্ড,
গাহিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।