রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – শ্রীরামচন্দ্রের রাজসূয়-যজ্ঞ করিবার ইচ্ছা এবং ভরত কর্ত্তৃক তাহা নিবারণে অনুরোধ
সভা করি বসিলেন কমল-লোচন।
ভরত শত্রুঘ্ন আসি বন্দিল চরণ।।
রাম বলেন ভরত লক্ষ্মণ শত্রুঘ্ন।
একমনে শুন সবে আমার বচন।।
ব্রহ্মবধ করিয়া করেছি মহাপাপ।
তেকারণে পাই আমি বড় মনস্তাপ।।
রাজসূয়-যজ্ঞ আমি করিব এখন।
তাহার উদ্যোগ কর ভাই তিন জন।।
ইহা শুনি তিন ভাই করে হাহাকার।
রাজসূয়-যজ্ঞে হয় সবংশে সংহার।।
পূর্ব্বে রাজসূয় কৈল রাজা শশধর।
গৃহ পক্ষী পুড়ি লোক মরিল বিস্তর।।
রাজসূয়-যজ্ঞ কৈল দেবতা বরুণ।
মৎস্য মকর পুড়িয়া মরিল সে কারণ।।
রাজসূয়-যজ্ঞ কৈল দেব পুরন্দর।
সুরাসুর যুদ্ধ তাহে হইল বিস্তর।।
সগর নৃপতি পূর্ব্ববংশেতে তোমার।
পৃথিবীর রাজা ছিল গুণে বশ যাঁর।।
রাজসূয়-যজ্ঞ কৈল সেই মহাশয়।
বংশ মজাইল শেষে আপনা-সংশয়।।
ভরতের কথা রামে লাগে চমৎকার।
বিনয়ে রামের প্রতি কহে আরবার।।
হরিশ্চন্দ্র নামে রাজা তব পূর্ব্ব-বংশে।
রাজসূয়-যজ্ঞ করি দুঃখ পাইল শেষে।।
রাজা হরিশ্চন্দ্র দান করিয়া পৃথিবী।
পুত্র আদি বিক্রয় করিল মহাদেবী।।
রাজ্য ছাড়ি হরিশ্চন্দ্র যায় বারাণসী।
দক্ষিণা চাহিল তাহে বিশ্বামিত্র ঋষি।।
দণ্ডের আঘাতে মুনি করিল তাড়না।
স্ত্রী পুত্র বেচিয়া রাজা দিলেন দক্ষিণা।।
এত দুঃখ তবু না পাইল স্বর্গবাস।
রাজসূয়-যজ্ঞে রাজার এত সর্ব্বনাশ।।
অন্তরীক্ষে ফিরে রাজা কর্ম্মের দোষতে।
স্থান না পাইল স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালেতে।।
হেন রাজসূয়-যজ্ঞে কেন কর মন।
রাজসূয়-যজ্ঞ কৈলে সবংশে মরণ।।
অনাথের নাথ তুমি ত্রিজগৎপতি।
রাজসূয়-যজ্ঞ কৈলে ঘটিবে দুর্গতি।।
রাজসূয় না হইল ভরত কারণ।
ভরতের বাক্যে শ্রীরামের অন্য মন।।
ভরতের বাক্য যদি হৈল অবসান।
লক্ষ্মণ কহেন তবে রাম-বিদ্যমান।।
যোড়হাতে কহিলেন ঠাকুর লক্ষ্মণ।
অশ্বমেধ-যজ্ঞ কর কমল-লোচন।।
পূর্ব্বে ব্রহ্মবধ কৈল দেব পুরন্দরে।
ব্রহ্মহত্যা এড়াইল অশ্বমেধ করে।।