সিংঘানিয়া রোজ সকাল চারটেয় ওঠে
সিংঘানিয়া রোজ সকাল চারটেয় ওঠে। তার অ্যালার্মের দরকার হয় না। ছেলেবেলার অভ্যাস। ঠিক চারটেয় তার ঘুম ভাঙবেই। উঠে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে পুজোয় বসে। নিরেট সোনার তৈরি পাঁচ ইঞ্চি লম্বা গণপতি মূর্তিটি তার সঙ্গেই থাকে।
পুজো সেরে একটু ফলের রস খেয়ে সে বেড়াতে বেরোয়। ডাক্তার বলেই দিয়েছে দু’বেলা খানিকটা হাঁটতেই হবে। সিংঘানিয়ার দু’জন সহকারী এবং দু’জন দেহরক্ষী দু’পাশের ঘরে থাকে। সিংঘানিয়া কোথাও গেলে তারা ঘর পাহারা দেয়। চারজনই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রক্ষী। চারজনই স্বাস্থ্যবান এবং বুদ্ধিমানও। গণপতি কখনও যোগ্য লোক ছাড়া নেয় না। পাহারা দেওয়ার মতো তার অনেক কিছু আছে।
সিংঘানিয়ার একজন পঞ্চম পাহারাদারও আছে। সে হল বিশাল ডোবারম্যান কুকুর ডোরা। সেও হোটেলেরই ঘরে থাকে, সহকারী দু’জনের সঙ্গে।
ডোরা প্রভুভক্ত কুকুর। সকালে সিংঘানিয়ার সঙ্গে সেও বেড়াতে যায়। সরু কিন্তু শক্ত চেন দিয়ে বেঁধে তবেই তাকে নিয়ে বেরোয় সিংঘানিয়া। ডোরা কিলার ডগ।
সকালে কলকাতার রাস্তায় তেমন গাড়ি-ঘোড়া নেই।
হোটেল থেকে ময়দানের দূরত্ব বেশি নয়। গাড়ি নেওয়ার দরকার হয় না। সিংঘানিয়া নাতিদ্রুত হাঁটতে হাঁটতে ময়দানে পৌঁছে গেল। ডোেরা একটা গাছের তলায় প্রাতঃকৃত্য সেরে নেওয়ার পর সিংঘানিয়া কুকুরটার সঙ্গে একটা রবারের বল নিয়ে খানিকক্ষণ খেলা করল। একটু জিরিয়ে নিয়ে ফের জোরকদমে হাঁটা।
গুড মর্নিং মিস্টার সিংঘানিয়া।
মর্নিং।
কেমন আছেন?
গুড। ভেরি গুড।
সঙ্গে কুকুর কেন?
বেড়াতে নিয়ে এসেছি।
বাঃ বেশ ভাল।
হ্যাঁ ভাল।
তা হলে ভালই আছেন?
ভেরি গুড। ভেরি ভেরি গুড।
সামনে শর্টস আর কামিজ-পরা একজন হঠাৎ খুব ঠান্ডা হাতে পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করল।
সিংঘানিয়া অবাক হয়ে বলল, এ কী? মাগিং নাকি?
না মাগিং নয় সিংঘানিয়া।
তা হলে পিস্তল দিয়ে কী করবেন?
আই শ্যাল কিল ইউ।
কেন, আমি কী করেছি? আমি তো—
কথাটা শেষ হল না সিংঘানিয়ার। উপর্যুপরি এবং দ্রুত দুটি গুলি তাকে ছাদা করে দিল বুকে।
সিংঘানিয়া পড়ে যাচ্ছিল। কুকুরটা দুটি চিৎকার দিতেই তার মাথা ভেঙে গেল শক্তিশালী বুলেটে।
তারপর ময়দানের ঘাসে দুটি মৃতদেহ পড়ে রইল। একজন মানুষ ও একটি কুকুরের।
সকাল সাড়ে আটটায় ফোনটা পেল সর্বজিৎ।
আমি শবর বলছি।
বলো।
কী করছিলেন?
ফ্লাস্কে করে চা নিয়ে এলাম দোকান থেকে। এবার চা খাব।
বেশ বেশ। কখন উঠলেন ঘুম থেকে?
এই তো, সাড়ে ছ’টা-সাতটা হবে।
রিখিয়াতে তো আরও সকালে ওঠেন।
হ্যাঁ। মর্নিং ওয়াক করতে যাই।
কলকাতায় সেটা হচ্ছে না বুঝি?
নাঃ। কলকাতায় হাঁটব কোথায়? তার ওপর বৃষ্টি বাদলায় পথঘাট তো যাচ্ছেতাই।
আচ্ছা, বছর পাঁচেক কি তারও আগে আপনি একটা স্মল আর্মসের লাইসেন্স পেয়েছিলেন কি?
কেন বলো তো?
জাস্ট কৌতূহল।
হ্যাঁ। রিখিয়াতে থাকাটা কতখানি বিপজ্জনক সেটা আন্দাজ করতে না পেরে লাইসেন্স নিয়েছিলাম। পিস্তলও একটা কিনি।
পিস্তল না রিভলভার?
পিস্তল। ওয়েম্বলে।
কত বোর?
পয়েন্ট বত্রিশ।
সেটা কোথায়?
আমার সুটকেসেই থাকে।
সুটকেসটা কোথায়?
আমার কাছে।
আর একটা কথা।
বলো।
আপনার স্ত্রীরও একটা রিভলভার থাকার কথা।
হ্যাঁ। আছে। ওটার জন্য তুমিই লাইসেন্স বের করে দিয়েছিলে।
সেইজন্যেই জিজ্ঞেস করছি, রিভলভার কি উনি কিনেছিলেন?
অফ কোর্স। বাড়িতে ক্যাশ টাকা থাকে বলে কিনেছিল।
সেটা কি লুগার?
তা হবে। হ্যাঁ, লুগারই। পয়েন্ট বত্রিশ বোর।
বেশ, এবার কাজের কথা।
বলো।
আমি টেলিফোনটা ধরে আছি, আপনি উঠে গিয়ে সুটকেসটা খুলে দেখুন পিস্তলটা আছে কিনা।
কেন বলো তো!
দেখুন না।
সর্বজিৎ উঠে গিয়ে সুটকেস খুলল। কেনার পর জিনিসটা পড়েই আছে। দু’-তিনবার ফাঁকা মাঠে গুলি চালিয়েছিল সে। সেটাকে উদ্বোধন বলা যায়। তারপর কাজে লাগেনি। সুটকেস হাঁটকাতে হল কম নয়। একেবারে তলার দিকে প্লাস্টিকে মোড়া জিনিসটা পাওয়া গেল।
ফিরে এসে ফোন তুলে সে বলল, হ্যাঁ, আছে। কিন্তু কী হয়েছে শবর? আমি কাউকে খুনটুন করলাম নাকি?
কেউ কাউকে করেছে। ব্যাড নিউজ।
কে কাকে খুন করল শবর?
কে তা জানি না। তবে কাকে তা জানি।
প্লিজ কাম আউট। আমার ফ্যামিলির কেউ কি?
আরে না।
তা হলে?
সিংঘানিয়া।
বলল কী? কখন?
আজ সকালে৷ ময়দানে। ডিউরিং হিজ মর্নিং ওয়াক।
সর্বনাশ!
সঙ্গে একটা ডোবারম্যান কুকুর ছিল, সেটাও মরেছে।
গুলি নাকি?
হ্যাঁ। খুব ক্লোজ রেঞ্জ থেকে। সিংঘানিয়ার হিরের আংটিটাও নেই।
তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ?
না। তবে আপনার অ্যালিবাইটা পোক্ত হওয়া দরকার।
অ্যালিবাই?
হ্যাঁ, সকালে ঠিক কখন উঠেছেন ভেবে বলুন।
ভেবেই বলছি। ভাবতে দাও। …ছ’টা বেজে চল্লিশ মিনিট হবে।
আপনি আর্লি রাইজার, আজ এত দেরি হল কেন?
রিখিয়ায় তো প্রায় ভর সন্ধেবেলাই শুয়ে পড়তে হয়। রাত নটায়। এখানে তা হয় না। এসব কাণ্ডের ফলে মাথা গরম হয়ে ঘুম আসতে দেরি হয়েছিল।
ঘুম থেকে উঠে কী কী করেছেন?
নাথিং টু টেল অ্যাবাউট। টয়লেটে গেছি, মান করেছি। একটু জানালার ধারে বসে থেকেছি। তারপর চা আনতে বেরোলাম।
ব্যস? আর কিছু নয় তো?
না।
কোনও সাক্ষী আছে?
সাক্ষী? সাক্ষী কে থাকবে? ফ্ল্যাটে তো আর কেউ নেই।
দারোয়ান গোছের কেউ?
একজন দারোয়ান আছে ঠিকই। কিন্তু সে আমাকে কতদূর চেনে কে জানে। চিনতেও পারে।
ঠিক আছে। দরকার হলে তাকে জেরা করা যাবে।
শোনো শবর, সিংঘানিয়া আমার একজন পোটেনশনয়াল বায়ার। তাকে মারলে আমার প্রভূত ক্ষতি।
একদিকে ক্ষতি হলে অন্যদিকে লাভ।
কীসের লাভ?
ছবিগুলো এবার হয়তো কিনে নিতে পারবেন।
কিনে আর কী লাভ? বাজারে চাউর হয়ে গেছে।
তবু তো কিনতে চেয়েছিলেন।
হ্যাঁ। তখন বিবেচনাটা কাজ করেনি।
এখন করছে?
করছে।
আরও একটা খবর আছে।
কী খবর?
ছবিগুলো সিংঘানিয়ার ঘর থেকে চুরি গেছে।
বলো কী?
ঠিকই বলছি।
ছবির জন্যই মার্ডার।
তাই তো মনে হচ্ছে। আপনার দ্বিতীয় পিস্তল নেই তো!
না না। একটাই কাজে লাগে না।
সিংঘানিয়া খুন হয়েছে বত্রিশ বোরের বুলেটে?
তার মানে সন্দেহের আঙুল এখন আমার দিকে?
যা ভাববার ভাবতে পারেন।
আর যে-কেউ সন্দেহ করুক, তুমি কোরো না।
সন্দেহের অভ্যাসটা ছাড়তে চায় না সহজে।
আমাকে কী করতে বলো তুমি?
কিছু না। চুপচাপ থাকুন। সিংঘানিয়ার ছবি পাহারা দেওয়ার জন্য চারজন লোক ছিল।
তবু চুরি?
হ্যাঁ। একজন বেয়ারাগোছের লোক এসে খবর দেয় যে সাহেব ময়দানে খুন হয়েছে। ওরা চারজন দৌড়োয়। সেই ফাঁকে–
ওঃ।
মজা কী শুনবেন?
বলো।
যখন খবরটা দেওয়া হয় খুনটা তখনও হয়নি৷
যাঃ, তা হলে বেয়ারা জানল কী করে?
বেয়ারার মতো পোশাক হলেই বেয়ারা হতে হবে তা তো নয়। ওরা যখন যায় তখনও সিংঘানিয়া পুরোপুরি মরেনি।
কিছু বলে গেছে?
হ্যাঁ। বলে গেছে সে মারা গেলে ছবিগুলো যেন বোম্বেতে মিস্টার কুমারকে দেওয়া হয়।
বড্ড খারাপ লাগছে এসব শুনতে।
আপনার অ্যালিবাই পোক্ত থাকলেই হল।
সেটা পোক্তই আছে। তোমরা মানবে কিনা দেখো।
মানব। প্রমাণ পেলে নিশ্চয়ই মানব। আপনি দারোয়ানটার সঙ্গে কথা বলুন।
কী বলতে হবে?
সে আপনাকে চেনে কি না।
ধরো চেনে। তার পর?
জিজ্ঞেস করবেন, সকালে বাড়ি থেকে কেউ বেরিয়েছে কি না।
তার পর?
এইটুকুই আপাতত। ছাড়ছি।
দাঁড়াও। ইরা কী বলছে?
কী বলবে?
তার অ্যালিবাইও দেখছ তো!
অফ কোর্স।
ছবিগুলোর কী হবে শবর?
কী করে বলি? ছাড়ছি।
.
ইরাদেবী, আপনার রিভলভারটা কোথায়?
কেন?
দরকার আছে।
কেন দরকার বলুন।
জিনিসটা আছে তো!
আছে।
লাইসেন্সটা আমিই করিয়ে দিয়েছিলাম। মনে আছে?
হ্যাঁ।
জিনিসটা আপনি কখনও ব্যবহার করেছেন?
করেছি।
কীভাবে?
যখন লাইসেন্স করি তখন একজন অফিসার আমাকে বলেছিলেন রিভলভার কেনার পর যেন ফাঁকা জায়গায় গিয়ে কয়েকবার ফায়ার করি।
তাই করেছিলেন?
হ্যাঁ।
আর কখনও ব্যবহার করেননি?
ইরা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তেমন কিছু নয়।
ভেবে দেখুন। ব্যাপারটা ইম্পর্ট্যান্ট।
করেছি।
কীভাবে?
আমাদের বাড়িতে একবার চোর আসে।
কবে?
পাঁচ-ছয় মাস আগে।
তারপর?
জানালার গ্রিল খুলে ঢুকবার চেষ্টা করে। তখন আমি গুলি চালাই।
বটে! তার গায়ে গুলি লেগেছিল?
হ্যাঁ। তবে সিরিয়াস কিছু হয়নি। কারণ গুলি খেয়ে সে পালিয়ে যায়।
পুলিশে রিপোর্ট করেছিলেন?
না।
সে কী? রিপোর্ট করেননি কেন?
কিছু চুরি যায়নি, লোকটাও মরেনি। রিপোর্ট করে কী হবে?
লোকটা উন্ডেড হয়েছিল কি?
বোধহয় হয়েছিল। জানালার নীচে রক্তের দাগ ছিল। রাস্তা অবধি রক্তের ফোঁটা দেখা গেছে। তারপর আর ছিল না।
রিপোর্ট করলে ভাল করতেন।
আমার ভয় হয়েছিল, পুলিশ জানলে আমার রিভলভারটা বাজেয়াপ্ত করবে।
তা করার কথা নয়। লোকে এসব অকেশনে সেলফ ডিফেন্সের জন্যই আগ্নেয়াস্ত্র রাখে। রিভলভারটা কোথায় থাকে?
দিনের বেলা আলমারিতে চাবি দিয়ে রাখি। রাতে বালিশের পাশে নিয়ে শুই।
কেন বলুন তো! ও পাড়ায় কি খুব চোর-ডাকাত?
তা আছে। তা ছাড়া আমরা তো একতলায় থাকি। একতলাটা সবসময়েই একটু ইনসিকিয়োর্ড। দোতলা হচ্ছে। ওপর তলায় ততটা ভয় নেই।
আপনি রিভলভারের ইউজ তা হলে জানেন?
জানি। না জানলে কি লাইসেন্স পাই?
আজ সকালে কখন ঘুম থেকে উঠেছেন?
হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
দরকার আছে।
আমার ইনসোমনিয়া আছে। ঘুম হয় না।
একদমই হয় না?
মাঝে মধ্যে একটু আধটু। কোনও ঠিক নেই।
আপনি কি ঘুমের ওষুধ খান?
না। ভয় পাই।
কেন?
আমার মা ঘুমের ওষুধের ওভারডোজে মারা যান।
তারও কি ইনসোমনিয়া ছিল?
না। অন্তত ক্রনিক নয়। একটু বেশি বয়সে হাইপারটেনশন থেকেই ঘুম ভাল হত না।
রাতে না ঘুমিয়ে কী করেন?
লিখি, পড়ি। আগে বেহালা বাজাতাম। এখন বাজাই না।
কী লেখেন আর পড়েন?
ডায়েরি লিখি। রোজনামচা। আর আবোল তাবোল যা খুশি। গল্পের বই পড়ি।
তা হলে তো আপনার ঘরে সারা রাতই আলো জ্বলে?
যতক্ষণ লেখাপড়া করি ততক্ষণ জ্বলে। তারপর আলো নিবিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি। সাধারণত রাত দুটো নাগাদ শুই।
কাল রাতের কথা বলুন।
কী বলব?
কাল রাতে আপনি ক’টায় শুতে গিয়েছিলেন?
কিন্তু এসব কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?
কারণ আছে। জরুরি কারণ।
কাল রাতে দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে শুয়ে পড়েছিলাম।
ক’টায় ঘুম থেকে উঠেছেন?
ঘুমই নেই তো ঘুম থেকে ওঠা।
মানে বিছানা ছেড়েছেন কখন?
খুব ভোরে। রোজই চারটে-সাড়ে চারটের মধ্যে উঠে পড়ি।
তারপর কী করলেন?
আজ? আজও রোজকার মতো ভোরবেলা উঠে চান করলাম। তারপর চা খেলাম।
বেরোননি?
না তো!
আপনি মর্নিং ওয়াক করেন না?
না।
আপনার তো একটা গাড়ি আছে!
হ্যাঁ।
কে চালায়?
ড্রাইভার।
আপনি চালান না?
চালাই। মাঝে মাঝে।
আজ সকালে বাই চান্স বেরোননি তো গাড়ি নিয়ে?
না।
ড্রাইভার কি চব্বিশ ঘণ্টার?
হ্যাঁ। সে গ্যারেজের ওপরে মেজেনাইন ফ্লোরে থাকে।
ঠিক আছে।
কী হয়েছে বলুন তো।
মিস্টার সিংঘানিয়া খুন হয়েছেন।
ইরা একটু চুপ করে থেকে বলল, বেশ হয়েছে। নোংরা লোক।
ছবিগুলো তো ওঁর আঁকা নয়।
তা হোক না। সব জেনেশুনেই তো এগজিবিশন করেছিল। সর্বজিৎ আরও নোংরা। কবে কখন হল?
আজ সকাল পাঁচটায়। ময়দানে।
ওঃ।
ওঁর ছবিগুলোও হোটেলের ঘর থেকে চুরি হয়ে গেছে।
খুব ভাল হয়েছে।
শবর একটু হাসল, তারপর বলল, আপনার মেয়েরা কি বাড়িতে আছে?
কেন থাকবে না?
তারা কোথায়?
দু’জনেই অনেক বেলা অবধি ঘুমোয়। এই তো উঠল একটু আগে। এখন বোধহয় টয়লেটে। ডাকব নাকি?
না থাক।
টেলিফোন রেখে দিল শবর।
ইরা রাখল একটু দেরিতে। তার ভ্রু কোঁচকাল। মুখে দুশ্চিন্তা। খবরটা একদিক দিয়ে ভাল। অন্যদিক দিয়ে ভাল কি?
টেলিফোনের সামনে কিছুক্ষণ ঝুম হয়ে বসে থেকে সে উঠে শোওয়ার ঘরে এল। এখনও তার বিছানাটা ভোলা হয়নি। তার বাড়িতে তিন-চারজন কাজের লোক। কিন্তু এ ঘরে কারও প্রবেশাধিকার সে দেয় না। তার কারণ তার শোওয়ার ঘরে নগদ কয়েক লক্ষ টাকা থাকে। ছবি বিক্রিরই টাকা। আগে সর্বজিৎ ছবি বিক্রি করত নগদ টাকায়। কোনও ব্যাঙ্ক রেকর্ড থাকত না। সেইসব টাকা ঘরেই জমে আছে। আজকাল সর্বজিৎ নিয়মটা পালটেছে। টাকা আজকাল ব্যাঙ্কে জমা হয় এবং মোটা টাকা ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। এই ব্যবস্থাটা ইরার একদম পছন্দ নয়। এই নিয়ে সর্বজিতের সঙ্গে তার একসময়ে তুমুল ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু সর্বজিৎ বলেছে, আর নয়। যথেষ্ট রোজগার করেছি। দিনের পর দিন এই ট্যাক্স ফাঁকি একদিন ধরা পড়বেই।
কিন্তু আগের টাকাটা আর ব্যাঙ্কে ফেরত দেওয়া যায় না। যক্ষি বুড়ির মতো টাকাটা আগলে থাকে ইরা। টাকা ছাড়াও তার ইন্দিরা বিকাশ, কিষান বিকাশ এবং অনেক শেয়ার কেনা আছে। আছে বিস্তর সোনাদানাও। সে ঘরের বার হলে ঘর লক করে যায়। এ ঘরে বাড়ির আর কেউই বড় একটা ঢোকে না। তিনটে মজবুত স্টিলের আলমারি, একটা সেলফ, একটা খাট, একটা রাইটিং ডেস্ক আর ঘরের কোণে একটা টিভি মোটামুটি এই তার জিনিস। ওয়ার্ডরোব এবং ড্রেসিং টেবিল অবশ্য আছে।
ঘরে এসে বালিশের পাশ থেকে প্রথমেই রিভলভারটা সরাতে গেল ইরা।
আর তারপরই মাথায় বজ্রাঘাত। বত্রিশ বোরের লুগার রিভলভারটা নেই।
নেই তো নেই-ই। কোথাও নেই। ইরা পাগলের মতো সর্বত্র খুঁজে দেখল। কোথাও নেই।
এ ঘরে সে ছাড়া আর কেউ থাকে না। বাড়িটা বেশ বড়। টিনা, নিনা আর বিন্টুর আলাদা ঘর আছে। এ ঘরটাকে যতদূর সম্ভব জেলখানা বানিয়ে রেখেছে সে।
ইরা টাকা ভালবাসে। কেন ভালবাসে তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। সুখের বিষয় টাকা তার অনেক আছে। সর্বজিৎ আজকাল টাকাপয়সার ব্যাপারে খুব উদাসীন। রিখিয়াতে সে সাদামাটাভাবে থাকে, শুনেছে ইরা। মদের খরচ আর যৎসামান্য হলেই তার চলে যায়। এজেন্টের মারফত টাকাটা সে পেয়ে যায়, কলকাতায় এসে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলে না। সুতরাং ব্যাঙ্কে যা জমা হয় তার সবটার ওপরেই ইরার প্রভুত্ব। জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে ইচ্ছে করলেই সে টাকা তুলে নিতে পারে। সাবধানের মার নেই তাই ইরা ব্যাঙ্কের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের টাকার সিংহভাগ সরিয়ে ফেলে তার নিজের আলাদা অ্যাকাউন্টে। এর ওপর কলেজের মাইনে যথেই পায় সে। না, টাকার দিক থেকে ইরা বেশ সুখে আছে।
সুখের অভাব তার অন্য জায়গায়।
তার বয়স সাঁইত্রিশ-আটত্রিশ। ছিপছিপে এবং সুগঠন শরীরে এখনও ভরা যৌবন। সর্বজিতের কাছ থেকে সে কোনওকালেই তেমন মনোযোগ পায়নি, পায়নি শরীরের ডাকে তেমন সাড়াও। তাদের বনিবনা হয়নি কখনও। বছরের পর বছর দুঃসহ এই অবনিবনা নিয়ে কেটেছে তাদের। বছরের মধ্যে হয়তো সাত-আট মাসই কথা বন্ধ থাকত। মাঝেমধ্যে লাগত তুমুল ঝগড়া।
ইরা সেক্স নিয়ে অভিযোগ তুললে সর্বজিৎ বলত, সেক্সটা শতকরা আশি ভাগ মানসিক ব্যাপার, কুড়ি ভাগ শরীর। কোনও পুরুষ কোনও নারীর কাছে দিনের পর দিন অপমানিত হতে থাকলে তার প্রতি সেজুয়াল আর্জ থাকে না। তোমার প্রতিও আমার নেই।
তা হলে আমি কী করব?
সর্বজিৎ নির্বিকারভাবে বলেছে, অন্য পুরুষ খুঁজে নাও। তোমাকে বলেই দিচ্ছি, আমার দিক থেকে বাধা আসবে না। চাইলে ডিভোর্স করে বিয়েও করতে পারো। যা তোমার খুশি।
ডিভোর্সের কথা তাদের মধ্যে বারবার উঠলেও কে জানে কেন শেষ অবধি আইন আদালত করার আগ্রহ তারা কেউই দেখায়নি। সত্যি কথা বলতে কী, সর্বজিৎ বা ইরার কোনও দ্বিতীয় মহিলা বা পুরুষ থাকলে হয়তো আগ্রহটা হত। সেরকম ঘটনাও কিছু ছিল না। সুধাময় ঘোষ আর তাকে জড়িয়ে যে রটনাটা আছে সেটা যে একদম বাজে কথা সেটা অন্তত ইরা তো জানে। সুধাময় সর্বজিতের বন্ধু। খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু ইরার সঙ্গে তার সেই সম্পর্ক নেই যার সুবাদে তাকে আর সুধাময়কে আদম আর ইভ বানানো যায়।
ইরার যৌবনকালটা মরুভূমির মতো। হাতে প্রচুর টাকা, বাড়ি, গাড়ি, সম্পন্নতার ছড়াছড়ি। তবু ওই একটা জায়গায় সে এক বিশুদ্ধ নারী।
খুবই উষর ছিল তার জীবন যতদিন না চোরটা এল।
না, শবরকে সে মোটেই মিথ্যে বলেনি। এক রাতে চোর এসেছিল ঠিকই। এবং সেদিন ইরা তার ক্রনিক ইনসোমনিয়ার মধ্যেও বিরল যে দু’-এক রাত ঘুমোয় সেইরকমই ঘুমিয়ে পড়েছিল। এবং ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে জানালার বাইরে লোকটাকে দেখে সে গুলিও করেছিল ঠিকই। এবং আহত চোর পড়ে গিয়েছিল জানালার নীচে।
বাকিটুকু শবরকে বানিয়ে বলেছে ইরা। চোরটা পালায়নি। সে জখম হাত নিয়ে পড়ে গেলেও কয়েক সেকেন্ড পর উঠে দাঁড়ায়। ইরা ততক্ষণে ঘরের বড় লাইট জ্বেলেছে এবং লোজন ডাকবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
চোরটা বলল, প্লিজ! আমার কথা শুনুন।
ইরা ফিরে জানালার দিকে চেয়ে হতবাক। ঘরের স্টিক লাইটের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে চোরকে। খুবই চেনা চোর।
ইরা অবাক হয়ে বলে, তুমি! এত রাতে তুমি এখানে কেন? আর এভাবে কেন?
প্লিজ। আমার কিছু কথা আছে।
কথা! মাঝরাতে তুমি আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছ? তাও জানালার গ্রিল ভেঙে? আমি তোমাকে পুলিশে দেব।
দেখুন, আমি তো পালাইনি। পুলিশে খবর দিন, আমি কিন্তু পালাব না।
তা হলে এরকম করলে কেন? তুমি কি পাগল?
তাই হবে। প্লিজ লেট মি ইন।
না। এত রাতে তোমাকে ঘরে ঢুকতে দিতে পারি না। আমার মনে হচ্ছে তোমার মাথার ঠিক নেই। আমি তোমাকে পুলিশেও দিতে চাই না। বাড়ি যাও ডেভিড।
আমি ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি। আমি এসেছি আপনার কাছে।
তুমি বোধহয় ড্রাগ অ্যাডিক্ট। নাকি মদ খেয়েছ?
ওসব নয়। আপনি মিথ্যে সন্দেহ করছেন। আই অ্যাম ব্লিডিং লাইক হেল। দেখছেন তো। তবু দাঁড়িয়ে আছি কেন? আমার দরকারটা জরুরি।
তোমার মতলব ভাল নয়।
ভয় পাবেন না। আমি শত অপরাধ করলেও আপনার কোনও ক্ষতি কখনও করব না। সে সাধ্যই আমার নেই।
আচ্ছা, একটা কথা বলো। তুমি কি টিনাকে সিডিউস করতে এসেছিলে? ঘর ভুল করে আমার ঘরে হানা দিয়েছ?
না ম্যাডাম, টিনার ঘর আমি চিনি। আমি আপনার কাছেই এসেছি।
ডেভিডের বয়স আঠাশ থেকে ত্রিশের মধ্যে। রোগা, লম্বা এবং দাড়ি গোঁফে সমাচ্ছন্ন এক ভাবুক চেহারা। মাথায় অবিন্যস্ত চুলের ঝাপি। তার চোখ দুটো অস্বাভাবিক টানা এবং মাদকতাময়। কিশোরী টিনা তার অনেক বন্ধুদের মধ্যে এই বয়স্ক বন্ধুটিকে একটু বেশিই পছন্দ করে। শোনা যায়, ডেভিড বাউন্ডুলে, কিন্তু কেরলে তার বাড়ির অবস্থা খুবই ভাল। তার বাবা একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট।
একটু দোনোমোনো করছিল ইরা। তবে সে সাহসী মেয়ে। বলল, তোমাকে ঢুকতে দিতে পারি। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো। আমার হাতে রিভলভার থাকবে। কোনওরকম বেচাল দেখলেই কিন্তু গুলি করব।
অ্যাগ্রিড ম্যাডাম।
এ ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার পথ একটু ঘোরানো। প্যাসেজে গিয়ে তবে সদরে যেতে হবে। কিন্তু বাথরুমে একটা জমাদার আসার সরু দরজা আছে। সেইটে খুলে দিল ইরা।
ডেভিড ঘরে এল।
রক্তাক্ত বাঁ হাতটা ডান হাতে চেপে ধরে রেখেছিল ডেভিড।
ইরার একটু মায়া হল। সে ড্রয়ার খুলে ব্যান্ড এইড আর তুলো বের করে বলল, লাগিয়ে নাও।
ডেভিড মাথা নেড়ে বলল, লাগবে না। দি উল্ড ইজ নট ভেরি সিরিয়াস।
তুমি তো মারা যেতে পারতে ডেভিড।
আপনার রিভলভার আছে জানলে সাবধান হতাম।
এভাবে কেউ আসে? কী এমন কথা যা মাঝরাতে বলতে হবে?
হাসলে ডেভিডকে যে কী সুন্দর দেখায় তা লক্ষ করে অবাক হল ইরা। ডেভিড কালো, কিন্তু দারুণ হ্যান্ডসাম। বলল, আমি আপনাকে একটু চমকে দিতেই চেয়েছিলাম।
কেন ডেভিড?
আমি যা বলতে এসেছি তা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় বলা যায় না। ইট রিকোয়ারস সাম ম্যাডনেস।
বলো কী? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
রিভলভার তো আপনার হাতেই আছে। চাইলে গুলি করে দেবেন। কিন্তু আমাকে কথাটা বলতেই হবে।
বলে ফেলো ডেভিড।
আমি আপনাকে ভীষণ ভালবাসি।
এত অবাক ইরা কখনও হয়নি। দু’বছর আগে তার বয়স ছিল আর একটু কম। তবু হিসেব মতো ডেভিড তার চেয়ে ছয়-সাত বছরের ছোট, টিনার বন্ধু। এরকমও হয় নাকি?
রেগে যাবেন না। এসব ব্যাপারে কিছু করার থাকে না। লাভ কামস লাইক এ ফ্লাড।
পাগল হয়েছ?
ডেভিড মাথা নেড়ে বলল, সর্ট অফ ম্যাডনেস, ইয়েস। কিন্তু আমি আপনার জন্য এত আকর্ষণ বোধ করি, এত আপনার কথা ভাবি যে আমার কিছু করার থাকে না।
তুমি টিনার বন্ধু, মনে রেখো।
ডেভিড তেমনি সুন্দর হেসে বলল, কখনও ওর বয়ফ্রেন্ড ছিলাম না। আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। ওর বন্ধুত্বের সূত্রেই তো আপনাকে দেখলাম।
ইরা মুখে প্রতিবাদ করলেও ভিতরে ভিতরে কি খুশি হয়নি? মধ্য তিরিশে সে এখনও যুবকদের মুগ্ধ করতে পারে?
ইরা রিভলভারটা ড্রয়ারে রেখে খুব যত্ন করে ডেভিডের হাতে অ্যান্টিসেপটিক লাগাল। ক্ষতস্থান সিল করে দিল। তারপর বলল, অনেক পাগলামি হয়েছে। এবার বাড়ি যাও।
আমি শুনেছিলাম, আপনার ইনসোমনিয়া আছে।
আছেই তো।
আমাকে একটা অনুমতি দেবেন?
কীসের অনুমতি?
আমি রাত বারোটা-একটায় চলে আসব। তারপর আপনার সঙ্গে গল্প করব বা বসে থাকব। যদি আপনি পছন্দ না করেন তা হলে অন্য কথা।
সেটা হয় না।
কেন হয় না? আপনি ইচ্ছে করলেই হয়।
রাতে একজন পুরুষকে… না, না। ছিঃ!
আপনি তো সংস্কার থেকে বলছেন। কিন্তু ভালবাসা কি ওসব মানে?
আমি তো আর তোমার প্রেমে পড়িনি ডেভিড!
ঠিক কথা। কিন্তু আপনি একজন একা নিদ্রাহীন সঙ্গীহীন মানুষ। আমি আপনাকে সঙ্গ দিতে আসব। এইমাত্র।
আমার ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। তারা টের পাবে।
না। আমরা সতর্ক হলে কেউ টের পাবে না।
কেন পাগলামি করছ ডেভিড?
পাগল তো পাগলামিই করবে, নাকি?
তুমি বাড়ি যাও।
দেখুন ইরাদেবী, আমি ভাল ঘরের ছেলে। আমার বাবা বিগ ম্যান। আমি একজন কোয়ালিফায়েড ডাক্তার, যদিও কখনও প্র্যাকটিস করিনি। আমি নেশা করি না। বাউন্ডুলে, ইয়েস। আমার ভেসে বেড়াতে ভাল লাগে। আপনার আগে আমি কোনও মহিলার প্রেমে পড়িনি। আই অ্যাম নট এ উওম্যানাইজার। দয়া করে আমাকে লম্পট ভাববেন না।
ঠিক আছে। কিন্তু তুমি যা চাইছ তাও হয় না।
আমি আজ যাচ্ছি। আপনি ভাবুন।
কী ভাবব?
জাস্ট থিঙ্ক ইট ওভার।
তুমি আমাকে চাইছ তো? সেটা হয় না।
ওভাবে চাইছি না। জাস্ট কম্পানি। অনেক সময় বিশুদ্ধ প্রেম শরীর-নির্ভর হয় না। মেয়েদের শরীর নিয়ে সংস্কার থাকে। আমি সেটা চাই না। আমি শুধু আসব, বসে থাকব, চলে যাব।
শুধু এইটুকু?
শুধু এইটুকু।
আজ যাও। আমাকে খুব নার্ভাস করে দিয়েছ।
কথাটা ভেবে দেখবেন?
দেখব।
কথা দিচ্ছেন?
হ্যাঁ।
তা হলে আমি কাল আসব। আফটার মিডনাইট।
ঠিক আছে।
ইরাকে জানালার বাইরে একটা আড়াল দাঁড় করানোর জন্য একটা দেয়াল তুলতে হল। তাতে আলাদা দরজা ইত্যাদি। জানালায় লাগাতে হল ভারী পরদা। হ্যাঁ, সে ডেভিডকে প্রশ্রয় দিয়েছিল। যা ডেভিড চেয়েছিল তার চেয়ে আরও একটু বেশিই।
এই একটা ঘটনার কথা কেউ জানে না। জানলেও কেউ তাকে কিছু বলেনি।
গত দু’বছর ধরে প্রায় টানা মধ্যরাতে ডেভিড এসেছে। বসেই থেকেছে বেশিরভাগ। ঘরের ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে তারা গল্প করেছে। কখনও সখনও শরীরের মিলনও। কিন্তু ব্যাপারটা ইরার কখনও ভাল লাগেনি। শরীরের মিলনে বরাবর তার ভিতরে একটা প্রতিরোধ যেন মাথা তুলত। আর আশ্চর্যের বিষয়, এই সুপুরুষ ও শক্তিমান যুবকটির প্রেমে সে আজও পড়েনি। ভাল লাগে না, তা নয়। কিন্তু তার মধ্যে আবেগ কাজ করে না। কখনও। উথালপাথাল হয় না বুক।
কাল রাতেও ডেভিড এসেছিল। কিছুটা উদ্ভ্রান্ত ছিল সে।
তোমাকে ওরকম দেখাচ্ছে কেন?
আমি একটু রেস্টলেস।
কেন ডেভিড?
আই কান্ট হেল্প ইউ। আপনি ওই স্ক্যান্ডালটার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন।
তা তো পাচ্ছিই। কে যে এ কাজ করতে পারে।
আপনার হাজব্যান্ড নয় বলছেন?
সর্বজিৎ সব পারে। তবে ওর পক্ষে তোমার বা বান্টুর ছবি আঁকা তো সম্ভব নয়।
তা হলে কে হতে পারে বলে আন্দাজ করেন?
বুঝতে পারছি না।
একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
নিশ্চয়ই।
আপনি একজন পেইন্টারকে বিয়ে করলেন কেন?
বাঃ রে, তাতে দোষ কী?
দোষের কথা নয়। আপনি একজন পেইন্টারকেই কেন পছন্দ করলেন?
এমনি।
আপনি নিজে আঁকতেন?
কেন বলো তো?
আপনার কথাবার্তায় মনে হয়, আপনি ছবি সম্পর্কে জানেন।
তা জানি। জানব না কেন? পেইন্টারের ঘর করেছি যে!
নিজে কখনও আঁকেননি?
একটু আধটু চেষ্টা কি আর করিনি? তবে হয়নি।
আপনার কাছে তো কাগজ কলম আছে। আমার একটা স্কেচ করবেন?
দূর! ওসব পারি না।
জাস্ট ট্রাই। দেখাই যাক না।
ইরা কাগজ কলম নিয়ে বসল। একটা স্কেচ করেও ফেলল সে।
দেখে ডেভিড বলল, মাই গড!
কী হল?
আপনার হাত তো খুব সেট।
যাঃ, পাগল!
আচ্ছা, আমি এটা রেখে দিচ্ছি।
রাখো। তবে ওটা কিছু হয়নি।
ডেভিড রাত তিনটের সময়ে গেছে। তারপর শুয়েছে ইরা। তার ঘুম আসেনি।
আর এখন রিভলভারটা পাচ্ছে না সে।
বিবশ হয়ে সে কিছুক্ষণ বিছানায় বসে রইল। তার খুব স্পষ্ট মনে আছে রিভলভার রোজকার মতোই বালিশের পাশে পাতা একটা ছোট প্লাস্টিক শিটের ওপর রাখা ছিল। বিছানায় পাছে রিভলভারের তেলটেল লাগে তাই ওই প্লাস্টিকের ব্যবস্থা। সেটা আছে, কিন্তু জিনিসটা নেই।
মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছিল তার।