আয়োজন
বন্ধ্যাত্ব এক অভিশাপ কোনো নারীর জীবনে, তা হাড়ে হাড়ে বোঝে শালিনী। পাড়া পড়শীরা প্রায় একঘরে করে দিয়েছে ওদের। সামাজিক অনুষ্ঠান তো দূর অস্ত,কোন পুজো বাড়িতেও ডাক পড়েনা। মনজুড়ে এক হাহাকার বাসা বেঁধেছে। অনেক ডাক্তার,কবিরাজ, ঠাকুরবাড়ি, তাবিজ কবজ করেছে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
একমাত্র পুত্রবধূ সে। শ্বশুর শাশুড়ি কিছু না বললেও,পাথরচাপা কষ্টটা সেও অনুভব করে। স্বামী,ঋভু, কর্পোরেটের বাদশা। বহুবার এডপশনের কথা বলেছে, শালিনী কিন্তু এই ব্যাপারে অনড়। মনে প্রাণে ঈশ্বর বিশ্বাসী। মন যেন ওর এ ব্যাপারে কোনো সায় দেয় না।
সে নিজেও ভীষণ ব্যস্ত লেখালেখির জগতে। কিছুদিন যাবৎ ওর শরীর খুব খারাপ। বই সম্পাদনা ও প্রকাশনা নিয়ে চাপটা বেশীই হয়ে গেছে। টানা রাতজাগাতে বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে।
নববর্ষের শুরুতে ওর সম্পাদনায় বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হবে, সঙ্গে নিজের লেখা বইও আছে। খুব উন্মাদনা ওর অনুষ্ঠানটি নিয়ে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিদগ্ধ কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, অভিনেতা, গায়ক ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু পথশিশু।
অনুষ্ঠান চলাকালীন শালিনী প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোন রকমে অনুষ্ঠান শেষ করে আসে ডাক্তারের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে নার্সিং হোমে ভর্তি করানো হয়। বেশ কয়েকটি টেস্ট করতে হবে, প্রেসার খুব লো।
পরেরদিন সব টেস্ট করানো হল, বেশ চিন্তায় ঋভু। সকাল বেলাতেই চলে এসেছে নার্সিংহোমে। রিসেপশনে জানানো হল, ডাক্তার আটটার সময় আসবেন, তখন কথা বলবেন। ডাক্তার আসতেই ছুটে গেল ঋভু। ঋভুকে দেখে ডাক্তার বললেন,”অভিনন্দন, বাবা হতে চলেছেন,তবে একটু যত্নশীল হোন”। বাকরুদ্ধ ঋভু, দুচোখে জলের ধারা। শালিনীর কাছে এসে সুখবরটা দিল। ফোন করে বাবা মাকেও জানালো।
আজ শালিনী – ঋভুর ছেলের অন্নপ্রাশন। বিরাট আয়োজন, বিরাট হল ভাড়া করেছে। প্রায় দেড় হাজার লোকের আয়োজন। হতভম্ব প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন। এত লোকের মধ্যেও ওনারা ব্রাত্য। খুব কাছের কিছু মানুষ ছাড়া, পুরোটাই আয়োজিত কেবল পথশিশু, অনাথ ও সহায় সম্বলহীন মানুষগুলোর জন্য। যারা অবহেলিত, কিন্তু কাউকে আঘাত করে না।