Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অভাগীর স্বর্গযাত্রা || Subhra Saha Shelley

অভাগীর স্বর্গযাত্রা || Subhra Saha Shelley

অভাগীর স্বর্গযাত্রা

এই গল্পের নায়িকার নাম যদিও অভাগী নয় তবুও তার জীবনের প্রথম অধ্যায়টুকু বাদ দিয়ে অনান্য প্রতিটি অধ্যায়ের আদ্যোপ্রান্ত যারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন তারা তাকে আবেগপ্রবণ হয়ে এই নাম রেখেছেন।

রাজদুলালী বাপেরঘরে জন্মনিতেই কবিসাহিত্যিকদের দিয়ে বাংলা অভিধান ঘাটিয়ে সেরা নামটি নামকরণের দিনে রাখা হয়েছিলো। সে আমলটা বাপু এখনকার মতো এতটা উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন ছিলো না যদিও সব সংসারে কন্যা সন্তানের জন্ম বিষয়টি যে এখনও খুব সৌভাগ্যের বা আনন্দের তা বলা যায় না।

যাইহোক গল্পের মূল বিষয়বস্তু সেই আমলেও কন্যসন্তানের জন্ম হলেও গল্পের নায়িকার বাবা মা পরমানন্দে তাকে বরণ করেছিলেন।

নয়ণের মণিটির নাম রাখলেন “মেধাশ্রী”—

বনশ্রী , তনুশ্রী , অণুশ্রী , মধুশ্রী ইত্যাদি নাম শোনা গেলেও ‘মেধাশ্রী’ নামকরণের পেছনে প্রগাঢ় পিতৃস্নেহের যুক্তি ছিলো “আমার মেয়ে হবে সব থেকে আলাদা , একদম ওয়ান এ্যান্ড অনলি ওয়ান “—

তাঁকে অবশ্য কখনই মেয়েকে এইনামে বা অন্যনামে ডাকতে শোনা যেতো না। তিনি মেয়েকে “মা” বলেই ডেকেছেন যতদিন না ছোট মেয়ে ঘরে আসে।এরপরেও অবশ্য মা ডাকে কোন ভাঁটা পড়ে নি।শুধু একটা বিশেষণ যুক্ত হয়েছিল মাত্র। সেটা গিয়ে দাঁড়ায় “বড় মা “তে। বাবার অসীম ভালোবাসা , নিয়মানুবর্তিতায় ও যত্নে মেধাশ্রীর মেধার প্রতিটি দিক একে একে উন্মোচিত হতে থাকে। রূপে গুণে নামকরণের নামখানিকে সার্থক করে নিয়ে তরতর করে এগিয়ে চলে মেধাশ্রীর জীবন।

প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে ক্লাস টেন অবধি সে ক্লাসের ফার্ষ্ট গার্ল। অবশ্য কখনও সখনো যে দ্বিতীয় হয় নি এমনটা নয় তবে মোটামুটি তার মেধার ধারা বজায় রেখেই চলেছে।

ক্লাস ফোরে , ক্লাস এইটে বৃত্তি সবতেই সে —-এতো গেলো তার মেধার একদিক। অন্যদিকে তার নাচে , গানে তার প্রতিভা ফুটে উঠেছে—

মেয়ের নাচের প্রতিভা দেখে বাবার মনে হয় মেয়ের এই প্রতিভাকে মান্যতা দেওয়া উচিৎ। যাহা ভাবা তাহা কাজ— বিশ্বভারতীতে মেয়েকে ভর্তির জন্য প্রস্তূত করে ফেললেন। মেয়েও বাবার মান রেখে একবারেই নির্বাচিত হলো।

কোন একদুপুরে মেয়েকে নিয়ে মফঃস্বল শহর পাড়ি দিয়ে চললেন স্নেহময়ী মা বাবা একবুক স্বপ্ন নিয়ে —

বেশ চলছিল — হঠাৎ বাবার প্রগাঢ় স্নেহ আর ভালোবাসাই যেন কাল হলো। “বড়মাকে ছেড়ে আমি কিছুতেই থাকতে পারব না “— শুধু এই স্নেহের কাছে নত হয়ে মেধাশ্রীর নৃত্য প্রতিভা যথাযথভাবে প্রকাশিত না হয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো। প্রতিভা তো চাপা থাকে না তাই স্কুলের বড় আদরের ছাত্রীটি নিজগুণে শিক্ষকশিক্ষিকাসহ সহপাঠী সকলের মনজয় করে নিয়ে চলেছে।

এমনি করে সে পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এনট্রান্সের মেডিক্যাল পরীক্ষায়ও নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে নেয়।তবে সেখানে ভালো ভালো কলেজে না হলেও যে কোন ডেন্টাল কলেজে তো অতি সহজে হয়েই যেত —

সেখানেও ভাগ্যের বিড়ম্বনা — ” এবছর টা ছেড়ে দে — পরেরবার আরো ভালো করে পরীক্ষা দিয়ে —“

সেই তখন থেকেই বোধহয় মেধাশ্রীর ভাগ্য তার জীবনে অবশ্যম্ভাবী প্রাপ্যটুক পেতে না দেবার পণ করে বসেছিলো। ভরা যৌবনে যখন মেধাশ্রীকে প্রেমিকা হিসেবে পাবার জন্য যখন রথীমহারথীদের ভীড় — তখন ও মেধাশ্রীর ভাগ্য মেধাশ্রীকে সাথ দেয় নি। মনের মানুষকে ছেড়ে বিধাতার লেখা মানুষের হাত ধরতে হয়েছিলো। হাসিমুখে বিধাতার দেওয়া পথেই চলতে শুরু করে মেধাশ্রী কোন কিছুর হিসেব না কষে। এই পথ যে মসৃণ , মোলায়েম হবে না সেটা যাত্রাকালেই আন্দাজ করেছিল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মেধা।

বন্ধুর এবড়োখেবড়ো পথে বারে বারে আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েও হাল ছাড়তে চায় নি সে —

কিন্তু যখন তার পৃথিবী তার বাবামাকেও এই আঘাতের অনলে জ্বলে পুড়ে খাঁক হতে হয়েছিলো তখন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে মেধাশ্রী। নিজের জীবনের শতবাঁধা শতবিঘ্নকে দূর করে হাসিমুখে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য করে গেছে। এরজন্য তাকে কম কথা শুনতে হয় নি আত্মীয়স্বজন , পাড়াপড়শি , বন্ধুবান্ধবের থেকে।

“মেয়েদের এত তেজ ভালো না ” দলের লোকেদের যুক্তিতর্ককে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে যখন সে মাথা উঁচু করে উঠার অবলম্বন পায় তখনই আবার সেই ভাগ্যদেবতার অসহযোগিতা।

এবার মেধাশ্রীর নিজের শরীরে বিরলতম রোগ ধারণ করে বসলো —

শারীরিক অসুস্থতাতেও তার মুখে হাসির কোন ঘাটতি ছিলো না —

এই ধরণের অসুখের নাম যখন তিনপুরুষে কেউ শোনে নি সেই অসুখকে তুচ্ছ করে শুধুমাত্র অসীম মনবলে আর নিজের আত্মজকে পৃথিবীতে অনাথ না করার পণ করে নিজের লড়াইটা নিজেই লড়েছে এই অভাগী মেধা।

বাবামা দুজনেই চোখের সামনে তাদের আদরের ধনের এই ভাগ্য বিড়ম্বনা সহ্য করতে না পেরে একে একে বিদায় নিয়েছেন জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে। জীবনে যেটুকু খড়কুটোকে আশ্রয়কে আঁকড়ে ধরে মেধাশ্রীর জীবনসংগ্রাম চলছিল তাদের হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিল মেধাশ্রী সাময়িকভাবে।

কি জানি বাবামায়ের আশীর্বাদেই হয়তো আবার উঠে দাঁড়িয়েছিলো শক্তভাবে — নিজের লড়াই লড়তে। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ মেধা লড়তে লড়তে বিধ্বস্ত হয়ে উঠেছিলো—- নিজের কথা ভেবে নয় সন্তানের কথা ভেবেই সমস্ত অপমানের চুড়ান্ত অবসান ঘটাতে চেয়েছিলো। কিন্তু না তাতেও সাথ দেয় নি জীবনপথের পথিক।

হয়তো ভাগ্যদেবতা অভাগী মেধার পরীক্ষা নিতে নিতে শেষ পর্যায় পৌঁছে গিয়েছিল — সময় এসেছিলো তার রায়দানের।

সারাজীবনের সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমান পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে এই সিদ্ধান্তে তিনি উপনীত হলেন —

“মেধাশ্রীকে আর কোন আঘাত নয় –তাকে চিরমুক্তি দেওয়া হোক। মেধাশ্রীর সুকর্মের সুফল হিসেবে তার স্বর্গলাভ হবে।” এমন রায়দানের সাথে সাথে ভাগ্যদেবতা মেধাশ্রীকে একটি বর দিতে চান —-

মেধাশ্রীও বিনয়ী হয়ে নিশ্চয়ই চেয়েছিলো ” আমার স্বর্গযাত্রায় যেন একটিও এমন মানুষ না থাকে যারা আমার এই যাত্রায় বিঘ্ন ঘটাবে।এটাই আমার শেষ ইচ্ছে “—

ভাগ্যদেবতা পুরো বিষয় অণুধাবন করে বলেছিলেন ” বেশ তাই হবে —-“

তাই তো অভাগী মেধাশ্রীর শেষযাত্রায় অগনিত ভালোবাসার মুখগুলির মধ্যে এমন একটি মুখও খুঁজে পাওয়া যায় নি যারা তার শান্তিধাম যাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। পবিত্র অগ্নি লেলিহান শিখায় পরমতৃপ্তিতে অভাগী তার অভাগ্যকে বিসর্জন দিয়ে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়—- রেখে যায় তার প্রতিবাদের চুড়ান্ত দৃষ্টান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress