আমি যে তোমায় জানি , সে তো কেউ জানে না ।
তুমি মোর পানে চাও , সে তো কেউ মানে না ।
মোর মুখে পেলে তোমার আভাস
কত জনে কত করে পরিহাস ,
পাছে সে না পারি সহিতে
নানা ছলে তাই ডাকি যে তোমায়—
কেহ কিছু নারে কহিতে ।
তোমার পথ যে তুমি চিনায়েছ
সে কথা বলি নে কাহারে ।
সবাই ঘুমালে জনহীন রাতে
একা আসি তব দুয়ারে ।
স্তব্ধ তোমার উদার আলয় ,
বীণাটি বাজাতে মনে করি ভয় ,
চেয়ে থাকি শুধু নীরবে ।
চকিতে তোমার ছায়া দেখি যদি
ফিরে আসি তব গরবে ।
প্রভাত না হতে কখন আবার
গৃহকোণ – মাঝে আসিয়া
বাতায়নে বসি বিহ্বল বীণা
বিজনে বাজাই হাসিয়া ।
পথ দিয়ে যে বা আসে যে বা যায়
সহসা থমকি চমকিয়া চায় ,
মনে করে তারে ডেকেছি—
জানে না তো কেহ কত নাম দিয়ে
এক নামখানি ঢেকেছি ।
ভোরের গোলাপ সে গানে সহসা
সাড়া দেয় ফুলকাননে ,
ভোরের তারাটি সে গানে জাগিয়া
চেয়ে দেখে মোর আননে ।
সব সংসার কাছে আসে ঘিরে ,
প্রিয়জন সুখে ভাসে আঁখিনীরে ,
হাসি জেগে ওঠে ভবনে ।
যে নামে যে ছলে বীণাটি বাজাই
সাড়া পাই সারা ভুবনে ।
নিশীথে নিশীথে বিপুল প্রাসাদে
তোমার মহলে মহলে
হাজার হাজার সোনার প্রদীপ
জ্বলে অচপল অনলে ।
মোর দীপে জ্বেলে তাহারি আলোক
পথ দিয়ে আসি , হাসে কত লোক ,
দূরে যেতে হয় পালায়ে—
তাই তো সে শিখা ভবনশিখরে
পারি নে রাখিতে জ্বালায়ে ।
বলি নে তো কারে , সকালে বিকালে
তোমার পথের মাঝেতে
বাঁশি বুকে লয়ে বিনা কাজে আসি
বেড়াই ছদ্মসাজেতে ।
যাহা মুখে আসে গাই সেই গান
নানা রাগিণীতে দিয়ে নানা তান ,
এক গান রাখি গোপনে ।
নানা মুখপানে আঁখি মেলি চাই ,
তোমা – পানে চাই স্বপনে ।