এই ছোট ঘর, এই প্রান্তিক বিনীত বুড়ো বাড়ি,
আবেগকম্পিত স্বরে বলে, ‘কখনও যেও না তুমি। এই গলি,
এই পথ সারাক্ষণ বলে, ‘কখনও যেও না তুমি। অনাথ
শিশু নিকেতনের দেয়াল, এই গাছ, শাখাশ্রয়ী পাখি, এই
গোলাপ, চামেলি, গন্ধরাজ, ক্যামেলিয়া
বলে বারবার,
‘আমাদের ছেড়ে তুমি কখনও যেও না। একজন মানবীর
প্রগাঢ় ব্যাকুল দু’টি চোখ বলে, তোমাকে দেব না যেতে, কবি।
আমি তো চাই না যেতে কস্মিনকালেও
এই প্রিয় পরিবেশ ছেড়ে ছুড়ে অন্য কোনওখানে। নেই সাধ
কোনও লোভনীয় মরীচিকার পেছনে ছুটে বেড়াবার
পুরোনো গল্পের মোহে। এখানেই চিরকাল প্রাণের স্পন্দন,
ঝর্নার, ফুলের, প্রান্তরের, দিগন্তের,
নানান পাখির শোভা পেতে চাই। এখানেই চাই
দেখতে শিশুর হাসি, দয়িতার রূপ, চাই পেতে
বারবার গাঢ় আলিঙ্গন, চুম্বনের আর কবিতার স্বাদ।
অথচ অসীম নাস্তি শাসায় আড়াল থেকে, তীক্ষ্ণ অন্ধকার
কখনও সজীব ভোরবেলা, কখনও বিষণ্ন গোধূলিতে
ভীষণ খামচে ধরে; বিলুপ্তির ভাবনায় ঝটিতি তুষার-কণা ঝরে
মগজের কোষে কোষে। কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ি,
এবং খানিক পরে তোমার ছবির দিকে গভীর তাকিয়ে
কখনও বা কবিতার বই থেকে কয়েকটি পঙ্ক্তি
পড়ে ফের জীবনের স্পন্দিত শিরায় হাত রাখি, মনে হয়-
এই ঘর, এই দৃশ্যাবলী, বইপত্র, পদাবলী, এইসব প্রিয় মুখ
থেকে বিলুপ্তির শূন্যতায় কখনও মিশিয়ে দিতে
পারবে না অনন্তের কোনও ছলাকলা।