অট্টালিকার দম্ভ
ছেলেটার হাত ধরে এসে দাঁড়লো ঝিমলি ওই বিশাল বাড়িটার সামনে। উঁচু হয়ে দেখতে দেখতে বললো, এ হচ্ছে হামাদের তৈরী বাড়ি। আকাশচুম্বি বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে পড়ে এখানে যোগাড়ের কাজ করতে এসেই কানুর সঙ্গে পরিচয়, এবং ঘর বাঁধা। ছেলে বলে এই বাড়ি তুর তৈরী বটে!! ঝিমলি বলে হঁ বটে, হামাদের তৈরী। খুশিতে মুখ উজ্জ্বল করে বলে শুধু হামার একার লয়ে, তুর বাবাও সাথে ছিল বটে, আরো বহুত আদমি ছিল।
এই বলে পঁচিশ বছরের কালো ঝিমলির দুচোখে ঝিলিক খেলে গেল স্মৃতির খুশিতে। ঝিমলি সুদূর ঝাড়খন্ড থেকে, বাবার সাথে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে এসেছিল শহরে কাজ করতে অভাবের তাড়নায়। শহরের এই ফ্ল্যাট বাড়িতে যোগাড়ের কাজ করতে করতে, কানু মিস্ত্রির সাথে প্রেম হয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গোটা বিল্ডিংটা ওরা ছুটে বেড়াত আর কত স্বপ্ন দেখত ওদেরও একটা সুখের ঘর হবে! তাই ওদের সবটুকু ভালবাসা উজার করে দিয়েছিল এই বিলাস বহুল উঁচু বাড়িটায়। বাড়িটার কাজ শেষ হওয়ার পর ওরা বিয়ে করেছিল। এবং একটা বস্তিতে ছোট্ট একটা সুখের সংসার পেতে ছিল। বছর ঘুরতেই একটি ছেলে এলো ওদের ঘরে। খুশির সীমা রইল না। এখনও ঝিমলি চার বছরের ছেলেকে নিয়ে অন্য ফ্ল্যাটে একই কাজ করে। তবে প্রথম প্রেমের বাসাটাকে এখনো ভুলতে পারেনি।
আসা যাওয়ার পথে এই বাড়িটার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবে ওদের ভালবাসায় আজ অন্য ভালবাসা। ঝিমলির চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল চিকচিক করছে নাহ্ আনন্দের নয় কষ্টের। ওদের ভালবাসার স্তম্ভতে আজ ওন্য সুখের বাসা ওরা করে আজ অট্টালিকার দম্ভ।