অঙ্ক সাহিত্যের যোগফল
আমার পাশের বাড়ির রাজীবরা খাসা লোক! ও, ওর দাদা, বাবা, ওরা সব্বাই। কিন্তু লোক ভালো হলে কী হবে, মনের ভাব ওরা ঠিকমতন প্রকাশ করতে পারে না। সেটা আমাদের ভাষার গোলমালে, কি ওদের মাথার গোলমালে, তা এখনও আমি ঠাওর করে উঠতে পারিনি। কিন্তু যখনই-না আমি তাদের কিছু জিজ্ঞেস করেছি, তার জবাব যা পেয়েছি তা থেকে দেখেছি মাথামুন্ডু কোনো মানেই খুঁজে পাওয়া যায় না।
কেন, এই আজই তো! বেরোবার মুখেই রাজীবের দাদার সাথে দেখা। জিজ্ঞেস করলুম— ‘কেমন আছ হে?’
‘এই কেটে যাচ্ছে একরকম!’
কেটে যাচ্ছে? শুনলে পিলে চমকায়! তখন ভারি তাড়া, ফুরসত নেই দাঁড়াবার। নইলে কী কাটছে, কেন কাটছে, কোথায় কাটছে, কীভাবে কাটছে, কবের থেকে কাটছে—এসবের খবর নেবার চেষ্টা করতুম।
বাজারের পথে রাজীবের বাবাকে পাই—‘এই যে! কেমন আছেন মুখুজ্যেমশাই?’
‘আজ্ঞে যেমন রেখেছেন।’
এও কি একটা জবাব হল নাকি? এ থেকে ভদ্রলোকের দেহ-মনের বর্তমান অবস্থার কতখানি আমি টের পাব? কে রেখেছেন, আর কেনই-বা রেখেছেন—তারই-বা কি কোনো হদিশ পাওয়া যায়? তোমরাই বলো।
ঝি সঙ্গে নিয়ে বাজারে চলেছেন, তখন আর তাঁকে জেরা করে জানা গেল না; অগত্যা ঝিকেই প্রশ্ন করি—‘তুমি কেমন গো বুড়ি?’
‘এই আপনাদের ছিচরণের আশীর্বাদে।’ আপ্যায়িত হয়ে বুড়ি যেন গলে পড়ে।
ছিচরণকে আমি চিনি না, তার আশীর্বাদের এত বহর কেন, বাতিকই-বা কীসের, তাও আমার জানা নেই, কিন্তু সঠিক উত্তর না পাওয়ার জন্যে—ও আর ছিচরণ—দুজনের ওপরেই নিদারুণ চটে গেলাম।
এক বন্ধুর সঙ্গে মোলাকাত হঠাৎ। অনেক দিন পরে দেখা, কুশল প্রশ্ন করি—‘মহেন্দ্র যে! ভালো আছ তো?’
‘এই একরকম।’
এও কি একটা কথার মতো কথা হল? ভালো থাকার আবার একরকম, দুরকম, নানারকম আছে নাকি? বন্ধু বলে কিছু আর বলি না, মনে মনে ভারি বিরক্তি বোধ করি।
বিকেলে যখন আমি বাসামুখো, সেই সময় রাজীবও—খাসা ছেলে রাজীব! সেও দেখছি ফিরছে ইশকুল থেকে। ‘এই যে রাজীবচন্দর! চলছে কীরকম?’
‘চমৎকার!’
না, এবার খেপেই যেতে হল। যখনই ওকে কোনো কথা—তা ওর স্বাস্থ্য, কী খেলাধুলা, কী পড়াশোনা যা-কিছুর সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করেছি, তখনই ওর ওই এক জবাব—‘চমৎকার!’ এ ছাড়া যেন আর অন্য কথা ওর ভাঁড়ারে নেই—আলাদা কোনো বুলি ও জানে না।
বাড়ি ফিরে ভারি খারাপ লাগে। একী? সবারই কি মাথা খারাপ নাকি? আবালবৃদ্ধবনিতা —সক্কলের? এবং একসঙ্গেই? আশ্চর্য!
দুনিয়াসুদ্ধ সবারই ঘিলুর গোলমাল, না, আমাদের ভাষার ভেতরেই গলদ—তাই নিয়ে মাথা ঘামাই। এরকম হেঁয়ালিপনার খেয়ালি জবাবে কবিরাই খালি খুশি হতে পারেন, আমার যুক্তিবাদী বৈজ্ঞানিক মন কিন্তু ভীষণ বিচলিত হয়। মাথা ঘামাতে হয় আমায়।
আচ্ছা, আমাদের ভাষাকে অঙ্কের নিয়মে বেঁধে দিলে কেমন হয়? বিশেষ করে বিশেষণ আর ক্রিয়াপদকে। অঙ্কের নির্দেশের মধ্যে তো ভুল হবার কিছু নেই। ‘ফিগারস ডু নট লাই’—অঙ্কেরা মিথ্যাবাদী হয় না,—মিথ্যে কথা বলতে জানে না—এই বলে একটা বয়েত আছে না ইংরেজিতে, সংখ্যার মধ্যে বঁাধা পড়লে শঙ্কার কিছু থাকে না; আর, ভাসা ভাসা ভাবটা কেটে যায় ভাষার। অঙ্কের নিরিখটাই সবচেয়ে ঠিক বলে মনে হয়।
১০০-কেই পুরো সংখ্যা ধরা যাক তাহলে। আমাদের দেহের, মনের, বিদ্যার, বুদ্ধির, রূপের, গুণের—এককথায় সব কিছুর সম্পূর্ণতাজ্ঞাপক সংখ্যা হল গিয়ে ১০০; এবং ওই সংখ্যার অনুপাতের দ্বারাই অবস্থাভেদের তারতম্য বুঝতে হবে আমাদের। এরপর আর বোধগম্য হবার বাধা কী রইল?
উদাহরণ—নিয়মকানুন মেনে এরপর রাজীবের বাবাকে গিয়ে যদি আমি জিজ্ঞেস করি … ‘কেমন আছেন মশাই? ভালো তো?’ এবং সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থার সংখ্যা যদি হয় ১০০—তাহলে ভেবেচিন্তে, অনেক হিসেব করে তাঁকে উত্তর দিতে হবে—‘এই ভালো আছি এখন! পরশু পেটের অসুখে ১০ দাঁড়িয়েছিল, কাল দাঁতের ব্যথায় ৭-এ ছিলাম, আজ যখন দাঁত তোলাই তখন তো কাত, প্রায় নাই বললেই হয়। এই যাই আর কি! তারপর অনেকক্ষণ ZERO বার পর সামলে উঠলাম, সেই থেকেই ১-টু দুর্বল বোধ করছি নিজেকে—এখন এই ৫৩!’
অর্থাৎ যেদিন—যখন—যেমন তাঁর শরীর-গতিক!
আমার বিস্ময়প্রকাশে বরং আরও একটু তিনি যোগ করতে পারেন—‘হ্যাঁ, বাহান্নই ছিলাম মশাই! কিন্তু আপনার সহানুভূতি প্রকাশের পর এখন একটু ভালো বোধ করছি আরও। তা, ওই যাহা বাহান্ন, তাহা তিপ্পান্ন!’
সবসময়েই মানুষ কিছু একরকম থাকে না—সুতরাং সবসময়েই উত্তর একরকম হবে কেন? এমনি সব ব্যাপারেই। ভাব-প্রকাশের দিকে ভাষায় যে অসুবিধা আছে সংখ্যার যোগে তা দূর হবেই—যেমন করে কুয়াশা দূর হয়ে যায় সূর্যোদয়ের ধাক্কায়। সাহিত্য আর অঙ্কের যোগাযোগে সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি তো হবেই নির্ঘাত—অঙ্কের সম্বন্ধেও আমাদের আতঙ্ক কমে যাবে ঢের। সেইটাই উপরন্তু। অর্থাৎ লাভের উপরি। ফাউয়ের ওপর থাউকো।
না:, এ বিষয়ে রাজীবের বাবার সঙ্গে একটা বোঝাপড়া হওয়ার দরকার এখুনিই—এই দন্ডেই। এবং রাজীবের সঙ্গেও।
তখুনি বেরিয়ে পড়ি ৬২ বেগে।
ওদের বাড়ি বরাবর গেছি, দেখি, শ্রীমান রাজীবলোচন সদর রাস্তায় দাঁড়িয়েই ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন! ৯৮ মনোযোগে। ‘খুব যে ঘুড়ি ওড়াচ্ছ দেখছি?’
‘চমৎকার!’ আমার প্রশ্নের জবাবে রাজীবের সেই এককথা!
‘কিন্তু বাড়ির ছাদে ওড়ালেই ভালো ছিল না কি? তোমাদের বাড়ির ছাদে তো বারান্দা নেই। ঘুড়ির উত্থান আর তোমার পতন দুটোই একসঙ্গে হতে পারত। তাহলে খুব সুবিধের হত না?’
‘চমৎকার!’
‘তোমার বাবা কী করছেন এখন?’
‘চমৎ—’
বলতে বলতেই সেপিছু হটতে শুরু করে, ঘুড়ির তাল সামলাবার তালেই। চোখকে আকাশে রেখে, পুরোপুরি ১০০-ই, ওর মনও ঘুড়ির সঙ্গে একই সূত্রে লটকানো, ওর স্থূল রাজীব-অংশই কেবল পিছু হটে আসে পৃথিবীতে—আসে চকিতের মধ্যে আর ৯২ বেগে—এত তাড়াতাড়ি যে আমি ভ্রূক্ষেপ করবার অবকাশ পাই না।
১ মুহূর্তে সেআমার ১০০ কাছাকাছি এসে পড়ে। ১০০ মানে, ঘনিষ্ঠতার চরম যাকে বলা যায়। আমি ককিয়ে উঠি সেই ধাক্কায়।
‘কানা নাকি মশাই?’ আমার দিকে না তাকিয়েই ওর জিজ্ঞাসা।
‘তুমি ৮৭ নাবালক! কী আর বলব তোমায়—’
‘দেখতে পান না চোখে?’ আকাশে চোখ রেখেই ওর চোখা প্রশ্নটা।
‘উঁহু। বরং ৭৫ চক্ষুষ্মান। ১০০-ই ছিলাম, কিন্তু তোমার লাটাইয়ের চোট লেগে চশমার একটা পাল্লা ভেঙে গিয়ে বঁা-চোখে এখন অর্ধেক দেখছি।’ বলে আমার আরও অনুযোগ—‘একটা পাল্লা, মানে চশমাটার ৫০ পাল্লাই বলা যায়। তোমার পাল্লায় পড়ে এই দশা হল আমার।’
‘অ্যাঁ?’ এবার সেফিরে তাকায় ৯৩ বিস্মিত হয়ে—‘কী বললেন?’
‘আমার ধারণা ছিল তুমি ৪২ বুদ্ধিমান, কিন্তু দেখছি তা নয়! বয়সে ১৩ হলে কী হবে, এই ১৩-তেই তিন তেরং উনচল্লিশ পেকে গেছ তুমি।’
৭২ হতভম্ব হয়ে যায় সে। ‘কীসব আবোল-তাবোল বকছেন মশাই পাগলের মতো?’
‘এখন দেখছি তুমি ৮৯ ইঁচর-পাকা।’
‘আর আপনি ৫০০ উজবুক!’ জোরগলাতেই সেজাহির করে।
আমি ৯৭ অগ্নিশর্মা হই, ৫ আঙুলে ওর ৫০ কান পাকড়ে ধরি—‘বললেই হল ৫০০? সাংখ্যদর্শন বোঝা এত সোজা না! ১০০-র ওপরে সংখ্যাই নেই!’
বলে ওর ৪৩ কান পাকড়ে ৭৫ জোরে ৮৫ আরামে মলতে শুরু করে দিই। ভাবতে থাকি মোট কানসংখ্যার বাকি ৫০কে রেহাই দেব, না, এইসঙ্গেই বাগিয়ে ধরব? কিংবা আমার মুক্ত ৫০ হাতে ওর ২২ গালে ৮২ জোরালো এক চড় কষিয়ে দেব এক্ষুনি?
ইত্যাকার বিবেচনা করছি এমন সময়ে ও তীব্র চিৎকার শুরু করে দেয়। ওর বাবা ছুটে আসেন টেলিগ্রামের মতো। ওর দাদাও আসে পাশের বাড়ির তাসের আড্ডা ফেলে। পাড়াপড়শিরাও। সকালের দেখা হওয়া সেই বন্ধুটিও এই মাহেন্দ্রক্ষণে এসে জোটেন কোত্থেকে।
২৬ কান্নার আওয়াজে ৬৩ গলার অস্পষ্টতা মিলিয়ে তারস্বরে আওড়াতে থাকে রাজীব— ‘আমি ঘুড়ি ওড়াচ্ছি, কোথাও কিছু নেই, কোনো বলাকওয়া না, এই লোকটা হঠাৎ খেপে গিয়ে ধরে মারছে কেবল আমায়! আর অঙ্ক কষে কষে কীসব গালাগাল দিচ্ছে—’
শুনেই সবাই আস্তিন গুটাতে শুরু করে।
আমার বন্ধু মহেন্দ্র এসে মাঝখানে পড়েন—‘আহা হা! করছেন কী? করছেন কী? দেখছেন না ভদ্রলোকের হিস্টিরিয়া হয়েছে!’
‘অ্যাঁ? হিস্টিরিয়া?’
‘দেখছেন না, চোখ লাল আর গা কাঁপছে ওর! এই সবই তো হিস্টিরিয়ার লক্ষণ!’
চোখ লাল আমার ৯৪ রাগে, কাঁপছিও সেই কারণেই! হিস্টিরিয়া না কচু। তবু ওদের ৭২ বোকামি আমাকে ৯২ অবাক করে দেয়।
আমার বন্ধু অকস্মাৎ ডাক্তার হয়ে ওঠেন—‘জল, কেবল জলই হচ্ছে এ রোগের ওষুধ। মাথায় রক্ত উঠলেই মৃত্যু! রক্ষে নেই তাহলে আর!’
হিস্টিরিয়ার নামে ওদের বীররস অচিরে অপত্যস্নেহে পরিণত হয়, যে যার বাড়িতে ছুটে যায়, এক-এক বালতি জল নিয়ে বেরিয়ে আসে ছুটতে ছুটতে।
আমার মাথায় ঢালতে আরম্ভ করে—সবাই মিলে!
বাধা দেবার আগেই বালতি খালি হয়েছে। কাপড় জামা ভিজে আমার একশা—মানে ১০০ই। এ কী আপদ বলো দেখি। ভারি বিচ্ছিরি!
আমি পালাবার চেষ্টা করি। কয়েক জন মিলে চেপে ধরে আমায়। আরও—আরও—আরও বালতি খালি হতে থাকে। হাঙ্গামা আর বলে কাকে!
একে পৌষের ৯৫ শীত, তার ওপরে ৫২ কনকনে ঠাণ্ডা জল, তার ওপরে আবার, এই দুর্যোগেই, সাঁইসাঁই করে বইতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া—৭৭ শীতল। কাঁহাতক আর সওয়া যায়? ১ ঝটকায় হাত-পা ছাড়িয়ে নিই, বলি, ‘তোমাদের এই ৪৯ পাগলামি বরদাস্ত করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।’
এই বলে ১ দৌড়ে যেই-না আমি ৬৫ দিতে যাচ্ছি, ওরা ৭৭ ক্ষিপ্রতায় আমাকে পাকড়ে ফ্যালে, ফলে আমারই চাদর দিয়ে বঁাধে আমাকে ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে। ৮৮ কষ্ট বোধ হতে থাকে আমার। কষ্টের চূড়ান্ত যাকে বলে!
এমনি সময়ে এক হোসপাইপওয়ালা রাস্তায় জল দিতে আসে। রাজীব তার হাত থেকে পাইপ হাতিয়ে আমাকেই লক্ষ্য করে! তার যাবতীয় রাগ জলাঞ্জলি দিয়ে কর্ণমর্দনের বেদনা ভুলে আমার পীড়নের সাধু প্রতিশোধ নিতে চায়। শিশু ভোলানাথ ১ নম্বর।
‘এই—এই—এই! ওকী হচ্ছে?’ চেঁচিয়ে উঠেছি আমি।
৬০ এর বাছা, শুনবে কেন সে? উন্মুখর জলের তোড় ছেড়ে দেয় সেআমার মুখের ওপর, ৫৬ পুলকে। অর্থাৎ পুলকের সেই ডিগ্রিতে, যেখানে সেনিজে ছাপিয়ে উঠেছে এবং ছাপাতে চাইছে অপরকেও।
‘এতক্ষণে ঠিক হয়েছে।’ বন্ধুবর উৎসাহে ৬৯ হয়ে ওঠেন—‘এইবার ঠাণ্ডা হবে।’
জলের গোঁত্তা এসে ধাক্কা মারে নাকে চোখে মুখে মাথায় গায়—কোথায় না!
কতক্ষণ আর এই বরফি জলের টান সামলানো সম্ভব ১ জনের পক্ষে? ক্রমশই আমি কাহিল মেরে আসি। একেবারে ঠাণ্ডা হতে, অর্থাৎ ৫ পঞ্চত্ব পেতে বেশি দেরি নেই বুঝতে আর বিলম্ব হয় না আমার।
এর পরের ইতিহাস অতি সংক্ষিপ্তই। জলযোগের পর অ্যাম্বুলেন্সযোগে আমাকে পাঠিয়ে দেয় হাসপাতালে। সেখানেই এখন আমি।
হিস্টিরিয়ার কবল থেকে বেঁচেছি। এখন ভুগছি খালি নিউমোনিয়ায়। অমন ৫৫ জল-চিকিৎসার পরিণাম তো একটা আছেই!
অঙ্ক আর সাহিত্যের যোগাযোগে যে আবিষ্কারটা আমি করেছিলাম সেটা আর চালু করা গেল না এ-বাজারে। আঙ্কিক সাহিত্যিকের ৯৯ দশায় অর্থাৎ অন্তিম অবস্থায় তার সাহিত্য-অঙ্কের যবনিকা পতন হল।
সাহিত্য প্লাস অঙ্ক, তার সঙ্গে যদি সামান্য একটা ছেলেকে যোগ দেওয়া যায় তার ফল দাঁড়ায় প্রাণবিয়োগ। অর্থাৎ একেবারে শূন্য। ক্ষুদ্র, বৃহৎ, ১-ই কী আর ১০০-ই কী, সব ব্যাপারেই ছেলেদের পাশ কাটিয়ে যাওয়া নিরাপদ। ‘চাইল্ড ইজ দি ফাদার অফ ম্যান’, ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছিলেন। এই কথাগুলোর মানে আমি বুঝতে পারলাম এতদিনে। আমার হাড়ে হাড়ে। এর যথার্থ দামও এতদিনে আত্মসাৎ করতে পারলাম। অর্থাৎ, ছেলেরা হচ্ছে মানুষের বাবা! আর, বাবার সঙ্গে লাগতে গেলে কাবার হতে কতক্ষণ?
আবিষ্কারকের ক্রমপরিণতি খুব সুবিধের হল না, সেজন্যে দুঃখ নেই। কোনো দেশে কোনো কালেই হয় না, ইতিহাস পড়ে জানা আছে। যা-ই হোক, এই সুযোগে সেই ভদ্রলোক, সেই মহেন্দ্রবাবু, মাহেন্দ্রক্ষণে যিনি অযাচিত এসে বন্ধুকৃত্য করেছিলেন তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে রাখি। হিস্টিরিয়ার টাল সামলেছি, নিউমোনিয়ার ধাক্কা সামলাব কি না কে জানে! আগের থেকে জানিয়ে রাখাই ভালো।
৬৭ জলকষ্টের কথা আর মনে নেই, এখন ৭৬ মন্বন্তর আমার সম্মুখে। সাবু বার্লিই খালি পথ্য আমার এখন।