Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রূপান্তর || Sankar Brahma

রূপান্তর || Sankar Brahma

জঙ্গলগড়ে এক সময় এক অত্যাচারী রাজা ছিলেন। লোকজনের ঘোড়া-গাধা-ছাগল-মুরগী জোর করে কেড়ে নিতেন। পারিষদদের সঙ্গে নিয়ে রাজা একদিন শিকার বের হলেন। একটা হরিণের পিছনে ছুটতে ছুটতে রাজা একা অনেকদূর চলে গেলেন, খেয়াল নেই তার। তখন সন্ধ্যা হয়েছে। রাজা টের পেলেন বনের মাথায় অন্ধকার নামছে। সঙ্গে কেউ নেই তার । অচেনা জায়গা। কাছাকাছি কোন গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেবেন ভাবলেন। কোন ধনীর বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন বলে মনে ভাবলেন। এদিকে রাত ঘন হচ্ছে। সামনে কোন বাড়ি ঘর না দেখতে পেয়ে। অনেক খোঁজখুঁজি করে শেষে একটা কুঁড়ে ঘর পেয়ে সেখানে আশ্রয় নিলেন। রাতে ঘুমোতে গিয়ে তিনি শুনলেন, একটা গাধা কাতর স্বরে চিৎকার করছে।
ঘুম থেকে উঠে গিয়ে দেখলেন, কুঁড়েঅলা নির্বিকার ভাবে তার গাধাটিকে পিটাচ্ছে।
রাজা তাই দেখে লোকটিকে বললেন–
কী হে, অবলা জীবটাকে এভাবে পিটাচ্ছো কেন? গাধার ঠ্যাং ভেঙে তুমি নিজের শক্তি পরীক্ষা দিচ্ছো? লোকটি উত্তেজিতভাবে জবাব দিল, হ্যাঁ সেটাই করছি। আমার কাজ ভালো কি মন্দ, সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। গায়ে পড়ে কথা বলতে আসবেন না প্লীজ, কোন প্রয়োজন নেই।
জবাব শুনে রাজা খুব দুঃখ পেলেন।
তবু জিজ্ঞেস করলেন, এইভাবে এই নিরীহ প্রাণীটিকে মারার কী কারণ থাকতে পারে, দয়া করে কি সেটা আমাকে একটু বুঝিয়ে বলা যায় না ?
– না, তার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
– আমার মনে হচ্ছে, তুমি যে শুধু নির্বোধ তাই নয় বরং তুমি একটা আস্ত পাগল। লোকটি এই কথা শুনে হেসে বলল, হ্যাঁ, আমি পাগলই বটে। তবে সবটা শুনলে আপনি বুঝবেন, আমি নির্বোধের মতো গাধাটার পা ভেঙে দিইনি। এর কারণ আছে।
– কি সেই কারণ, বলো?
– আমাদের দেশের রাজা খুব অত্যাচারী। একথা সবাই জানে। আমার সুস্থ সবল গাধাটির খবর পেলে নিশ্চয়ই তিনি জোর করে এটা নিয়ে যাবেন। শুনেছি, আমাদের এই এলাকায় রাজা শিকারে এসেছেন। তাই গাধাটাকে রাজার হাত থেকে রক্ষা করবার জন্যেই খোঁড়া করে দিলাম। রাজা গাধাটিকে কেড়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে খোঁড়া অবস্থায় এটা আমার কাছে থাকা অনেক ভালো।
রাজা গ্রামবাসী লোকটির মুখে তার নিন্দা শুনে রেগে গেলেন। কোন জবাব দিলেন না। রাগে, অপমানে, দুঃখে সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারলেন না। ঘুমহীন রাত কাটালেন। ভোরের আলো ফুটলো পুব আকাশে। মৃদুমন্দ বাতাস বইতে লাগল। পাখির কলকাকলিতে মুখর হলো চারিদিক। এই সুন্দর পরিবেশের গুনেই হয়তো রাজার মনে শুভ বোধের উদয় হলো। তার ভিতরে অনুতাপের জন্ম হলো , তার পূর্বেকার কৃতকর্মের জন্য। তিনি ফিরে গেলেন তার রাজসভায়।
রাজা পরদিন রাজসভায় ফিরে কুঁড়েঅলাকে রাজ সভায় ডেকে পাঠালেন। সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাজ সভায় এসে উপস্থিত হলেন। দেখলেন সিংহাসনে বসে
তারই বাড়ির গতকালের অতিথি। তার মানে রাজার কাছে তিনি তাঁর নিন্দা করেছেন।
রাজা তাকে সত্যি কথা বলার জন্য পুরুস্কৃত করে তার গলার চন্দ্রহারটি খুলে তাকে উপহার দিলেন। কুঁড়েঅলার আনন্দে চোখে জল এসে গেল। তিনি শাস্তির ভয়ে এতক্ষণ কাঁপছিলেন।
এরপর থেকে রাজা কারও প্রতি আর কোন অন্যায় অত্যাচার কোন দিন করেননি। যেন রত্নাকর বাল্মীকিতে রূপান্তরিত হয়ে গেলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress