Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ষষ্ঠ সর্গ — মেঘনাদবধ কাব্য || Meghnadbadh-6 by Michael Madhusudan Dutta

ষষ্ঠ সর্গ — মেঘনাদবধ কাব্য || Meghnadbadh-6 by Michael Madhusudan Dutta

অডিও হিসাবে শুনুন

কুশাসনে ইন্দ্রজিৎ পূজে ইষ্টদেবে
নিভৃতে; কৌশিক বস্ত্র,কৌশিক উত্তরি,
চন্দনের ফোঁটা ভালে, ফুলমালা গলে।
পুড়ে ধূপ দানে ধূপ; জ্বলিছে চৌদিকে
পুত ঘৃতরসে দীপ; পুস্প রাশি রাশি,
গন্ডারের শৃঙ্গে গড়া কোষা কোষী, ভরা
হে জাহ্নবি, তব জলে, কলুষনাশিনী
তুমি; পাশে হেম-ঘন্টা, উপহার নানা
হেমপাত্রে ; রুদ্ধ দ্বার ;— বসেছে একাকী
যমদূত, ভীমবাহু লক্ষণ পশিলা
মায়াবলে দেবালয়ে। ঝনঝনিল অসি
পিধানে,ধ্বনিল বাজি তুণীর-ফলকে,
কাঁপিল মন্দির ঘন বীরপদভরে

চমকি মুদিত আঁখি মিলিলা রাবণি।
দেখিলা সম্মুখে বলী দেবকৃতি রথী—
তেজস্বী মধ্যাহ্নে যথা দেব অংশুমালী ;
সাষ্টাঙ্গে প্রণমি শূর, কৃতাঞ্জলিপুটে,
কহিলা “হে বিভাবসু, শুভক্ষণে আজি
পূজিল তোমারে দাস, তেঁই, প্রভু, তুমি
পবিত্রিলা লঙ্কাপুরী ও পদ-অর্পণে;
কিন্তু কি কারণে,কহ, তেজস্বি, আইলা
রক্ষঃকুলরিপু নর লক্ষণের রূপে
প্রসাদিতে এ অধীনে ? এ কি লীলা তব,
প্রভাময় ?” পুনঃ বলী নমিলা ভূতলে।

উত্তরিলা বীরদর্পে রৌদ্র দাশরথি ;—
“নহি বিভাবসু আমি, দেখ নিরখিয়া,
রাবণি; লক্ষণ নাম, জন্ম রঘুকুলে;
সংহারিত, বীরসিংহ, তোমায় সংগ্রামে
আগমন হেথা মম ; দেহ রণ মোরে
অবিলম্বে।” যথা পথে সহসা হেরিলে
ঊর্দ্ধফণা ফণীশ্বরে, ত্রাসে হীনগতি
পথিক, চাহিলা বলী লক্ষণের পানে
সভয় হইল আজি ভয়শূ্ন্য হিয়া;
প্রচন্ড উত্তাপে পিন্ড হায় রে গলিল;
গ্রাসিল মিহিরে রাহু, সহসা আঁধারি
তেজপুঞ্জ ;অম্বুনাথে নিদাঘ শুষিল;
পশিল কৌশলে কলি নলের শরীরে;

বিস্ময়ে কহিলা শূর, “সত্য যদি তুমি
রামানুজ,কহ,রথি,কি ছলে পশিলা
রক্ষোরাজপুরে আজি ? রক্ষঃ শত শত,
যক্ষপতিত্রাস বলে, ভীম-অস্ত্রপাণি,
রক্ষিছে নগরদ্বার;শৃঙ্গধরসম
এ পুর-প্রাচীর উচ্চ ;—প্রাচীর উপরে
ভ্রমিছে অযুত যোধ চক্রাবলীরূপে;—
কোন্ মায়াবলে,বলী ? ভুলালে এ সবে
মানবকুলসম্ভব,দেবকুলদ্ভবে
কে আছে রথী এ বিশ্বে,বিমুখয়ে রণে
একাকী এ রক্ষোবৃন্দে ? এ প্রপন্চে তবে
কেন বন্চাইছ দাসে,কহ তা দাসেরে,
সর্ব্বভুক্? কি কৌতুক এ তব, কৌতুকি?
নহে নিরাকার দেব,সৌমিত্রি; কেমনে
এ মন্দিরে পশিবে সে এখনও দেখ
রুদ্ধ দ্বার;বর,প্রভু,দেহ এ কিংকরে,
নিঃশঙ্কা করিব লঙ্কা বধিয়া রাঘবে
আজি,খেদাইব দূরে কিষ্কিন্ধা-অধিপে,
বাঁধি আনি রাজপদে দিব বিভীষণে
রাজদ্রোহী|ওই শুন,নাদিছে চৌদিকে
শৃঙ্গ শৃঙ্গনাদিগ্রাম; বিলম্বিলে আমি,
ভগ্নোদ্যম রক্ষঃ-চমূ,বিদাও আমারে;

উত্তরিলা দেবাকৃতি সৌমিত্রি কেশরী,-
“কৃতান্ত আমি রে তোর,দুরন্ত রাবণি;
 মাটি কাটি দংশে সর্প আয়ুহীনজনে;
মদে মত্ত সদা তুই;দেব-বলে বলী,
তবু অবহেলা,মূঢ়,করিস সতত
দেবকুলে; এতদিনে মজিলি দুর্ম্মতি;
দেবাদেশে রণে আমি আহ্বানি রে তোরে;”
এতেক কহিলা বলী উলঙ্গিলা অসি
ভৈরবে;ঝলসি আঁখি কালানল-তেজে,
ভাতিল কৃপাণবর,শত্রুকর যথা
ইরম্মদময় বজ্র;কহিলা রাবণি,–
“সত্য যদি রামানুজ তুমি,ভীমবাহু
লক্ষণ;সংগ্রাম-সাধ অবশ্য মিটাব
মহাহবে আমি তব,বিরত কি কভু
রণরঙ্গে ইন্দ্রজিৎ? আতিথেয় সেবা,
তিষ্ঠি লহ শূরশ্রেষ্ঠ,প্রথমে এ ধামে—
রক্ষোরিপু তুমি,তবু অতিথি হে এবে।
সাজি বীরসাজে আমি। নিরস্ত্র যে অরি,
নহে রথিকুলপ্রথা আঘাতিতে তারে।
এ বিধি, হে বীরবর,অবিদিত নহে,
ক্ষত্র তুমি,তব কাছে;-কি আর কহিব?”
জলদ-প্রতিম স্বনে কহিলা সৌমিত্রি,–
“আনায়-মাঝারে বাঘে পাইলে কি কভু
ছাড়ে রে কিরাত তারে? বধিব এখনি,
অবোধ,তেমতি তোরে? জন্ম রক্ষঃকুলে
তোর,ক্ষত্রধর্ম্ম, পাপি,কি হেতুী পালিব
তোর সঙ্গে? মারি অরি পারি যে কৌশলে;”
কহিলা বাসবজেতা,( অভিমন্যু যথা
হেরি সপ্ত শূরে শূর তপ্তলৌহাকৃতি
রোষে;)–ক্ষত্রকুলগ্লানি,শত ধিক তোরে,
লক্ষণ; নির্লজ্জ তুই। ক্ষত্রিয়-সমাজে
রোধিবে শ্রবণপথ ঘৃণায়,শুনিলে
নাম তোর রথিবৃন্দ; তস্কর যেমতি,
পশিলি এ গৃহে তুই; তস্কর-সদৃশ
শাস্তিয়া নিরস্ত তোরে করিব এখনি;
পশে যদি কাকোদর গরুড়ের নীড়ে,
ফিরি কি সে যায় কভু আপন বিবরে,
পামর? কে তোরে হেথা আনিল দুর্ম্মতি?
চক্ষের নিমেষে কোষা তুলি ভীমবাহু
নিক্ষেপিলা ঘোর নাদে লক্ষণের শিরে।
পড়িলা ভূতলে বলী ভীম প্রহরণে,
পড়ে তরুরাজ যথা প্রভঞ্জনবলে
মড়মড়ে; দেব-অস্ত্র বাজিল ঝনঝনি,
কাঁপিল দেউল যেন ঘোর ভূকম্পনে;
বহিল রুধির-ধারা;ধরিলা সত্বরে
দেব-অসি ইন্দ্রজিৎ;–নারিলা তুলিতে
তাহায়;কার্ম্মুক ধরি কর্ষিলা; রহিল
সৌমিত্রির হাতে ধনুঃ;সাপটিলা কোপে
ফলক;বিফল বল সে কাজ-সাধনে;
যথা শুন্ডধর টানে শুন্ডে জড়াইয়া
শৃঙ্গধর-শৃঙ্গে বৃথা,টানিলা তূণীরে
শূরেন্দ্র;মায়ার মায়া কে বুঝে জগতে;
চাহিলা দুয়ার-পানে অভিমানে মানী।
সচকিতে বীরবর দেখিলা সম্মুখে
ভীমতম শূল হস্তে, ধূমকেতুসম
খুল্লতাত বিভীষণে—বিভীষণ রণে;
“এতক্ষণে”–অরিন্দম কহিলা বিষাদে
“জানিনু কেমনে আসি লক্ষণ পশিল
রক্ষঃপুরে; হায়,তাত,উচিত কি তব
এ কাজ,নিকষা সতী তোমার জননী,
সহোদর রক্ষঃশ্রেষ্ঠ? শূলীশম্ভুনিভ
কুম্ভকর্ণ? ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী
নিজগৃহপথ,তাত, দেখাও তস্করে?
চন্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?
কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা,গুরুজন তুমি
পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার যাব অস্ত্রাগারে,
পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,
লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে?

উত্তরিলা বিভীষণ, “বৃথা এ সাধনা,
ধীমান; রাঘবদাস আমি; কি প্রকারে
তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব,রক্ষিতে এ
অনুরোধ?” উত্তরিলা কাতরে রাবণি;–
“হে পিতৃব্য,তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে;
রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে
আনিলে এ কথা তাত,কহ তা দাসেরে;
স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থানুর ললাটে;
পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি
ধুলায়? হে রক্ষোরথি,ভুলিলে কেমনে
কে তুমি? জনম তব কোন মহাকুলে?
কে বা সে অধম রাম? স্বচ্ছ সরোবরে
করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ কাননে;
যায় কি সে কভু প্রভু,পঙ্কিল সলিলে,
শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী,
কবে,হে বীরকেশরী,সম্ভাষে শৃগালে
মিত্রভাবে? অজ্ঞ দাস বিজ্ঞতম তুমি,
অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে।
ক্ষুদ্রমতি নর,শূর,লক্ষণ,নহিলে
অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে?
কহ,মহারথী,একি মহারথী-প্রথা?
নাহি শিশু লঙ্কাপুরে শুনি না হাসিবে
এ কথা; ছাড়হ পথ;আসিব ফিরিয়া
এখনি; দেখিব আজি কোন্ দেববলে,
বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি;
দেব-দৈত্য-নর-রণে,স্বচক্ষে দেখেছ,
রক্ষঃশ্রেষ্ঠ,পরাক্রম দাসের; কি দেখি
ডরিবে এ দাস হেন দুর্ব্বল মানবে?
নিকুম্ভিলা-যজ্ঞাগারে প্রগলভে পশিল
দম্ভী; আজ্ঞা কর দাসে,শাস্তি নরাধমে।
তব জন্মপুরে ,তাত,পদার্পণ করে
বনবাসী; হে বিধাতঃ, নন্দন-কাননে
ভ্রমে দুরাচার-দৈত্য? প্রফুল্ল কমলে
কীট-বাস? কহ তাত,সহিব কেমনে
হেন অপমান আমি,—ভ্রাতৃ-পুত্র তব?
তুমিও,হে রক্ষোমণি,সহিছ কেমনে?
মহামন্ত্র-বলে যথা নম্রশির; ফনী
মলিন বদন লাজে,উত্তরিলা রথী
রাবণ-অনুজ,লক্ষি রাবণ-আত্মজে—
“নহি দোষী আমি,বৎস;বৃথা ভর্ৎস মোরে
তুমি; নিজ-কর্মদোষে,হায়,মজাইলা
এ কনক-লঙ্কা রাজা মজিলা আপনি।
বিরত সতত পাপে দেবকুল; এবে
পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরী; প্রলয়ে যেমতি
বসুধা,ডুবিছে লঙ্কা এ কাল সলিলে;
রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী
তেঁই আমি;পরদোষে কে চাহে মজিতে?

রুষিলা বাসবত্রাস;গম্ভীরে যেমতি
নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি,
কহিলা বীরেন্দ্র বলী,–“ধর্মপথগামী,
হে রাক্ষসরাজানুজ,বিখ্যাত জগতে
তুমি;কোন্ ধর্ম্ম-মতে,কহ দাসে,শুনি,
জ্ঞাতিত্ব,ভ্রাতৃত্ব,জাতি,–এ সকলে দিলা
জলাঞ্জলি?শাস্ত্রে বলে,গুণবান্ যদি
পরজন,গুণহীন স্বজন, তথাপি
নির্গুণ স্বজন শ্রেয়,পরঃ পরঃ সদা;
এ শিক্ষাড ,হে রক্ষোবর,কোথায় শিখিলে?
কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা; হেন সহবাসে,
হে পিতৃব্য,বর্ব্বরতা কেন না শিখিবে?
গতি যার নীচ সহ,নীচ সে দুর্ম্মতি।”

হেথায় চেতন পাই মায়ার যতনে
সৌমিত্রি,হুঙ্কারে ধনুঃ টঙ্কারিলা বলী।
সন্ধানি বিন্ধিলা শূর খরতর শরে
অরিন্দম ইন্দ্রজিতে,তারকা যথা
মহেস্বাস শরজালে বিঁধেন তারকে;
হায় রে রুধির-ধারা (ভূধর শরীরে
বহে বরিষার কালে জলস্রোতঃ যথা,)
বহিব,তিতিয়া বস্ত্র,তিতিয়া মেদিনী।
অধীল ব্যাথায় রথী,সাপটি সত্বরে
শঙ্খ,ঘন্টা,উপহার-পাত্র ছিল যত
যজ্ঞাগারে একে একে নিক্ষেপিলা,কোপে;
যথা অভিমন্যু রথী, নিরস্ত্র সমরে
সপ্তরথী-অস্ত্রবলে,কভু বা হানিলা
রথচূড়া,রথচক্র;কভু ভগ্ন অসি,
ছিন্ন চর্ম্ম,ভিন্ন বর্ম্ম,যা পাইলা হাতে;
কিন্ত মায়াময়ী মায়া,বাহু-প্রসরণে,
ফেলাইলা দূরে সবে,জননী যেমতি
খেদান মশকবৃন্দে সুপ্ত সুত হতে
করপদ্ম-সঞ্চালনে;সরোষে রাবণি
ধাইলা লক্ষণ-পানে গর্জি ভীমনাদে,
প্রহারকে হেরি যথা সম্মুখে কেশরী;
মায়ার মায়ায় বলী হেরিলা চৌদিকে
ভীষণ মহিষারূঢ় ভীম দন্ডধরে;
শূল-হস্তে শূলপাণি; শঙ্খ,চক্র,গদা
চতুর্ভুজে চতুর্ভুজ;হেরিলা সভয়ে
দেবকুল রথীবৃন্দে সুদিব্য বিমানে।
বিষাদে নিশ্বাস ছাড়ি দাঁড়াইলা বলী–
নিষ্ফল,হায় রে মরি,কালাধর যথা
রাহুগ্রাসে; কিম্বা সিংহ আনায়-মাঝারে;
  ত্যজি ধনুঃ নিষ্কোষিলা অসি মহাতেজাঃ
রামানুজ;ঝলসিলা ফলক-আলোকে
নয়ন;হায় রে অন্ধ অরিন্দম বলী
ইন্দ্রজিৎ,খড়্গাঘাতে পড়িলা ভূতলে
শোণিতাদ্র। থরথরি কাঁপিলা বসুধা,
গর্জিলা উথলি সিন্ধু;ভৈরব-আরাবে
সহসা পূরিল বিশ্ব;ত্রিদিবে পাতালে,
মর্ত্ত্যে,মরামর জীব প্রমাদ গণিলা
আতঙ্কে;যথায় বসি হৈম-সিংহাসনে
সভায় কর্ব্বুরপতি,সহসা পড়িল
কনক-মুকুট খসি,রথচূড়া যথা
রিপুরথী কাটি যবে পড়ে রথতলে।
সশঙ্ক লঙ্কেশ শূর স্মরিলা শঙ্করে;
প্রমীলার বামেতর নয়ন নাচিল;
আত্মবিস্মৃতিতে,হায়,অকস্মাৎ সতী
মুছিলা সিন্দুর বিন্দু সুন্দর ললাটে;
মূর্ছিলা রাক্ষসেন্দ্রাণী মন্দোদরী দেবী
আচম্বিতে;মাতৃকোলে নিদ্রায়য় কাঁদিল
শিশুকুল আর্ত্তনাদে,কাঁদিল যেমতি
ব্রজে ব্রজকুলশিশু,যবে শ্যামমণি,
আঁধারি সে ব্রজপুর,গেলা মধুপুরে;
   অন্যায় সমরে পড়ি,অসুরারি-রিপু,
রাক্ষসকুল-ভরসা, পরুষ বচনে
কহিলা লক্ষণ শূরে,-“বীরকুল গ্লানি,
সুমিত্রা নন্দন তুই;শত ধিক্ তোরে;
রাবণনন্দনন আমি না ডরি শমনে।
কিন্ত তোর অস্ত্রাঘাতে মরিনু যে আজি,
পামর, এ চিরদুঃখ রহিলল যে মনে;
দৈত্যকুলদল ইন্দ্রে দমিনু সংগ্রামে
মরিতে কি তোর হাতে? কি পাপে বিধাতা
দিবেন এ তাপ দাসে, বুঝিব কেমনে?
আর কি কহিব তোরে? এ বারতা যবে
পাইবেন রক্ষোনাথ, কে রক্ষিবে তোরে,
নরাধম? জলধির অতল সলিলে
ডুবিস যদিও তুই,পশিবে সে দেশে
রাজরোষ-বাড়বাগ্নিরাশিসম তেজে;
দাবাগ্নিসদৃশ তোরে দগ্ধিবে কাননে
সে রোষ, কাননে যদি পশিস্,কুমতি;
নারিবে রজনী, মূঢ়, আবরিতে তোরে।
দানব,মানব,দেব,কার সাধ্য হেন
ত্রাণিবে,সৌমিত্রি,তোরে রাবণ রুষিলে?
কে বা এ কলঙ্ক তোর ভঞ্জিবে জগতে,
কলঙ্কি?” এতেক কহি বিষাদে সুমতি
মাতৃপিতৃপাদপদ্ম শ্মরিলা অন্তিমে।
অধীর হইলা ধীর ভাবি প্রমীলারে
চিরানন্দ; লোহ সহ মিশি অশ্রুধারা
অনর্গল বহি,হায়,আদ্রিল মহীরে।
লঙ্কার পঙ্কজ রবি গেলা অস্তাচলে।
নির্বাণ পাবক যথা, কিম্বা তিষাম্পতি
শান্তরশ্মি,মহাবল রহিলা ভূতলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

We are happy to announce that our app is now available in
Google Playstore!